রবীন্দ্রনাথ-ভিক্টোরিয়ার ‘সম্পর্ক’ নিয়ে চলচ্চিত্র! by তপতী বর্মন
ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো ছিলেন আর্জেন্টিনার নারীবাদী লেখক। একই সঙ্গে তিনি ছিলেন সাহিত্য সাময়িকীর সম্পাদক ও সাংস্কৃতিক কর্মী। আর্জেন্টিনা থেকে বহুদূরের ভারতবর্ষের কবি-সাহিত্যিক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে গড়ে উঠেছিল তাঁর চমত্কার সম্পর্ক। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ তাঁকে ডাকতেন ‘বিজয়া’ বলে, উত্সর্গও করেছেন অনেক কবিতা।‘অন্তরঙ্গ অথচ নিখাদ বন্ধুত্বপূর্ণ’ এই সম্পর্ক নিয়ে এবার চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে যাচ্ছেন আর্জেন্টিনার পরিচালক পাবেলো
সিজার। তাঁর চলচ্চিত্রে উঠে আসবে ১৯২৪ সালে আর্জেন্টিনা সফরের সময় ভিক্টোরিয়ার সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের গল্প এবং পরবর্তীকালে দুজনের কাজে দুজনের প্রেরণা ও প্রভাব।
সম্প্রতি বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাত্কারে পাবেলো সিজার জানালেন ভারতের সঙ্গে তাঁর পুরোনো সম্পর্কের গল্প। ১৯৯৬ সালে তিনি প্রথমবারের মতো ভারতের রাজস্থানে আসেন। শুটিং করেন ইউনিকরনিও-গার্ডেন অব ফ্রুটস চলচ্চিত্রের। এরপর আবার ভারতে আসেন ২০০৭ সালে, গোয়ায় অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উত্সবের বিচারক হিসেবে। পরের বছর আর্জেন্টিনায় ভারতের রাষ্ট্রদূত রঙ্গরাজ বিশ্বনাথন তাঁকে রবীন্দ্রনাথ ও ভিক্টোরিয়ার বিষয়টি নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণের ধারণা দেন।
সেই ভাবনাটা মনে ধরে সিজারের। এ বছর রবীন্দ্রনাথের সার্ধশত জন্মবার্ষিকীতে মুক্তি দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে কাজ শুরু করেন ‘থিংকিং অব হিম’ চলচ্চিত্রের। তবে চলচ্চিত্র নির্মাণ-পূর্ব কর্মকাণ্ডে বেশি সময় ব্যয় হওয়ায় এবার ছবিটি মুক্তি দিতে পারেননি তিনি।
তবে এ নিয়ে তেমন আক্ষেপ নেই পাবেলো সিজারের। তাঁর ভাষায়, ‘রবীন্দ্রনাথের কবিতা ও বিশ্ব দর্শন সমকালীন।’ আগামী বছর বিশ্বব্যাপী ছবিটি মুক্তি দেওয়ার পরিকল্পনা আছে তাঁর। ইংরেজি, বাংলা ও স্প্যানিশ ভাষায় নির্মিত চলচ্চিত্রটির শুটিং হবে পশ্চিমবঙ্গের বোলপুর, শান্তিনিকেতন, আর্জেন্টিনার বুয়েন্স আইরেস ও ফ্রান্সের প্যারিসে। পর্দায় রবীন্দ্রনাথ চরিত্রে বলিউডের জনপ্রিয় অভিনেতা অমিতাভ বচ্চন অভিনয় করবেন বলেই আশা প্রকাশ করেছেন সিজার।
রবীন্দ্রনাথের সাহিত্যের সঙ্গে ভিক্টোরিয়ার যোগাযোগের শুরু ১৯১৪ সালে। ১৯১৩ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পরের বছর গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থটি ফরাসি ভাষায় অনুদিত হয়। সেই অনুবাদই পড়েছিলেন ভিক্টোরিয়া। আর তখন থেকেই রবীন্দ্রনাথের অনুরাগী ভিক্টোরিয়া।
তবে রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোর প্রথম দেখা আরও ১০ বছর পর, ১৯২৪ সালে। সে বছর পেরুর স্বাধীনতার শতবার্ষিকী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে জাহাজে করে রওনা দিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। কিন্তু আর্জেন্টিনার কাছাকাছি এসেই শীতে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। আর্জেন্টিনার বুয়েন্স আইরেসে জাহাজ ভেড়ানো হয়। দেশটির চিকিত্সকেরা তাঁকে বিশ্রামের পরামর্শ দেন।
সেই খবর শুনে হোটেলে কবির সঙ্গে দেখা করতে আসেন লাতিন আমেরিকার কবি ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো। বিস্তর ভৌগোলিক দূরত্বে বাস করলেও রবীন্দ্রনাথের গুণমুগ্ধ ছিলেন ভিক্টোরিয়া। হোটেলে থেকে কবিকে তাঁর বাড়ির কাছাকাছি সান ইসিদ্রে আরেকটি বাড়িতে থাকার ব্যবস্থা করে দেন। সেখানে কবি দুই মাস ছিলেন, লিখেছেন ৩০টির মতো কবিতা।
তখনই দুজন দুজনের কাজ ও ভাবনা সম্পর্কে সরাসরি জানতে পারেন। রবীন্দ্রনাথকে ছবি আঁকায় উত্সাহ দেন ভিক্টোরিয়া। ১৯২৫ সালে রবীন্দ্রনাথ পূরবী কাব্যগ্রন্থটি ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোকে উত্সর্গ করেন।
১৯৩০ সালে প্যারিসে রবীন্দ্রনাথের প্রথম চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করেন ভিক্টোরিয়া। সেই ছিল তাঁদের দ্বিতীয় ও শেষ দেখা। ১৯৪১ সালে রবীন্দ্রনাথ মৃত্যুবরণ করেন। ওকাম্পো মারা যান ১৯৭৯ সালে। কিন্তু আমৃত্যু তাঁদের দুজনের মধ্যে উষ্ণ, আন্তরিক বন্ধুত্বপূর্ণ সেই সম্পর্কটি ছিল, চলেছে চিঠি চালাচালি।
চলচ্চিত্র নির্মাতা সিজার জানিয়েছেন, রবীন্দ্রনাথ ও ভিক্টোরিয়া—দুজনের কেউই আর নেই। কিন্তু মানুষের মাঝেই তাঁদের কাজ রয়ে গেছে। দুজনের এমন এক ভক্ত সিলভেস্টার। যিনি ছোটবেলায় নিজের জীবনের প্রতি বিতৃষ্ণ হয়ে হাতে রবীন্দ্রনাথের বই নিয়ে শ্রেণীকক্ষের শেষ বেঞ্চটাতে বসে থাকতেন। ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোর বই পড়ে তিনি দেখেন, রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে তাঁর ভাবনার অনেক মিল। দুজনই মানবাত্মার মুক্তির জন্য লড়াই করে গেছেন। সিলভেস্টার এখন একটি কারা স্কুলে পড়ান। সেখানেই চলচ্চিত্রটির উদ্বোধনী শোয়ের আয়োজন করবেন সিজার।
সিজার জানালেন, এই চলচ্চিত্রে বর্তমান সময়ের সঙ্গে গত শতাব্দীর বিশের দশককেও তুলে ধরা হবে। দুজনের সম্পর্ক তুলে ধরার পাশাপাশি এ যুগে রবীন্দ্রনাথের প্রাসঙ্গিকতার ওপরই জোর দেওয়া হবে। চলচ্চিত্রটিতে তুলে ধরা হবে শিক্ষা, গ্রামীণ উন্নয়ন ও মানবতা নিয়ে রবীন্দ্রনাথের ভাবনা। তিনি যে তাঁর সময়ের চেয়ে ১০০ বছর এগিয়ে ছিলেন—মুগ্ধ সিজার সেটিও দর্শকের কাছে পৌঁছে দিতে চান।
সম্প্রতি বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাত্কারে পাবেলো সিজার জানালেন ভারতের সঙ্গে তাঁর পুরোনো সম্পর্কের গল্প। ১৯৯৬ সালে তিনি প্রথমবারের মতো ভারতের রাজস্থানে আসেন। শুটিং করেন ইউনিকরনিও-গার্ডেন অব ফ্রুটস চলচ্চিত্রের। এরপর আবার ভারতে আসেন ২০০৭ সালে, গোয়ায় অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উত্সবের বিচারক হিসেবে। পরের বছর আর্জেন্টিনায় ভারতের রাষ্ট্রদূত রঙ্গরাজ বিশ্বনাথন তাঁকে রবীন্দ্রনাথ ও ভিক্টোরিয়ার বিষয়টি নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণের ধারণা দেন।
সেই ভাবনাটা মনে ধরে সিজারের। এ বছর রবীন্দ্রনাথের সার্ধশত জন্মবার্ষিকীতে মুক্তি দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে কাজ শুরু করেন ‘থিংকিং অব হিম’ চলচ্চিত্রের। তবে চলচ্চিত্র নির্মাণ-পূর্ব কর্মকাণ্ডে বেশি সময় ব্যয় হওয়ায় এবার ছবিটি মুক্তি দিতে পারেননি তিনি।
তবে এ নিয়ে তেমন আক্ষেপ নেই পাবেলো সিজারের। তাঁর ভাষায়, ‘রবীন্দ্রনাথের কবিতা ও বিশ্ব দর্শন সমকালীন।’ আগামী বছর বিশ্বব্যাপী ছবিটি মুক্তি দেওয়ার পরিকল্পনা আছে তাঁর। ইংরেজি, বাংলা ও স্প্যানিশ ভাষায় নির্মিত চলচ্চিত্রটির শুটিং হবে পশ্চিমবঙ্গের বোলপুর, শান্তিনিকেতন, আর্জেন্টিনার বুয়েন্স আইরেস ও ফ্রান্সের প্যারিসে। পর্দায় রবীন্দ্রনাথ চরিত্রে বলিউডের জনপ্রিয় অভিনেতা অমিতাভ বচ্চন অভিনয় করবেন বলেই আশা প্রকাশ করেছেন সিজার।
রবীন্দ্রনাথের সাহিত্যের সঙ্গে ভিক্টোরিয়ার যোগাযোগের শুরু ১৯১৪ সালে। ১৯১৩ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পরের বছর গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থটি ফরাসি ভাষায় অনুদিত হয়। সেই অনুবাদই পড়েছিলেন ভিক্টোরিয়া। আর তখন থেকেই রবীন্দ্রনাথের অনুরাগী ভিক্টোরিয়া।
তবে রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোর প্রথম দেখা আরও ১০ বছর পর, ১৯২৪ সালে। সে বছর পেরুর স্বাধীনতার শতবার্ষিকী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে জাহাজে করে রওনা দিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। কিন্তু আর্জেন্টিনার কাছাকাছি এসেই শীতে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। আর্জেন্টিনার বুয়েন্স আইরেসে জাহাজ ভেড়ানো হয়। দেশটির চিকিত্সকেরা তাঁকে বিশ্রামের পরামর্শ দেন।
সেই খবর শুনে হোটেলে কবির সঙ্গে দেখা করতে আসেন লাতিন আমেরিকার কবি ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো। বিস্তর ভৌগোলিক দূরত্বে বাস করলেও রবীন্দ্রনাথের গুণমুগ্ধ ছিলেন ভিক্টোরিয়া। হোটেলে থেকে কবিকে তাঁর বাড়ির কাছাকাছি সান ইসিদ্রে আরেকটি বাড়িতে থাকার ব্যবস্থা করে দেন। সেখানে কবি দুই মাস ছিলেন, লিখেছেন ৩০টির মতো কবিতা।
তখনই দুজন দুজনের কাজ ও ভাবনা সম্পর্কে সরাসরি জানতে পারেন। রবীন্দ্রনাথকে ছবি আঁকায় উত্সাহ দেন ভিক্টোরিয়া। ১৯২৫ সালে রবীন্দ্রনাথ পূরবী কাব্যগ্রন্থটি ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোকে উত্সর্গ করেন।
১৯৩০ সালে প্যারিসে রবীন্দ্রনাথের প্রথম চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করেন ভিক্টোরিয়া। সেই ছিল তাঁদের দ্বিতীয় ও শেষ দেখা। ১৯৪১ সালে রবীন্দ্রনাথ মৃত্যুবরণ করেন। ওকাম্পো মারা যান ১৯৭৯ সালে। কিন্তু আমৃত্যু তাঁদের দুজনের মধ্যে উষ্ণ, আন্তরিক বন্ধুত্বপূর্ণ সেই সম্পর্কটি ছিল, চলেছে চিঠি চালাচালি।
চলচ্চিত্র নির্মাতা সিজার জানিয়েছেন, রবীন্দ্রনাথ ও ভিক্টোরিয়া—দুজনের কেউই আর নেই। কিন্তু মানুষের মাঝেই তাঁদের কাজ রয়ে গেছে। দুজনের এমন এক ভক্ত সিলভেস্টার। যিনি ছোটবেলায় নিজের জীবনের প্রতি বিতৃষ্ণ হয়ে হাতে রবীন্দ্রনাথের বই নিয়ে শ্রেণীকক্ষের শেষ বেঞ্চটাতে বসে থাকতেন। ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোর বই পড়ে তিনি দেখেন, রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে তাঁর ভাবনার অনেক মিল। দুজনই মানবাত্মার মুক্তির জন্য লড়াই করে গেছেন। সিলভেস্টার এখন একটি কারা স্কুলে পড়ান। সেখানেই চলচ্চিত্রটির উদ্বোধনী শোয়ের আয়োজন করবেন সিজার।
সিজার জানালেন, এই চলচ্চিত্রে বর্তমান সময়ের সঙ্গে গত শতাব্দীর বিশের দশককেও তুলে ধরা হবে। দুজনের সম্পর্ক তুলে ধরার পাশাপাশি এ যুগে রবীন্দ্রনাথের প্রাসঙ্গিকতার ওপরই জোর দেওয়া হবে। চলচ্চিত্রটিতে তুলে ধরা হবে শিক্ষা, গ্রামীণ উন্নয়ন ও মানবতা নিয়ে রবীন্দ্রনাথের ভাবনা। তিনি যে তাঁর সময়ের চেয়ে ১০০ বছর এগিয়ে ছিলেন—মুগ্ধ সিজার সেটিও দর্শকের কাছে পৌঁছে দিতে চান।
No comments