বৈষম্যমূলক নীতি :বাড়বে সার্টিফিকেট বাণিজ্য -বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা কার স্বার্থে? by সাবি্বর নেওয়াজ
দেশীয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে আইনের মারপ্যাঁচে ফেলে মানহীন বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা প্রতিষ্ঠার অনুমতি দিতে যাচ্ছে সরকার। এরই মধ্যে অনুমোদনের জন্য একটি নীতিমালার খসড়া প্রণয়ন করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। শিগগির এ নীতিমালা চূড়ান্ত করা হবে। দেশীয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোক্তারা বলছেন, সরকারের এ উদ্যোগ হবে দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে 'গলাটিপে হত্যা' করার শামিল। কোটি কোটি টাকা খরচ করে এসব
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছেন প্রতিষ্ঠাতারা। নিজস্ব অখণ্ড জমিতে এরই মধ্যে বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস স্থাপন করছে। মানসম্মত শিক্ষা দিতে দেশীয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে একটি ইতিবাচক প্রতিযোগিতাও সৃষ্টি হয়েছে। উপরন্তু আরও নতুন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন প্রক্রিয়া চলছে। এ অবস্থায় নতুন করে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়কে ডেকে আনা অনেকটা 'খাল কেটে কুমির আনা'র মতো। বেশ কয়েকজন উপাচার্য প্রশ্ন তুলে বলেন, বাংলাদেশে নিশ্চয়ই 'হার্ভার্ড' বা 'কেমব্রিজে'র মতো স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয় শাখা খুলতে আসবে না। যেসব বিশ্ববিদ্যালয় মানহীন প্রতিষ্ঠান হওয়ার কারণে নিজ দেশে শিক্ষার্থী পাচ্ছে না, তারাই স্টাডি সেন্টার প্রতিষ্ঠার নাম করে এ দেশে সার্টিফিকেট ব্যবসা করতে আসবে। এতে এ দেশে উচ্চশিক্ষার মহাবিপর্যয় ঘটে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকদের সংগঠন 'অ্যাসোসিয়েশন অব প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিস'-এর অন্যতম নেতা এবং ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের উপাচার্য প্রফেসর
ড. আবদুল মান্নান চৌধুরী সমকালকে বলেন, 'আমরা যারা আইন মেনে চলা নাগরিক তারা বড় বিপদে আছি। বিদেশি এমন অনেক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে, নিজ দেশেও যাদের ঠিকমতো অনুমোদন নেই। তারা এ দেশে আসতে চায় শিক্ষা বাণিজ্য করার জন্য। সার্টিফিকেট বিক্রি করে তারা দেশের টাকা বাইরে নিয়ে যেতে চায়।'
জানা গেছে, গত বছর প্রণীত 'বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১০'-এর ৩৯ ধারায় এ দেশে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা প্রতিষ্ঠার সুযোগ রাখা হয়। এই ধারার ২ উপ-ধারার ক্ষমতাবলে এখন নীতিমালা প্রণয়ন করে শাখা প্রতিষ্ঠার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে।
সূত্র জানায়, প্রস্তাবিত এ নীতিমালা বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ক্যাম্পাস পরিচালনার জন্য তৈরি করা হলেও তাতে এখন ট্রেনিং ও কোচিং সেন্টারের সুযোগও রাখা হচ্ছে। আবার বিশ্ববিদ্যালয়, শাখা ক্যাম্পাস, ট্রেনিং ও কোচিং সেন্টার বলতে কী বোঝানো হচ্ছে তা সঠিকভাবে সংজ্ঞায়িত না করায় এখানে বড় ধরনের অনিয়মের সুযোগ থেকে যাচ্ছে। দেশীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে ১ একর অখণ্ড জমিতে ক্যাম্পাস নির্মাণের দুরূহ বিধান রাখা হয়েছে। অথচ নবাগত স্বয়ংসম্পূর্ণ বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে ২৫ হাজার ও তার শাখা সেন্টার প্রতিষ্ঠায় ৩ হাজার বর্গফুটের ভাড়া বাড়িতেই চলবে বলে নির্ধারিত হতে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের বেলায় যদি এক একর অখণ্ড স্থায়ী ক্যাম্পাস মান নির্ণয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হবে, তাহলে বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে এই গুরুদায়িত্ব থেকে সম্পূর্ণ অব্যাহতি দেওয়া হচ্ছে কার স্বার্থে?
বেসরকারি ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ইউআইইউ) উপাচার্য প্রফেসর ড. রিজওয়ান খান সমকালকে বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০-এ ৬ শতাংশ শিক্ষার্থীকে বিনা বেতনে অধ্যয়নের সুযোগদান কার্যকর করার জন্য ব্যবস্থা নিলেও বিদেশি বিশ্ব্ববিদ্যালয় ও তার শাখার ক্ষেত্রে এ ধরনের কোনো শর্তারোপ করা হচ্ছে না। এসব প্রতিষ্ঠানে দূরশিক্ষণ, দূরক্যাম্পাসের সুযোগ রাখা হলেও দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য এ ধরনের কোনো নিয়ম নেই। এ কার্যক্রম বন্ধ করা হয়েছে।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন প্রতিষ্ঠাতা বলেন, বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় আইনের ওপর ভিত্তি করেই হওয়া বাঞ্ছনীয়। বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় একটি সম্পূর্ণ বেসরকারি প্রকৃতির বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ায় প্রচলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনের অন্যান্য শর্তের সঙ্গে নীতিমালাটি সঙ্গতিপূর্ণ হতে হবে। তাদের মতে, দেশি-বিদেশি সব বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য নির্ধারিত রিজার্ভ ফান্ডের টাকা ৫ কোটিতে নির্ধারণ করতে হবে। বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ছাড় দিয়ে ৩ কোটি নির্ধারণ করা অনুচিত। তারা বলেন, বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে নিম্নমানের কোনো বিদেশি প্রতিষ্ঠান যেন বাংলাদেশে শিক্ষাবাণিজ্য করতে না পারে তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। কেবল নামকরা ও খ্যাতনামা বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়কে বাংলাদেশে তাদের শাখা স্থাপনের অনুমতি দেওয়া যেতে পারে। অন্যথায় এ সুযোগে দেশি-বিদেশি ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশ থেকে উচ্চশিক্ষার নামে অর্থ পাচারের সুযোগ করে দেওয়া হবে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও বর্তমানে বেসরকারি 'ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস' (ইউল্যাব)-এর শিক্ষক অধ্যাপক আবদুল মান্নান সমকালকে বলেন, এ মুহূর্তে বাংলাদেশে কোনো বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা খোলার প্রয়োজন নেই। এটি দেশীয় বিশ্ববিদ্যালয়েগুলোর প্রতি বৈষম্যমূলক এবং দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করবে। তিনি বলেন, পাশের দেশ ভারত এখনও কোনো বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়কে ডিগ্রি দেওয়ার অনুমতি দেয়নি। তারা কিছু 'নন-ডিগ্রি শর্ট কোর্স' পরিচালনার অনুমতি তাদের দিয়েছে।
ইউজিসি চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. এ কে আজাদ চৌধুরী সমকালকে বলেন, বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা পরিচালনার নীতিমালার খসড়া প্রণয়নের ভার আমরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে দিয়েছি। কবে চূড়ান্ত করা হবে তা বলতে পারছি না। 'নীতিমালাটিকে দেশীয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকরা বৈষম্যমূলক বলছেন' জানানো হলে চেয়ারম্যান বলেন, সে রকম কিছু হলে তাদের (বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাতাদের) সঙ্গে আলাপ-আলোচনার সুযোগ রয়েছে।
ড. আবদুল মান্নান চৌধুরী সমকালকে বলেন, 'আমরা যারা আইন মেনে চলা নাগরিক তারা বড় বিপদে আছি। বিদেশি এমন অনেক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে, নিজ দেশেও যাদের ঠিকমতো অনুমোদন নেই। তারা এ দেশে আসতে চায় শিক্ষা বাণিজ্য করার জন্য। সার্টিফিকেট বিক্রি করে তারা দেশের টাকা বাইরে নিয়ে যেতে চায়।'
জানা গেছে, গত বছর প্রণীত 'বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১০'-এর ৩৯ ধারায় এ দেশে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা প্রতিষ্ঠার সুযোগ রাখা হয়। এই ধারার ২ উপ-ধারার ক্ষমতাবলে এখন নীতিমালা প্রণয়ন করে শাখা প্রতিষ্ঠার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে।
সূত্র জানায়, প্রস্তাবিত এ নীতিমালা বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ক্যাম্পাস পরিচালনার জন্য তৈরি করা হলেও তাতে এখন ট্রেনিং ও কোচিং সেন্টারের সুযোগও রাখা হচ্ছে। আবার বিশ্ববিদ্যালয়, শাখা ক্যাম্পাস, ট্রেনিং ও কোচিং সেন্টার বলতে কী বোঝানো হচ্ছে তা সঠিকভাবে সংজ্ঞায়িত না করায় এখানে বড় ধরনের অনিয়মের সুযোগ থেকে যাচ্ছে। দেশীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে ১ একর অখণ্ড জমিতে ক্যাম্পাস নির্মাণের দুরূহ বিধান রাখা হয়েছে। অথচ নবাগত স্বয়ংসম্পূর্ণ বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে ২৫ হাজার ও তার শাখা সেন্টার প্রতিষ্ঠায় ৩ হাজার বর্গফুটের ভাড়া বাড়িতেই চলবে বলে নির্ধারিত হতে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের বেলায় যদি এক একর অখণ্ড স্থায়ী ক্যাম্পাস মান নির্ণয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হবে, তাহলে বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে এই গুরুদায়িত্ব থেকে সম্পূর্ণ অব্যাহতি দেওয়া হচ্ছে কার স্বার্থে?
বেসরকারি ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ইউআইইউ) উপাচার্য প্রফেসর ড. রিজওয়ান খান সমকালকে বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০-এ ৬ শতাংশ শিক্ষার্থীকে বিনা বেতনে অধ্যয়নের সুযোগদান কার্যকর করার জন্য ব্যবস্থা নিলেও বিদেশি বিশ্ব্ববিদ্যালয় ও তার শাখার ক্ষেত্রে এ ধরনের কোনো শর্তারোপ করা হচ্ছে না। এসব প্রতিষ্ঠানে দূরশিক্ষণ, দূরক্যাম্পাসের সুযোগ রাখা হলেও দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য এ ধরনের কোনো নিয়ম নেই। এ কার্যক্রম বন্ধ করা হয়েছে।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন প্রতিষ্ঠাতা বলেন, বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় আইনের ওপর ভিত্তি করেই হওয়া বাঞ্ছনীয়। বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় একটি সম্পূর্ণ বেসরকারি প্রকৃতির বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ায় প্রচলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনের অন্যান্য শর্তের সঙ্গে নীতিমালাটি সঙ্গতিপূর্ণ হতে হবে। তাদের মতে, দেশি-বিদেশি সব বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য নির্ধারিত রিজার্ভ ফান্ডের টাকা ৫ কোটিতে নির্ধারণ করতে হবে। বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ছাড় দিয়ে ৩ কোটি নির্ধারণ করা অনুচিত। তারা বলেন, বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে নিম্নমানের কোনো বিদেশি প্রতিষ্ঠান যেন বাংলাদেশে শিক্ষাবাণিজ্য করতে না পারে তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। কেবল নামকরা ও খ্যাতনামা বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়কে বাংলাদেশে তাদের শাখা স্থাপনের অনুমতি দেওয়া যেতে পারে। অন্যথায় এ সুযোগে দেশি-বিদেশি ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশ থেকে উচ্চশিক্ষার নামে অর্থ পাচারের সুযোগ করে দেওয়া হবে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও বর্তমানে বেসরকারি 'ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস' (ইউল্যাব)-এর শিক্ষক অধ্যাপক আবদুল মান্নান সমকালকে বলেন, এ মুহূর্তে বাংলাদেশে কোনো বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা খোলার প্রয়োজন নেই। এটি দেশীয় বিশ্ববিদ্যালয়েগুলোর প্রতি বৈষম্যমূলক এবং দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করবে। তিনি বলেন, পাশের দেশ ভারত এখনও কোনো বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়কে ডিগ্রি দেওয়ার অনুমতি দেয়নি। তারা কিছু 'নন-ডিগ্রি শর্ট কোর্স' পরিচালনার অনুমতি তাদের দিয়েছে।
ইউজিসি চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. এ কে আজাদ চৌধুরী সমকালকে বলেন, বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা পরিচালনার নীতিমালার খসড়া প্রণয়নের ভার আমরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে দিয়েছি। কবে চূড়ান্ত করা হবে তা বলতে পারছি না। 'নীতিমালাটিকে দেশীয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকরা বৈষম্যমূলক বলছেন' জানানো হলে চেয়ারম্যান বলেন, সে রকম কিছু হলে তাদের (বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাতাদের) সঙ্গে আলাপ-আলোচনার সুযোগ রয়েছে।
No comments