রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব- জাতিসংঘের এ ধরনের আহ্বান রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ
মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের সে দেশে নাগরিকত্ব প্রদানের জন্য জাতিসংঘ আহ্বান জানিয়েছে। সোমবার ১৯৩ সদস্যবিশিষ্ট জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের বৈঠকে এ প্রস্তাবটি সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়।
মিয়ানমার সরকারের প্রতি জাতিসংঘের এ ধরনের আহ্বান রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে বলা যায়। এক্ষেত্রে জাতিসংঘ ও যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর আরও অনেক কিছু করার সুযোগ রয়েছে। মিয়ানমার ইতোপূর্বে রোহিঙ্গাদের বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি। চলতি বছরের জুনে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী রাখাইন ও রোহিঙ্গা মুসলমানদের মধ্যে ব্যাপক দাঙ্গার সূত্রপাত হয়। দাঙ্গায় শতাধিক রোহিঙ্গা নিহত হয়; এছাড়া লক্ষাধিক রোহিঙ্গাকে তাদের বাড়িঘর থেকে উচ্ছেদ করা হয়। জানা গেছে, সে সময় মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীও সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়ন চালায়। সে সময় অনেক রোহিঙ্গাই সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করে। কিন্তু এবার জাতিসংঘ ও পশ্চিমা দেশগুলোর উপর্যুপরি অনুরোধ সত্ত্বে বাংলাদেশ এবার রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়নি। এর পেছনে অনেক যুক্তিসঙ্গত কারণও রয়েছে। গত ত্রিশ বছরের বেশি সময় ধরে মিয়ানমার থেকে নির্যাতন ও নিপীড়নের শিকার রোহিঙ্গারা দলে দলে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। কিন্তু এদের বেশিরভাগই আর ফিরে যায়নি। রোহিঙ্গারা বাংলাদেশকে সব সময়ই একটি নিরাপদ আশ্রয়স্থল বা ‘সেফল্যান্ড’ বলে মনে করেছে। কিন্তু এই বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু বাংলাদেশের জন্য বড় বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশের বিকাশমান অর্থনীতির জন্যও এরা একটা চাপ সৃষ্টি করে আসছে। কারণ কক্সবাজার ও টেকনাফের ‘রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু শিবিরে’ অবস্থানকারী তালিকাভুক্ত রোহিঙ্গাদের বাইরে আরও বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অবস্থান করছে। এদের সংখ্যা প্রায় ৪ লাখ। এরা অনেকেই বাংলাদেশে স্থানীয় অধিবাসীদের সঙ্গে মিলে গেছে। কেউ কেউ বাংলাদেশের পাসপোর্ট ব্যবহার করে বিদেশে গেছে এবং সেখানে নানা ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িত। রোহিঙ্গাদের অনেকেই জঙ্গী তৎপরতার সঙ্গে জড়িত বলে জানা গেছে। এসব কারণে বাংলাদেশ সব সময় চেয়েছে, মিয়ানমারের রোহিঙ্গা অধিবাসীদের বিষয়ে জাতিসংঘ কার্যকর সিদ্ধান্ত নেবে ও মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করবে। ইতোপূর্বে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা মিয়ানমার সফরে এসে রোহিঙ্গাদের বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য মিয়ানমার সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। সেই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি জাতিসংঘ রোহিঙ্গাদের নাগরিক হিসেবে মেনে নেয়ার জন্য মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানায়। বিষয়টি মিয়ানমার সরকারের বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে দেখা উচিত।তবে বিশ্লেষকদের ধারণা, যেহেতু মিয়ানমার সরকার এখন পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের বিষয়ে কোন যুক্তিসঙ্গত ন্যায্য পদক্ষেপ নেয়নি; তাই এক্ষেত্রে জাতিসংঘসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে মিয়ানমারের প্রতি চাপ প্রদান অব্যাহত রাখতে হবে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারেরও দায়িত্বশীল ভূমিকা রয়েছে। মিয়ানমারের অধিবাসী রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে গিয়ে বাংলাদেশ বার বার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এভাবে বিদেশী নাগরিকদের জন্য বাংলাদেশ কেন দায়িত্ব নেবে? তবে রোহিঙ্গারা যাতে নিজ দেশে শান্তি ও সম্মান নিয়ে বাঁচতে পারে এ ব্যাপারে সবাইকে সচেষ্ট হতে হবে।
No comments