বিচার প্রশাসনে নিয়োগ-পদোন্নতি-মান ও দক্ষতা যেন প্রশ্নবিদ্ধ না হয়

বাংলাদেশ মামলাজটের দেশ_ এমনটিই বলা হয়। নিম্ন আদালত থেকে সর্বোচ্চ আদালত, সর্বত্রই অনিষ্পন্ন মামলার স্তূপ। এর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন মামলা। আইন মন্ত্রণালয় ও বিচার বিভাগ এবং সংশ্লিষ্ট সবার জন্য এ ক্ষেত্রে অবশ্যকরণীয় হচ্ছে এ জট কমিয়ে আনায় উদ্যোগী হওয়া। বিচার বিভাগে নিয়োগ, বদলি ও পদোন্নতি কিংবা অন্য যে কোনো পদক্ষেপের ক্ষেত্রে মূল বিবেচনাতেও এটা থাকা চাই। আমাদের প্রশাসনে রাজনৈতিক প্রভাব নতুন নয়।


বিচার বিভাগকে প্রশাসন থেকে পৃথক করার জন্য দীর্ঘ যে আন্দোলন চলেছে, তার পেছনে প্রধান যুক্তি ছিল এই প্রভাবের অপব্যবহার। দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টায় এ থেকে আইনগত মুক্তি মিলেছে, কিন্তু বাস্তবে সর্বক্ষেত্রে তা থেকে নিষ্কৃতি মিলেছে কি-না সে প্রশ্ন প্রায়শই উঠছে। শুধু নিম্ন আদালত নয়, সর্বোচ্চ আদালতকে ঘিরেও কিন্তু সংশয়-সন্দেহ মাঝে মধ্যেই মাথাচাড়া দেয়। শনিবার রাজধানীতে 'বিচারপতি নিয়োগে সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়া' নিয়ে আলোচনায় এ প্রসঙ্গটি নিয়ে শীর্ষস্থানীয় আইনজীবীদের উদ্বেগ থেকে তার সাক্ষ্য মেলে। সংবিধান বিশেষজ্ঞ ও প্রবীণ আইনজীবী ড. কামাল হোসেন আলোচনায় অংশ নিয়ে বলেছেন, 'বিচার বিভাগের নিরপেক্ষতা সংবিধানের অন্যতম মূল স্তম্ভ। অথচ দলীয় বিবেচনায় উচ্চতর আদালতে বিচারপতি নিয়োগ দিয়ে সেই স্তম্ভকে ধ্বংস করা হচ্ছে। আমাদের ঐকমত্যের ভিত্তিতে এমন সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে, যাতে বিচার বিভাগের নিয়োগ ও পদোন্নতির ব্যাপারে কোনো দলীয়করণ হতে না পারে।' আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয় সরকারের আমলেই কিন্তু এ প্রশ্নটি উঠছে। কখনও কখনও মনে হয়, অতীতের ভুল সংশোধন নয়, বরং পূর্বসূরি প্রতিপক্ষকে ছাড়িয়ে যাওয়ার জন্যই চলে প্রাণান্ত চেষ্টা। উভয় দলের সঙ্গে যুক্ত খ্যাতিমান অনেক আইনজীবীও কিন্তু এর দায়দায়িত্ব এড়াতে পারেন না। এখন আমাদের সংশোধনের সময়, ভুলত্রুটি থেকে ধাপে ধাপে মুক্ত হওয়ার সময়। এ ক্ষেত্রে তাদের কাছ থেকে বিশেষ উদ্যোগ প্রত্যাশিত থাকবে। রোববার সমকালে 'বিচার প্রশাসনে ঢালাও পদোন্নতি ও বদলি প্রক্রিয়াকে ঘিরে চলছে নৈরাজ্য' প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্তরভেদে মাত্র ছয় মাসের বিচারিক অভিজ্ঞতা নিয়েও কেউ কেউ পদোন্নতি পেতে যাচ্ছেন। বিভিন্ন স্তরে বিচারকের স্বল্পতাজনিত কারণে এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে যুক্তি দেওয়া যেতে পারে। তবে এ পদোন্নতির প্রক্রিয়া চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত বহাল থাকবে এবং এরপর যারা পদোন্নতির জন্য বিবেচিত হবেন তাদের প্রতিটি ধাপেই নূ্যনতম দুই বছরের বিচারিক কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। অর্থাৎ বর্তমানে যারা পদোন্নতি পাচ্ছেন এবং আর মাত্র কয়েকটি দিন পরে যারা এ জন্য যোগ্য বিবেচিত হবেন, তাদের মধ্যে একটি বড় ধরনের পার্থক্য হতে যাচ্ছে। এ বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কতটা বিবেচনায় নিয়েছেন, সেটা স্পষ্ট নয়। এ ধরনের সুবিধা বিশেষ ক্ষেত্রে প্রদান করা যায়। কিন্তু প্রচলিত ধারা থেকে ব্যতিক্রম ঘটাতে হলে অবশ্যই উপযুক্ত কারণ থাকতে হবে। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে বিচার বিভাগের মান ও দক্ষতা নিশ্চিত করা। বিচার বিভাগের প্রতিটি স্তরেই জনবল স্বল্পতা রয়েছে। অনুমোদিত পদেরও একটি অংশ রয়েছে শূন্য। এ ধরনের ক্ষেত্রে বিশেষ বিবেচনা করা যেতেই পারে। তবে নিয়োগ বা পদোন্নতির ক্ষেত্রে কোনো অবস্থাতেই যেন উচ্চমান ও দক্ষতার সঙ্গে আপস করা না হয়।

No comments

Powered by Blogger.