শীতার্তদের পাশে দাঁড়ান আবহাওয়াবিদদের মতে, এবারের প্রথম দফা এই শৈত্যপ্রবাহের পরপর আরেকটি শৈত্যপ্রবাহ দেশের ওপর দিয়ে বয়ে যেতে পারে
শীতে কাঁপছে দেশ। বুধবারের জনকণ্ঠের প্রধান খবর হিসেবে প্রকাশিত হয়েছে এটি। খবরটি কতখানি সঠিক তথা সত্য তা হিমালয় অঞ্চলের অনেকটা কাছাকাছি উত্তরবঙ্গে না গিয়ে ঢাকা শহরের হর্ম্য-অট্টালিকার মাঝ থেকেও বোঝা যায়।
আসলে গোটা দেশই কাঁপছে শীতে। শুধু কাঁপছে না, শীতের কামড়ের নীরব দংশনে দেশের অগণিত দরিদ্র সাধারণ মানুষ কাতর। হিমেল বাতাস বইছে কয়েকদিন ধরে। জনকণ্ঠের উল্লিখিত খবরে জানা গেল, আবহাওয়াবিদদের মতে, এবারের প্রথম দফা এই শৈত্যপ্রবাহের পরপর আরেকটি শৈত্যপ্রবাহ দেশের ওপর দিয়ে বয়ে যেতে পারে। বোঝা যাচ্ছে এবারের শীতের দিনগুলো এভাবেই কাটবে, দেশের অগণিত মানুষকে সইতে হবে শীতের শীতল দংশন।বাংলাদেশ শীতপ্রধান নয়, গ্রীষ্মপ্রধানও বলা যাবে না একে। বলা হয়, এটা নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়ার দেশ। এককালে হয়ত এমনই ছিল পুরোপুরি। এখন বেশ খানিকটা বদল হয়েছে। বদলানোর কারণ হিসেবে বিশ্বজুড়ে জলবায়ুর পরিবর্তনের কথা বলা হয়। কথাগুলো সাধারণ মানুষের নয়, আবহাওয়া বিশেষজ্ঞদের, বিজ্ঞানীদের। সেজন্যই আবহাওয়ার আচরণে উল্টাপাল্টা ভাব লক্ষ্য করা যায়। কখনও গ্রীষ্মে গরম কম অথবা খানিকটা গরম। কখনও বর্ষায় বৃষ্টি নেই অথবা প্রবল বর্ষণ এক নাগাড়ে। কোন কোন আষাঢ়-শ্রাবণে গ্রীষ্মের খরতাপ। প্রতিবছরই ঋতুগুলোর মধ্যে মাঝে মাঝেই পাওয়া যায় এমন কিছু উল্টাপাল্টা আচরণের নমুনা।
এবারের শীত বা শৈত্যপ্রবাহ যে নতুন, তা অবশ্য নয়। এমন শীত বা শৈত্যপ্রবাহ বা ঘনকুয়াশা আগের বছরগুলোতেও দেখা গেছে। কোন কোন বছর শীত খানিকটা কম পড়ে এটা অবশ্য ঠিক, তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শীতের সময় শীত যথেষ্টই পড়ে এখনও। এবারও তাই পড়েছে। প্রতিবছরের মতো এবারও অগণিত মানুষ, বিশেষ করে খেটে খাওয়া মানুষ, স্বল্প আয়ের মানুষ পড়ছে চরম কষ্টে।
বিশ্বে অনেক দেশ রয়েছে যেগুলোতে ভয়ানক ঠা-া পড়ে। তাপমাত্রা হিমাঙ্কের শূন্যের কাছাকাছি বা শূন্যের অনেক নিচেও নেমে যায়। সেসব দেশ শীত নিবারণের, দোকানপাট তথা মার্কেটে, গণপরিবহন বাসগুলোয় এবং মানুষের বাসগৃহে স্বাভাবিক উষ্ণ তাপমাত্রা নিশ্চিত রাখার ব্যবস্থা রাখছে। আমাদের শীত অতখানি তীব্র না হলেও এই গরিব দেশে যে শীতই পড়ে, সেটা আমাদের জন্য ভয়াবহ হয়ে ওঠে। প্রাণঘাতীও হয়ে পড়ে অনেকের ক্ষেত্রে। এবারই যেমন হয়েছে। এই কয়েকদিনে শীতে মারা গেছে সারাদেশে বেশ কয়েকজন মানুষ। আমাদের গৃহপালিত পশুগুলোর অবস্থাও শোচনীয়। সারাদেশে বিশেষ করে উত্তরবঙ্গ এলাকায় এবং দেশের অন্যান্য স্থানে বস্তিতে, যাদের থাকতে হয় বেড়ার ঘরে, যাদের গরম কাপড়-চোপড়, লেপ-তোষক নাই, তাদের এখন কষ্টের সীমা নাই। সরকারী তরফে শীতবস্ত্র বিতরণ শুরু হয়েছে। তবে এই কাজটিকে অব্যাহত রাখা এবং এর সম্প্রসারণ প্রয়োজন। শীতের কারণে অসুস্থ মানুষজনের সুচিকিৎসার ব্যবস্থার সুযোগ যাতে সব অসুস্থই পায় সেটাও নিশ্চিত রাখা দরকার।
শীতার্ত মানুষের সহায়তায় হৃদয়বান অনেক ধনী এগিয়ে আসেন। এই ঐতিহ্য এদেশে রয়েছে। এবারও অবস্থাপন্ন, হৃদয়বান ধনীদেরও শীতার্তদের সহায়তায় হাত বাড়িয়ে দিলে বহু মানুষ পেতে পারে যেমন শীত থেকে বাঁচার উষ্ণতা, তেমনি একই সঙ্গে পেতে পারে মানুষের হৃদয়ের ভালবাসার মানবিক উষ্ণতাও।
No comments