পবিত্র কোরআনের আলো-গনিমতের মালের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দেওয়ার অধিকার একমাত্র আল্লাহ ও রাসুল (সা.)-এর
সুরা আল আনফাল বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহি১. ইয়াছ্আলূনাকা আ'নি ল্আনফা-ল; ক্বুলি ল্আনফা-লু লিল্লাহি ওয়ার্রাছূল; ফাত্তাক্বুল্লাহা ওয়া আস্লিহূ যা-তা বাইনিকুম; ওয়া আত্বীঊ'ল্লাহা ওয়া রাসূলাহূ ইন কুনতুম্ মু'মিনীন। ২. ইন্নামা ল্মু'মিনূনাল্লাযীনা ইযা- যুকিরাল্লাহু ওয়া জিলাত ক্বুলূবুহুম ওয়া ইযা- তুলিইয়াত্ আ'লাইহিম আয়াতুহূ যা-দাত্হুম ঈমানান ওয়া আ'লা- রাবি্বহিম ইয়াতাওয়াক্কালূন।৩. আল্লাযীনা ইউক্বীমূনাস্ সালাতা ওয়া মিম্মা- রাযাক্বনাহুম ইউনফিক্বূন।
৪. উলায়িকা হুমুল মু'মিনূনা হাক্কা-; লাহুম দারাজাতুন ই'নদা রাবি্বহিম ওয়া মাগ্ফিরাতুন ওয়া রিয্ক্বুন কারীম। [সুরা : আল-আনফাল, আয়াত : ০১-০৪] অনুবাদ : আল্লাহর নামে শুরু করছি, যিনি সবার প্রতি দয়াবান ও পরম দয়ালু।
১. (হে নবী) লোকে আপনাকে যুদ্ধলব্ধ সম্পদ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবে। আপনি বলে দিন, যুদ্ধলব্ধ সম্পদ সম্পর্কে সিদ্ধান্ত দেওয়ার অধিকার আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের। সুতরাং আল্লাহর প্রতি দায়িত্বনিষ্ঠ হও এবং তোমাদের পারস্পরিক সম্পর্ক পরিচ্ছন্ন করো। আর আল্লাহর আনুগত্য করো এবং রাসুলের অনুসরণ করো, যদি তোমরা প্রকৃত মুমিন হয়ে থাকো।
২. মুমিন তো তারাই, যাদের সামনে আল্লাহকে স্মরণ করা হলে তাদের হৃদয় বিগলিত হয়, যখন তাদের সামনে তাঁর আয়াতগুলো পড়া হয়, তখন তাদের বিশ্বাস দৃঢ়তর হয় এবং তারা তাদের প্রতিপালকের ওপর ভরসা করে।
৩. যারা নামাজ কায়েম করে এবং আমি তাদের যে বিষয়-সম্পদ দিয়েছি, তা সঠিকভাবে ব্যয় করে।
৪. এরাই প্রকৃত মুমিন, তাদের প্রভুর কাছে তাদের জন্য রয়েছে উচ্চ মর্যাদা, ক্ষমা ও সম্মানজনক জীবিকা।
ব্যাখ্যা : সুরা আনফাল। এ সুরাটি হিজরি দ্বিতীয় সনে মদিনা মুনাওয়ারায় নাজিল হয়েছে। এর বেশির ভাগ আলোচনা বদরের যুদ্ধ এবং এর সংশ্লিষ্ট বিষয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এ যুদ্ধই ইসলাম ও কুফরের মধ্যকার সর্বপ্রথম নিয়মতান্ত্রিক যুদ্ধ। যেহেতু এই সুরাটির বিষয়বস্তু বদরের যুদ্ধের বিভিন্ন বিষয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত, সেহেতু এগুলো সঠিকভাবে বুঝতে হলে এ যুদ্ধ সম্পর্কে মোটামুটি ধারণা থাকা দরকার।
নবুয়ত লাভের পর মহানবী (সা.) মক্কায় থেকেছিলেন ১৩ বছর। এ সময়কালে মক্কার কাফেররা তাঁকে ও তাঁর সাহাবিদের অবর্ণনীয় কষ্ট দিয়েছে। এমনকি শেষ পর্যন্ত তারা তাঁকে হত্যা করারই ষড়যন্ত্র করেছিল। মহানবী (সা.) মদিনায় হিজরত করার পর কাফেররা চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকল, যাতে মদিনায়ও তিনি স্বস্তিতে থাকতে না পারেন। তারা আবদুল্লাহ ইবনে উবাইকে চিঠি লিখল, তোমরা মুহাম্মদ ও তার সঙ্গীদের আশ্রয় দিয়েছ। আমাদের সাফ কথা, 'তোমরা আশ্রয় প্রত্যাহার করো। নয়তো আমরা তোমাদের ওপর আক্রমণ চালাব।' এ ধরনের উত্তপ্ত কূটনৈতিক পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার পর একপর্যায়ে মক্কার কুরাইশরা মদিনা আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেয়। মহানবী (সা.) এ খবর জানতে পেরে অল্পসংখ্যক (৩১৩ জন) যোদ্ধা নিয়ে বদর নামক স্থানে এসে তাদের বাধা দেন।
এই আয়াতগুলোর মূল প্রসঙ্গ যুদ্ধলব্ধ বা গনিমতের মাল সম্পর্কে ফয়সালা দেওয়া। বদরের যুদ্ধে যখন শত্রুদের পরাজয় ঘটল, তখন সাহাবায়ে কেরাম যুদ্ধের কৌশল হিসেবে তিন ভাগে বিভক্ত ছিলেন। এক দল নবী (সা.)-এর নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত, এক দল শত্রুদের পশ্চাদ্ধাবন করার জন্য বের হয়ে গেল। আরেক দল শত্রুর ফেলে যাওয়া মালামাল কুড়াতে থাকল। যেহেতু এটাই ছিল মুসলমানদের প্রথম যুদ্ধ এবং যুদ্ধলব্ধ সম্পদ সম্পর্কে তখনো বিস্তারিত কোনো বিধান জারি হয়নি, সে অবস্থায় তৃতীয় দল মনে করেছিল_তারা যে মাল কুড়িয়েছে তা তাদেরই। কিন্তু যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর প্রথমোক্ত দুই দলের খেয়াল হলো, যুদ্ধলব্ধ মালে তো অবশ্যই তাদের হিস্যা থাকা উচিত। এ নিয়ে তাদের মধ্যে কিছু বাগ্বিতণ্ডাও হয়। বিষয়টা যখন নবী (সা.)-এর কাছে উত্থাপিত হলো, তখন এই আয়াতগুলো নাজিল হয়। এখানে যুদ্ধলব্ধ মাল ও ইসলাম ধর্মের মূল্যবোধ সম্পর্কে সার্বিক দৃষ্টিভঙ্গি স্পষ্ট করার চেষ্টা হয়েছে।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী
১. (হে নবী) লোকে আপনাকে যুদ্ধলব্ধ সম্পদ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবে। আপনি বলে দিন, যুদ্ধলব্ধ সম্পদ সম্পর্কে সিদ্ধান্ত দেওয়ার অধিকার আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের। সুতরাং আল্লাহর প্রতি দায়িত্বনিষ্ঠ হও এবং তোমাদের পারস্পরিক সম্পর্ক পরিচ্ছন্ন করো। আর আল্লাহর আনুগত্য করো এবং রাসুলের অনুসরণ করো, যদি তোমরা প্রকৃত মুমিন হয়ে থাকো।
২. মুমিন তো তারাই, যাদের সামনে আল্লাহকে স্মরণ করা হলে তাদের হৃদয় বিগলিত হয়, যখন তাদের সামনে তাঁর আয়াতগুলো পড়া হয়, তখন তাদের বিশ্বাস দৃঢ়তর হয় এবং তারা তাদের প্রতিপালকের ওপর ভরসা করে।
৩. যারা নামাজ কায়েম করে এবং আমি তাদের যে বিষয়-সম্পদ দিয়েছি, তা সঠিকভাবে ব্যয় করে।
৪. এরাই প্রকৃত মুমিন, তাদের প্রভুর কাছে তাদের জন্য রয়েছে উচ্চ মর্যাদা, ক্ষমা ও সম্মানজনক জীবিকা।
ব্যাখ্যা : সুরা আনফাল। এ সুরাটি হিজরি দ্বিতীয় সনে মদিনা মুনাওয়ারায় নাজিল হয়েছে। এর বেশির ভাগ আলোচনা বদরের যুদ্ধ এবং এর সংশ্লিষ্ট বিষয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এ যুদ্ধই ইসলাম ও কুফরের মধ্যকার সর্বপ্রথম নিয়মতান্ত্রিক যুদ্ধ। যেহেতু এই সুরাটির বিষয়বস্তু বদরের যুদ্ধের বিভিন্ন বিষয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত, সেহেতু এগুলো সঠিকভাবে বুঝতে হলে এ যুদ্ধ সম্পর্কে মোটামুটি ধারণা থাকা দরকার।
নবুয়ত লাভের পর মহানবী (সা.) মক্কায় থেকেছিলেন ১৩ বছর। এ সময়কালে মক্কার কাফেররা তাঁকে ও তাঁর সাহাবিদের অবর্ণনীয় কষ্ট দিয়েছে। এমনকি শেষ পর্যন্ত তারা তাঁকে হত্যা করারই ষড়যন্ত্র করেছিল। মহানবী (সা.) মদিনায় হিজরত করার পর কাফেররা চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকল, যাতে মদিনায়ও তিনি স্বস্তিতে থাকতে না পারেন। তারা আবদুল্লাহ ইবনে উবাইকে চিঠি লিখল, তোমরা মুহাম্মদ ও তার সঙ্গীদের আশ্রয় দিয়েছ। আমাদের সাফ কথা, 'তোমরা আশ্রয় প্রত্যাহার করো। নয়তো আমরা তোমাদের ওপর আক্রমণ চালাব।' এ ধরনের উত্তপ্ত কূটনৈতিক পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার পর একপর্যায়ে মক্কার কুরাইশরা মদিনা আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেয়। মহানবী (সা.) এ খবর জানতে পেরে অল্পসংখ্যক (৩১৩ জন) যোদ্ধা নিয়ে বদর নামক স্থানে এসে তাদের বাধা দেন।
এই আয়াতগুলোর মূল প্রসঙ্গ যুদ্ধলব্ধ বা গনিমতের মাল সম্পর্কে ফয়সালা দেওয়া। বদরের যুদ্ধে যখন শত্রুদের পরাজয় ঘটল, তখন সাহাবায়ে কেরাম যুদ্ধের কৌশল হিসেবে তিন ভাগে বিভক্ত ছিলেন। এক দল নবী (সা.)-এর নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত, এক দল শত্রুদের পশ্চাদ্ধাবন করার জন্য বের হয়ে গেল। আরেক দল শত্রুর ফেলে যাওয়া মালামাল কুড়াতে থাকল। যেহেতু এটাই ছিল মুসলমানদের প্রথম যুদ্ধ এবং যুদ্ধলব্ধ সম্পদ সম্পর্কে তখনো বিস্তারিত কোনো বিধান জারি হয়নি, সে অবস্থায় তৃতীয় দল মনে করেছিল_তারা যে মাল কুড়িয়েছে তা তাদেরই। কিন্তু যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর প্রথমোক্ত দুই দলের খেয়াল হলো, যুদ্ধলব্ধ মালে তো অবশ্যই তাদের হিস্যা থাকা উচিত। এ নিয়ে তাদের মধ্যে কিছু বাগ্বিতণ্ডাও হয়। বিষয়টা যখন নবী (সা.)-এর কাছে উত্থাপিত হলো, তখন এই আয়াতগুলো নাজিল হয়। এখানে যুদ্ধলব্ধ মাল ও ইসলাম ধর্মের মূল্যবোধ সম্পর্কে সার্বিক দৃষ্টিভঙ্গি স্পষ্ট করার চেষ্টা হয়েছে।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী
No comments