আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালঃ ইকোনমিস্টের তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ [পূর্ণাঙ্গ]

খ্যাতনামা ব্রিটিশ সাপ্তাহিক ইকোনমিস্ট বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল সম্পর্কিত বহুল প্রতীক্ষিত তদন্ত প্রতিবেদন তাদের ওয়েব সাইটে প্রকাশ করেছে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাবেক চেয়ারম্যান নিজামুল হক নাসিম ও ব্রাসেলসে বসবাসকারী আইনজীবী আহমেদ জিয়াউদ্দিন মধ্যে ইমেইল ও স্কাইপ সংলাপের ভিত্তিতে এই প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে সাপ্তাহিকটি।

প্রতিবেদনে সম্পাদকের বক্তব্যে বলা হয়েছে, স্বাভাবিক অবস্থায় ইকোনমিস্ট এ সব খবরের সূত্র উল্লেখ করে।

কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে সে রকম কিছু করা হলে তাতে সূত্রগুলোকে বিপদের মুখে ঠেলে দেয়া হবে। ওই দুই ব্যক্তির (নিজামুল হক এবং জিয়াউদ্দিন) মধ্যে কেউ এ সূত্রকে হুমকি দেবে বলে তাদের আশঙ্কা নয়, বরং বাংলাদেশে এই বিচারকে ঘিরে যে সহিংস পরিবেশ বিরাজ করছে তার শিকার হতে পারে সূত্রটি।

এ ধরনের একটি উদাহরণও তুলে ধরা হয়েছে ইকোনমিস্ট পত্রিকায়। বলা হয়েছে, এ মামলার বাদী পক্ষের এক সাক্ষী তার আনুগত্য পরিবর্তন করে বিবাদী পক্ষে যোগ দেয়ার পর গত ৫ নভেম্বর তাকে ট্রাইব্যুনালের দোর গোড়া থেকে অপহরণ করা হয়।

বিবাদীপক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, বাংলাদেশি পুলিশের গোয়েন্দা শাখা এ জন্য দায়ী। সরকার এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে। অবশ্য পরবর্তীতে ওই সাক্ষীকে আর দেখা যায়নি।

‘একটি জাতির জন্ম নিয়ে বিচার’
শিরোনামে ইকোনমিস্টের প্রতিবেদনটি পাঠকের জন্য হুবহু তুলে ধরা হল :

ব্যাপক সহিংসতা সহ্য করে জন্ম হয়েছে বাংলাদেশের। ১৯৭১ সালের শেষের দিনগুলোতে তত্কালিন পূর্ব পাকিস্তানে ব্যাপক নির্যাতন, ধর্ষণ, ব্যাপক গণহত্যাসহ অন্যান্য অপরাধ সংগঠিত হয়। ওই ঘটনার প্রধান পরিকল্পনাকারী পাকিস্তানি সেনারা ‘পশ্চিম পাকিস্তান’ থেকে পূর্ব পাকিস্তানের বিচ্ছিন্ন হওয়া ঠেকাতে চেয়েছিল। তবে জামায়াতে ইসলামীসহ পূর্ব পাকিস্তানের অনেক মৌলবাদী গোষ্ঠী সেনাবাহিনীকে সমর্থন করে। জামায়াত এখনও বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ইসলামপন্থী দল। ওই সময় তিন লাখের মতো মানুষ নিহত হয়। তবে বর্তমান সরকারের হিসেবে প্রাণহানির সংখ্যা ৩০ লাখ,যা ছিল তখনকার জনসংখ্যার হিসাবে প্রতি ২০ জনে একজন।

যুদ্ধাপরাধে জড়িত বলে অভিযুক্তদের বিচারের জন্য ২০১০ সালে বাংলাদেশ একটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করে। এটাকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল বলা হয়, যদিও আন্তর্জাতিক আইনের দৃষ্টিতে এটি আন্তর্জাতিক আদালত নয়। ১৯৭৩ সালে পাস হওয়া এবং ২০০৯ ও ২০১২ সালে সংশোধিত আইনের ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা এ ট্রাইব্যুনাল একটা দেশীয় আদালত। অভিযুক্ত ও ক্ষতিগ্রস্ত দু’পক্ষের জন্যই অনেক দেরি করে এ বিচার শুরু হয়েছে। তবে যুদ্ধাপরাধের বিচারের ক্ষেত্রে কখনোই কোনে সীমাবদ্ধতা ছিল না।

এই অপরাধের প্রধান হোতারা আদালতে নেই। তাদের কেউ মারা গেছেন অথবা পাকিস্তানে বাস করছেন। তবে কিছু সন্দেহভাজন ব্যক্তি এখনো বাংলাদেশে প্রভাবশালী জীবনযাপন করছেন। ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং তাদের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও গণহত্যায় নির্দেশের ফৌজদারি অভিযোগ আনা হয়েছে। চলতি সপ্তাহে প্রথম মামলা হিসেবে সাবেক সংসদ সদস্য (১৯৯৬-২০০৮) এবং জামায়াতের নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলাটি শেষ পরিণতির দিকে এগুচ্ছে বলে মনে হচ্ছিল। অনেকেই ধারনা করছিলেন, ডিসেম্বরের মাঝামঝি নাগাদ তাঁর সাজা হবে,এমনকি তার মৃত্যুদণ্ডও হতে পারে।

কিন্তু শেষ মুর্হূতে এসে বিচারপতি মোহাম্মদ নিজামুল হক ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যানের পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। মূলত ইকোনমিস্ট ও বাংলাদেশের পত্রিকা তার ব্যক্তিগত ই-মেইল বার্তা প্রকাশ করার পর তার ভূমিকা ও বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে ব্যাপক প্রশ্ন সৃষ্টি হওয়ার পর তিনি পদত্যাগ করেন। তার টেলিফোন কথোপকথনের ধারন করা অংশ ইউটিউবেও আছে। ইকোনমিস্ট এটা এবং অন্যান্য তথ্য-উপাত্ত দেখেছে এবং এর সত্যতা ও তাৎপর্য খতিয়ে দেখছে।  চলতি সপ্তাহে আমরা এই অনুসন্ধানের ফলাফল প্রকাশ করেছি।

যেসব ই-মেইল বার্তা ও ফোনালাপ আমরা (ইকোনমিস্ট) দেখেছি, তা এই বিচার নিয়ে গভীর প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। এসব তথ্য-উপাত্ত বলছে, সরকার নিজামুল হকের ওপর চাপ প্রয়োগের চেষ্টা করেছে, যদিও তিনি তা ঠেকানোর চেষ্টা করেছেন বলে মনে হয়েছে। দেখা গেছে, তিনি অসঙ্গতভাবে ব্রাসেলসভিত্তিক একজন আইনজীবীর সঙ্গে এ বিষয়ে কাজ করেছেন। আর ওই আইনজীবী সরকারের কৌঁসুলিদের সঙ্গে সহযোগিতা করছেন। এই বিষয়টিই পরস্পর বিরোধিতাকে (কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট) সামনে নিয়ে এসেছে। সাঈদীর মামলার ক্ষেত্রে এমন আশঙ্কা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, বিবাদীদের সাক্ষী শুনানি শেষ করার আগেই নিজামুল অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করে রায় দিতে চলেছেন।

এই বিষয়টি খুবই উদ্বেগের যে,বিচারকের বিভ্রাট কেবল অভিযুক্তদেরই প্রভাবিত করবে না, বরং ট্রাইব্যুনালের ত্রুটি এরই মধ্যে বাংলাদেশকেও ভুগিয়েছে। এ বিষয়টি দেশটির পুরানো ক্ষতকে সারাবে না, বরং আরও গভীর বেদনা তৈরি করবে।

বাংলাদেশের জন্ম (কীভাবে হয়েছিল তার পাশাপাশি) বর্তমান রাজনীতিতেও চলমান যুদ্ধাপরাধের বিচার অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করে। ২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনের সময় বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের লক্ষ্যে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধীদের তালিকায় আছেন প্রধান বিরোধী দল বিএনপির রাজনৈতিক মিত্র বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কয়েকজন সাবেক ও বর্তমান শীর্ষস্থানীয় নেতা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রধান রাজনৈতিক ‘শত্রু’ খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি জামায়াতের রাজনৈতিক সমর্থন ছাড়া কখনোই বাংলাদেশের রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হতে পারেনি। অনেকেই মনে করেন ভবিষ্যতে বিএনপি যদি বাংলাদেশের রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হতে পারে, তাহলে খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী হবেন এবং তিনি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের লক্ষ্যে গঠিত এই বিশেষ ট্রাইব্যুনাল বাতিল করে দেবেন। বেগম জিয়া এরইমধ্যে যুদ্ধাপরাধীদের এই বিচার প্রক্রিয়াকে ‘প্রহসন’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের এই প্রক্রিয়ার সমর্থকরা তাই আগামী সাধারণ নির্বাচনের আগেই এই বিচার প্রক্রিয়া শেষ করতে চাচ্ছিলেন। ২০১৩ সালের শেষের দিকে বাংলাদেশে পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা।

১৯৭৩ সালের বিশেষ অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, “যদি বিচারকাজ চলার সময় ট্রাইব্যুনালের কোনো সদস্য অনিবার্য কোনো কারণে বিচার কার্যক্রমের কোনো একটি শুনানিতে অংশ নিতে অপারগ হন,এই ট্রাইব্যুনালের অন্য সদস্যরা এই বিচার প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন।” তবে আমাদের (ইকোনমিস্ট) হাতে যে সব সাক্ষ্য-প্রমাণ এসেছে, তার ভিত্তিতে বলা যায় এই বিচার প্রক্রিয়ার আমূল পুনর্মূল্যায়ন হয়তো জরুরি হয়ে পড়েছে।

“একটা রায়ের জন্য পুরোপুরি পাগল”

এই তথ্য-উপাত্তের প্রথম অংশের ভিত্তিতে সরকারের আচরণ নিয়ে প্রশ্ন তোলা হতে পারে।  বাংলাদেশের সংবিধানে বিচার বিভাগের পূর্ণ স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হলেও এ সব দেখে মনে হচ্ছে, বিচার দ্রুত করার জন্য ট্রাইবুনাল রাজনৈতিক চাপের মুখে রয়েছে। গত ১৪ অক্টোবর বিচারপতি নিজামুল হক এবং ব্রাসেলস ভিত্তিক বাংলাদেশি আইনজীবী আহমেদ জিয়াউদ্দিনের মধ্যকার আলাপ থেকে জানা যায়, বিচারক নিজামুল হক আহমেদ জিয়াউদ্দিনকে বলছেন, ‘সরকার অস্থির, এরা পুরোপুরি পাগল হয়ে গেছে। আমি আপনাকে বলছি, তারা ১৬ ডিসেম্বরের মধ্যে রায় চায়…ব্যাপারটি এ ছাড়া আর কিছু নয়’। ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশে বিজয় দিবস হিসেবে পরিচিত। স্বাধীনতা যুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসর্মপণের দিবস হিসেবে এ দিনটি পালিত হয়।

বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করার ব্যাপারে সরকারের বদ্ধ পরিকর হওয়ার পাশাপাশি এ বিষয়ে  মন্ত্রীদের অতিরিক্ত চাপ দেয়ার বিষয়টি  বিচারপতি নিজামুল ও আহমেদ জিয়াউদ্দিনকে উদ্বিগ্ন  করে তুলেছে। একই আলাপের শেষদিকে আহমেদ জিয়াউদ্দিন বলেন, “আমাদেরকে একটি ব্যাপার তাদের বোঝাতে হবে, যে এটি কোনো পণ্য নয় যে আপনি হুকুম করলেন আর যন্ত্রের মাধ্যমে তা তৈরি হয়ে বেরিয়ে আসবে।”

তিনি আরো বলেন, “কিন্তু আমরা বিষয়টি তাদের বোঝানোর মতো অবস্থাতেও নেই। তারপরও আমাদেরকে চেষ্টা করতে হবে, তাদের সঙ্গে কথা বলতে হবে।”

বিচারের রায় দ্রুত করার জন্য চাপ প্রয়োগ করা এক জিনিস আর বিচার-প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করে রায় বের করার চেষ্টা করা আরেক জিনিস। বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ক্ষেত্রেও পরের ব্যাপারটি ঘটেছে বলেই মনে করা হচ্ছে। পরের দিনের আলাপে,বিচারপতি নিজামুল তুলে ধরেন,কীভাবে “সেদিন সন্ধ্যায়ই সরকারের এক ব্যক্তি আমার কাছে এসে বিচারের রায় দ্রুত দেয়ার আহ্বান জানান। আমি তাকে বললাম, সেটা কীভাবে সম্ভব?…তিনি বললেন, ‘যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রায়টা দেয়ার চেষ্টা করুন’।“

গত ৫ ডিসেম্বর এক টেলিফোন সাক্ষাত্কারে (ইকোনমিস্টের সঙ্গে) বিচারপতি (নিজামুল) এই বিচার প্রক্রিয়ায় তার ওপর কোনো রাজনৈতিক চাপের কথা অস্বীকার করেন। তিনি বলেন,তিনিই এই আদালতের প্রধান ব্যক্তি। তার ভাষায়, “এই আদালতে আমাদের নিজস্ব পদ্ধতি ও পছন্দ অনুযায়ী নিজেদের কার্যপ্রণালীই অনুসরণ করা হয়।”

কিন্তু আমরা  (ইকোনমিস্ট) যে সব তথ্য-উপাত্ত দেখেছি তা থেকে বোঝা যাচ্ছে যে এই আদালতের বিচারক হিসেবে নিজামুল হকের স্বাধীনতা প্রশ্নের সম্মুখীন। নিজামুল হক বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের (হাইকোর্ট বিভাগের) একজন বিচারপতি। ট্রাইবুন্যাল থেকে পদত্যাগের পরেও তিনি সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি পদেই অধিষ্ঠিত থাকবেন। ( তিন থেকে পাঁচজন বিচারক নিয়ে এই ট্রাইব্যুনাল গঠিত, এতে কোনো জুরি নেই)। বিচারপতি নিজামুল যার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন, সেই আহমেদ জিয়াউদ্দিন একজন প্রবাসী বাংলাদেশি। তিনি একজন আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞ। তিনি বেলজিয়ামে বাংলাদেশ সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিস নামের একটি সংস্থার পরিচালক। বিচারপতি নিজামুল হক ও আহমেদ জিয়াউদ্দিন একে অন্যকে চেনেন প্রায় ২৫ বছর ধরে। তারা দুজনেই মানবাধিকার বিষয়ক বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত।  জিয়াউদ্দিনের প্রয়াত ভাই বিচারপতি নিজামুল হকের ছাত্রজীবন থেকে বন্ধু ছিলেন।

উপদেষ্টা

আমাদের (ইকোনমিস্টের) দেখা তথ্য-উপাত্ত বলছে, মিস্টার জিয়াউদ্দিন এ বিচারের ক্ষেত্রে একজন  গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। তিনি পরামর্শ দিচ্ছেন, মিস্টার নিজামুলকে বলছেন- এভাবে করুন অথবা ওভাবে। বিচারক নিজামুলকে আদালতের বিভিন্ন খবর ও নথির জোগান দিচ্ছেন তিনি।  সাধারণত কোনো মামলার বিষয় নিয়ে আলোচনা করার সময় বিচারককে কঠোর সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়; বিশেষ করে, সংশ্লিষ্ট মামলার বাইরে তৃতীয় কোনো পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করার সময়। কারণ, এটা অনেক সময় মামলার রায়, বিচারকাজকে প্রভাবিত করতে পারে। আর এ কথাটা বাংলাদেশের সংবিধানেও বলা হয়েছে। সংবিধানে বলা আছে,  “প্রধান বিচারপতি এবং অন্যান্য বিচারক বিচারকার্য পরিচালনার ক্ষেত্রে স্বাধীন থাকবেন।“ বিচারকদের কোড অব কনডাক্ট বা আচরণবিধিতে বলা হয়েছে, “একটি স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থার জন্য অপরিহার্য।“

বাংলাদেশের ক্ষেত্রে যুদ্ধাপরাধের মামলাটি নিয়ে একটি বিশেষ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। বিশেষ ট্রাইব্যুনাল একটি ঘরোয়া আদালত হলেও এর কর্মকর্তারা আন্তর্জাতিক যুদ্ধ-অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মান বজায় রাখতে আগ্রহী বলে মনে হয়েছে। তবে সমস্যা হচ্ছে, এ ধরনের বিচার প্রক্রিয়ার জন্য ট্রাইবুনালটির হাতে তেমন কোনো তথ্য-উপাত্ত বা নজির নেই। তারপরও মি. নিজামুল যদি গোপনে ট্রাইবুনালের কাজের মানের উন্নয়ন নিয়ে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করতেন- তাহলেও হয়তো বিষয়টি গ্রহণযোগ্য হতো।

মিস্টার নিজামুল অবশ্য তার পক্ষে একটি যুক্তি দাঁড় করিয়েছেন। ৬ ডিসেম্বরের নির্দেশ অনুসারে, এ ট্রাইবুনালটি নতুন আইন অনুযায়ী গঠন করা হয়েছে। কাজেই,ট্রাইবুনালের বিচারকরা দেশ ও দেশের বাইরের বিভিন্ন গবেষকদের সাহায্য নিতেই পারেন। আদেশে মিস্টার জিয়াউদ্দিনকে নিছক একজন বিশেষজ্ঞ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে,  “বিচার চলার সময় ট্রাইবুনালের চেয়রাম্যান তার (জিয়াউদ্দিন) পরামর্শ নিয়েছেন।“

গত ৪ ডিসেম্বর ইকোনমিস্টকে দেয়া এক সাক্ষাত্কারে মিস্টার জিয়াউদ্দিনও একই ধরনের কথা বলেছিলেন। তার ভাষায় “বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে কোনো ধরনের গবেষণা বা অন্য সহযোগিতা নেবেন কি না সেটা একান্তই বিচারকের ওপর নির্ভর করে। তারা এটা করতেই পারেন। বিশেষ করে যখন (বাংলাদেশে) তাদের কাছে এসব বিষয়ে গবেষণার কোনো তথ্য-উপাত্ত বা নজির না থাকে (তখনই বিশেষজ্ঞদের কাছে যেতে হয়)। যদি তাদের মনে হয়, বাংলাদেশের ক্ষেত্রে নতুন এ বিষয়টি নিয়ে পরামর্শের প্রয়োজন, বিশেষ করে যেহেতু বাংলাদেশে (আন্তর্জাতিক আইনের বিষয়টি) নতুন (তাহলে তারা সাহায্য চাইতে পারেন)…..আমি সত্যিই তাকে উপদেশ দেইনি, কিন্তু সে রকম কোনো প্রশ্ন আসলে আমি তাকে সাহায্য করতে রাজি আছি।“

মিস্টার জিয়াউদ্দিনের এ কথার সঙ্গে বিচারকের কথার গড়মিল পাওয়া যায় ৫ ডিসেম্বর আমাদের (ইকোনমিস্টের) সঙ্গে বিচারকের এক সাক্ষাতকারে। ওই দিন সন্ধ্যায় রায় দেয়ার আগে মিস্টার নিজামুল স্বীকার করেন যে,তিনি ও মিস্টার জিয়াউদ্দিন কথা বলেছেন। তবে মামলার কাগজপত্র তৈরিতে তার মতামত নেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন তিনি। নিজামুল হক বলেন, “বিচারক হিসেবে আমরা তৃতীয় পক্ষ বা বাইরের কারও কাছ থেকে সাহায্য নিতে পারি না।” তাকে যখন জিজ্ঞাসা করা হয়,তারা ট্রাইবুনাল নিয়ে পরস্পর ই-মেইল আদান প্রদান করেছেন কি না? তখন তিনি উত্তর দিয়েছিলেন, ‘ না, না, না ট্রাইবুনাল সম্পর্কিত, বিচার বা বিচারকাজ পরিচালনা-সম্পর্কিত কোনো কথা হয়নি, না। পরে তিনি বলেছিলেন, “সুপ্রিম কোর্টের বিচারক হিসেবে আমরা বউয়ের সঙ্গেও এ ট্রাইবুনাল নিয়ে আলোচনা করি না।”

আগের দিন দেয়া সাক্ষাত্কারে মিস্টার জিয়াউদ্দিনও একই কথা বলেছিলেন যে, কোনো তৃতীয় পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করার সময় বিচারককে অবশ্যই সতর্ক হতে হবে। তিনি আমাদেরকে (ইকোনমিস্টকে) এও জানান, এ আদালত সম্পর্কে তার কোনো আনুষ্ঠানিক অবস্থান নেই। তিনি এ মামলার সঙ্গে জড়িতও নন। তবে তিনি (বিচারক) চাইলে এ সম্পর্কিত বার্তা তাকে পাঠাতে পারেন। “যদিও আমি তা করি না। যতই হোক তিনি তো একজন বিচারপতি।“

অবশ্য বিচারকরা যে কারও পরামর্শ নিতেই পারেন। কিন্তু তখনই কেবল তা হতে পারে যদি কোনো পরামর্শক আনুষ্ঠানিকভাবে এ বিষয়ে দায়িত্ব পান বা দুই পক্ষের জেরার বিষয়গুলো সম্পর্কে অবগত থাকেন। সাধারণ নিয়ম অনুসারে, পরামর্শকরা তাদের নির্দিষ্ট বিষয়ে পরামর্শ দেন এবং আইনের বিষয়গুলো জানান।

মিস্টার জিয়াউদ্দিন এক্ষেত্রে এসব নিয়মের পরোয়া করেননি বলেই মনে হয়েছে। ৬ ডিসেম্বর ট্রাইবুনালের দেয়া রায়ের আগে জিয়াউদ্দিনের ভূমিকা আদালতে বা জনসমক্ষে প্রকাশ করা হয়নি। এমনকি তার পরামর্শ নির্দিষ্ট আইনের বাইরেও চলে গেছে। উদাহরণ হিসেবে চার্যশিট গঠনের কথা বলা যায়। আগস্ট মাসের ২৮ তারিখ থেকে অক্টোবর মাসের ২০ তারিখ পর্যন্ত দুজন ১৭ ঘণ্টারও বেশি কথা বলেছেন, যা প্রতিদিনের হিসাবে গড়ে প্রায় ২০ মিনিট। এ ছাড়া, তারা সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১২ মাসে একে অপরের সঙ্গে ২৩০টিরও বেশি ই-মেইল আদান-প্রদান করেছেন। এসব যোগাযোগে দেখা গেছে, ট্রাইব্যুনালের বিচার কাজে মিস্টার জিয়াউদ্দিন নিজেকে যেভাবে জড়িয়েছেন তা আইন অনুযায়ী আদালতের কোনো উপদেষ্টাও করতে পারেন না। এসব  প্রতিটি অভিযোগকে ছোটখাট বলে মনে হতে পারে এবং প্রতিটি অভিযোগের ব্যাখাও দেয়া যেতে পারে। তবে সবগুলো এক সঙ্গে বিচার করলে একটি গোলমেলে বিষয় ফুটে ওঠে।

প্রথমত মিস্টার জিয়াউদ্দিন এ ট্রাইবুনালের জন্য বিভিন্ন কাগজপত্র তৈরি করতে সাহায্য করেছেন যা এ বিচারকের কথাতেই, ঠিক কাজ নয়। মে মাসের ১২ তারিখ ব্রাসেলসভিত্তিক আইনজীবী জিয়াউদ্দিন ট্রাইবুনালের বিচারক নিজামুল হককে ‘গোলাম আজম চার্জেস ফাইনাল ড্রাফট’ নামে একটি নথি পাঠান। এর মাত্র ছয়দিন আগে তিনি (গোলাম আজমের মামলার জন্য তৈরি করা) যে চার্যশিটটি পাঠান তার সঙ্গে এর সামান্য পরিবর্তন দেখা যায়। পরের দিন ১৩ মে ট্রাইবুনাল গোলাম আযমের বিরুদ্ধে চার্যশিট দাখিল করে। গোলাম আজমকে এই দুই ব্যক্তি ( জিয়াউদ্দিন ও নিজামুদ্দিন) তাদের কথোপকথনে ‘বড় সাব’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। গোলাম আজমের বিরুদ্ধে দায়ের করা চার্যশিটের সঙ্গে জিয়াউদ্দিনের পাঠানো নথির মিল রয়েছে। তবে সাক্ষাতকারে দুজনই চার্যশিট গঠনে সাহায্য নেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন।

দ্বিতীয়ত, তাদের দুজনের কথোপকথন মামলা সংশ্লিষ্ট পরামর্শের বাইরেও অনেকদূর গেছে। ৬ সেপ্টেম্বর মিস্টার নিজামুল বলেন, “আমি শাহিনূরকে (শাহিনুর ইসলাম,এ ট্রাইবুনালের একজন বিচারক)  নিয়ে একটু ভয় পাচ্ছি, কারণ সে আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখতে চায়। ওই লোকের টার্গেটই হল যে, সে প্রতিটি নির্দেশেই বিদেশি ট্রাইব্যুনালের রেফারেন্স টেনে আনে।“ জবাবে মিস্টার জিয়াউদ্দিন বলেন ,”ওকে এটা করা থেকে থামাতে হবে অথবা তাকে ট্রাইবুনালের বাইরে রাখতে হবে… তাকে থামানো না গেলে বা সে এভাবে চলতে থাকলে তাকে সরে যেতে হবে, কারণ বিষয়টি আমাদের জন্য মারাত্মক ক্ষতি বয়ে আনবে।“ এখানে মিস্টার জিয়াউদ্দিন এমনভাবে কথা বলেছেন যেন বিচারকদের সরিয়ে দেয়ার পরামর্শ দেয়ার ক্ষমতা তাকে দেয়া হয়েছে।

খুবই উদ্বিগ্ন

২০১১ সালের ২৬ নভেম্বর নিজামুল (ডাক নাম অনুসারে যিনি নাসিম হিসেবে পরিচিত) একটি গুরুত্বপূর্ণ আত্মরক্ষা আবেদন (ডিফেন্স পিটিশন) সম্পর্কে জিয়াউদ্দিনকে আবার একটি ই-মেইল পাঠান। তার পুরো বার্তাটি ছিল এরকম, ‘‘বিষয়: আদেশ। এখনো পাইনি। খুবই উদ্বিগ্ন। দয়া করে বিডি (বাংলাদেশ) সময় আজ রাতের মধ্যেই পাঠান, অন্যথায়, আমি আমার নিজেরটিই প্রয়োগ করব। নাসিম।’’ নিজামুলের এই ই-ইমেইল থেকে বোঝা যায়, তিনি জিয়াউদ্দিনের যুক্তিকেই নিজ বিবেচনার চেয়ে বেশি প্রাধান্য দিয়েছেন।

তৃতীয়ত,আমরা (ইকোনমিস্ট) যে সব উপকরণ পেয়েছি তা থেকে মনে হয়, মিস্টার জিয়াউদ্দিন একই সময়ে একই বিষয়ে বিচার প্রক্রিয়ায় নিয়োজিত কৌঁসুলি (প্রসিকিউশন) এবং বিচারকদের সঙ্গে যোগাযোগ করছিলেন। ২০১১ সালের ৮ নভেম্বর তিনি নিজামুলকে একটি ই-মেইল করেন যাতে বিচারক নিজেকে বিচারপ্রক্রিয়া থেকে সরিয়ে রাখছেন মর্মে একটি আত্মরক্ষা আবেদনে উত্থাপিত কয়েকটি বিষয় সন্নিবেশিত ছিল। ওই ই-মেইলে বলা হয়েছে, ট্রাইব্যুনালের প্রধান কৌঁসুলি জিয়াদ আল-মালুম ওই তালিকায় থাকা প্রথম পাঁচটি বিষয় (উপকরণ ও নথি) নিজামুলকে সরবরাহ করবেন। একজন বিচারক এ ধরনের উপকরণ গ্রহণ করতে পারেন এবং এটি আদালতে বিতর্ক তৈরির কোন বিষয় ছিল না। এটিও সত্য যে, কৌঁসুলি এ ধরনের উপকরণ সরবরাহ করার ক্ষেত্রে সর্বোত্তম ব্যক্তি। কিন্তু তারপরও এখানে কিম্ভুতকিমাকার বিষয়টি হলো, প্রধান কৌঁসুলি যার সাহায্য চাচ্ছেন, সেই ব্যক্তি বিচারককেও পরামর্শ দিচ্ছেন।

বিচারক, কৌঁসুলি এবং এই উপদেষ্টার (জিয়াউদ্দিন) মধ্যে যোগাযোগ দৃশ্যত চলছিল। ২০১১ সালের ১১ ডিসেম্বর মিস্টার আযমের (গোলাম আযম) বিরুদ্ধে মামলার বিষয়ে পরামর্শ ও যুক্তি উপস্থাপনে সাহায্য করতে মালুমসহ দুজন কৌঁসুলিকে একটি ই-মেইল পাঠান জিয়াউদ্দিন। একই দিন ওই উপদেশবার্তা মিস্টার নিজামুলকেও পাঠান জিয়াউদ্দিন। আমাদের (ইকোনমিস্ট) সঙ্গে আলাপে জিয়াউদ্দিন মালুমকে চেনেন বলে স্বীকার করেছেন। মামলা বহির্ভূত বিষয়ে মালুম জিয়াউদ্দিনের পরিবারের জন্য কাজ করছেন। তবে ট্রাইব্যুনালের মামলা নিয়ে অযাচিত যোগাযোগের অভিযোগ জিয়াউদ্দিন অস্বীকার করেন। এ ছাড়া, মালুম আমাদের (ইকোনমিস্টের) প্রশ্নের কোনো জবাব দেননি।

আমরা (ইকোনমিস্ট) যে সব উপকরণ পেয়েছি তা থেকে তিনটি বিষয় উঠে আসে। এগুলো হলো- কৌঁসুলি যেভাবে মামলা সাজিয়েছেন এবং আদালত যেভাবে চার্যশিট দিয়েছে, তার ওপর জিয়াউদ্দিনের প্রভাব ছিল। জিয়াউদ্দিন ২০১১ সালের ডিসেম্বরে পাঠানো ই-মেইলে বিচারককে বলেছিলেন কীভাবে কৌঁসুলিরা তাদের মামলা সাজাতে পারেন। যখন কৌঁসুলিরা তাদের অভিযোগ উত্থাপন করেন, তখন আনুষ্ঠানিক চার্য গঠনের ব্যাপারে জিয়াউদ্দিনের নির্দেশনা সরাসরি অনুসরণ করেন বিচারক।

আমরা (ইকোনমিস্ট) যে সব উপকরণ পেয়েছি তা থেকে তিনটি বিষয় উঠে আসে। এগুলো হলো- কৌঁসুলি যেভাবে মামলা সাজিয়েছেন এবং আদালত যেভাবে চার্যশিট দিয়েছে, তার ওপর জিয়াউদ্দিনের প্রভাব ছিল। জিয়াউদ্দিন ২০১১ সালের ডিসেম্বরে পাঠানো ই-মেইলে বিচারককে বলেছিলেন কীভাবে কৌঁসুলিরা তাদের মামলা সাজাতে পারেন। যখন কৌঁসুলিরা তাদের অভিযোগ উত্থাপন করেন, তখন আনুষ্ঠানিক চার্য গঠনের ব্যাপারে জিয়াউদ্দিনের নির্দেশনা সরাসরি অনুসরণ করেন বিচারক।  সবশেষে মিস্টার সাঈদীর মামলা নিয়ে নিজামুলকে পাঠানো জিয়াউদ্দিনের একটি ই-মেইল ছিল ‘সাঈদী জাজমেন্ট’ নামে গুগলে শেয়ার করা একটি নথি। ওই নথিতে বলা হয়, ‘সর্বশেষ এডিট করা হয়েছে ১৪ অক্টোবর’। এই সময়ে সাঈদীর আইনজীবীরা তার ব্যাপারে আদালতে আত্মপক্ষ সমর্থন করে যাচ্ছিলেন।  ওই নথিতে বেশ কয়েকটি বিষয় (সাক্ষীদের তালিকা, বিচারপ্রক্রিয়ার ইতিবৃত্ত, চ্যালেঞ্জ ইত্যাদি) ছিল।  সম্ভবত পরবর্তীতে বিস্তারিত বিবরণ নথিবদ্ধ করা হয়েছিল।  চূড়ান্ত শিরোনাম ছিল বড় হাতের অক্ষরে লেখা দুটি শব্দ : ‘‘কনভিকশন/বেসিস’’ (দোষী সাব্যস্তকরণ/মূলভিত্তি) এবং ‘‘সেনটেনসিং’’ (সাজা দেয়া)।

একটি দীর্ঘ বিচারকাজের রায়ের অনেক আগে থেকেই কাজ শুরু করে আদালত। মিস্টার নিজামুল  কাউকে ‘দোষী সাব্যস্ত’ না করে ‘বেকসুর খালাস’ করে দিতে পারেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত তাঁর কাজকর্মে তেমনটি মনে হয়নি। তিনি অক্টোবরে নথি নিয়ে কাজ করার বিষয়টি অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, “সে সময় দেলাওয়ার হোসাইনের (সাঈদির) বিচারকাজ শুরুই হয়নি।“

যুক্তিসঙ্গত কিছু প্রশ্ন

বিচারক আমাদের (ইকোনমিস্টের) অভিযোগকে ‘‘সম্পূর্ণভাবে উদ্ভট’’ এবং ‘‘পুরোপুরি মিথ্যা’’ বলেছেন। মিস্টার জিয়াউদ্দিন বলেছিলেন, আমাদের প্রাপ্ত তথ্যের ভিন্ন ব্যাখ্যা  (তার কাছে) রয়েছে। তবে দ্য ইকোনমিস্টকে আদালত হাজির হতে বলার পর তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। আমরা মনে করি না, তিনি কোনো আইন লঙ্ঘন করেছেন এবং অন্য কারো কৃতকর্মের জন্যও তার শাস্তি পাওয়া উচিত নয়।  উপরন্তু আমাদের (ইকোনমিস্টের) তদন্তে ট্রাইব্যুনালে বিবাদী পক্ষের দৃষ্টিভঙ্গি  উঠে আসেনি।  তা সত্ত্বেও আমরা (ইকোনমিস্ট) বিশ্বাস করি, আমাদের কাছে থাকা তথ্য-উপাত্তগুলো যথাযথ বিচারপ্রক্রিয়া নিয়ে বেশ কিছু যুক্তিসঙ্গত প্রশ্ন জাগিয়ে তুলেছে। বাংলাদেশ সরকারের উচিত বিষয়গুলো নিয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করা। মিস্টার নিজামুলের পদত্যাগের আলোকে এ ধরনের তদন্ত এখন খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে।

No comments

Powered by Blogger.