ডানপন্থীদের রাজনীতি এখন রমরমা by সরাফ আহমেদ
অবশেষে ফ্রান্স হাঁফ ছেড়ে বাঁচে, সমগ্র ফ্রান্সজুড়ে ১৩টি আঞ্চলিক সংসদের প্রথম পর্বের নির্বাচনে ছয়টিতেই এগিয়ে ছিল ম্যাডাম মারিয়া লি পেনের কট্টর উগ্র ডানপন্থী দল ন্যাশনাল ফ্রন্ট (এফএন)। তবে এক সপ্তাহ পর ১৩ ডিসেম্বর দ্বিতীয় পর্বের ভোটাভুটিতে লি পেনের দল আগের অবস্থান আর ধরে রাখতে পারেনি। তবে তার উগ্র ডানপন্থী দল ন্যাশনাল ফ্রন্ট (এফএন) ফ্রান্সজুড়ে ৬০ লাখ মানুষের ভোট পেয়েছে।
এটা শুধু ফ্রান্স নয়, ইউরোপ মহাদেশের উত্তর থেকে দক্ষিণ, অসলো থেকে লিসবন—ইউরোপের দেশে দেশে এই মুহূর্তে কট্টর ডানপন্থী দলগুলোর একরকম রমরমা অবস্থা যাচ্ছে। আশির দশকের মাঝামাঝি পশ্চিম ইউরোপের কয়েকটি দেশে এ ধরনের দল গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হলেও তা এখন মহাদেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। আর এদের জনপ্রিয়তা ঠেকাতে ইউরোপের ঐতিহ্যগত দলগুলো হিমশিম খাচ্ছে, কখনো কট্টরবাদীদের রুখতে তাদের এজেন্ডাকে দলীয় এজেন্ডাতে পরিণত করছে, কিন্তু লাগসই কৌশল খুঁজে পেতে দোদুল্যমানতায় ভুগছে।
অন্যদিকে অতি জাতীয়তাবাদী রক্ষণশীলরা ঝোপ বুঝে কোপ মারার মতো একেক সময় একেক এজেন্ডা কাজে লাগাচ্ছে। ইউরোপজুড়ে এই দলগুলো মূলত অতি জাতীয়তাবাদী স্বকীয়তা, সমন্বিত ইউরোপীয় ঐক্যের বিরোধী, অভিবাসীবিদ্বেষী, ইসলামবিদ্বেষী। ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাঠামোর ভেতরে সদস্যদেশগুলোর নাগরিকদের অন্য সদস্যদেশগুলোতে গিয়ে চাকরি বা থাকার সুযোগ ছিল, তারা তারও ঘোর বিরোধী। উল্লেখ্য, এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ইউনিয়নভুক্ত গরিব দেশ বুলগেরিয়া, রোমানিয়ার বহু মানুষ ব্রিটেনসহ নানা দেশে ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে তারা এই নিয়মের বিরুদ্ধে বা একসময় ইউরোপিয়ান জিপসি, রোমা ও সিন্তিদের আগমন রুখতেও আন্দোলন করেছে আর এখন করছে যুদ্ধ উপদ্রুত অঞ্চল থেকে আসা শরণার্থীদের নিয়ে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর সাত দশক ধরে ইউরোপীয় রাজনীতি মূলত চারটি ধারায় পরিচালিত হচ্ছে। ধারাগুলো খ্রিষ্টান গণতান্ত্রিক ধারা, সামাজিক গণতান্ত্রিক ধারা, লিবারেল গণতান্ত্রিক ধারা এবং বাম রাজনৈতিক ধারা এই মূল রাজনৈতিক ধারার বাইরে পরিবেশবাদী সবুজ দলও বেশ এগিয়ে যাচ্ছে। নব্বইয়ের দশকে দুই পরাশক্তির ঠান্ডা যুদ্ধের অবসান তথা সোভিয়েত রাষ্ট্রের ভাঙনের পর থেকে বাম রাজনীতির ধারা হোঁচট খেলেও একদম শেষ হয়ে যায়নি। আর এই চারটি ধারার জোটই ইউরোপীয় রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করছে।
তবে ইউরোপের নানা দেশে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইউরোপীয় ঐক্যবিরোধী, কট্টর জাতীয়তাবাদী বা নব্য নাৎসি দলগুলো স্থানবিশেষে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। সামাজিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বৈশ্বিক বিষয়টি উড়িয়ে দিয়ে প্রগতিবিরোধী এই দলগুলোর দেশ চালানোর মতো যোগ্যতা না থাকলেও জনগণের সস্তা মূল্যবোধকে তারা কাজে লাগাচ্ছে। এদের পুঁজি কৌশলী সস্তা স্লোগান, অভিবাসীবিদ্বেষী আস্ফালন তথা ইসলাম-বিদ্বেষ, ইউরোপীয় ঐক্যের বিরোধিতা আর ইদানীং এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে শরণার্থী ঠেকাও স্লোগান। শরণার্থীরা কেন ইউরোপে আসছে, তা নিয়ে এদের কোনো বক্তব্য নেই, এদের আসা রুখতে হবে—এটাই তাদের মূল বক্তব্য। এই কৌশল অবলম্বন করে এরা বিভিন্ন দেশে স্থানীয় শহর, আঞ্চলিক বা প্রাদেশিক পার্লামেন্ট নির্বাচনগুলোতে মূল ধারার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ক্ষমতার অংশীদারত্ব করতে চাইছে বা করছে।
দেখার বিষয় ইউরোপ কি আবার সেই কট্টরবাদীদের কর্তৃত্বের কাছে ফিরে যাবে না জনপ্রিয়বাদী রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে প্রত্যাখ্যান করে ইউরোপকে নতুন প্রত্যাশার দিকে নিয়ে যাবে তবে জাতীয় নির্বাচনে ক্ষমতায়নের ঘটনা গত বছর থেকে শুরু হয়েছে। প্রথমে ২০১৪ সালে হাঙ্গেরিতে দুই-তৃতীয়াংশ ভোট পেয়ে ভিক্টর উরবানের জবিক দল আর ২০১৫ সালের অক্টোবরের সাধারণ নির্বাচন পোল্যান্ডের রক্ষণশীল প্রাভোদল নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করেছে। একই মাসে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে সুইজারল্যান্ডের কট্টর দক্ষিণপন্থী পিপলস পার্টি সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট পেয়ে টনি ব্রুনানের নেতৃত্বে সরকার গঠন করেছে। তবে ২০১৩ সাল থেকেই এই ধরনের দলগুলো নানা দেশে ক্ষমতার অংশীদারত্বে ভাগ বসিয়েছে। গত অক্টোবরে পোল্যান্ড এবং সুইজারল্যান্ড ও ডেনমার্কের জাতীয় নির্বাচনে শুধু অভিবাসী ও শরণার্থী ঠেকাও প্রচার প্রোপাগান্ডা করে দেশ দুটির কট্টরপন্থীরা পুরোনো ঐতিহ্যবাহী দলগুলোকে পিছে ফেলে বিপুল ভোটে জয়লাভ করে সরকার গঠনে সমর্থ হয়েছে।
পোল্যান্ডে নবগঠিত সরকারের বিরুদ্ধে ১২ ডিসেম্বর শনিবার রাজধানী ওয়ারশোতে ক্ষমতাসীন কট্টর ডানপন্থী দলের প্রেস প্রকাশনা ও বিচারিক পদ্ধতি সংশোধন-সংক্রান্ত বিলের বিরুদ্ধে ৫০ হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছিল। ডেনমার্কের ক্ষমতাসীন সরকার সে দেশে আগত শরণার্থীদের নিরুৎসাহিত করতে শরণার্থীদের জীবন নির্বাহের জন্য দেয় ভাতা অর্ধেক কমিয়ে দিয়েছে। এদিকে জার্মানির সর্বোচ্চ আদালত নব্য নাৎসিবাদী দল, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি ফর ডয়েচল্যান্ড বা সংক্ষেপে এনপিডি দলটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার জন্য আদালত-প্রক্রিয়া শুরু করেছে। দক্ষিণ জার্মানির কার্লসরুয়ে শহরে অবস্থিত জার্মানির সর্বোচ্চ আদালত এক ঘোষণায় বলেছেন, আগামী বছর ১ থেকে ৩ মার্চ মৌখিক শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে। এর আগে জার্মান ফেডারেল কাউন্সিল বা বুন্ডেস রাতের দুই প্রতিনিধি ক্রিস্টিয়ান ভাল্ডহোফ ও ক্রিস্টোফ মোলার ২০১৩ সালে আদালতে এই কট্টর ডানপন্থী এনপিডি দলটি জার্মান শাসনতন্ত্রবিরোধী ও স্বচ্ছ গণতন্ত্রে বিশ্বাসী নয় বলে এই ধরনের দলকে জার্মানিতে নিষিদ্ধ ঘোষণার দাবি জানিয়ে সর্বোচ্চ আদালতে মামলা করেন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর ইউরোপের অর্থনীতিবিদ ও রাজনীতিকেরা যে সামাজিক অর্থনীতির ভিত্তি স্থাপন করে, ওই সামাজিক বাজার অর্থনীতি নানা ধকল সামাল দিয়ে ইউরোপভুক্ত দেশগুলো পৃথিবীর সফল মডেল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছিল, তা এখন অনেকটা চ্যালেঞ্জের মধ্য পড়েছে। ধারণা করা যায়, বিগত বছরগুলোতে আফগানিস্তান পরে ইরাক, ইরান, লিবিয়া, সিরিয়া নিয়ে ইউরোপীয় রাজনীতি, আর বছরজুড়ে ইউরোপ অভিমুখে শরণার্থীদের স্রোত এবং প্যারিসে সন্ত্রাসী হামলা ইউরোপের সঙ্গে ইসলাম ধর্মবিশ্বাসীদের একটি দূরত্ব তৈরি করেছে। আর এই দূরত্ব তৈরিতে বেশি করে ইন্ধন জোগাচ্ছে ইউরোপের নানা কট্টরপন্থী দল।
এখন দেখার বিষয় যে মহাদেশ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর নানা জাতিগত অনৈক্য ও সংশয় কাটিয়ে উঠেছে বা মাত্র তিন দশক আগে যখন ইউরোপের কিছু দেশ পার্লামেন্টারি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরে আসতে বিস্তর লড়াই-সংগ্রাম করেছে, তখন তারা কি আবার সেই কট্টরবাদীদের কর্তৃত্বের কাছে ফিরে যাবে, না জনপ্রিয়বাদী রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে প্রত্যাখ্যান করে ইউরোপকে নতুন প্রত্যাশার দিকে নিয়ে যাবে।
সরাফ আহমেদ: প্রথম আলোর জার্মানি প্রতিনিধি।
sharaf.ahmedqgmx.net
এটা শুধু ফ্রান্স নয়, ইউরোপ মহাদেশের উত্তর থেকে দক্ষিণ, অসলো থেকে লিসবন—ইউরোপের দেশে দেশে এই মুহূর্তে কট্টর ডানপন্থী দলগুলোর একরকম রমরমা অবস্থা যাচ্ছে। আশির দশকের মাঝামাঝি পশ্চিম ইউরোপের কয়েকটি দেশে এ ধরনের দল গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হলেও তা এখন মহাদেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। আর এদের জনপ্রিয়তা ঠেকাতে ইউরোপের ঐতিহ্যগত দলগুলো হিমশিম খাচ্ছে, কখনো কট্টরবাদীদের রুখতে তাদের এজেন্ডাকে দলীয় এজেন্ডাতে পরিণত করছে, কিন্তু লাগসই কৌশল খুঁজে পেতে দোদুল্যমানতায় ভুগছে।
অন্যদিকে অতি জাতীয়তাবাদী রক্ষণশীলরা ঝোপ বুঝে কোপ মারার মতো একেক সময় একেক এজেন্ডা কাজে লাগাচ্ছে। ইউরোপজুড়ে এই দলগুলো মূলত অতি জাতীয়তাবাদী স্বকীয়তা, সমন্বিত ইউরোপীয় ঐক্যের বিরোধী, অভিবাসীবিদ্বেষী, ইসলামবিদ্বেষী। ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাঠামোর ভেতরে সদস্যদেশগুলোর নাগরিকদের অন্য সদস্যদেশগুলোতে গিয়ে চাকরি বা থাকার সুযোগ ছিল, তারা তারও ঘোর বিরোধী। উল্লেখ্য, এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ইউনিয়নভুক্ত গরিব দেশ বুলগেরিয়া, রোমানিয়ার বহু মানুষ ব্রিটেনসহ নানা দেশে ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে তারা এই নিয়মের বিরুদ্ধে বা একসময় ইউরোপিয়ান জিপসি, রোমা ও সিন্তিদের আগমন রুখতেও আন্দোলন করেছে আর এখন করছে যুদ্ধ উপদ্রুত অঞ্চল থেকে আসা শরণার্থীদের নিয়ে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর সাত দশক ধরে ইউরোপীয় রাজনীতি মূলত চারটি ধারায় পরিচালিত হচ্ছে। ধারাগুলো খ্রিষ্টান গণতান্ত্রিক ধারা, সামাজিক গণতান্ত্রিক ধারা, লিবারেল গণতান্ত্রিক ধারা এবং বাম রাজনৈতিক ধারা এই মূল রাজনৈতিক ধারার বাইরে পরিবেশবাদী সবুজ দলও বেশ এগিয়ে যাচ্ছে। নব্বইয়ের দশকে দুই পরাশক্তির ঠান্ডা যুদ্ধের অবসান তথা সোভিয়েত রাষ্ট্রের ভাঙনের পর থেকে বাম রাজনীতির ধারা হোঁচট খেলেও একদম শেষ হয়ে যায়নি। আর এই চারটি ধারার জোটই ইউরোপীয় রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করছে।
তবে ইউরোপের নানা দেশে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইউরোপীয় ঐক্যবিরোধী, কট্টর জাতীয়তাবাদী বা নব্য নাৎসি দলগুলো স্থানবিশেষে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। সামাজিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বৈশ্বিক বিষয়টি উড়িয়ে দিয়ে প্রগতিবিরোধী এই দলগুলোর দেশ চালানোর মতো যোগ্যতা না থাকলেও জনগণের সস্তা মূল্যবোধকে তারা কাজে লাগাচ্ছে। এদের পুঁজি কৌশলী সস্তা স্লোগান, অভিবাসীবিদ্বেষী আস্ফালন তথা ইসলাম-বিদ্বেষ, ইউরোপীয় ঐক্যের বিরোধিতা আর ইদানীং এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে শরণার্থী ঠেকাও স্লোগান। শরণার্থীরা কেন ইউরোপে আসছে, তা নিয়ে এদের কোনো বক্তব্য নেই, এদের আসা রুখতে হবে—এটাই তাদের মূল বক্তব্য। এই কৌশল অবলম্বন করে এরা বিভিন্ন দেশে স্থানীয় শহর, আঞ্চলিক বা প্রাদেশিক পার্লামেন্ট নির্বাচনগুলোতে মূল ধারার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ক্ষমতার অংশীদারত্ব করতে চাইছে বা করছে।
দেখার বিষয় ইউরোপ কি আবার সেই কট্টরবাদীদের কর্তৃত্বের কাছে ফিরে যাবে না জনপ্রিয়বাদী রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে প্রত্যাখ্যান করে ইউরোপকে নতুন প্রত্যাশার দিকে নিয়ে যাবে তবে জাতীয় নির্বাচনে ক্ষমতায়নের ঘটনা গত বছর থেকে শুরু হয়েছে। প্রথমে ২০১৪ সালে হাঙ্গেরিতে দুই-তৃতীয়াংশ ভোট পেয়ে ভিক্টর উরবানের জবিক দল আর ২০১৫ সালের অক্টোবরের সাধারণ নির্বাচন পোল্যান্ডের রক্ষণশীল প্রাভোদল নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করেছে। একই মাসে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে সুইজারল্যান্ডের কট্টর দক্ষিণপন্থী পিপলস পার্টি সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট পেয়ে টনি ব্রুনানের নেতৃত্বে সরকার গঠন করেছে। তবে ২০১৩ সাল থেকেই এই ধরনের দলগুলো নানা দেশে ক্ষমতার অংশীদারত্বে ভাগ বসিয়েছে। গত অক্টোবরে পোল্যান্ড এবং সুইজারল্যান্ড ও ডেনমার্কের জাতীয় নির্বাচনে শুধু অভিবাসী ও শরণার্থী ঠেকাও প্রচার প্রোপাগান্ডা করে দেশ দুটির কট্টরপন্থীরা পুরোনো ঐতিহ্যবাহী দলগুলোকে পিছে ফেলে বিপুল ভোটে জয়লাভ করে সরকার গঠনে সমর্থ হয়েছে।
পোল্যান্ডে নবগঠিত সরকারের বিরুদ্ধে ১২ ডিসেম্বর শনিবার রাজধানী ওয়ারশোতে ক্ষমতাসীন কট্টর ডানপন্থী দলের প্রেস প্রকাশনা ও বিচারিক পদ্ধতি সংশোধন-সংক্রান্ত বিলের বিরুদ্ধে ৫০ হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছিল। ডেনমার্কের ক্ষমতাসীন সরকার সে দেশে আগত শরণার্থীদের নিরুৎসাহিত করতে শরণার্থীদের জীবন নির্বাহের জন্য দেয় ভাতা অর্ধেক কমিয়ে দিয়েছে। এদিকে জার্মানির সর্বোচ্চ আদালত নব্য নাৎসিবাদী দল, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি ফর ডয়েচল্যান্ড বা সংক্ষেপে এনপিডি দলটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার জন্য আদালত-প্রক্রিয়া শুরু করেছে। দক্ষিণ জার্মানির কার্লসরুয়ে শহরে অবস্থিত জার্মানির সর্বোচ্চ আদালত এক ঘোষণায় বলেছেন, আগামী বছর ১ থেকে ৩ মার্চ মৌখিক শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে। এর আগে জার্মান ফেডারেল কাউন্সিল বা বুন্ডেস রাতের দুই প্রতিনিধি ক্রিস্টিয়ান ভাল্ডহোফ ও ক্রিস্টোফ মোলার ২০১৩ সালে আদালতে এই কট্টর ডানপন্থী এনপিডি দলটি জার্মান শাসনতন্ত্রবিরোধী ও স্বচ্ছ গণতন্ত্রে বিশ্বাসী নয় বলে এই ধরনের দলকে জার্মানিতে নিষিদ্ধ ঘোষণার দাবি জানিয়ে সর্বোচ্চ আদালতে মামলা করেন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর ইউরোপের অর্থনীতিবিদ ও রাজনীতিকেরা যে সামাজিক অর্থনীতির ভিত্তি স্থাপন করে, ওই সামাজিক বাজার অর্থনীতি নানা ধকল সামাল দিয়ে ইউরোপভুক্ত দেশগুলো পৃথিবীর সফল মডেল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছিল, তা এখন অনেকটা চ্যালেঞ্জের মধ্য পড়েছে। ধারণা করা যায়, বিগত বছরগুলোতে আফগানিস্তান পরে ইরাক, ইরান, লিবিয়া, সিরিয়া নিয়ে ইউরোপীয় রাজনীতি, আর বছরজুড়ে ইউরোপ অভিমুখে শরণার্থীদের স্রোত এবং প্যারিসে সন্ত্রাসী হামলা ইউরোপের সঙ্গে ইসলাম ধর্মবিশ্বাসীদের একটি দূরত্ব তৈরি করেছে। আর এই দূরত্ব তৈরিতে বেশি করে ইন্ধন জোগাচ্ছে ইউরোপের নানা কট্টরপন্থী দল।
এখন দেখার বিষয় যে মহাদেশ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর নানা জাতিগত অনৈক্য ও সংশয় কাটিয়ে উঠেছে বা মাত্র তিন দশক আগে যখন ইউরোপের কিছু দেশ পার্লামেন্টারি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরে আসতে বিস্তর লড়াই-সংগ্রাম করেছে, তখন তারা কি আবার সেই কট্টরবাদীদের কর্তৃত্বের কাছে ফিরে যাবে, না জনপ্রিয়বাদী রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে প্রত্যাখ্যান করে ইউরোপকে নতুন প্রত্যাশার দিকে নিয়ে যাবে।
সরাফ আহমেদ: প্রথম আলোর জার্মানি প্রতিনিধি।
sharaf.ahmedqgmx.net
No comments