খুলে দেয়া হলো বনানী রেলক্রসিং ওভারপাস- যানজটমুক্ত সড়ক যোগাযোগের নতুন দ্বার উন্মুক্ত ॥ প্রধানমন্ত্রী
খুলে দেয়া হলো ছয় লেনের বনানী রেলক্রসিং ওভারপাস। এর ফলে অনেকটাই যানজটমুক্ত হলো বনানী সড়ক। বৃহস্পতিবার প্রায় ৮০০ মিটার দীর্ঘ ওভারপাসের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ওভারপাসটি উদ্বোধনের ফলে বিমানবন্দর সড়কের বনানী রেলক্রসিংয়ে ট্রেন চলাচলের সময় যানবাহনকে থেমে থাকতে হবে না। রেল কর্তৃপক্ষের হিসেবে এই ক্রসিং দিয়ে দিন-রাতে ৭২টি ট্রেন আসা-যাওয়া করে। ওভারপাসটি চালু হওয়ায় যানজট কমার পাশাপাশি এ সড়ক ব্যবহারকারীদের সময়ের অপচয়ও কমে আসার কথা বলছে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়। এদিকে ওভারপাস ঘিরে ১৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে ইউলুপ বাস্তবায়নের নতুন সিদ্ধান্ত হয়েছে। আগামী মার্চে খুলে দেয়া হচ্ছে রাজধানীর আরও তিনটি ফ্লাইওভার।বনানী ওভারপাস উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় আর্মি স্টেডিয়ামে। সেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ওভারপাস চালুর মধ্য দিয়ে রাজধানী ঢাকার যানজটমুক্ত সড়ক যোগাযোগের নতুন দ্বার উম্মুক্ত হলো। এর ফলে বনানী রেলক্রসিংয়ে কোন গাড়ি থামতে হবে না। ৮০৪ মিটার দীর্ঘ এই ওভারপাসটি হবে সময় সাশ্রয়ী যোগাযোগের অন্যতম মাইলফলক।
মিরপুর-এয়ারপোর্ট রোড ফ্লাইওভার প্রকল্পের আওতায় প্রায় ১০৩ কোটি টাকা ব্যয়ে এ ওভারপাসের নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। নির্দিষ্ট সময়ের আগেই প্রায় ২২.৫২ মিটার প্রশস্ত ৬ লেনের এ ওভারপাসের কাজ শেষ করে তারা। ছয় লেনের মধ্যে দুটি লেন রাখা হয়েছে বাস র্যাপিড ট্রানজিটের (বিআরটি) জন্য। পুরো ফ্লাইওভারটি উদ্বোধন করা হবে আগামী বছরের মার্চে। সকালে ওভারপাসের ফলক উন্মোচনের পর মোনাজাতে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর ওভারপাসের নিচে একটি কৃষ্ণচূড়ার চারাও লাগান তিনি। ওভারপাসের র্যাডিসন হোটেল প্রান্তে ফিতা কাটার পর হেঁটে ফ্লাইওভারে উঠে নামফলক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় ছোটশিশুরা ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানায়। এরপর প্রধানমন্ত্রীর গাড়িবহর ওভারপাসের উপর দিয়ে আর্মি স্টেডিয়ামে পৌঁছায়। ওভারপাস উদ্বোধন উপলক্ষে এক ঘন্টা এই রুটে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বনানী রেলক্রসিংয়ে দুর্ঘটনায় অনেকে পঙ্গু, আহত হয়েছেন। মারা গিয়েছেন। এই ওভারপাস হওয়ার ফলে এখন আর এটি হবে না। এটি হবে যোগাযোগের ক্ষেত্রে যুগান্তকারী ঘটনা।
তিনি বলেন, সবাইকে ঢাকায় থাকতে হবে এমন কোন কথা নেই। তাই ঢাকার বাইরে থেকে যাঁরা আসবেন, তাঁদের জন্য কমিউটার সিস্টেম চালু করবো। দীর্ঘদিন ধরে নদীপথ অবহেলিত ছিল। তাই এবার নদী ড্রেজিংয়ের কাজ শুরু করেছি। অনেকগুলো নদীর কাজ সমাপ্ত করেছি। আরও নদীর ড্রেজিং কাজ চলছে। নদী ড্রেজিংয়ের ফলে দু’পাশে অনেক জমি উদ্ধার হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সব নদী ড্রেজিং করবো। বুড়িগঙ্গাকে অনেকটাই দূষণমুক্ত করেছি।
রেলওয়েকে গুরুত্ব দেয়ার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, রেলের উন্নয়নের জন্য মন্ত্রণালয়টি আলাদা করেছি। অতীতে অনেক রেললাইন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। বিএনপি সরকারের সময় বিশ্বব্যাংকের পরামর্শে এসব রেললাইন বন্ধ করা হয়েছিল।’ প্রধানমন্ত্রী সেনাবাহিনীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ওভারপাস ঘিরে ইউলুপ বাস্তবায়ন করার প্রতিশ্রুতি দেন। এতে ১৫০ কোটি টাকা লাগবে। এটিও করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেন তিনি।
সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ডের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদনক্ষমতা আট হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করেছি। নতুন নতুন গ্যাসকূপ খনন করছি। গ্যাসের উৎপাদন বৃদ্ধি করতে পেরেছি। সার্বিকভাবে আমাদের লক্ষ্য, দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। যাতে ২০২১ সালে দেশ মধ্য-আয়ের দেশে উন্নীত হয়। ইতোমধ্যে পাঁচ কোটির মতো হতদরিদ্র মানুষের চেহারা পাল্টেছে। প্রবৃদ্ধি ৬.৫ শতাংশে উন্নীত করেছি। এ জন্য উন্নত দেশেরও স্বীকৃতি মিলছে। শুধু রাজধানীর মানুষের নয়, সারাদেশের মানুষের উন্নয়নে কাজ করছি। বিশ্ব অর্থনীতির ধাক্কা সত্ত্বেও মূল্যস্ফীতির পরিমাণ ডাবল ডিজিট থেকে কমিয়ে সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে এনেছি।
তিনি বলেন, শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন করছি। পড়াশুনার মান উন্নত হচ্ছে। এক জানুয়ারি থেকে ২৭ কোটি বই বিনামূল্যে দিচ্ছি। লেখাপড়ায় মেয়েদের সংখ্যা বাড়ছে। তারা ভাল ফল করছে। নির্ধারিত সময়ের ৬ মাস আগেই ওভারপাস নির্মাণে সেনাবাহিনীর প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যখনই সমস্যায় পড়ি সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দিই। তারা তা সম্পন্ন করে দেয়।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের শুরুতেই স্বাগত বক্তব্য রাখেন সেনাপ্রধান জেনারেল ইকবাল করিম ভূঁইয়া। যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, টেলিযোগাযোগমন্ত্রী সাহারা খাতুন, সড়ক বিভাগের সচিব এমএএন সিদ্দিক, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবু সাইদ মাহমুদ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ঢাকা শহরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা এয়ারপোর্ট রোড। এখন বনানী রেলক্রসিংয়ে কোন গাড়িই থামতে হবে না। বিশ্বরোড বা মহাখালী পর্যন্ত যানজট সৃষ্টি হবে না। অনাকাক্সিক্ষত দুর্ঘটনা থেকে জনগণ সুরক্ষা পাবে। রাজধানীর যানজট মুক্ত করতে আগামী কয়েক মাসের মধ্যে কুড়িল ফ্লাইওভার, মিরপুর-এয়ারপোর্ট রোড ফ্লাইওভার ও যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভার সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
হাতিরঝিল সমন্বিত উন্নয়ন প্রকল্প এবং সড়ক উন্নয়নসহ সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন শেষ হলে ঢাকা শহরের সৌন্দর্য অনেকাংশে বেড়ে যাবে বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন। অনুষ্ঠানে যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, পদ্মার প্রদীপ এখনও জ্বলছে। হতাশ হওয়ার কিছু নেই।
No comments