মোড়ল ও মেয়র এক নয় by সৈয়দ আবুল মকসুদ
মাদকনগর,
ইয়াবাগঞ্জ প্রভৃতি পৌরসভার মেয়র ও কমিশনার নির্বাচনের দামামা বেজে উঠেছে।
কোনো কোনো ভূখণ্ডে যেকোনো ধরনের নির্বাচনের কথা উঠলেই সৎ-যোগ্য
প্রার্থীরা বসা থেকে তড়াক করে দাঁড়িয়ে যান। ইয়াবাগঞ্জ, মাদকনগরের
ক্ষেত্রেও তা-ই ঘটেছে। এ মাটিতে সাম্প্রতিক সময়ে যেকোনো নির্বাচনেই বিরল
ব্যতিক্রম ছাড়া সৎ ও যোগ্য প্রার্থীরাই অতি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের
মাধ্যমে জনগণের প্রতিনিধি নির্বাচিত হন। তবে প্রতিটি নির্বাচনেই সবচেয়ে
বেশি যা হয়, তা হলো বঙ্গসন্তানদের সততার পরীক্ষা এবং বিশেষভাবে প্রকাশ পায়
বাঙালির বিমল চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য।
২০০৮ সালের আগে কোনো সমস্যা ছিল না। জামানত দিয়ে নির্বাচনে দাঁড়িয়ে গেলেই হতো, আমলনামা প্রকাশের প্রয়োজন ছিল না। ২০০৮-এ নাগরিক সমাজের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে কিছুটা নির্বাচনী সংস্কার হয়। প্রার্থীদের সম্পর্কে কয়েকটি তথ্য জানার অধিকার ভোটারদের দেওয়া হয়েছে। হলফনামা বাধ্যতামূলক। না দিলে প্রার্থিতা বাতিল হবে। প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা। তাঁর আয়ের উৎস। তিনি ঋণখেলাপি কি না। ফৌজদারি মামলা তাঁর মাথার ওপরে ঝুলছে কি না। কোন মামলায় অভিযুক্ত হয়ে শ্রীঘরে কত দিন ছিলেন। দুই বছরের বেশি জেলের ভাত খেলে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার আশায় গুড়ে বালি। প্রার্থীদের সর্বোচ্চ ব্যয়ের সীমা বেঁধে দিয়েছে জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা কর্তৃপক্ষ (জানিপক)। কিন্তু এ মাটিতে কার পিতা-পিতামহের ঘাড়ে কয়টি মাথা যে কাউকে কিছু বেঁধে দেয় এবং তা মানতে বাধ্য করে।
মন্তাজুদ্দিন মিয়া মাদকনগরের কয়েকজন মেয়র প্রার্থীর একজন। তাঁর বিরুদ্ধে খুনখারাবির মামলার সংখ্যা ১৩। সিকিম আলি সক্কু ইয়াবানগর পৌরসভার অন্যতম মেয়র প্রার্থী। তাঁর বিরুদ্ধে থানায় কী পরিমাণ মামলা হয়েছে, তা বড় দারোগার পক্ষেও বলা সম্ভব নয়, পুরোনো কাগজপত্র না ঘেঁটে। কিন্তু সততার প্রশ্নে তাঁরা উভয়ই শতভাগ খাঁটি। তাঁদের দলীয় পিতৃ প্রতিষ্ঠানে তাঁদের উভয়েরই দাম সংগঠনগুলোর যেকোনো নেতার চেয়ে বেশি। বাংলার মাটিতে যাঁর বিরুদ্ধে যত বেশি ফৌজদারি মামলা, তিনি তত বড় নেতা।
সক্কু মিয়া ও মন্তাজুদ্দিনের সততার প্রশ্নে মিডিয়ার ছোকরামতো রিপোর্টাররা সন্দেহ প্রকাশ করলেও তাঁদের ক্যাডারদের কিছুমাত্র সন্দেহ নেই। সক্কু মিয়া সদলবলে প্রচারাভিযানে বেরিয়ে যাঁকে সামনে পাচ্ছেন, তাঁকেই বুকে জড়িয়ে ধরছেন। ইয়াবাগঞ্জে একতলা কাঁচাপাকা ঘরই বেশি। তিনি তাঁর ভোটারদের বলছেন, তিনি নির্বাচিত হলে পৌরসভাকে ক্যালিফোর্নিয়ার কোনো একটি পৌরসভার মতো আধুনিক ও তকতকে-ঝকঝকে করে ফেলবেন।
প্রার্থীদের খুনখারাবির অভিযোগ, সন্ত্রাসী তৎপরতা, অবৈধ উপার্জন, আয়কর না দেওয়া প্রভৃতির সঙ্গে জাল ভোট, কেন্দ্র দখল, সূক্ষ্ম ও মোটা কারচুপি প্রভৃতি আমাদের নির্বাচনী বৈশিষ্ট্য। এভাবে যাঁরা নির্বাচিত হন, তাঁদের থেকে মানুষ কী আশা করতে পারে?
সক্কু মিয়া যে হলফনামা জমা দিয়েছেন তাতে দেখা যায়, তাঁর স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ একজন ঠেলাগাড়িচালকের চেয়ে সামান্য বেশি। নগদ অর্থের পরিমাণ ১ হাজার ১৫০ টাকা। হলফনামা পূরণের সময় তাঁর এক ক্যাডার, যার দুই হাতে দুটি মোবাইল ফোন। বলল, এত কম দিলেন, মানুষ তো বিশ্বাস করবে না। প্রার্থী তাঁর মাফলারটি গলায় ঝাপটা মেরে প্যাঁচ দিয়ে খেঁকিয়ে উঠলেন। বললেন, তুই একটা রামছাগল। ছাগল না হইলে তোরে আমি পাঠাইলাম টেকনাফ। নিজে ধরা খাইয়া দুই মাস তো জেল খাটলিই, দেড় লাখ পিস আমার জিনিস নিয়া ধরা পড়লি। আরে ছাগল, নগদ টাকা তো আমার কাছে এই মুহূর্তে ১ হাজার ১৫০ টাকাই আছে।
আরেক প্রার্থীর শ্যালক ঝড়ু মিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের বিদ্যার্থী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। ছেলেটি খুব খারাপ না। চাঁদাবাজি নিজে করে না। অন্যেরা করে যা দেয়, তাতেই সে সন্তুষ্ট। সে দুলাভাইকে বলল, আপনি যে এতগুলা খুনের মামলার আসামি, আমাগো বিরুদ্ধ পার্টি এই নিয়া যদি ভোটারগো হাত করে?
প্রার্থী বলেন, তুই তোর বইনের লাগান হস নাই। তোর বুদ্ধি বড়ই কাঁচা। অপরাধ কী জিনিস তা আমি বুঝি। কারণ, আমি জীবনে ফৌজদারি অপরাধ কইরাই এই জায়গায় আইছি। তা না হইলে পার্টি আমারে নমিনেশন দেয়? পৌরসভাকে অপরাধমুক্ত করা আমার পক্ষেই সম্ভব। কারণ, আমি অপরাধ কী জিনিস তা জানি আর অপরাধীরে দেখলেই চিনতে পারি।
মাদকনগর ও ইয়াবাগঞ্জ আগে ছিল গ্রামের বাজার। সন্ধ্যার পর এখানে-ওখানে বসত তাসের আড্ডা। একটু আড়ালমতো জায়গায় বসত হেরোইন ও ইয়াবাসেবীদের আসর। আওয়াজ উঠল বাজার কমিটি কথাটা ভালো শোনায় না, পৌরসভা বানাইতে হইব। যেমন ঢাকা ছিল একদিন পৌরসভা, এখন সিটি করপোরেশন এবং তাও একটি নয়, দুটি। যেমন জেলাগুলোকে করা হচ্ছে বিভাগ। ডিভিশনাল কমিশনারের কী কাজ তা একমাত্র তিনিই জানেন, জনগণ নয়। যে রকম দাবি উঠছে প্রেসক্লাবের সামনের রাস্তা থেকে, তাতে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর আগেই সব জেলাকে বিভাগে পরিণত না করে কোনো সরকার ক্ষমতায় টিকতে পারবে না। বাংলার মাটিতে নামটিই আসল—কাম নয়। যেমন আক্কেল আলি কলেজ কেমন-কেমন শোনায়, সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেওয়া হলো: আক্কেল আলি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ। তেমনি গ্রামগঞ্জের বাজারগুলোকে ‘শহর’ বানাতে করা হয়েছে পৌরসভা। সেটির যিনি শাসক হবেন, তাঁর পদবি মেয়র।
প্রতিটি শব্দের একটি অর্থ আছে, আর আছে তাৎপর্য ও মর্যাদা। পৌরসভা শব্দটির অন্য রকম দ্যোতনা। মেয়র শব্দটির মর্যাদা আলাদা, বাজার কমিটির সভাপতির মতো নয়। বড় দলের মেয়র প্রার্থীদের কেউ মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময়ই যদি অতিরিক্ত মদ্যপানে মারা যান, তিনি জীবিত থাকলে নির্ঘাত নির্বাচিত হতেন, তা পৌরসভার নেশাকারীদের জন্য হতো আশীর্বাদ। প্রার্থীদের খুনখারাবির অভিযোগ, সন্ত্রাসী তৎপরতা, অবৈধ উপার্জন, আয়কর না দেওয়া প্রভৃতির সঙ্গে জাল ভোট, কেন্দ্র দখল, সূক্ষ্ম ও মোটা কারচুপি প্রভৃতি আমাদের নির্বাচনী বৈশিষ্ট্য। এভাবে যাঁরা নির্বাচিত হন, তাঁদের থেকে মানুষ কী আশা করতে পারে?
পল্লি আর শহর এক জিনিস নয়। গ্রামের মোড়ল আর শহরের পৌরসভার মেয়র এক রকম নয়। ছোট-বড় শহরগুলোতে স্বশাসিত পৌরসভা বা মিউনিসিপ্যালটির ব্যবস্থা গড়ে ওঠে ফ্রান্স, ব্রিটেন ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে কয়েক শতাব্দী আগে। আমাদের যেসব মফস্বলের হাটবাজার পৌরসভায় প্রমোশন পেয়েছে, এখন দরকার সেগুলোতে নাগরিক সুবিধা বাড়ানো। বিশেষ করে যে বিষ ছড়িয়ে পড়েছে আজ দেশের প্রতিটি এলাকায়, সেই সন্ত্রাস ও মাদক থেকে পৌরসভাগুলোকে মুক্ত রাখা পৌর কর্তৃপক্ষের প্রধানতম দায়িত্ব। সেই দায়িত্ব পালনে যাঁরা সক্ষম, তাঁদেরই মানুষ নির্বাচিত করবেন, এই প্রত্যাশা করি।
সৈয়দ আবুল মকসুদ: গবেষক, প্রাবন্ধিক ও কলাম লেখক৷
২০০৮ সালের আগে কোনো সমস্যা ছিল না। জামানত দিয়ে নির্বাচনে দাঁড়িয়ে গেলেই হতো, আমলনামা প্রকাশের প্রয়োজন ছিল না। ২০০৮-এ নাগরিক সমাজের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে কিছুটা নির্বাচনী সংস্কার হয়। প্রার্থীদের সম্পর্কে কয়েকটি তথ্য জানার অধিকার ভোটারদের দেওয়া হয়েছে। হলফনামা বাধ্যতামূলক। না দিলে প্রার্থিতা বাতিল হবে। প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা। তাঁর আয়ের উৎস। তিনি ঋণখেলাপি কি না। ফৌজদারি মামলা তাঁর মাথার ওপরে ঝুলছে কি না। কোন মামলায় অভিযুক্ত হয়ে শ্রীঘরে কত দিন ছিলেন। দুই বছরের বেশি জেলের ভাত খেলে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার আশায় গুড়ে বালি। প্রার্থীদের সর্বোচ্চ ব্যয়ের সীমা বেঁধে দিয়েছে জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা কর্তৃপক্ষ (জানিপক)। কিন্তু এ মাটিতে কার পিতা-পিতামহের ঘাড়ে কয়টি মাথা যে কাউকে কিছু বেঁধে দেয় এবং তা মানতে বাধ্য করে।
মন্তাজুদ্দিন মিয়া মাদকনগরের কয়েকজন মেয়র প্রার্থীর একজন। তাঁর বিরুদ্ধে খুনখারাবির মামলার সংখ্যা ১৩। সিকিম আলি সক্কু ইয়াবানগর পৌরসভার অন্যতম মেয়র প্রার্থী। তাঁর বিরুদ্ধে থানায় কী পরিমাণ মামলা হয়েছে, তা বড় দারোগার পক্ষেও বলা সম্ভব নয়, পুরোনো কাগজপত্র না ঘেঁটে। কিন্তু সততার প্রশ্নে তাঁরা উভয়ই শতভাগ খাঁটি। তাঁদের দলীয় পিতৃ প্রতিষ্ঠানে তাঁদের উভয়েরই দাম সংগঠনগুলোর যেকোনো নেতার চেয়ে বেশি। বাংলার মাটিতে যাঁর বিরুদ্ধে যত বেশি ফৌজদারি মামলা, তিনি তত বড় নেতা।
সক্কু মিয়া ও মন্তাজুদ্দিনের সততার প্রশ্নে মিডিয়ার ছোকরামতো রিপোর্টাররা সন্দেহ প্রকাশ করলেও তাঁদের ক্যাডারদের কিছুমাত্র সন্দেহ নেই। সক্কু মিয়া সদলবলে প্রচারাভিযানে বেরিয়ে যাঁকে সামনে পাচ্ছেন, তাঁকেই বুকে জড়িয়ে ধরছেন। ইয়াবাগঞ্জে একতলা কাঁচাপাকা ঘরই বেশি। তিনি তাঁর ভোটারদের বলছেন, তিনি নির্বাচিত হলে পৌরসভাকে ক্যালিফোর্নিয়ার কোনো একটি পৌরসভার মতো আধুনিক ও তকতকে-ঝকঝকে করে ফেলবেন।
প্রার্থীদের খুনখারাবির অভিযোগ, সন্ত্রাসী তৎপরতা, অবৈধ উপার্জন, আয়কর না দেওয়া প্রভৃতির সঙ্গে জাল ভোট, কেন্দ্র দখল, সূক্ষ্ম ও মোটা কারচুপি প্রভৃতি আমাদের নির্বাচনী বৈশিষ্ট্য। এভাবে যাঁরা নির্বাচিত হন, তাঁদের থেকে মানুষ কী আশা করতে পারে?
সক্কু মিয়া যে হলফনামা জমা দিয়েছেন তাতে দেখা যায়, তাঁর স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ একজন ঠেলাগাড়িচালকের চেয়ে সামান্য বেশি। নগদ অর্থের পরিমাণ ১ হাজার ১৫০ টাকা। হলফনামা পূরণের সময় তাঁর এক ক্যাডার, যার দুই হাতে দুটি মোবাইল ফোন। বলল, এত কম দিলেন, মানুষ তো বিশ্বাস করবে না। প্রার্থী তাঁর মাফলারটি গলায় ঝাপটা মেরে প্যাঁচ দিয়ে খেঁকিয়ে উঠলেন। বললেন, তুই একটা রামছাগল। ছাগল না হইলে তোরে আমি পাঠাইলাম টেকনাফ। নিজে ধরা খাইয়া দুই মাস তো জেল খাটলিই, দেড় লাখ পিস আমার জিনিস নিয়া ধরা পড়লি। আরে ছাগল, নগদ টাকা তো আমার কাছে এই মুহূর্তে ১ হাজার ১৫০ টাকাই আছে।
আরেক প্রার্থীর শ্যালক ঝড়ু মিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের বিদ্যার্থী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। ছেলেটি খুব খারাপ না। চাঁদাবাজি নিজে করে না। অন্যেরা করে যা দেয়, তাতেই সে সন্তুষ্ট। সে দুলাভাইকে বলল, আপনি যে এতগুলা খুনের মামলার আসামি, আমাগো বিরুদ্ধ পার্টি এই নিয়া যদি ভোটারগো হাত করে?
প্রার্থী বলেন, তুই তোর বইনের লাগান হস নাই। তোর বুদ্ধি বড়ই কাঁচা। অপরাধ কী জিনিস তা আমি বুঝি। কারণ, আমি জীবনে ফৌজদারি অপরাধ কইরাই এই জায়গায় আইছি। তা না হইলে পার্টি আমারে নমিনেশন দেয়? পৌরসভাকে অপরাধমুক্ত করা আমার পক্ষেই সম্ভব। কারণ, আমি অপরাধ কী জিনিস তা জানি আর অপরাধীরে দেখলেই চিনতে পারি।
মাদকনগর ও ইয়াবাগঞ্জ আগে ছিল গ্রামের বাজার। সন্ধ্যার পর এখানে-ওখানে বসত তাসের আড্ডা। একটু আড়ালমতো জায়গায় বসত হেরোইন ও ইয়াবাসেবীদের আসর। আওয়াজ উঠল বাজার কমিটি কথাটা ভালো শোনায় না, পৌরসভা বানাইতে হইব। যেমন ঢাকা ছিল একদিন পৌরসভা, এখন সিটি করপোরেশন এবং তাও একটি নয়, দুটি। যেমন জেলাগুলোকে করা হচ্ছে বিভাগ। ডিভিশনাল কমিশনারের কী কাজ তা একমাত্র তিনিই জানেন, জনগণ নয়। যে রকম দাবি উঠছে প্রেসক্লাবের সামনের রাস্তা থেকে, তাতে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর আগেই সব জেলাকে বিভাগে পরিণত না করে কোনো সরকার ক্ষমতায় টিকতে পারবে না। বাংলার মাটিতে নামটিই আসল—কাম নয়। যেমন আক্কেল আলি কলেজ কেমন-কেমন শোনায়, সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেওয়া হলো: আক্কেল আলি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ। তেমনি গ্রামগঞ্জের বাজারগুলোকে ‘শহর’ বানাতে করা হয়েছে পৌরসভা। সেটির যিনি শাসক হবেন, তাঁর পদবি মেয়র।
প্রতিটি শব্দের একটি অর্থ আছে, আর আছে তাৎপর্য ও মর্যাদা। পৌরসভা শব্দটির অন্য রকম দ্যোতনা। মেয়র শব্দটির মর্যাদা আলাদা, বাজার কমিটির সভাপতির মতো নয়। বড় দলের মেয়র প্রার্থীদের কেউ মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময়ই যদি অতিরিক্ত মদ্যপানে মারা যান, তিনি জীবিত থাকলে নির্ঘাত নির্বাচিত হতেন, তা পৌরসভার নেশাকারীদের জন্য হতো আশীর্বাদ। প্রার্থীদের খুনখারাবির অভিযোগ, সন্ত্রাসী তৎপরতা, অবৈধ উপার্জন, আয়কর না দেওয়া প্রভৃতির সঙ্গে জাল ভোট, কেন্দ্র দখল, সূক্ষ্ম ও মোটা কারচুপি প্রভৃতি আমাদের নির্বাচনী বৈশিষ্ট্য। এভাবে যাঁরা নির্বাচিত হন, তাঁদের থেকে মানুষ কী আশা করতে পারে?
পল্লি আর শহর এক জিনিস নয়। গ্রামের মোড়ল আর শহরের পৌরসভার মেয়র এক রকম নয়। ছোট-বড় শহরগুলোতে স্বশাসিত পৌরসভা বা মিউনিসিপ্যালটির ব্যবস্থা গড়ে ওঠে ফ্রান্স, ব্রিটেন ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে কয়েক শতাব্দী আগে। আমাদের যেসব মফস্বলের হাটবাজার পৌরসভায় প্রমোশন পেয়েছে, এখন দরকার সেগুলোতে নাগরিক সুবিধা বাড়ানো। বিশেষ করে যে বিষ ছড়িয়ে পড়েছে আজ দেশের প্রতিটি এলাকায়, সেই সন্ত্রাস ও মাদক থেকে পৌরসভাগুলোকে মুক্ত রাখা পৌর কর্তৃপক্ষের প্রধানতম দায়িত্ব। সেই দায়িত্ব পালনে যাঁরা সক্ষম, তাঁদেরই মানুষ নির্বাচিত করবেন, এই প্রত্যাশা করি।
সৈয়দ আবুল মকসুদ: গবেষক, প্রাবন্ধিক ও কলাম লেখক৷
No comments