ছোটদের বিজ্ঞান ॥ অদৃশ্য হবার পোশাক তড়িৎ চুম্বকীয় তরঙ্গই বস্তুটির অপর পাশে এমনভাবে আবির্ভূত হবে যে, দেখে মনে হবে ওগুলো যেন শূন্য স্থান দিয়ে চলে গেছে। এর ফলে বস্তুটি আড়ালে চলে যাবে। সেটিকে আর দেখা যাবে না
ইনভিজিবল ম্যান’ বা অদৃশ্য মানবের অস্তিত্ব এতদিন কল্পকাহিনীতেই ছিল। বিজ্ঞানের বদৌলতে আজ তা বাস্তব হয়ে ওঠার পথে। তবে তফাৎ হচ্ছে কাহিনীর মানব শরীরী দিক দিয়েই অদৃশ্য ছিল। পোশাক পড়লে তার অস্তিত্ব বোঝা যেত।
কিন্তু বাস্তবের অদৃশ্য মানব আসলে অদৃশ্য নয়, সে কায়াহীন নয়। শুধু বিশেষ একটি পোশাক পড়লে তাকে দেখা যাবে না। সে হয়ে উঠবে অদৃশ্য। সে পোশাকের আদিরূপ উদ্ভাবিত হয়েছে।অদৃশ্য হবার পোশাক প্রথম উদ্ভাবন করেছিল ব্রিটেনের ডিউক বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল ইলেকট্রিক ইঞ্জিনিয়ার সেই ২০০৬ সালে। তবে সেটা অত নিখুঁত ছিল না। সেই একই গবেষণাগারের আরেক সদস্য নতুন ডিজাইন উদ্ভাবন করে আগের পোশাকটিকে বিকশিত করেছেন।
যে প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে এ অদৃশ্য করার কাজটা সম্ভব করা হয়েছে তার মূল কথা হলো আলোকে বশীভূত করা। সেটা করতে গিয়ে রূপান্তরকরণ অপটিকসের আবির্ভাব ঘটেছে। এখানে যে গাণিতিক হিসাবটা যুক্ত তা অবিশ্বাস্য রকমের জটিল এবং যেসব উপকরণ প্রয়োজন সেগুলো তৈরি করাও কঠিন। যেমন সেটা মেটেরিয়াল। মানুষের তৈরি এই বস্তুটির যেসব ধর্ম আছে, অনেক সময় প্রকৃতি জগতে তা অনুপস্থিত। সেটা মেটেরিয়ালের তৈরি কাঠামো এমনভাবে তৈরি করা যায় যে তা কোন বস্তুর চারপাশে তড়িৎ চুম্বকীয় তরঙ্গ সৃষ্টি করতে পারবে। এ তড়িৎ চুম্বকীয় তরঙ্গই সেই বস্তুটির অপর পাশে এমনভাবে আবির্ভূত হবে যে, মনে হবে ওগুলো যেন শূন্য স্থান দিয়ে চলে গেছে। এর ফলে বস্তুটি আড়ালে চলে যাবে। সেটিকে আর দেখা যাবে না। এভাবেই গবেষক নাথান ল্যান্ডি ও জন প্রেন্ড্রি একটি সিলিন্ডারের চারপাশে বিশেষ কায়দায় আলো ফেলে এবং তারপর ফোটনগুলো আদি গমন পথে ফিরিয়ে এনে বস্তুটির চারপাশে আলোকে বাঁকিয়ে দিয়েছেন। আর এভাবেই সিলিন্ডারটিকে দৃষ্টির
আড়ালে ঠেলে দিয়েছেন বা অদৃশ্য করে ফেলেছেন। এভাবেই অন্যরা যেখানে ব্যর্থ হয়েছেন সেখানে এ দু’জন কোন কিছুকে অদৃশ্য করার কাজে সফল হয়েছেন।
ছয় বছরের সাধনার পর এ বিষয়টি নিঃসন্দেহে এক বিস্ময়কর অগ্রগতি। নাথান ল্যান্ডি বলেন, অদৃশ্য হবার প্রথম পোশাকটি তৈরি করতে গিয়ে নানা ধরনের হিসাব নিকাশ করতে হয়েছে যাতে এ কাজে ব্যবহৃত জটিল মেটা-মেটিরিয়াল বানানো যায়। ল্যান্ডি বলেন, ‘একটা ব্যাপারে আমরা পুরোপুরি সচেতন ছিলাম। তা হলো পোশাকটির পরিসীমার মধ্যে আলোর প্রতিফলনের কারণে আলোর তরঙ্গমালা হারিয়ে যাওয়া। বিষয়টির ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, এ হলো অনেকটা স্বচ্ছ কাঁচের গায়ে দেখা আলোর প্রতিফলনের মতো। দর্শক কাঁচ দিয়ে সুন্দর দেখতে পারছেন। কিন্তু সেসঙ্গে দর্শক এও জানেন যে, কাঁচের উপরিতল থেকে প্রতিফলিত আলোর কারণেই কাঁচটি উপস্থিত আছে। কোন কিছুকে দৃষ্টির আড়ালে নিয়ে যাওয়া বা অদৃশ্য করার মূল সূত্রগুলো প্রদর্শন করাই যেখানে লক্ষ্য সেখানে আমরা এসব প্রতিফলন নিয়ে তেমন ভাবিনি।
ল্যান্ডি ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে প্রতিফলনের ঘটনাগুলোকে কমিয়ে এনেছেন। অদৃশ্য হওয়ার প্রথম পোশাকটি ছিল তামার সঙ্গে ফাইবার গ্লাসের সমান্তরাল ও আড়াআড়িভাবে ছেদ করা স্ট্রাইপ দিয়ে যুক্ত। ল্যান্ডির পোশাকে একই ডিজাইন ব্যবহার করা হয়েছিল। তবে তামার স্ট্রাইপ যোগ করে আরও জটিল ও অধিক কার্যকর উপকরণ তৈরি করা হয়েছিল। প্রায় দুই ফুট বর্গের এ উপকরণের স্ট্রাইপগুলো হীরকের আকার ধারণ করে। এর কেন্দ্রভাগ থাকে শূন্য।
আলোর মতো যে কোন ধরনের তরঙ্গ উপরিতলের গায়ে পড়লে এটাকে হয় প্রতিফলিত করা অথবা শুষে নেয়া যায় কিংবা দুটোই যুক্তভাবে হতে পারে। সবচেয়ে বড় কথা পোশাকটি তৈরি করা গেছে এবং সেটা কাজেও লাগানো যাবে।
সূত্র : হিউম্যান সায়েন্স
No comments