ভারতের অঘোষিত অবরোধে ধুঁকছে নেপাল
ভারতের অঘোষিত অবরোধকে অমানবিক হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন বিক্ষোভকারীরা। ছবি: এএফপি |
নতুন
সংবিধান বৈষম্যের সৃষ্টি করেছে—এমন অভিযোগ তুলে নেপালের দক্ষিণাঞ্চল দুই
মাসেরও বেশি সময় ধরে অবরুদ্ধ করে রেখেছে স্থানীয় নৃগোষ্ঠীগুলো।
নিরাপত্তার অজুহাতে ‘অঘোষিত অবরোধ’ চালিয়ে যাচ্ছে দেশটির প্রতিবেশী ভারত।
এর ফলে ভারত থেকে এই পথে জ্বালানি, ওষুধসহ সব ধরনের পণ্য সরবরাহ বন্ধ
রয়েছে। দেশটিতে দেখা দিয়েছে মারাত্মক জ্বালানি-সংকট, স্থবির হয়ে পড়ছে
জনজীবন।
এই অবরোধের ফলে নেপালবাসীর জীবন কীভাবে বিপন্ন হচ্ছে—বিবিসির এক প্রতিবেদনে সেই তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদনে জানানো হয়, তীব্র জ্বালানি-সংকটে পড়েছে নেপাল। দেশটির সব ধরনের জ্বালানির সরবরাহ হয় ভারত থেকে। কিন্তু অবরোধ-বিক্ষোভে দক্ষিণাঞ্চলের স্থলপথটিতে নিরাপত্তাঝুঁকির আশঙ্কায় পণ্য পরিবহন বন্ধ রেখেছে ভারত।
জ্বালানি-সংকট কাটাতে তাই কোপ পড়ছে বনের ওপর। নেপালের সংবাদপত্রের খবরে বলা হচ্ছে, নেপালের সবচেয়ে বড় বন ও জাতীয় পার্ক হিসেবে পরিচিত দক্ষিণাঞ্চলের তারাই বনাঞ্চলে গাছ কাটার হার এই দুই মাসে বেড়েছে। যদিও কর্মকর্তারা বলছেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। তবে অবরোধ অব্যাহত থাকলে পরিস্থিতি খারাপ হয়ে পড়বে, অনেক বেশি গাছ কাটা পড়বে। ফেডারেশন অব কমিউনিটি ফরেস্ট ইউজার্স নেপালের কর্মকর্তা ঠাকুর ভান্ডারি বলেন, জ্বালানি-সংকটের কারণে কাঠের চাহিদা বাড়ায় বনগুলো ক্ষতির হুমকির মধ্যে পড়েছে। এগুলো রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
দেশটিতে প্রয়োজনীয় ওষুধের সংকট দেখা দিয়েছে। চিকিৎসকেরা সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, এমনটা চলতে থাকলে মানবিক সংকট দেখা দিতে পারে। বড় হাসপাতালগুলো বলছে, নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে ব্যবহারের ওষুধসহ জীবন রক্ষাকারী অনেক ওষুধের সংকট ইতিমধ্যে দেখা দিয়েছে। গত মাসেই ইউনিসেফ বলেছে, জ্বালানি, খাদ্য, ওষুধ ও টিকা-সংকটে পাঁচ বছরের কম বয়সী ৩০ লাখ শিশু নানা অসুখ ও মৃত্যুঝুঁকির মধ্যে আছে। প্রয়োজনীয় ওষুধ কিনতে জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলে সরকারের পক্ষ থেকে আশ্বস্ত করা হয়েছে।
ডিজেলের অভাবে স্কুলবাস চালানো দায় হয়ে পড়েছে। অনেক স্কুল তাই বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সরকার সপ্তাহে দুবার স্কুলগুলোতে রেশন ব্যবস্থায় ডিজেল দিচ্ছে। বেসরকারি স্কুল অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট লাক্ষ্য বাহাদুর কেসি বলেন, সব বিদ্যালয় হয়তো বন্ধ রাখা হয়নি; তবে বিদ্যালয়গুলোকে কঠিন সময় পার করতে হচ্ছে। সরকারি বিদ্যালয়ের জন্য পাঠ্যপুস্তক ছাপানোর কাজ করে এমন একটি প্রতিষ্ঠানের জ্যেষ্ঠ এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আগামী চার মাসে আমাদের দেড় কোটি বই ছাপানো প্রয়োজন। জ্বালানি-সংকটের কারণে ছাপার কাজ ব্যাহত হচ্ছে। পরিস্থিতি না বদলালে ঝামেলায় পড়তে হবে আমাদের।’
গত এপ্রিল ও মে মাসে নেপালে আঘাত হানা ভূমিকম্পে নয় হাজারের মতো মানুষ প্রাণ হারায়। ছয় লাখের মতো ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত বিদ্যালয়ের ভবন মেরামতের কাজ চলছে সরকারি ও জাতিসংঘের উদ্যোগে। অবরোধ থাকায় নির্মাণসামগ্রীর অনেক কিছুর চালান ভারত থেকে আসতে পারছে না। দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লক্ষ্মী প্রসাদ ধাখাল বলেন, পর্যাপ্ত জ্বালানি না থাকায় ভূমিকম্প-বিধ্বস্ত এলাকায় নির্মাণসামগ্রী পাঠানো যাচ্ছে না। এই সংকটের সমাধান না হওয়া পর্যন্ত নির্মাণ বন্ধ রাখতে হবে।
নেপালের বর্তমান এসব সংকটের মূলে আছে জ্বালানি। আর এই জ্বালানির জন্য নেপাল পুরোপুরি ভারতের ওপর নির্ভরশীল। নেপালি কর্তৃপক্ষের দাবি, ভারতীয় তেল করপোরেশন ট্যাংকারে তেল ভরছে না। কর্মকর্তারা নানা অজুহাতে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে। এমনকি সীমান্তের যেসব এলাকা শান্তিপূর্ণ আছে, সেসব এলাকা দিয়েও তেল নেপালে পাঠাচ্ছে না ভারত। তবে ভারত এমন অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।
দীর্ঘ বিলম্বের পর গত ২০ সেপ্টেম্বর নেপালের পার্লামেন্টে আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন সংবিধান গৃহীত হয়। দেশে ব্যাপক মতবিরোধের সৃষ্টি করে এ সংবিধান প্রণয়ন-প্রক্রিয়া। প্রভাবশালী প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গেও কিছুটা তিক্ততার সূচনা করে এ সংবিধান গৃহীত হওয়ার বিষয়টি। নেপালের নতুন সংবিধান প্রণয়ন-প্রক্রিয়ায় কয়েক দশক ধরেই অন্যতম সমর্থনকারী দেশ ভারত। কিন্তু দেশটির নতুন সংবিধানের বিষয়ে ভারতের মত হলো, এটা যথেষ্ট ব্যাপকভিত্তিক হয়নি। সংবিধানের বিরোধিতাকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে নেপাল সরকারকে আহ্বান জানায় ভারত। তবে সেটি হয়নি। ভারত উদ্বিগ্ন, সংবিধানকে কেন্দ্র করে সীমান্তসংলগ্ন নেপালের তেরাই এলাকায় ছড়িয়ে পড়া সহিংস প্রতিক্রিয়া নিয়ে। আর এই উদ্বেগ থেকে সৃষ্ট সমস্যায় ধুঁকতে হচ্ছে হিমালয়কন্যা নেপালকে।
এই অবরোধের ফলে নেপালবাসীর জীবন কীভাবে বিপন্ন হচ্ছে—বিবিসির এক প্রতিবেদনে সেই তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদনে জানানো হয়, তীব্র জ্বালানি-সংকটে পড়েছে নেপাল। দেশটির সব ধরনের জ্বালানির সরবরাহ হয় ভারত থেকে। কিন্তু অবরোধ-বিক্ষোভে দক্ষিণাঞ্চলের স্থলপথটিতে নিরাপত্তাঝুঁকির আশঙ্কায় পণ্য পরিবহন বন্ধ রেখেছে ভারত।
জ্বালানি-সংকট কাটাতে তাই কোপ পড়ছে বনের ওপর। নেপালের সংবাদপত্রের খবরে বলা হচ্ছে, নেপালের সবচেয়ে বড় বন ও জাতীয় পার্ক হিসেবে পরিচিত দক্ষিণাঞ্চলের তারাই বনাঞ্চলে গাছ কাটার হার এই দুই মাসে বেড়েছে। যদিও কর্মকর্তারা বলছেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। তবে অবরোধ অব্যাহত থাকলে পরিস্থিতি খারাপ হয়ে পড়বে, অনেক বেশি গাছ কাটা পড়বে। ফেডারেশন অব কমিউনিটি ফরেস্ট ইউজার্স নেপালের কর্মকর্তা ঠাকুর ভান্ডারি বলেন, জ্বালানি-সংকটের কারণে কাঠের চাহিদা বাড়ায় বনগুলো ক্ষতির হুমকির মধ্যে পড়েছে। এগুলো রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
দেশটিতে প্রয়োজনীয় ওষুধের সংকট দেখা দিয়েছে। চিকিৎসকেরা সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, এমনটা চলতে থাকলে মানবিক সংকট দেখা দিতে পারে। বড় হাসপাতালগুলো বলছে, নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে ব্যবহারের ওষুধসহ জীবন রক্ষাকারী অনেক ওষুধের সংকট ইতিমধ্যে দেখা দিয়েছে। গত মাসেই ইউনিসেফ বলেছে, জ্বালানি, খাদ্য, ওষুধ ও টিকা-সংকটে পাঁচ বছরের কম বয়সী ৩০ লাখ শিশু নানা অসুখ ও মৃত্যুঝুঁকির মধ্যে আছে। প্রয়োজনীয় ওষুধ কিনতে জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলে সরকারের পক্ষ থেকে আশ্বস্ত করা হয়েছে।
ডিজেলের অভাবে স্কুলবাস চালানো দায় হয়ে পড়েছে। অনেক স্কুল তাই বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সরকার সপ্তাহে দুবার স্কুলগুলোতে রেশন ব্যবস্থায় ডিজেল দিচ্ছে। বেসরকারি স্কুল অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট লাক্ষ্য বাহাদুর কেসি বলেন, সব বিদ্যালয় হয়তো বন্ধ রাখা হয়নি; তবে বিদ্যালয়গুলোকে কঠিন সময় পার করতে হচ্ছে। সরকারি বিদ্যালয়ের জন্য পাঠ্যপুস্তক ছাপানোর কাজ করে এমন একটি প্রতিষ্ঠানের জ্যেষ্ঠ এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আগামী চার মাসে আমাদের দেড় কোটি বই ছাপানো প্রয়োজন। জ্বালানি-সংকটের কারণে ছাপার কাজ ব্যাহত হচ্ছে। পরিস্থিতি না বদলালে ঝামেলায় পড়তে হবে আমাদের।’
গত এপ্রিল ও মে মাসে নেপালে আঘাত হানা ভূমিকম্পে নয় হাজারের মতো মানুষ প্রাণ হারায়। ছয় লাখের মতো ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত বিদ্যালয়ের ভবন মেরামতের কাজ চলছে সরকারি ও জাতিসংঘের উদ্যোগে। অবরোধ থাকায় নির্মাণসামগ্রীর অনেক কিছুর চালান ভারত থেকে আসতে পারছে না। দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লক্ষ্মী প্রসাদ ধাখাল বলেন, পর্যাপ্ত জ্বালানি না থাকায় ভূমিকম্প-বিধ্বস্ত এলাকায় নির্মাণসামগ্রী পাঠানো যাচ্ছে না। এই সংকটের সমাধান না হওয়া পর্যন্ত নির্মাণ বন্ধ রাখতে হবে।
নেপালের বর্তমান এসব সংকটের মূলে আছে জ্বালানি। আর এই জ্বালানির জন্য নেপাল পুরোপুরি ভারতের ওপর নির্ভরশীল। নেপালি কর্তৃপক্ষের দাবি, ভারতীয় তেল করপোরেশন ট্যাংকারে তেল ভরছে না। কর্মকর্তারা নানা অজুহাতে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে। এমনকি সীমান্তের যেসব এলাকা শান্তিপূর্ণ আছে, সেসব এলাকা দিয়েও তেল নেপালে পাঠাচ্ছে না ভারত। তবে ভারত এমন অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।
দীর্ঘ বিলম্বের পর গত ২০ সেপ্টেম্বর নেপালের পার্লামেন্টে আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন সংবিধান গৃহীত হয়। দেশে ব্যাপক মতবিরোধের সৃষ্টি করে এ সংবিধান প্রণয়ন-প্রক্রিয়া। প্রভাবশালী প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গেও কিছুটা তিক্ততার সূচনা করে এ সংবিধান গৃহীত হওয়ার বিষয়টি। নেপালের নতুন সংবিধান প্রণয়ন-প্রক্রিয়ায় কয়েক দশক ধরেই অন্যতম সমর্থনকারী দেশ ভারত। কিন্তু দেশটির নতুন সংবিধানের বিষয়ে ভারতের মত হলো, এটা যথেষ্ট ব্যাপকভিত্তিক হয়নি। সংবিধানের বিরোধিতাকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে নেপাল সরকারকে আহ্বান জানায় ভারত। তবে সেটি হয়নি। ভারত উদ্বিগ্ন, সংবিধানকে কেন্দ্র করে সীমান্তসংলগ্ন নেপালের তেরাই এলাকায় ছড়িয়ে পড়া সহিংস প্রতিক্রিয়া নিয়ে। আর এই উদ্বেগ থেকে সৃষ্ট সমস্যায় ধুঁকতে হচ্ছে হিমালয়কন্যা নেপালকে।
No comments