যুদ্ধাপরাধী বিচার ॥ কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের যুক্তিতর্ক শেষ

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতারকৃত জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে প্রসিকিউশন পক্ষ যুক্তিতর্ক (আর্গুমেন্ট) শেষ করেছে। ৭ জানুয়ারি থেকে আসামিপক্ষের যুক্তি উপস্থাপনের জন্য দিন ধার্য করেছে ট্রাইব্যুনাল।
একই ট্রাইব্যুনালে আবদুল আলীমের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশন পক্ষের অষ্টম সাক্ষী মুক্তিযুদ্ধকালে শহীদ জব্বল হোসেনের মেয়ে বিউটি খানমকে জেরা করেছে আসামিপক্ষ। জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুহাম্মাদ মুজাহিদের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের ১১তম সাক্ষী ফয়েজ উদ্দিন আহমেদকেও বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দিনের মতো জেরা করা হয়েছে। চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান শাহীনের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ মামলা গুলোর শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। ট্রাইব্যুনালে অন্য দু’সদস্য ছিলেন বিচারপতি মোঃ মজিবুর রহমান মিয়া ও জজ মোঃ শাহিনুর ইসলাম।
অন্যদিকে একই অভিযোগে জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযমের বিরুদ্ধে মামলা পুনরায় শুরু (রি-ট্রায়াল) করার আবেদনের উপর শুনানি বৃহস্পতিবার শেষ করেছে আসামিপক্ষ। অন্য আসামি মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলার রি-ট্রায়ালের শুনানি অব্যাহত রয়েছে। চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীরের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ এই শুনানি অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ট্রাইব্যুনালে অন্য দু’সদস্য ছিলেন বিাচরপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি আনোয়ারুল হক।
মাওলানা দেলাওযার হোসাইন সাঈদীর মামলা শুনানির সময় সাবেক চেয়ারম্যান বিচারপতি মোঃ নিজামুল হক নাসিমের ব্যক্তিগত ও বিচাররিক বিষয় আসামি পক্ষ তুলতে সরকার পক্ষ বাধা প্রদান করে। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে বিতর্কের সৃষ্টি হয়। আসামি পক্ষের আইনজীবী মিজানুল ইসলাম বলেন, সাবেক চেয়ারম্যান শপথ নিয়ে শপথ ভঙ্গ করেছেন। ট্রাইব্যুনালের কিছু আদেশ নিয়েও জলিয়াতি করেছেন। এ সময় এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ট্রাইব্যুনালকে বলেন, তিনি এ কথা বলতে পারেন না। কারণ সাবেক চেয়ারম্যান এখনও সিটিং জাজ। সাবমিশন এমন হবে যাতে আমরা এপ্রিসিও করতে পারি। বিচারপতির ডিগনিটি রক্ষা করে কথা বলা উচিত। এ্যাটর্নি জেনারেল আরও বলেন, সিটিং জাজকে নিয়ে জালিয়াতি বলবেন না। এ সময় মিজানুল ইসলাম তাঁর কথা প্রত্যাহার করে নেন।
আসামি পক্ষের আইনজীবী মিজানুল ইসলাম একই কথা বাব বার বলায় এ্যাটর্নি জেনালের বলেন, একই কথা ২০ বার বলছেন কেন। তিনি ট্রাইব্যুনালের ল দেখিয়ে বলেন, এরা আসলে সময় ক্ষেপণ করছে। চীফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু ও প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলীও আসামি পক্ষের আইনজীবীর বক্তব্যের প্রতিবাদ করেন।

কাদের মোল্লা
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতারকৃত জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে প্রসিকিউশন পক্ষ যুক্তিতর্ক শেষ করেছে। ৭ জানুয়ারি থেকে আসামি পক্ষ তাদের যুক্তিতর্ক শুরু করবে। চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান শাহীনের নেতৃত্বে তিন সদস্য বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ বৃহস্পতিবার এই আদেশ প্রদান করে।
আদেশের পর প্রসিকিউটর মোহাম্মদ আলী সাংবাদিকদের বলেন, আব্দুল কাদের মোল্লার মামলার যুক্তিতর্ক শেষ হলেই ট্রাইব্যুনাল রায় ঘোষণার দিন নির্ধারণ করবে। প্রসিকিউশনের যুক্তি শেষ হয়েছে। তিনি এই মামলার আসামি কাদের মোল্লার সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেন। প্রসিকিউটর মোহাম্মদ আলী বলেন, তার বিরুদ্ধে ৬টি অভিযোগের মধ্যে ৩টি অভিযোগের প্রত্যক্ষ সাক্ষী আনতে না পারলেও যে তিন সাক্ষ্য দিয়েছে তাদের ক্রেডিবিলিটি সম্পর্কে আজ যুক্তি উপস্থাপন করেছি। এ ছাড়া বাকি তিনটি ঘটনার প্রত্যক্ষ সাক্ষীরা ট্রাইব্যুনালে এসে সাক্ষ্য দিয়েছেন।

আব্দুল আলীম
যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে গ্রেফতারকৃত (বর্তমানে শর্তসাপেক্ষে জামিন) বিএনপি নেতা আবদুল আলীমের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের অষ্টম সাক্ষী মুক্তিযুদ্ধকালে শহীদ জব্বল হোসেনের মেয়ে বিউটি খানমকে জেরা করেছে আসামিপক্ষ। চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান শাহীনের নেতৃত্বে তিন সদস্য বিশিষ্ট আন্তজার্তিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ এই শুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে। সাক্ষীকে তৃতীয় দিনের মতো জেরা করেন আসামিপক্ষের আইনজীবী এএইচএম আহসানুল হক হেনা।
মামলার কার্যক্রম আগামী ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত মুলতবি করা হয়েছে। শহীদ জব্বল হোসেনের কন্যা বিউটি খানম (৫৭) ২২ নবেম্বর তাঁর জবানবন্দীতে মুক্তিযুদ্ধের সময় তার পরিবারের ওপর পাকসেনা ও তাদের এদেশীয় দোসর কর্তৃক নির্মম নির্যাতন এবং তাঁর বাবাকে ধরে নিয়ে হত্যার বর্ণনা দেন। মুক্তিযুদ্ধকালে মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় বিএনপি নেতা আব্দুল আলীমের বিরুদ্ধে এর আগে প্রসিকিউশনের পক্ষে ৭ জন সাক্ষ্য দেন। সাক্ষীরা হলেন-আব্দুল মোমেন, মোহাম্মদ সাইদুর রহমান, নুরুল ইসলাম, মোল্লা শামসুল আলম, আব্দুস সামাদ ম-ল, সুলাইমান আলী ফকির ও গোলাম রসুল। পরে আসামিপক্ষের আইনজীবী তাদের জেরা করেন।

গোলাম আযম
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতারকৃত জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযমের বিরুদ্ধে মামলা পুনরায় শুরু (রি-ট্রায়াল) করার আবেদনের ওপর শুনানি শেষ করেছে আসামিপক্ষ। বৃহস্পতিবার চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীরের নেতৃত্বে তিন সদস্য বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ শুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে। আসামি পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার আব্দুুর রাজ্জাক এ আবেদনের পক্ষে তৃতীয় দিনের মতো শুনানি করছেন।
শুনানিকালে এ্যাটর্নি জেনারেল মাহাবুবে আলম, চীফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু, প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম, প্রসিকিউটর রানা দাসগুপ্ত, প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলীসহ প্রসিকিউটররা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে একই ট্রাইব্যুনালে জামায়াতের অপর নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে মামলাটি পুনরায় শুরু করার আবেদননের ওপর শুনানি শুরু করেন তাঁর আইনজীবী মিজানুল ইসলাম। শুনানি অসমাপ্ত অবস্থায় মামলার কার্যক্রম রবিবার পর্যন্ত মুলতবি করা হয়েছে।

মুজাহিদ
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতারকৃত জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের ১১তম সাক্ষী ফয়েজ উদ্দিন আহমেদকে আসামিপক্ষ দ্বিতীয় দিনের মতো জেরা করেছে। এ সাক্ষী বুধবার জবানবন্দী পেশ করেন। জবানবন্দীতে তিনি বলেন, শান্তি কমিটি, বিহারী ও স্থানীয় রাজাকারদের নিয়ে মুক্তিযুদ্ধকালে মুজাহিদ ফরিদপুরের চরভদ্রাসন থানার হিন্দু জনপদে অগ্নিসংযোগ ও হত্যাযজ্ঞ চালায়।
চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান শাহীনের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ জেরা অনুষ্ঠিত হয়। আসামিপক্ষের আইনজীবী সৈয়দ মিজানুর রহমান তাকে জেরা করেন। জেরা অসমাপ্ত অবস্থায় মামলার কার্যক্রম ৩ জানুয়ারি পর্যন্ত মুলতবি করা হয়েছে। করে। এর মধ্যে ফান্ডেড সাড়ে তিন শ’ কোটি টাকার ঘটনায় বৃহস্পতিবার ২৬টি মামলা করার অনুমোদন দিয়েছে দুদক। এ ব্যাপারে দুদক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান সাংবাদিকদের জানান, অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে মামলার অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এরপর মামলা দায়ের হবে।
টি এ্যান্ড ব্রাদার্স, প্যারাগন নিট এ্যান্ড কম্পোজিট, খানজাহান আলী সোয়েটার, নকশি নিট কম্পোজিট এবং ডিএন স্পোর্টসÑ এই ৫টি প্রতিষ্ঠান প্রায় হাজার কোটি টাকা আত্মসাত করে। গত অক্টোবরের মাঝামাঝি সময় এ পাঁচ প্রতিষ্ঠানের মালিক ও কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক। এর মধ্যে রয়েছেন টি এ্যান্ড ব্রাদার্সের চেয়ারম্যান জিনাত ফাতেমা, ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাওহীদ হাসান এবং পরিচালক তসলিম হাসান। প্যারাগন নিট এ্যান্ড কম্পোজিটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সাইফুল হাসান রাজা এবং দুই পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন ও এসএম মনিরুজ্জামান। নকশি নিটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ আবদুল মালেক ও চেয়ারম্যান আমেনা বেগম। খানজাহান সোয়েটারের চেয়ারম্যান মোঃ তাজুল ইসলাম মোল্লা, ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আবদুল জলিল শেখ এবং প্রতিষ্ঠানের দুই পরিচালক মীর মোঃ শওকত আলী ও রফিকুল ইসলাম। আর ডিএন স্পোটর্সেরও তিন কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক। এর মধ্যে ফান্ডেড প্রায় সাড়ে ৩শ’ কোটি টাকা রয়েছে। এ টাকার বিপরীতে ২৬টি মামলার অনুমোদ দেয়া হয়। বাকি ফান্ডেড টাকার অনুসন্ধান চলছে। অনুসন্ধান শেষে ওইসব টাকা আত্মসাতের ঘটনাও আইনী পদক্ষেপ নেবে দুদক।
এদিকে জালিয়াতির মাধ্যমে সরকারের আর্থিক ক্ষতিসাধন করার অভিযোগে বিআরটিএ’র কর্মকর্তাসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে এদিন ৫টি মামলার অনুমোদন দিয়েছে দুদক। মামলার আসামিরা হলেন, কক্সবাজার বিআরটিএ’র সহকারী পরিচালক আবু আশরাফ সিদ্দিকী, ট্রাক মালিক হারুন-অর-রশিদ বাহাদুর, আলহাজ নুরুল ইসলাম, ফয়েজ আহমেদ, সাজাহান খান এবং নাসির উদ্দিন। তাদের বিরুদ্ধে গাড়ি আমদানি ও ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে রেজিস্ট্রেশন করার মাধ্যমে সরকারের ৩০ লাখ ১৪ হাজার ৩৮০ টাকার আর্থিক ক্ষতি সাধনের অভিযোগ করা হচ্ছে। এ ঘটনায় চট্টগ্রাম থানায় দুদকের সহকারী পরিচালক মোঃ রফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে আগামি সপ্তাহে মামলাগুলো দায়ের করবেন।

No comments

Powered by Blogger.