পেঁয়াজের কৃত্রিম সঙ্কট ৮৭০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে চক্র! by এম শাহজাহান
কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে প্রায় ৮৭০ কোটি টাকা হাতিয়ে
নিয়েছে সিন্ডিকেট। আমদানিকৃত ২৩ টাকার পেঁয়াজ দ্বিগুণ বা তার চেয়েও বেশি
দামে বিক্রি করে ভোক্তাদের পকেট থেকে তুলে নিয়েছে চক্রটি।
ট্যারিফ কমিশনের
পণ্য বিপণন মনিটরিং সেলের প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। বাণিজ্য সচিব
মাহবুব আহমেদের নির্দেশে সম্প্রতি পেঁয়াজের মজুদ, চাহিদা, পাইকারি ও খুচরা
বাজার পরিস্থিতির ওপর একটি প্রতিবেদন প্রস্তুত করে ট্যারিফ কমিশন। ট্যারিফ
কমিশনের এ প্রতিবেদন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মোট আমদানিকে ভিত্তি ধরে ৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক, ১০ শতাংশ পরিবহন খরচ, ১৫ শতাংশ ব্যাংক সুদ, ২ শতাংশ মুনাফা, ৬ শতাংশ পাইকারি মুনাফা, ৫ শতাংশ প্রসেস লস এবং ১৫ ভাগ খুচরা ব্যবসায়ীর মুনাফা ও পরিবহন খরচ ধরে আমদানিকৃত প্রতিকেজি পেঁয়াজের যৌক্তিক মূল্য হওয়া উচিত ২৩ টাকা।
দেশের উৎপাদিত পেঁয়াজে বছরের ১০ মাস চলে। বাকি দু’মাসের চাহিদা পূরণে সাড়ে ৩ থেকে ৪ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করা হয়। নবেম্বর ও ডিসেম্বর মাস চাহিদার ৯০ শতাংশ পূরণ করা হয় আমদানিকৃত পেঁয়াজ দিয়ে। আর ব্যবসায়ীরা এই দু’মাসে বিপুল অঙ্কের টাকা কারসাজির মাধমে হাতিয়ে নেয়। এবার কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে ভারত থেকে আমদানিকৃত পেঁয়াজ বিক্রি করা হয়েছে ৪৫-৫০ টাকা। দেশী পেঁয়াজের স্বাদ নিতে ভোক্তাদের ৬৫-৭০ পর্যন্ত গুণতে হয়েছে। আর এ জন্য পেঁয়াজের আমদানিকারক, পাইকারি, খুচরা ব্যবসায়ী এবং আড়তমালিকরা দায়ী বলে একাধিক অভিযোগ রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, আমদানিকৃত প্রতিটন পেঁয়াজের এলসি নিষ্পত্তি হয়েছে ১৭০ থেকে ২০০ মার্কিন ডলারে। সে হিসেবে প্রতিকেজি পেঁয়াজের আমদানি মূল্য সাড়ে ১৪ টাকা। মুনাফাসহ অন্যান্য খরচ যোগ করলেও পেঁয়াজের দাম ২৩ টাকার বেশি হয় না। কিন্তু সিন্ডিকেট ও কারসাজি করে ভোক্তাদের কাছ থেকে দ্বিগুণ টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য সচিব মাহবুব আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেন, পেঁয়াজের দাম কমানোর জন্য সম্প্রতি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে জরুরী বৈঠক করা হয়েছে। ব্যবসায়ীরা আশ্বস্ত করেছেন পেঁয়াজের দাম কমবে। দাম ইতোমধ্যে কমে আসছে। আগামী সপ্তাহ নাগাদ বাজার পুরোপুরি স্থিতিশীল হয়ে যাবে। তিনি বলেন, কারসাজি যা হওয়ার তা হয়ে গেছে। আগামীতে যাতে কারসাজি না হয় সে ব্যাপারে সতর্ক বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। কারসাজির মাধ্যমে যাতে কেউ দাম না বাড়াতে পারে সেজন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং টিম কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। এছাড়া কারসাজি ও সিন্ডিকেট বন্ধে সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন।
পেঁয়াজের বাজার অস্থির হয়ে ওঠায় সম্প্রতি আমদানিকারক, পাইকারী, আড়তমালিক, খুচরা ব্যবসায়ী এবং সংশ্লিষ্ট এ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে জরুরী বৈঠক করেন বাণিজ্য সচিব মাহবুব আহমেদ। মূল্যবৃদ্ধি এবং কারসাজি বিষয়ে সতর্ক করা হলে ওই বৈঠকেই ব্যবসায়ীরা প্রতিদিন পেঁয়াজের দাম কমে আসার নিশ্চয়তা দেন। এখন প্রতিদিন পেঁয়াজের দাম ২-৩ টাকা করে কমছে।
রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, খুচরা পর্যায়ে পেঁয়াজের দাম কমছে। প্রতিকেজি দেশী নতুন পেঁয়াজ মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ৩০-৩৫ টাকা। আর আমদানিকৃত ভালমানের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩২ টাকায়। খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে নতুন পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়ায় তাই দাম কমে আসছে। আগামী সপ্তাহ নাগাদ দাম আরও কমে আসবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সূত্রে জানা গেছে, গত ২০১১-১২ অর্থবছরে দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন ছিল ১৮ লাখ ৫০ হাজার টন। চলতি অর্থবছরে ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে ১৯ লাখ ২৪ হাজার টন পেঁয়াজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর সারাবছরে পেঁয়াজের চাহিদা ২২ লাখ টন। সে হিসেবে চলতি বছর সাড়ে ৩ লাখ টন পেঁয়াজের ঘাটতি হচ্ছে। এই ঘাটতি মাথায় রেখে বাকি পেঁয়াজ আমদানি করে থাকে ব্যবসায়ীরা। ঘাটতির সমপরিমাণ পেঁয়াজ আমদানির পরও কারসাজি ও সিন্ডিকেট করে দাম বাড়ানো হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ প্রসঙ্গে শ্যামবাজার কৃষিপণ্য আড়ত বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাজী মোঃ মহসিন উদ্দিন ভুলু মিয়া জনকণ্ঠকে বলেন, আড়তদাররা কোন কারসাজির সঙ্গে জড়িত নয়। আড়তমালিকরা কমিশন এজেন্ট। প্রতিকেজি পেঁয়াজ বিক্রির ওপর ৫০ পয়সা ও আড়ত বাবদ ২০ পয়সা কমিশন পেয়ে থাকে। কারসাজি করে দাম বাড়ালে তা খুচরা পর্যায়ে হয়েছে। তিনি আড়ত ও পাইকারী পর্যায়ে দাম বাড়ানোর কথা অস্বীকার করে বলেন, শ্যামবাজারে সব সময় পেঁয়াজের দাম কম ছিল।
No comments