জেএসসি ও জেডিসিতে পাস ১৬ লাখ
তৃতীয়বারের মতো দেশব্যাপী অষ্টম শ্রেণীতে অনুষ্ঠিত জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষায় পাস করেছে ৮৬ দশমিক ৯৭ শতাংশ শিক্ষার্থী।
সাধারণ ৮ বোর্ডের জেএসসিতে পাসের হার ৮৬ দশমিক ১১ আর মাদ্রাসার জেডিসিতে পাসের হার ৯০ দশমিক ৮৭ শতাংশ। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই পাবলিক পরীক্ষায় ১৮ লাখ ৪১ হাজার ৭২৬ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে ১৬ লাখ এক হাজার ৭৫০ জন, যা গত বছরের তুলনায় ৯৪ হাজার ৯৬৭ জন বেশি। এদিকে জিপিএ-৫ প্রাপ্তির সংখ্যা এক বছরেই বাড়ল ১৬ হাজার ৯০ জন। গত বছর যেখানে জিপিএ-৫ পেয়েছিল ৩০ হাজার ৮৫২ জন এবার সেখানে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪৬ হাজার ৯৪২ জন পরীক্ষার্থী। গত বছরের মতো এবারও সবচেয়ে ভাল ফল করেছে বরিশাল শিক্ষা বোর্ড। যেখানে পাসের হার ৯৩ দশমিক ৮২ শতাংশ। সবচেয়ে কম চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে ৭৮ দশমিক ৩৫ শতাংশ।কারিগরি শিক্ষাস্তর নবম শ্রেণী থেকে হওয়ায় অষ্টম শ্রেণীর এ পরীক্ষার আওতায় আছে সাধারণ এবং মাদ্রাসা শিক্ষাস্তর। গত বছর ৯ বোর্ডে পাসের হার ছিল ৮৩ দশমিক ৭১ শতাংশ। আগের বছর ছিল ৭৩ দশমিক চার শতাংশ। সাধারণ আট বোর্ডে পাসের হার ছিল ৮২ দশমিক ৬৭ শতাংশ। এর আগের বছর ছিল ৭১ দশমিক ৩৪ শতাংশ। বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে ফল প্রকাশ করেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইট (িি.িবফঁপধঃরড়হনড়ধৎফৎবংঁষঃং.মড়া.নফ), সংশ্লিষ্ট সকল পরীক্ষা কেন্দ্র বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে ই-মেইল-এর মাধ্যমে সংগ্রহ করা যাচ্ছে। এছাড়া মোবাইলে এসএমএস পাঠিয়েও ফল জানা যায়। এর আগে সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ফলাফলের কপি তুলে দেন শিক্ষামন্ত্রী। সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা সচিব ড. কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরী, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নোমান উর রশিদ, আন্তঃশিক্ষা বোর্ডর সমন্বয়ক ও ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফাহিমা খাতুন, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক ওয়াহিদুজ্জামান এবং মন্ত্রণালয় ও বিভিন্ন বোর্ডের উর্ধতন কর্মকর্তা। শিক্ষার্থীদের অভিনন্দন জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, গত বছরের তুলনায় এবার জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষার সবক্ষেত্রেই ভাল করেছে শিক্ষার্থীরা। বৃদ্ধি পেয়েছে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা, পাসের হার, জিপিএ-৫ এবং শতভাগ পাস স্কুলের সংখ্যা। ফলের সব সুচকে ভাল করায় আমরা সকলে সন্তুষ্ট। আমরা শিক্ষাকে এমন জায়গায় নিয়ে যেতে চাই যাতে ভবিষ্যতে আর কোন শিক্ষার্থী অকৃতকার্য না হয়। বিনামূল্যে সঠিক সময়ে শিক্ষার্থীদের হাতে পাঠ্যবই পৌঁছে দেয়া, নকলবিরোধী প্রচারণাসহ সরকারের বিভিন্নমুখী উদ্যোগ ও তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহারেই পাসের হার বৃদ্ধি পেয়েছে। শিক্ষার মানে উন্নতি ঘটেছে। তিনি আরও বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, বোর্ডসমূহ, জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের সমন্বিত প্রচেষ্টার কারণেই পরীক্ষার সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ক্রমশ উন্নতির ধারা অব্যাহত আছে। ফলাফলের ধারাবাহিক ইতিবাচক পরিবর্তনের পেছনের কারণ নিয়ে ভাবছেন প্রায় সকলেই। খাতা মূল্যায়নকারী শিক্ষক ও বিশেষজ্ঞদের অভিমত, দেশব্যাপী বিনামূল্যের পাঠ্য বইবিতরণ, প্রায় পাঁচ লাখ শিক্ষকের প্রশিক্ষণ, সৃজনশীল পদ্ধতি সম্পর্কে ধারণা স্পষ্ট হওয়া, সকল বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে পড়ালেখা করা এবং পরীক্ষায় পাস না করলেও পরবর্তী ক্লাসে ভর্তি হওয়া যাবে না এমন চিন্তুা থেকেই পড়ালেখায় শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বৃৃদ্ধি পাওয়ায় এই সাফল্যের পেছনে কাজ করেছে। শিক্ষক প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে যে গতি সঞ্চার হয়েছে শিক্ষার্থীদের ওপর তারও ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে বলে মনে করছেন শিক্ষা বোর্ডগুলোর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
প্রাথমিক স্তরের সঙ্গে সঙ্গে নিম্ন মাধ্যমিকে সর্বস্তরেও ঝরে পড়ার হার কমে যাওয়ার বিষয়টিকে শিক্ষার জন্য অত্যন্ত ইতিবাচক বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফাহিমা খাতুন মনে করেন, বিনামূল্যের পাঠ্যবই শিক্ষক প্রশিক্ষণ যেমন আছে তেমনি পরীক্ষায় পাস না করলেও পরবর্তী ক্লাসে ভর্তি হওয়া যাবে না এমন চিন্তুা থেকেই পড়ালেখায় শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বৃৃদ্ধি পেয়েছে। একই কথা বললেন ধারাবহিকভাবে ভাল করা বরিশাল বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক বিমল কৃষ্ণ মজুমদার। বললেন, সার্বিক ফলে সকলের মতো আমরাও খুশি। বিনামূল্যের পাঠ্যবইয়ের গুরুত্ব তুলে ধরে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নোমান উর রশীদ বলেন, এক সময় এমন ছিল যে একটি গরিব পরিবারের ছেলেমেয়ে থাকলে অর্থের কথা ভেবে মা-বাবা কেবল ছেলেকেই বলতেন স্কুলে যাও। মেয়েটি বই পেত না। তার লেখাপড়ার ইচ্ছে সেখান থেকেই শেষ হয়ে যেত। এখন তা নেই। বছরের প্রথম দিন সকল ছেলে মেয়ে নতুন পাঠ্য বই পাচ্ছে। এটা আমাদের অনেক বড় অর্জন। এর ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে পুরো শিক্ষায়। ৮টি সাধারণ বোর্ডের জেএসসি পরীক্ষায় দেখা গেছে, পরীক্ষার জন্য এবার ফরম পূরণ করেছিল ১৫ লাখ ৫৪ হাজার ৪৭২ জন শিক্ষার্থী। কিন্তু পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ১৫ লাখ সাত হাজার ৬৭৫ জন। আর উত্তীর্ণ হয়েছে ১২ লাখ ৯৮ হাজার ১৮৮ জন শিক্ষার্থী, যা গত বছরের চেয়ে ৬৬ হাজার ৩০৮ জন বেশি। সাধারণ আট ও একটি মাদ্রাসা এই নয় বোর্ডে পাসের হারে ছাত্ররা এড়িয়ে থাকলেও জিপিএ-৫ প্রাপ্তিতে ছেলেদের পেছনে ফেলেছে ছাত্রীরা। ছাত্রদের পাসের হার ৮৮ দশমিক শূন্য এক শতাংশ আর ছাত্রীরা পাস করেছে ৮৬ দশমিক শূন্য চার শতাংশ। অন্যদিকে ছাত্ররা জিপিএ-৫ পেয়েছে ২২ হাজার ৯৭৬ এবং ছাত্রীরা জিপিএ-৫ পেয়েছে ২৩ হাজার ৯৬৬ জন। এবার সবচেয়ে বেশি জিপিএ-৫ পেয়েছে ঢাকা বোর্ডে ১৭ হাজার ৫৯৫ জন এবং সবচেয়ে কম সিলেট বোর্ডে এক হাজার ৩৬৪ জন পরীক্ষার্থী। ঢাকা শিক্ষা বোর্ড থেকে পরীক্ষা দিয়েছিল চার লাখ ৭৪ হাজার ৫১৫ জন শিক্ষার্থী। উত্তীর্ণ হয়েছেন চার লাখ তিন হাজার ৪২১ জন। গড় পাসের হার ৮৫ দশমিক শূন্য দুই ভাগ। রাজশাহী বোর্ড থেকে পরীক্ষা দিয়েছিল এক লাখ ৮৫ হাজার ৫২৪ জন ছাত্রছাত্রী। তাদের মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে এক লাখ ৫৭ হাজার ৮৬৫ জন। পাসের হার ৮৫ দশমিক শূন্য নয় শতাংশ। এ বোর্ডে জিপিএ-৫ পেয়েছে ছয় হাজার ২২১ জন। কুমিল্লা বোর্ড থেকে পরীক্ষা দিয়েছিল এক লাখ ৮৬ হাজার ৫০১ জন ছাত্রছাত্রী। এর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে এক লাখ ৭১ হাজার ৩২৮জন। পাসের হার ৯১ দশমিক ৮৬ শতাংশ। আর জিপিএ-৫ পেয়েছে তিন হাজার ৭৬৩ জন।
যশোর শিক্ষা বোর্ড থেকে এবার জেএসসি পরীক্ষা দিয়েছিল এক লাখ ৮১ হাজার ৯৫ জন ছাত্রছাত্রী। উত্তীর্ণ হয়েছে এক লাখ ৫৪ হাজার ৪৪১ জন। গড় পাসের হার ৮৫ দশমিক ২৮ ভাগ। এ বোর্ড থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে তিন হাজার ৯৭৮ জন। চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড থেকে এবার পরীক্ষা দিয়েছিল এক লাখ ৩৩ হাজার ৪৭২ জন ছাত্রছাত্রী। তাদের মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে এক লাখ চার হাজার ৫৭৮ জন। পাসের হার ৭৮ দশমিক ৩৫ শতাংশ। এ বোর্ডে জিপিএ-৫ পেয়েছে তিন হাজার ৫৩১ জন। বরিশাল শিক্ষা বোর্ড থেকে এবার জেএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছিল ৮২ হাজার ১৮২ জন ছাত্রছাত্রী। এরমধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে ৭৭ হাজার ১০১ জন। গড় পাসের হার ৯৩ দশমিক ৮২ শতাংশ। এ বোর্ডে জিপিএ-৫ পেয়েছে তিন হাজার ১৭২ জন শিক্ষার্থী। সিলেট শিক্ষা বোর্ড থেকে এবার পরীক্ষা দিয়েছিল ৯০ হাজার ৬০০ জন ছাত্রছাত্রী। এরমধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে ৮১ হাজার ৯৪৯ জন। এ বোর্ডের গড় পাসের হার ৯০ দশমিক ৪৫ ভাগ। এ বোর্ড থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে এক হাজার ৩৬৪ জন। দিনাজপুর বোর্ড থেকে এবার জেএসসি পরীক্ষা দিয়েছিল এক লাখ ৭৩ হাজার ৭৮৬ জন ছাত্রছাত্রী। এরমধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে এক লাখ ৪৭ হাজার ৫০৫ জন। গড় পাসের হার ৮৪ দশমিক ৮৮ ভাগ। এ বোর্ড থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে চার হাজার ৫৩৪ জন। মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড থেকে এবার জেডিসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছিল তিন লাখ ৩৪ হাজার ৫১ জন ছাত্রছাত্রী। এরমধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে তিন লাখ তিন হাজার ৫৬২ জন। গড় পাসের হার ৯০ দশমিক ৮৭ ভাগ। এ বোর্ড থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে দুই হাজার ৭৮৪ জন শিক্ষার্থী। এদিকে বিদেশের ৭টি পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে এ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছিল ৩৬২ জন ছাত্রছাত্রী। তাদের মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে ৩৫২ জন। গড় পাসের হার ৯৭ দশমিক ২৪ ভাগ। তাদের মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪৭ জন।
No comments