প্রাথমিকে রেকর্ড-পাস ৯৭.৩৫
উৎসবের আমেজে চতুর্থবারের মতো অনুষ্ঠিত দেশের সর্ববৃহৎ পাবলিক পরীক্ষা বা প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় পাস করেছে রেকর্ড সংখ্যক শিশু। পাসের হার ৯৭ দশমিক ৩৫ শতাংশ।
২৪ লাখ ৮১ হাজার ১১৯ জনের মধ্যে পাস করেছে ২৪ লাখ ১৫ হাজার ৩৪১ জন। গত বছর যেখানে জিপিএ-৫ পেয়েছিল এক লাখ পাঁচ হাজার ৬৭৩ জন, সেখানে এবার জিপিএ-৫ পেল দুই লাখ ৩০ হাজার ২২০ ক্ষুদে শিক্ষার্থী। গত বছর পাসের হার ছিল ৯৭ দশমিক ২৬ এবং তার আগের বছর ছিল ৯২ দশমিক ৩৪ শতাংশ। আর ২০০৯ সালে প্রথম সমাপনীতে পাস করেছিল ৮৮ দশমিক ৮৪ শতাংশ। সবচেয়ে ভাল ফল করেছে বরিশাল বিভাগে। জেলার মধ্যে এড়িয়ে লালমনিরহাট। যেখানে পাস করেছে একশত ভাগ শিশু। পাসের হার সবচেয়ে কম সিরাজগঞ্জে ৯১ দশমিক ৯৮ শতাংশ। দেশের ৫০৫ উপজেলা/থানার মধ্যে ৩৯টি উপজেলায় কোন শিশু ফেল করেনি। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর উপজেলায় পাসের হার সর্বনিম্ন ৭৮ দশমিক ২৯ শতাংশ।
এদিকে বৃহস্পতিবার একই সঙ্গে প্রকাশিত মাদ্রাসা স্তরের এবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় পাসের হার ৯২ দশমিক ৪৫ শতাংশ। গত বছর ছিল ৯১ দশমিক ২৮ শতাংশ। এবার পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে দুই হাজার ৯২০ জন। গত বছর ছিল দুই হাজার ১৫০ জন। সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রাথমিক ও এবতেদায়ি সমাপনী পরীক্ষার ফলের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী ডা. আফছারুল আমীন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মোতাহার হোসেন, সচিব এমএম নিয়াজউদ্দিন এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক শ্যামল কান্তি ঘোষ। এদিকে ফল প্রকাশের দিনও সারাদেশের লাখ লাখ শিশু ও তার অভিভাবকদের উপস্থিতিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে কেন্দ্র করে সৃষ্টি হয়েছিল এক ব্যতিক্রমী উৎসবমুখর পরিবেশের। সন্তানের ভাল ফলের জন্য সকাল থেকেই অপেক্ষা করে অভিভাবকরা। এর আগে গতকাল সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ফলাফলের কপি তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী এবং প্রতিমন্ত্রী। এরপরই দেশের সব জেলা, উপজেলা ও থানায় একযোগে ফল প্রকাশ হয়। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের ওয়েবসাইট () এবং যঃঃঢ়://.নফ থেকে পাসের খবর জানতে পারছেন। মোবাইলে এসএমএস পাঠিয়েও ফল জানা যায়। ধারাবাহিক ইতিবাচক ফলে সন্তোষ প্রকাশ করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী ডা. আফছারুল আমীন বলেছেন, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ ও সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি, প্রশাসনের নানামুখী তৎপরতা, জোরাল মনিটরিং এবং অভিভাবকদের অধিকতর সচেতনতার ফলেই পাসের হার বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক শ্যামল কান্তি ঘোষ বলেন, এখন শিক্ষার্থী অভিভাবক অনেক বেশি সচেতন। তারা বুঝতে পারছে ভাল ফল ছাড়া পরবর্তী ক্লাসে ভর্তি হওয়া যাবে না। এটা ভেবেই সকলে দিন দিন পড়ালেখায় আরও বেশি মনোযোগী হচ্ছে। তবে বিনামূল্যের পাঠ্যবই প্রাথমিক শিক্ষার ইতিবাচক পরিবর্তনে সবচেয়ে বড় অবদান রাখছে। তারা ভাল ফলের জন্য শিশু ও তাদের অভিভাবক, শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে অভিনন্দন জানান মন্ত্রী এবং প্রতিমন্ত্রী। ফলে সন্তোষ প্রকাশ করে তাঁরা বলেছেন, এই পরীক্ষার মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষায় নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়েছে। শিশুদের ঈর্ষণীয় এই সাফল্যের জন্য গত বছর খারাপ ফল করা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিশেষ নজর দেয়া হয়েছিল। শিক্ষকদের প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন সঙ্কট সমাধানের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। ডিআর বা নিবন্ধিত ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা, অনুপস্থিতির হার, জিপিএ-৫ এবং পাসের হারের ভিত্তিতে ঢাকার মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় শীর্ষে আছে। দ্বিতীয় স্থানে চলে এসে চমক দেখিয়েছে খিলগাঁওয়ের ন্যাশনাল আইডিয়াল স্কুল এ্যান্ড কলেজ। তৃতীয় স্থানে আছে ভিকারুন নিসা নূন স্কুল এ্যান্ড কলেজ।
বিভাগ ভিত্তিক ফলে দেখা গেছে, গত বছরের পর এবারও সবচেয়ে ভাল ফল করেছে বরিশাল বিভাগ। এখানে পাসের হার ৯৯ দশমিক ১৯ শতাংশ। রাজশাহীতে ৯৭ দশমিক শূন্য ছয় শতাংশ, খুলনায় ৯৮ দশমিক ৫৪ শতাংশ, ঢাকায় ৯৭ দশমিক ১০ শতাংশ, চট্টগ্রামে ৯৭ শতাংশ, সিলেটে ৯৫ দশমিক ৩৪ শতাংশ এবং রংপুর বিভাগে ৯৮ দশমিক ১৪ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে। অপরদিকে এবতেদায়ি পরীক্ষায় রাজশাহী বিভাগে ৯২ দশমিক ৭৮ শতাংশ, খুলনায় ৯৫ দশমিক ৪২ শতাংশ, ঢাকায় ৮৯ দশমিক ৯৭ শতাংশ, চট্টগ্রামে ৯১ দশমিক ৮৫ শতাংশ, সিলেটে ৮৯ দশমিক ৪৭ শতাংশ এবং রংপুরে ৯৪ দশমিক ৩৩ শতাংশ শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়েছে। জেলাওয়ারি হিসাবে প্রাথমিকে সবচেয়ে ভাল ফল অর্জন করেছে লালমনিরহাটের শিক্ষার্থীরা। এ জেলায় পাসের হার প্রায় শতভাগ। আর এবতেদায়িতে বরগুণা জেলায় দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি অর্থাৎ ৯৯ দশমিক ৬৭ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে। পাসের হারে সিরাজগঞ্জ জেলা সর্বনিম্ন ৯১ দশমিক ৯৮ শতাংশ এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর উপজেলার পাসের হার সর্বনিম্ন ৭৮ দশমিক ২৯ শতাংশ। বিদ্যালয়ের ধরন অনুসারে ফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, পিটিআইসংলগ্ন পরীক্ষণ বিদ্যালয়ের পাসের হার সর্বোচ্চ ৯৯ দশমিক ৮৯ শতাংশ। এ ছাড়া ব্র্যাক পরিচালিত বিদ্যালয়ের ৯৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ, কিন্ডারগার্টেন ৯৮ দশমিক ৮৩ শতাংশ, মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ৯৮ দশমিক ৫৬ শতাংশ, উচ্চ বিদ্যালয় সংযুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয় ৯৮ দশমিক ৪৭ শতাংশ, সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ৯৭ দশমিক ৬৯ শতাংশ, রেজিস্টার্ড বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ৯৫ দশমিক ৮৭ শতাংশ, কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ৯৫ দশমিক ৭০ শতাংশ, নন রেজিস্টার্ড বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ৯৫ শতাংশ, এনজিও পরিচালিত বিদ্যালয় ৯৪ দশমিক ৬৪ শতাংশ, শিশুকল্যাণ প্রাথমিক বিদ্যালয় ৯৩ দশমিক ৫২ শতাংশ এবং ছিন্নমূল শিশুদের প্রতিষ্ঠান আনন্দ স্কুলে ৮২ দশমিক ২৯ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে। প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় বিষয়ভিত্তিক ফলে বাংলায় পাস করেছে ৯৯ দশমিক ২০ শতাংশ। ইংরেজীতে ৯৯ দশমিক শূন্য সাত, গণিতে ৯৭ দশমিক ৮৭ শতাংশ, পরিবেশ পরিচিতি সমাজে ৯৯ দশমিক ৭৮ শতাংশ, পরিবেশ পরিচিতি বিজ্ঞানে ৯৯ দশমিক ৮০ এবং ধর্ম বিষয়ে পাস করেছে ৯৯ দশমিক ৮৫ শতাংশ।
এবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় বিষয়ভিত্তিক পাস করা শিক্ষার্থীদের মধ্যে বাংলায় ৯৭ দশমিক ৬৬ শতাংশ, ইংরেজীতে ৯৬ দশমিক ৫৩ শতাংশ, গণিতে ৯৭ দশমিক ২০ শতাংশ কোরান ও আকাইদ ফিক্হ ৯৯ দশমিক ৩৫ শতাংশ, আরবিতে ৯৮ দশমিক ২৩ শতাংশ এবং পরিবেশ পরিচিতি সমাজ ও পরিবেশ পরিচিতি বিজ্ঞানে পাস করেছে ৯৯ দশমিক ১৯ শতাংশ শিক্ষার্থী। সারাদেশে ইংরেজী ভার্সনে পরীক্ষার জন্য নিবন্ধন করেছিল চার হাজার ৭৫১ জন ছাত্রছাত্রী। এর মধ্যে পরীক্ষায় অংশ নেয় চার হাজার ৫৩৮ জন। পাস করেছে চার হাজার ৫১১ জন। পাসের হার ৯৯ দশমিক ৪১ শতাংশ। এবার ৭২ হাজার ২২৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শতভাগ পরীক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়েছে। এর মধ্যে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ২৮ হাজার ৭৪৭টি, রেজিস্টার্ড বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৬ হাজার ৯৬২টি, মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ৩৪৯টি, পরীক্ষণ বিদ্যালয় ৫৩টি, কিন্ডারগার্টেন ১১ হাজার ৭৯৪টি, এনজিও পরিচালিত বিদ্যালয় এক হাজার ৭০৫টি, কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ৭৩৪টি, নন রেজিস্টার্ড বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় দুই হাজার ৬৯টি, উচ্চ বিদ্যালয় সংযুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয় এক হাজার ২৪২টি, ব্র্যাক বিদ্যালয় সাত হাজার ৩৪১টি, আনন্দ স্কুল এক হাজার ১৮১টি এবং শিশুকল্যাণ প্রাথমিক বিদ্যালয় ৫০টি। ৭১০টি বিদ্যালয় থেকে কোন ছাত্রছাত্রীই উত্তীর্ণ হয়নি। এর মধ্যে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ১০টি, রেজিস্টার্ড বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ২৭টি, কিন্ডারগার্টেন ৮৭টি, এনজিও পরিচালিত বিদ্যালয় ২০৯টি, কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ১১টি, নন রেজিস্টার্ড বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ১০১টি, উচ্চ বিদ্যালয় সংযুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয় দুইটি, আনন্দ স্কুল ২৬২টি এবং শিশুকল্যাণ প্রাথমিক বিদ্যালয় একটি।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে গণশিক্ষামন্ত্রী ডা. আফছারুল আমীন বলেন, যে ১০টি সরকারী স্কুল থেকে কোন শিক্ষার্থী পাস করেনি, সেগুলোর শিক্ষকদের অন্যত্র বদলি করা হবে। জানা গেছে, দেশের প্রত্যন্ত এলাকার এই ১০টি সরকারী স্কুলের পরীক্ষার্থী সংখ্যা ছিল মাত্র ৬৪ জন।
এদিকে বৃহস্পতিবার একই সঙ্গে প্রকাশিত মাদ্রাসা স্তরের এবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় পাসের হার ৯২ দশমিক ৪৫ শতাংশ। গত বছর ছিল ৯১ দশমিক ২৮ শতাংশ। এবার পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে দুই হাজার ৯২০ জন। গত বছর ছিল দুই হাজার ১৫০ জন। সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রাথমিক ও এবতেদায়ি সমাপনী পরীক্ষার ফলের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী ডা. আফছারুল আমীন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মোতাহার হোসেন, সচিব এমএম নিয়াজউদ্দিন এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক শ্যামল কান্তি ঘোষ। এদিকে ফল প্রকাশের দিনও সারাদেশের লাখ লাখ শিশু ও তার অভিভাবকদের উপস্থিতিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে কেন্দ্র করে সৃষ্টি হয়েছিল এক ব্যতিক্রমী উৎসবমুখর পরিবেশের। সন্তানের ভাল ফলের জন্য সকাল থেকেই অপেক্ষা করে অভিভাবকরা। এর আগে গতকাল সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ফলাফলের কপি তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী এবং প্রতিমন্ত্রী। এরপরই দেশের সব জেলা, উপজেলা ও থানায় একযোগে ফল প্রকাশ হয়। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের ওয়েবসাইট () এবং যঃঃঢ়://.নফ থেকে পাসের খবর জানতে পারছেন। মোবাইলে এসএমএস পাঠিয়েও ফল জানা যায়। ধারাবাহিক ইতিবাচক ফলে সন্তোষ প্রকাশ করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী ডা. আফছারুল আমীন বলেছেন, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ ও সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি, প্রশাসনের নানামুখী তৎপরতা, জোরাল মনিটরিং এবং অভিভাবকদের অধিকতর সচেতনতার ফলেই পাসের হার বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক শ্যামল কান্তি ঘোষ বলেন, এখন শিক্ষার্থী অভিভাবক অনেক বেশি সচেতন। তারা বুঝতে পারছে ভাল ফল ছাড়া পরবর্তী ক্লাসে ভর্তি হওয়া যাবে না। এটা ভেবেই সকলে দিন দিন পড়ালেখায় আরও বেশি মনোযোগী হচ্ছে। তবে বিনামূল্যের পাঠ্যবই প্রাথমিক শিক্ষার ইতিবাচক পরিবর্তনে সবচেয়ে বড় অবদান রাখছে। তারা ভাল ফলের জন্য শিশু ও তাদের অভিভাবক, শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে অভিনন্দন জানান মন্ত্রী এবং প্রতিমন্ত্রী। ফলে সন্তোষ প্রকাশ করে তাঁরা বলেছেন, এই পরীক্ষার মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষায় নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়েছে। শিশুদের ঈর্ষণীয় এই সাফল্যের জন্য গত বছর খারাপ ফল করা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিশেষ নজর দেয়া হয়েছিল। শিক্ষকদের প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন সঙ্কট সমাধানের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। ডিআর বা নিবন্ধিত ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা, অনুপস্থিতির হার, জিপিএ-৫ এবং পাসের হারের ভিত্তিতে ঢাকার মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় শীর্ষে আছে। দ্বিতীয় স্থানে চলে এসে চমক দেখিয়েছে খিলগাঁওয়ের ন্যাশনাল আইডিয়াল স্কুল এ্যান্ড কলেজ। তৃতীয় স্থানে আছে ভিকারুন নিসা নূন স্কুল এ্যান্ড কলেজ।
বিভাগ ভিত্তিক ফলে দেখা গেছে, গত বছরের পর এবারও সবচেয়ে ভাল ফল করেছে বরিশাল বিভাগ। এখানে পাসের হার ৯৯ দশমিক ১৯ শতাংশ। রাজশাহীতে ৯৭ দশমিক শূন্য ছয় শতাংশ, খুলনায় ৯৮ দশমিক ৫৪ শতাংশ, ঢাকায় ৯৭ দশমিক ১০ শতাংশ, চট্টগ্রামে ৯৭ শতাংশ, সিলেটে ৯৫ দশমিক ৩৪ শতাংশ এবং রংপুর বিভাগে ৯৮ দশমিক ১৪ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে। অপরদিকে এবতেদায়ি পরীক্ষায় রাজশাহী বিভাগে ৯২ দশমিক ৭৮ শতাংশ, খুলনায় ৯৫ দশমিক ৪২ শতাংশ, ঢাকায় ৮৯ দশমিক ৯৭ শতাংশ, চট্টগ্রামে ৯১ দশমিক ৮৫ শতাংশ, সিলেটে ৮৯ দশমিক ৪৭ শতাংশ এবং রংপুরে ৯৪ দশমিক ৩৩ শতাংশ শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়েছে। জেলাওয়ারি হিসাবে প্রাথমিকে সবচেয়ে ভাল ফল অর্জন করেছে লালমনিরহাটের শিক্ষার্থীরা। এ জেলায় পাসের হার প্রায় শতভাগ। আর এবতেদায়িতে বরগুণা জেলায় দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি অর্থাৎ ৯৯ দশমিক ৬৭ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে। পাসের হারে সিরাজগঞ্জ জেলা সর্বনিম্ন ৯১ দশমিক ৯৮ শতাংশ এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর উপজেলার পাসের হার সর্বনিম্ন ৭৮ দশমিক ২৯ শতাংশ। বিদ্যালয়ের ধরন অনুসারে ফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, পিটিআইসংলগ্ন পরীক্ষণ বিদ্যালয়ের পাসের হার সর্বোচ্চ ৯৯ দশমিক ৮৯ শতাংশ। এ ছাড়া ব্র্যাক পরিচালিত বিদ্যালয়ের ৯৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ, কিন্ডারগার্টেন ৯৮ দশমিক ৮৩ শতাংশ, মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ৯৮ দশমিক ৫৬ শতাংশ, উচ্চ বিদ্যালয় সংযুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয় ৯৮ দশমিক ৪৭ শতাংশ, সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ৯৭ দশমিক ৬৯ শতাংশ, রেজিস্টার্ড বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ৯৫ দশমিক ৮৭ শতাংশ, কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ৯৫ দশমিক ৭০ শতাংশ, নন রেজিস্টার্ড বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ৯৫ শতাংশ, এনজিও পরিচালিত বিদ্যালয় ৯৪ দশমিক ৬৪ শতাংশ, শিশুকল্যাণ প্রাথমিক বিদ্যালয় ৯৩ দশমিক ৫২ শতাংশ এবং ছিন্নমূল শিশুদের প্রতিষ্ঠান আনন্দ স্কুলে ৮২ দশমিক ২৯ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে। প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় বিষয়ভিত্তিক ফলে বাংলায় পাস করেছে ৯৯ দশমিক ২০ শতাংশ। ইংরেজীতে ৯৯ দশমিক শূন্য সাত, গণিতে ৯৭ দশমিক ৮৭ শতাংশ, পরিবেশ পরিচিতি সমাজে ৯৯ দশমিক ৭৮ শতাংশ, পরিবেশ পরিচিতি বিজ্ঞানে ৯৯ দশমিক ৮০ এবং ধর্ম বিষয়ে পাস করেছে ৯৯ দশমিক ৮৫ শতাংশ।
এবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় বিষয়ভিত্তিক পাস করা শিক্ষার্থীদের মধ্যে বাংলায় ৯৭ দশমিক ৬৬ শতাংশ, ইংরেজীতে ৯৬ দশমিক ৫৩ শতাংশ, গণিতে ৯৭ দশমিক ২০ শতাংশ কোরান ও আকাইদ ফিক্হ ৯৯ দশমিক ৩৫ শতাংশ, আরবিতে ৯৮ দশমিক ২৩ শতাংশ এবং পরিবেশ পরিচিতি সমাজ ও পরিবেশ পরিচিতি বিজ্ঞানে পাস করেছে ৯৯ দশমিক ১৯ শতাংশ শিক্ষার্থী। সারাদেশে ইংরেজী ভার্সনে পরীক্ষার জন্য নিবন্ধন করেছিল চার হাজার ৭৫১ জন ছাত্রছাত্রী। এর মধ্যে পরীক্ষায় অংশ নেয় চার হাজার ৫৩৮ জন। পাস করেছে চার হাজার ৫১১ জন। পাসের হার ৯৯ দশমিক ৪১ শতাংশ। এবার ৭২ হাজার ২২৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শতভাগ পরীক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়েছে। এর মধ্যে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ২৮ হাজার ৭৪৭টি, রেজিস্টার্ড বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৬ হাজার ৯৬২টি, মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ৩৪৯টি, পরীক্ষণ বিদ্যালয় ৫৩টি, কিন্ডারগার্টেন ১১ হাজার ৭৯৪টি, এনজিও পরিচালিত বিদ্যালয় এক হাজার ৭০৫টি, কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ৭৩৪টি, নন রেজিস্টার্ড বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় দুই হাজার ৬৯টি, উচ্চ বিদ্যালয় সংযুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয় এক হাজার ২৪২টি, ব্র্যাক বিদ্যালয় সাত হাজার ৩৪১টি, আনন্দ স্কুল এক হাজার ১৮১টি এবং শিশুকল্যাণ প্রাথমিক বিদ্যালয় ৫০টি। ৭১০টি বিদ্যালয় থেকে কোন ছাত্রছাত্রীই উত্তীর্ণ হয়নি। এর মধ্যে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ১০টি, রেজিস্টার্ড বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ২৭টি, কিন্ডারগার্টেন ৮৭টি, এনজিও পরিচালিত বিদ্যালয় ২০৯টি, কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ১১টি, নন রেজিস্টার্ড বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ১০১টি, উচ্চ বিদ্যালয় সংযুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয় দুইটি, আনন্দ স্কুল ২৬২টি এবং শিশুকল্যাণ প্রাথমিক বিদ্যালয় একটি।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে গণশিক্ষামন্ত্রী ডা. আফছারুল আমীন বলেন, যে ১০টি সরকারী স্কুল থেকে কোন শিক্ষার্থী পাস করেনি, সেগুলোর শিক্ষকদের অন্যত্র বদলি করা হবে। জানা গেছে, দেশের প্রত্যন্ত এলাকার এই ১০টি সরকারী স্কুলের পরীক্ষার্থী সংখ্যা ছিল মাত্র ৬৪ জন।
No comments