সদয় ইসি, নির্দয় ইসি এবং মন্ত্রীর কোলাকুলি by সোহরাব হাসান
পৌরসভা নির্বাচনের উত্তাপ ২৩৪টি পৌর এলাকার সীমানা ছাড়িয়ে সারা দেশেই ছড়িয়ে পড়েছে। প্রার্থীদের চোখে ঘুম নেই। মাঠে-ঘাটে, বাড়িতে, অফিসে গিয়ে তাঁরা ভোটারদের আশীর্বাদ ও দোয়া কামনা করছেন। যে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) প্রতি আস্থা নেই বলে বিরোধী দল এত দিন বুলন্দ আওয়াজ দিয়ে আসছে, তারাও এখন নির্বাচন কমিশনের কার্যালয়ে ধরনা দিচ্ছে। এটাই গণতন্ত্র।
যাঁরা বলেন দেশে গণতন্ত্রের ছিটেফোঁটাও নেই, তাঁদের সঙ্গে একমত হতে পারলাম না বলে দুঃখিত। বিগত জাতীয় নির্বাচনের আগে যদি বিএনপি বর্জনের ডাক না দিয়ে নির্বাচনী যুদ্ধে শামিল হতো, ইতিহাস ভিন্ন হতো বলে অনেকেই মনে করেন। নির্বাচন হলো গণতন্ত্রের পূর্বশর্ত। সেই নির্বাচন বর্জন কিংবা একতরফা ভোট করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা যায় না। আমাদের বিজ্ঞ রাজনীতিক এবং গণতন্ত্রের পরীক্ষায় টেনে টুনে পাস মার্ক পাওয়া দলগুলো যত দ্রুত এই সত্যটি অনুধাবন করবে, ততই মঙ্গল।
নির্বাচনী প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর থেকেই প্রতিদ্বন্দ্বী দলের নেতারা নির্বাচন কমিশনে গিয়ে নালিশ, অভিযোগ ও আবদার জানালেও গত বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফের বক্তব্যটি ছিল কৌতূহলোদ্দীপক। সাধারণত বিরোধী দলের নেতারাই নির্বাচন কমিশন, স্থানীয় জনপ্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে পক্ষপাতের অভিযোগ করে থাকেন। কিন্তু এবারে খোদ আওয়ামী লীগের নেতার নালিশ হলো: বিভিন্ন জায়গায় তাঁদের প্রার্থীদের হয়রানি করা হচ্ছে। কিন্তু নির্বাচন কমিশন বিএনপির প্রতি সদয়, আওয়ামী লীগের প্রতি নির্দয়। তাঁর অভিযোগ, ‘এক মন্ত্রী শুক্রবার নামাজের পর কয়েকজনের সঙ্গে কোলাকুলি করেছেন, তাতেই তাঁর বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে। নির্বাচনের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড এখন বিএনপির জন্য লেভেল প্লাস প্লেয়িং ফিল্ড হয়ে গেছে। আমরা ইসির কাছে নিরপেক্ষ আচরণের অনুরোধ করেছি। আমাদের যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আগে যেন তদন্ত করে নেওয়া হয় সে অনুরোধ করেছি।’
একই দিন আবু হোসেন বাবলার নেতৃত্বে জাতীয় পার্টির প্রতিনিধিদলের সদস্যরা নির্বাচন কমিশনে গিয়ে বলেছেন, পরিস্থিতি ভয়াবহ। সরকারি দলের নেতাদের ভয়ভীতির কারণে তাঁদের প্রার্থীরা নাকি ঠিকমতো নির্বাচনী প্রচার চালাতে পারছেন না। আগের দিন বিএনপির নেতা মঈন খানের নেতৃত্বে বিএনপির একটি প্রতিনিধিদল নির্বাচন কমিশনে গিয়ে বিভিন্ন স্থানে তাদের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা ও হয়রানির অভিযোগ আনে। পত্রিকায় বিএনপির নেতা আলতাফ হোসেন চৌধুরীর গাড়িতে হামলার ছবিও ছাপা হয়েছে।
বিএনপি ও জাতীয় পার্টির অভিযোগের ব্যাপারে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) সুনির্দিষ্টভাবে কিছু না বললেও হানিফ সাহেব সাক্ষাৎ করার পর তিনি নড়েচড়ে বসেছেন। বলেছেন, সব পক্ষ যখন অভিযোগ করছে তখন বুঝতে হবে কমিশন সঠিক পথেই আছে। তাঁর দাবি, নির্বাচন কমিশন শতভাগ নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করছেন।
প্রশ্ন হলো কমিশন নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করছে কি না, সেটি জানার উপায় কী? প্রথমত দলমত-নির্বিশেষে যাঁরাই আচরণবিধি ভাঙবেন তাঁদের বিরুদ্ধে ত্বরিত আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া। বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে প্রার্থীকে ভর্ৎসনা করা বা নামাত্র জরিমানা কোনো শাস্তি নয়। প্রতিটি অভিযোগ তদন্ত করে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি তা জনগণকে জানাতে হবে।
হানিফ সাহেবের মতো আমরাও মনে করি, নির্বাচন কমিশন কারও প্রতি সদয় বা নির্দয় হবে না। মন্ত্রী নামাজের পর নির্দোষ কোলাকুলি করলে তাঁকে কারণ দর্শানোর কোনো যুক্তি নেই। কিন্তু রাজনৈতিক পৌরসভা নির্বাচনের মতো কোলাকুলিটিও যদি রাজনৈতিক হয়, সে ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করতে পারে না।
কমিশনের দায়িত্ব ভয়ভীতি ও প্রলোভনের ঊর্ধ্বে থেকে নির্বাচনটি অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করা। সবাইকে নির্বাচনী আচরণবিধি মানতে বাধ্য করা। এই কাজটি করতে পারলে তাদের প্রতি মানুষের আস্থা ফিরে আসবে। কিন্তু যদি তারা করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে কমিশনকে আরেকবার আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। পৌরসভা নির্বাচনকে ঘিরে জাতীয় রাজনীতিতে সুস্থ ধারা ফিরে আসার যে ক্ষীণ সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে, তা-ও তিরোহিত হবে।
যাঁরা বলেন দেশে গণতন্ত্রের ছিটেফোঁটাও নেই, তাঁদের সঙ্গে একমত হতে পারলাম না বলে দুঃখিত। বিগত জাতীয় নির্বাচনের আগে যদি বিএনপি বর্জনের ডাক না দিয়ে নির্বাচনী যুদ্ধে শামিল হতো, ইতিহাস ভিন্ন হতো বলে অনেকেই মনে করেন। নির্বাচন হলো গণতন্ত্রের পূর্বশর্ত। সেই নির্বাচন বর্জন কিংবা একতরফা ভোট করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা যায় না। আমাদের বিজ্ঞ রাজনীতিক এবং গণতন্ত্রের পরীক্ষায় টেনে টুনে পাস মার্ক পাওয়া দলগুলো যত দ্রুত এই সত্যটি অনুধাবন করবে, ততই মঙ্গল।
নির্বাচনী প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর থেকেই প্রতিদ্বন্দ্বী দলের নেতারা নির্বাচন কমিশনে গিয়ে নালিশ, অভিযোগ ও আবদার জানালেও গত বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফের বক্তব্যটি ছিল কৌতূহলোদ্দীপক। সাধারণত বিরোধী দলের নেতারাই নির্বাচন কমিশন, স্থানীয় জনপ্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে পক্ষপাতের অভিযোগ করে থাকেন। কিন্তু এবারে খোদ আওয়ামী লীগের নেতার নালিশ হলো: বিভিন্ন জায়গায় তাঁদের প্রার্থীদের হয়রানি করা হচ্ছে। কিন্তু নির্বাচন কমিশন বিএনপির প্রতি সদয়, আওয়ামী লীগের প্রতি নির্দয়। তাঁর অভিযোগ, ‘এক মন্ত্রী শুক্রবার নামাজের পর কয়েকজনের সঙ্গে কোলাকুলি করেছেন, তাতেই তাঁর বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে। নির্বাচনের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড এখন বিএনপির জন্য লেভেল প্লাস প্লেয়িং ফিল্ড হয়ে গেছে। আমরা ইসির কাছে নিরপেক্ষ আচরণের অনুরোধ করেছি। আমাদের যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আগে যেন তদন্ত করে নেওয়া হয় সে অনুরোধ করেছি।’
একই দিন আবু হোসেন বাবলার নেতৃত্বে জাতীয় পার্টির প্রতিনিধিদলের সদস্যরা নির্বাচন কমিশনে গিয়ে বলেছেন, পরিস্থিতি ভয়াবহ। সরকারি দলের নেতাদের ভয়ভীতির কারণে তাঁদের প্রার্থীরা নাকি ঠিকমতো নির্বাচনী প্রচার চালাতে পারছেন না। আগের দিন বিএনপির নেতা মঈন খানের নেতৃত্বে বিএনপির একটি প্রতিনিধিদল নির্বাচন কমিশনে গিয়ে বিভিন্ন স্থানে তাদের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা ও হয়রানির অভিযোগ আনে। পত্রিকায় বিএনপির নেতা আলতাফ হোসেন চৌধুরীর গাড়িতে হামলার ছবিও ছাপা হয়েছে।
বিএনপি ও জাতীয় পার্টির অভিযোগের ব্যাপারে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) সুনির্দিষ্টভাবে কিছু না বললেও হানিফ সাহেব সাক্ষাৎ করার পর তিনি নড়েচড়ে বসেছেন। বলেছেন, সব পক্ষ যখন অভিযোগ করছে তখন বুঝতে হবে কমিশন সঠিক পথেই আছে। তাঁর দাবি, নির্বাচন কমিশন শতভাগ নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করছেন।
প্রশ্ন হলো কমিশন নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করছে কি না, সেটি জানার উপায় কী? প্রথমত দলমত-নির্বিশেষে যাঁরাই আচরণবিধি ভাঙবেন তাঁদের বিরুদ্ধে ত্বরিত আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া। বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে প্রার্থীকে ভর্ৎসনা করা বা নামাত্র জরিমানা কোনো শাস্তি নয়। প্রতিটি অভিযোগ তদন্ত করে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি তা জনগণকে জানাতে হবে।
হানিফ সাহেবের মতো আমরাও মনে করি, নির্বাচন কমিশন কারও প্রতি সদয় বা নির্দয় হবে না। মন্ত্রী নামাজের পর নির্দোষ কোলাকুলি করলে তাঁকে কারণ দর্শানোর কোনো যুক্তি নেই। কিন্তু রাজনৈতিক পৌরসভা নির্বাচনের মতো কোলাকুলিটিও যদি রাজনৈতিক হয়, সে ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করতে পারে না।
কমিশনের দায়িত্ব ভয়ভীতি ও প্রলোভনের ঊর্ধ্বে থেকে নির্বাচনটি অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করা। সবাইকে নির্বাচনী আচরণবিধি মানতে বাধ্য করা। এই কাজটি করতে পারলে তাদের প্রতি মানুষের আস্থা ফিরে আসবে। কিন্তু যদি তারা করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে কমিশনকে আরেকবার আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। পৌরসভা নির্বাচনকে ঘিরে জাতীয় রাজনীতিতে সুস্থ ধারা ফিরে আসার যে ক্ষীণ সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে, তা-ও তিরোহিত হবে।
No comments