মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশীদের অপহরণ, হত্যা
বাংলাদেশী শ্রমিকদের অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবি করা হচ্ছে মালয়েশিয়ায়।
দাবিকৃত অর্থ না পেয়ে কোনো কোনো ক্ষেত্রে অপহৃত বাংলাদেশী শ্রমিকদের হত্যা
করা হচ্ছে। লাশ ফেলে রাখা হচ্ছে। সম্প্রতি এমনই দুটি ঘটনা ঘটে গেছে। দুই
বাংলাদেশী শ্রমিককে অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবি করা হয়েছে ৫০ হাজার রিঙ্গিত।
তার পরিবার ২৭ হাজার রিঙ্গিত দিয়েছে। তাতে চাহিদা পূরণ হয় নি অপহরণকারীদের।
তারা ওই দুই বাংলাদেশীকে হত্যা করে লাশ ফেলে রাখে জেনটিং হাইল্যান্ডস
এলাকায়। অন্যদিকে কয়েকদিন আগে আরেক বাংলাদেশী শ্রমিককে অপহরণ করা হয়।
একইভাবে মুক্তিপণ দাবি করা হয় ৪ লাখ রিঙ্গিত। বাংলাদেশে তার স্ত্রী ও
পরিজনের বুদ্ধিমত্তায় রেহাই পান তিনি। তাকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। মালয়েশিয়ার
জনপ্রিয় পত্রিকা স্টার এ খবর দিয়েছে। খবরে বলা হয়, অপহরণের এ চক্রে জড়িত
মালয়েশিয়া, মিয়ানমার ও বাংলাদেশী। তাদের কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চক্রটি কয়েককদিন আগে অপহরণ করে এক বাংলাদেশী
শ্রমিককে। তাকে জিম্মি করে তারা বাংলাদেশে অবস্থানরত তার স্ত্রী ও পরিবারকে
ফোন দেয়। মুক্তিপণ হিসেবে দাবি করে ৪ লাখ রিঙ্গিত। উপায়হীন হয়ে পড়েন ওই
শ্রমিকের স্ত্রী। তিনি ৩০ হাজার রিঙ্গিতে মিটমাট করেন। অনলাইনে বেশ কিছু
অর্থ তাদের পরিশোধও করেন। সঙ্গে সঙ্গে মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত এক আত্মীয়ের
সঙ্গে যোগাযোগ করেন তিনি। তাকে জানান আদ্যোপান্ত। সব শুনে এই বাংলাদেশী
যোগাযোগ করেন মালয়েশিয়ার পুলিশের সঙ্গে। ফলে পুলিশ অভিযানে নামে। উদ্ধার
করে অপহৃত বাংলাদেশীকে। তবে উদ্ধার হওয়া বাংলাদেশীর নাম, পরিচয় প্রকাশ করা
হয নি। বলা হয়েছে, এ ঘটনাটি ঘটেছে সুবাং জয়ায়। সেখানে একটি স্টোরে কম বেতনে
চাকরি করেন ওই বাংলাদেশী শ্রমিক (৩৯)। তার ওপর চোখ পড়ে অপহরণকারী চক্রের।
তারা তাকে অপহরণ করে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা করে। সুবাং
জয়ার ওসি এসিসট্যান্ট কমান্ডার ইয়াহিয়া রামলি বলেন, ইউএসজে ১৪ নামের
স্টোরে কর্মরত থাকা অবস্থায় ২২ জানুয়ারি রাত সাড়ে নয়টায় তাকে অপহরণ করে
চক্রটি। এর মধ্যে রয়েছে দু’জন মালয়েশিয়ান। তারা একটি সাদা গাড়ি নিয়ে তাকে
অপহরণ করতে যায়। বাংলাদেশী ওই শ্রমিককে অপহরণ করে তার কাছ থেকে বাংলাদেশে
তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগের মোবাইল ফোন নম্বর নেয়। তাদেরকে ফোন দিয়ে চার
লাখ রিঙ্গিত দাবি করে মুক্তিপণ হিসেবে। হুমকি দেয়, যদি এ অর্থ দিতে ব্যর্থ
হয় তারা তাহলে তাকে হত্যা করা হবে। ইয়াহিয়া রামলি বলেন, এ অবস্থায় শুক্রবার
অপহৃত বাংলাদেশীর স্ত্রী মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত এক আত্মীয়কে ফোন করে সব
ঘটনা খুলে বলেন। এ কথা জেনে ওই আত্মীয় সময় নষ্ট করেন নি। তিনি সরাসরি
পুলিশে অভিযোগ দেন। পুলিশও নেমে পড়ে অভিযানে। ওদিকে অপহৃতকে উদ্ধার করতে
মরিয়া হয়ে পড়ে দেশে থাকা তার আত্মীয়রা। তারা অপহরণকারীদের সঙ্গে ৩০ হাজার
রিঙ্গিতের একটি সমঝোতায় পৌঁছেন। এ অর্থ অনলাইনে পাঠিয়ে দেয়া হয় বাংলাদেশ
থেকে। অপরাধে জড়িত থাকায় ২৫ জানুয়ারি সেমেনিয়ে এলাকার একটি রেস্তোরাঁয় থেকে
পুলিশ আটক করে মিয়ানমারের দু’শ্রমিককে। তাদের বয়স ২৩ বছর ও ৩৩ বছর। তারাই
পুলিশকে দেখিয়ে দেয় মূল হোতাদের। বলে দেয়, কোথায় লুকিয়ে রাখা হয়েছে ওই
বাংলাদেশীকে। ওসি ইয়াহিয়া রামলি বলেন, এরপরই আমরা ৪২ বছর বয়সী এক
মালয়েশিয়ানকে গ্রেপ্তার করি। আমাদের ধারণা সে-ই এই অপরাধের মূল হোতা। তাকে
গ্রেফতার করি বাতু কেভসের একটি হোটেল কক্ষ থেকে। এই ব্যক্তি মালয়েশিয়ায় ৬টি
বাণিজ্যিক অপরাধের সঙ্গে যুক্ত। তার নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আছে। তার কাছ
থেকে পুলিশ উদ্ধার করেছে তিনটি মোবাইল ফোন। অপহৃত বাংলাদেশীর মানিব্যাগ।
তাতে ছিল দুই হাজার রিঙ্গিত নগদ অর্থ। এ ছাড়া মালয়েশিয়ার ওই অপরাধীর কাছ
থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ভুয়া অথরিটি কার্ড, প্রধানমন্ত্রীর ন্যাশনাল
সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্ট স্পেশাল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের একটি ব্যাজ। এ ঘটনার
দু’দিন পরে পুলিশ সাঙ্গাই রিক্রিয়েশনাল ফরেস্ট এলাকা থেকে উদ্ধার করে ওই
বাংলাদেশীকে। সেখানে পাওয়া যায় ১৯ বছর বয়সী মিয়ানমারের এক শ্রমিককে। তাকেও
গ্রেফতার করা হয়েছে। তার সঙ্গে থাকা এক বাংলাদেশী ও মিয়ানমারের এক নাগরিক
পালিয়ে যায়। পুলিশ আরও আটক করেছে ২৭ বছর বয়সী একজন গ্রাফিক ডিজাইনারকে।
তারা অনলাইনে যে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে তার সাত হাজার রিঙ্গিত এরই মধ্যে
উদ্ধার করেছে পুলিশ। উল্লেখ্য, গত মাসে জেনটিং হাইল্যান্ডসের কাছে একটি
জঙ্গল থেকে অপহৃত দুই বাংলাদেশী শ্রমিকের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এর
মধ্যে একজনের পরিবার অপহরণকারীদের ২৭ হাজার রিঙ্গিত মুক্তিপণ দিয়েছে।
অপহরণকারীদের দাবি ছিল ৫০ হাজার রিঙ্গিত। দাবিকৃত অর্থ না পেয়ে তারা হত্যা
করেছে ওই দুই বাংলাদেশীকে।
No comments