বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ ও ককটেল বিস্ফোরণের মধ্যে হরতাল চলছে

রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে বিক্ষিপ্ত হাতবোমা বিস্ফোরণ ও বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষের মধ্য দিয়ে ১৮ দল আয়োজিত হরতাল চলছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মুক্তির দাবিতে সারা দেশে বৃহস্পতিবার সকাল ৬ টা থেকে বেলা ২টা এই হরতাল পালন করছে ১৮ দলীয় জোট।
আগের রাত থেকেই রাজধানীতে ব্যাপক সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন থাকলেও বৃহস্পতিবার ভোরে ঘন কুয়াশার মধ্যেই যাত্রাবড়ীর মাতুয়াইলে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে ও গাছের গুঁড়ি ফেলে অবরোধ সৃষ্টির চেষ্টা করে হরতালকারীরা। পরে পুলিশের ধাওয়ায় তারা ওই এলাকা ত্যাগ করে।৭টার দিকে একই থানার সানারপাড় এলাকাতেও টায়ার জ্বালিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টির চেষ্টা করে বিরোধী দলের কর্মীরা।

সকাল সাড়ে ৬টার দিকে বিজয়নগর ও নয়াপল্টনে বিএনপি কার্যালয়ের কাছে অন্তত তিনটি হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয় বলে জানান পল্টন মডেল থানার পরিদর্শক আলম ভূঁইয়া।গত কয়েকদিনের মতো হরতালের সকালেও বিপুল সংখ্যক পুলিশ ঘিরে রেখেছে বিএনপি কার্যালয়।

এর ঘণ্টা তিনেক পর বিজয়নগর এলাকায় আরো চারটি ককটেল ফাটানো হয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।

সকাল সাড়ে ৭টার দিকে আজিমপুরে ছাত্রদলের কর্মীরা মিছিল বের করলে সেখানেও একটি হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।আর ৯টার পর খিলগাঁওয়ের তিলপাপাড়ায় একটি গলির মুখে ফাটানো হয় অন্তত পাঁচটি হাতবোমা।

মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সিনিয়ার সহকারী কমিশনার নাসিরউদ্দিন খান জানান,একদল যুবক একটি গলির মধ্যে পরপর পাঁচটি ককটেল ফাটায়। পরে পুলিশ রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।হাতবোমা ফাটার খবর পাওয়া গেছে বাসাবোর আহমদবাগ এলাকাতেও।

মিরপুর দারুস সালাম এলাকায় সকাল ৭টার দিকে ৮/১০টি হাতবোমার বিস্ফোরণে পুরো এলাকায় ভীতি ছড়িয়ে পড়ে।

প্রায় একই সময়ে বাংলা কলেজ থেকে ছাত্রদল মিছিল বের করার চেষ্টা করলে পুলিশের সাথে মিছিলকারীদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়।

ভোরে কাঁটাবন এলাকায় ছাত্রদল মিছিল বের করলে পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়। পুলিশ এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুজন ছাত্রকে আটক করে। এছাড়া গুলশান, বনানী, আজিমপুর বাসস্ট্যান্ডসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বিরোধী দলের কর্মীরা হরতালের সমর্থনে ঝটিকা মিছিল করার চেষ্টা চালায়।

সকালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকের কাছে পুলিশের সঙ্গে ইসলামী ছাত্রশিবিরের কর্মীরা সংঘর্ষে জড়ালে কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি। সকাল থেকে বিক্ষিপ্ত পিকেটিংয়ের খবর এসেছে বরিশাল ও নোয়াখালী থেকেও। চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে হরতালকারীরা গাড়ি ভাংচুরের চেষ্টা করলে পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ বাঁধে।

হরতালের আগের রাতে রাজধানীতে অন্তত ছয়টি গাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়।

এদিকে জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল শফিকুর রহমানকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে সিলেটে হরতালের সময় সন্ধ্যা পর্যন্ত বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে দলটি।

শফিকুর রহমানকে বুধবার গভীর রাতে রাজধানীর ধানমন্ডির বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।

হরতালের সকালে রাজধানীর গাবতলী ও সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে দূরপাল্লার কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। দুপুরে হরতাল শেষে বাস চলাচল শুরু হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

সকালে রাজধানীর রাস্তায় গণপরিবহন কম দেখা গেলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাস্তায় যানবাহন চলাচল বাড়তে থাকে। সদরঘাট থেকে লঞ্চ এবং কমলাপুর স্টেশ থেকে ট্রেন চলাচল সকাল থেকেই স্বাভাবিক।

হরতালের কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিল বন্ধ। তবে বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি কার্যালয়ে যথারীতি কাজ চলে। হরতালের কারণে সচিবালয় এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়। ভেতরে অন্যদিনের মতোই স্বাভাবিক কাজকর্ম চলে।

নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে চলতি সপ্তাহের প্রথম দিন রোববার সারা দেশে আট ঘণ্টা রাজপথ অবরোধ কর্মসূচি পালন করে ১৮ দলীয় জোট। সেদিন সারা দেশেই পুলিশের সঙ্গে অবরোধকারীদের বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ, গাড়ি ভাংচুর ও আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটে। সহিংসতায় নিহত হয় অন্তত দুইজন।

অবরোধে ‘সরকার সমর্থকদের বাধার’ প্রতিবাদে মঙ্গলবার সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল করে বিরোধী দল। তবে এর আগেই সোমবার অবরোধের সহিংসতার একটি মামলায় দলীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে গ্রেপ্তার হন বিএনপির মুখপাত্র মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

মঙ্গলবার হরতালে দিনভর বিক্ষিপ্ত সংঘাতের পর সন্ধ্যায় মির্জা ফখরুলের মুক্তির দাবিতে সপ্তাহের শেষ দিনও আধাবেলা হরতালের ডাক দেয় বিএনপি।

অবশ্য ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বলে আসছেন, যুদ্ধাপরাধের বিচার কাজ শেষ পর্যায়ে চলে আসায় জামায়াতে ইসলামী ও তাদের শরিক বিএনপি ‘মরিয়া’ হয়ে সহিংসতা শুরু করেছে।

একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে জামায়াতের সাবেক ও বর্তমান আমিরসহ শীর্ষ নয় নেতা এবং বিএনপির দুই নেতার বিচার চলছে ।

No comments

Powered by Blogger.