সূর্যকিরণে পানি জীবাণুমুক্ত-এমন প্রত্যাশাই বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিকেল ফিজিক্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগ সূর্যকিরণের সাহায্যে নদী, খাল-বিল ও পুকুরের পানি আর্সেনিক ও জীবাণুমুক্ত করার এক সহজ ও সাশ্রয়ী পদ্ধতি আবিষ্কার করেছে। এর ফলে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের মানুষ আর্সেনিকমুক্ত পানি নিজেরাই পেতে সক্ষম হবে। শুধু তাই নয়, পানিতে যেসব ক্ষতিকারক জীবাণুু থাকে তা থেকেও মুক্ত করতে পারবে এ ব্যবস্থা। এটাকে জীবনাশ্রয়ী গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার বলা চলে।
এ ধরনের আবিষ্কার যত বেশি হবে ততই মানুষের জীবন হবে অধিকতর নিরাপদ এবং এতে নতুন নতুন জীবিকার পথও খুলে যাবে। আসলে আধুনিক সভ্যতার অবদান রাখতে সক্রিয় অংশ হতে হলে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে নতুন আবিষ্কারের বিকল্প নেই। এটাকে জ্ঞানের খেলাও বলা যেতে পারে। সে জন্য যে জাতির জ্ঞানভাণ্ডার যত সমৃদ্ধ এবং যারা যত বেশি কর্মোদ্যোগী তারা তাদের নিজের জাতীয় উন্নয়নে যেমন অগ্রগামী থাকেন, তেমনি বিশ্বের এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রেও প্রণোদনা জোগান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বখ্যাত বেশ ক'জন বিজ্ঞানী, দার্শনিকসহ নানা ক্ষেত্রে উদ্ভাবকের পদচারণায় এক সময় জ্ঞানের পাদপ্রদীপের আলোয় উদ্ভাসিত হলেও গত কয়েক দশকে সেই ঐতিহ্য নানা কারণে হারিয়ে ফেলে। এখনও জ্ঞান-বিজ্ঞান, প্রযুক্তিতে দিশারীর ভূমিকা পালনের ক্ষেত্রে পুরনো বাধাগুলো পথ আগলে আছে। তবে, এতসব প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও নিজেদের ইচ্ছাশক্তি ও সীমিত সুযোগকে কাজে লাগিয়েও যে নতুন নতুন সৃষ্টিশীল জনমুখী আবিষ্কারে সফলকাম হওয়া সম্ভব, সূর্যকিরণে পানি জীবাণুমুক্ত করার নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবন তারই প্রমাণ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ও শিক্ষকদের উচিত শিক্ষার্থীদের উপযুক্ত ও যুগোপযোগী শিক্ষা প্রদান এবং তারা যাতে স্ব-স্ব ক্ষেত্রে নতুন উদ্ভাবনায় উৎসাহী হয় তার জন্য সহায়ক উন্মুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করা। পানিকে আর্সেনিক দূষণ ও জীবাণুমুক্ত করার এই পদ্ধতি অনেকটা উন্মুক্ত। নদী, খাল-বিল এবং পুকুরের পানিকে দুই ঘণ্টা সূর্যকিরণের নিচে রেখে দিলেই সেগুলো পরিশুদ্ধ হয়ে যায়। আমাদের গ্রামাঞ্চলে অধিকাংশ রোগই পানিবাহিত। এই নতুন পদ্ধতি ব্যবহারের ফলে গ্রামাঞ্চলের সাধারণ মানুষ পানিবাহিত রোগ থেকে মুক্ত থাকতে সক্ষম হবেন। পানি পরিশুদ্ধ করার সহজ পদ্ধতি উদ্ভাবনের জন্য আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিকেল ফিজিক্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের অভিনন্দন জানাই। আমরা চাই, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পুনরায় জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় অতীতে যেভাবে অবদান রাখত, একই উচ্চতায় নিজেকে পুনরায় প্রতিষ্ঠা করুক।
No comments