কারা কী জোট করল যায় আসে না: মমতা
বাম-কংগ্রেস জোট সম্ভাবনাকে 'উপেক্ষা' করে দলকে একক শক্তির উপর ভরসা রাখতে বললেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ দলের অন্দরের খবর, শনিবার কালীঘাটে তৃণমূলের জেলাওয়াড়ি বৈঠকে মমতা বলেছেন, 'কারা কোথায় কী জোট করল সে সব নিয়ে দলের ভয় পাওয়ার কিছু নেই৷ সরকারের পাঁচ বছরের কাজের সুবাদে তৃণমূল 'একক শক্তিতে'ই অবলীলায় ক্ষমতায় ফিরবে৷' ওই বৈঠকে মমতা জানান, চলতি মাসের ২৯ তারিখ থেকে মার্চের ২ তারিখের মধ্যে বিধানসভা ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণা করতে পারে নির্বাচন কমিশন৷ সেইমতো প্রস্ত্তত হতে হবে৷ মার্চ থেকে তিনি নিজেই প্রচারে নামবেন৷ ৎ মাত্র দু'দিন আগে, বৃহস্পতিবার দিল্লি থেকে ফিরে সাংসদ মুকুল রায় কলকাতা বিমানবন্দরে বলেছিলেন তৃণমূলের কোনও জোট করার প্রয়োজন নেই৷ তিনি জোট করতে দিল্লি যাননি বলেও জানিয়েছিলেন মুকুল৷ ঠিক তার পরের দিন, শুক্রবার দিল্লিতে দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে কংগ্রেসের সহ-সভাপতি রাহুল গান্ধী ইঙ্গিত দেন, তাদের সামনে যে তিনটি পথ খোলা আছে তার একটি হল তৃণমূলের সঙ্গে জোট করে ভোটে লড়া৷ কিন্ত্ত মমতা-সহ তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের কন্ঠে এখনও জোটের রাস্তা খোলা রাখার কোনও ইশারা-ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে না৷ বাংলার শাসকদল শেষ পর্যন্ত যাই করুক না কেন, মুখে অন্তত দলকে একক শক্তিতে ভরসা রাখার কথাই বলছেন শীর্ষ নেতারা৷ নির্বাচন কমিশন সূত্রের খবর, এই সপ্তাহেই ফের কলকাতায় আসতে পারেন উপ-নির্বাচন কমিশনার সন্দীপ সাক্সেনা৷ তিনি পুলিশ-প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করার পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলির সঙ্গেও কথা বলবেন৷ রাজ্য নির্বাচন দপ্তর সূত্রে জানানো হয়েছে, সাক্সেনার চূড়ান্ত কর্মসূচি এ দিন পর্যন্ত তাদের কাছে আসেনি৷ ১২ ফেব্রুয়ারি নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে তৃণমূলের জেনারেল কাউন্সিলের বৈঠক৷ ২০ তারিখ তিনি কলকাতা জেলাকে নিয়ে বসবেন৷ শনিবারই মমতা দলকে নির্দেশ দিয়েছেন, ১২ তারিখের পর থেকে ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে কর্মীদের পুরোদমে প্রচারে নেমে পড়তে হবে৷ বড় মিটিং-মিছিলের চেয়ে মমতা বাড়ি বাড়ি যাওয়াকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন৷ কর্মীদের চাঙ্গা করতে মুকুল মনে করিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলাতেই ২০০৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে পরিবর্তনের প্রথম ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছিল৷ দলের যুব সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও নেতাদের বাড়ি বাড়ি যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন৷ ভোট যত এগিয়ে আসছে, তৃণমূলের নেতাদের মধ্যে টিকিট পাওয়ার আকুতিও ততই বাড়ছে৷ বহুদিন প্রচারের বাইরে থাকা সাসপেন্ড হওয়া নেতা শঙ্কুদেব পন্ডা হঠাত্ করেই তার শাস্তি প্রত্যাহার এবং টিকিট জোগাড়ের জন্য তৎপর হয়ে উঠেছেন বলে সূত্রের খবর৷ ইতিমধ্যেই শঙ্কু দলের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের চেষ্টাও শুরু করেছেন৷ তবে দলের কেউই তাকে নিয়ে টুঁ শব্দটি পর্যন্ত করতে রাজি নন৷ সাসপেন্ড হওয়া ইস্তক শঙ্কু নিজেও সংবাদমাধ্যমকে এড়িয়েই চলছেন৷ তবে এখন তিনি পূর্ব মেদিনীপুরের ময়না থেকে ভোটে দাঁড়ানোর চেষ্টা শুরু করেছেন বলেও একটি সূত্রের দাবি৷ সদ্য শাস্তি ওঠা প্রাক্তন বিধায়ক আরাবুল ইসলামকে বহুদিন পর শনিবার শীর্ষ নেত্রীর বাড়ির বৈঠকে দেখা গিয়েছে৷ জোট প্রসঙ্গ ছাড়াও শনিবারের বৈঠকে সুনির্দিষ্ট ভাবে কয়েকটি আসনের প্রার্থী নিয়ে ইঙ্গিত দিয়েছেন নেত্রী৷ বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার সোনালি গুহ এ বার আর সাতগাছিয়ে থেকে টিকিট পাবেন না বলে এতদিন বহু জল্পনা চলেছে দলে৷ এ দিনের বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী কিন্ত্ত সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, সোনালি এ বারও সাতগাছিয়া থেকেই ভোটে দাঁড়াবেন৷ সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, 'সোনালি অনেক দিনের কর্মী৷ ও এলাকায় কম যায়৷ কিন্ত্ত সোনালিই সাতগাছিয়া থেকেই লড়বে৷ আপনারা একটু দেখে নেবেন৷' অর্থাত্ শুধু সোনালির টিকিট নিশ্চিত করে দেওয়াই নয়, জেলা নেতৃত্ব যাতে তাকে পূর্ণ সহযোগিতা করেন, অল্প কথায় সেই নির্দেশও দিয়েছেন তিনি৷ সোনালি ছাড়াও বৈঠকে উঠেছিল দেবশ্রী রায়ের টিকিট পাওয়ার প্রসঙ্গও৷ সূত্রের খবর, দেবশ্রীকে নিয়ে দলের অন্দরের কিছু চর্চা খোদ নেত্রীর কানে পৌঁছেছে৷ যারা সেই চর্চা করছেন তাদের প্রতি মুখ্যমন্ত্রী বিরক্তি প্রকাশ করেছেন বলেও সূত্রের খবর৷ বৈঠকে খোদ নেত্রীই প্রশ্ন করতে শোনা গিয়েছে ,'যারা দেবশ্রীকে নিয়ে নানা কথা বলছে তাদের কী যোগ্যতা আছে৷' সোনালির মতো দেবশ্রীর বিরুদ্ধেও এলাকায় কম যাওয়ার অভিযোগ আছে দলেরই অন্দরে৷ দেবশ্রীকে যারা চর্চার খোরাক করেছেন, তাদের প্রতি বিরক্তি প্রকাশ করলেও মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য কারও নাম না-করে একথাও বুঝিয়ে দিয়েছেন এলাকায় সময় না দেওয়া জনপ্রতিনিধিদের উপর তিনি রুষ্ট৷ তাকে বলতে শোনা গিয়েছে, 'এলাকায় যাব না, ভোটের টিকিট পাব, এসব চলবে না৷'
No comments