সিনেমা ছাড়তে কোনও অসুবিধা হবে না
টালিগঞ্জ ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির পয়লা নম্বর নায়িকা বিয়ে সেরে ফেলছেন ২০১৩
সালের পয়লা ফেব্রুয়ারি। সৌভাগ্যবান সেই যুবকটির নাম নিসপাল সিং; তিনি-ই
সুরিন্দর ফিল্মস-এর হর্তাকর্তা। মুক্তি পেযেছে কোয়েলের যে ছবি 'পাগলু ২',
তারও প্রযোজক নিসপাল।
তা, এটাই কি কোয়েলের বিয়ের আগে শেষের দিকের ছবি? আর
তারপরেই কি কোয়েল মল্লিক-এর সিনেমা থেকে অবসর? ঠিক যেভাবে বিয়ে সেরে ছবির
জগৎ থেকে সরে গিয়েছিলেন মাধুরী, এও কি তাই? কোয়েল কী বলছেন তাঁর ভবিষ্যৎ
পরিকল্পনা নিয়ে?প্রশ্ন : ইন্টারভিউটা শুরুর আগে আপনাকে একটা প্রমিস করতে হবে...
কোয়েল : (একটু অবাক হয়ে) প্রমিস! কী প্রমিস?
প্রশ্ন : কোনও পলিটিক্যালি কারেক্ট অ্যানসার দেওয়া চলবে না...
কোয়েল : হা... হা... হা... (প্রবল হাসি)।
প্রশ্ন : হেসে উড়িয়ে দিলে হবে না। রাজি তো?
কোয়েল : আমি যে খুব ক্যালকুলেশন করে পলিটিক্যালি কারেক্ট অ্যানসার দিই- তা কিন্তু নয়। বেসিক্যালি আমি মানুষটাই এরকম। বরং আমি যেমন আমি, সেইভাবেই কথা বলি, না কি?
প্রশ্ন : বেশ তাই বলুন।
কোয়েল : শুরু করুন তাহলে...
প্রশ্ন : আপনি কি জানেন রিসেন্ট একটা ইন্টারভিউতে স্বস্তিকা বলেছেন, কোনও দিন আপনারা দুজন একসঙ্গে স্ক্রিন শেয়ার করলে রিভেঞ্জ কীভাবে নিতে হয়- সেটা নাকি স্বস্তিকা আপনাকে দেখিয়ে দেবেন...
কোয়েল : তাই, বলেছে বুঝি!(কিছুক্ষণ ধরে হাসি)... কী বলি বলুন তো! কেউ যদি রিভেঞ্জ নিতে চায়, লিখে দিন- আমি হেসে দিয়েছি।
প্রশ্ন : আপনি কিন্তু প্রমিস করেছেন কোনরকম পলিটিক্যালি কারেক্ট অ্যানসার দেবেন না...
কোয়েল : দিচ্ছি না তো। বিশ্বাস করুন, কাছের লোকজন ছাড়া আমার আর কারও ওপর সেভাবে রাগ, অভিযোগ কিছুই নেই।
প্রশ্ন : একটু বেশি বিনয় হয়ে গেল না?
কোয়েল : (হাসি) এটা আমার একেবারেই বিনয় নয়। আমি মানুষটাই এরকম। আমার প্লেটে দুটো মিষ্টি থাকলে আমি সেটা নিয়েই খুশি থাকব। অন্যের প্লেটে ক’টা মিষ্টি আছে, সেই নিয়ে মাথা ঘামাতেই যাব না। তার প্লেট নিয়ে কাড়াকাড়িও করব না।
প্রশ্ন : তার মানে বলছেন, স্বস্তিকার ওপর আপনার কোনও রাগ নেই। কেউ অফার নিয়ে এলে আপনি স্বস্তিকার সঙ্গে ছবি করবেন?
কোয়েল : (একটু ভেবে) যদি এরকম কোনও দিন সুযোগ আসে, স্বস্তিকার সঙ্গে ছবি করতে আমার কোনও আপত্তি নেই।
প্রশ্ন : এত বছর ইন্ডাস্ট্রিতে হয়ে গেল, কারও ওপর আপনার কোন অভিযোগ তৈরি হল না- সেটা হয় না কি?
কোয়েল :(চোয়াল শক্ত করে) আমি ইচ্ছে করলেই কাল সকাল থেকে কোনও সিনেমা না-ও সাইন করতে পারি। এই ইন্ডাস্ট্রির প্রতি আমার কোনও অ্যাটাচমেন্ট নেই। রাতারাতি নিজেকে সিনেমা থেকে সরিয়ে নিতে এতটুকু অসুবিধা হবে না আমার।
প্রশ্ন : সত্যি কোনও অ্যাটাচমেন্ট তৈরি হল না, নাকি আপনি তৈরি করলেন না?
কোয়েল : আমি তৈরি করলাম না।
প্রশ্ন : কেন? এত বছরেও ইন্ডাস্ট্রিতে কোনও কাছের মানুষ পেলেন না?
কোয়েল : না না, ইন্ডাস্ট্রির লোকেরা আমার সবাই কাছের। সবার সঙ্গেই আমার ভাল সম্পর্ক। কিন্তু সিনেমার এই যে গ্ল্যামার, ফেম... একটা অসম্ভব মোহ আছে না, তার সঙ্গে আমার কোনো অ্যাটাচমেন্ট নেই। এগুলো বড় পলকা। আজ আছে, কাল নেই। কিন্তু আমার ফ্যামিলি আমার সঙ্গে সব সময় থাকবে। আমি যখন বিখ্যাত ছিলাম না, তখনও ছিল, আজও আছে, থাকবেও। তাই বিয়ে-টিয়ের পর যদি আমায় চুটিয়ে সংসার করতে হয়, বাচ্চা মানুষ করতে হয়- আমার কোনো দুঃখ থাকবে না। ফ্যামিলিটাই আমার কাছে প্রায়োরিটি বেশি, সিনেমাটা নয়। তাই যত রাগ, অভিমান আমার কাছের মানুষগুলোর ওপর, অন্যদের ওপর নয়। আসে না।
প্রশ্ন : টলিউডের এক নম্বর নায়িকার মুখে এই কথাগুলো কেমন যেন শোনাচ্ছে না!
কোয়েল : কিন্তু এই কথাগুলোই সত্যি। শ্যুটিং-এর পর কোয়েল এরকমই। এক এক সময় মনে হয়- আমি মানুষটা সত্যি খুব বোরিং। জানেন, আমার নিজের ইন্টারভিউ আমার একদম পড়তে ইচ্ছে করে না। সবাই কত কিছু বলে, কত মশলা থাকে আর আমারটা...!(কিছুক্ষণ চুপ করে থাকার পর)... আমি জীবনে প্ল্যান করে কিছু করিনি বটে, কিন্তু আমি জীবনে অ্যাডভেঞ্চারটাও একদম ভালোবাসি না। ওই যে পাখিরা দলবেঁধে আকাশে উড়ে বেড়ায় না, দেখবেন ওদের ভেতর একটা পাখি দলছুট হয়ে চেঁচাতে চেঁচাতে একা একা উড়ে বেড়াচ্ছে। ওই পাখিটা হয়ত আকাশটাকে একটু বেশি চিনল, বেশি দেখল কিন্তু ওর হারিয়ে যাওয়ার চান্সটাও অনেক বেশি। আমি ওই দলছুট পাখিটা কোনও দিন হতে পারব না। আমি সব সময় একটা সিকিউরিটি চাই।
প্রশ্ন : এই সিকিউরিটির কারণেই কি ভেঙ্কটেশ ছেড়ে আজ অবধি অশোক ধানুকার সঙ্গে ছবি করলেন না?
কোয়েল : অশোক ধানুকাই তো আজ অবধি আমায় ডাকলেন না। ভাল স্ক্রিপ্ট হলে কেন করব না!
প্রশ্ন : সত্যি?
কোয়েল : অশোক ধানুকাকে গিয়ে জিজ্ঞেস করুন...
প্রশ্ন : এত বছর হয়ে গেল, ইন্ডাস্ট্রি আপনাকে স্রেফ গ্ল্যামারাস নায়িকা করেই রেখে দিল। মাঝে মাঝে রাগ হয় না?
কোয়েল : আমি তো খুব প্ল্যান করে এই ইন্ডাস্ট্রিতে আসিনি, তাই ইন্ডাস্ট্রির কাছে আমার খুব একটা এক্সপেকটেশনও নেই। প্রথম যখন ছবি করতে এলাম, বাবার ইমেজের কথাই মাথায় ছিল, যাতে আমার জন্য কোনও ভাবে বাবাকে না কথা শুনতে হয়। নিজের কথা তখন সত্যি ভাবিনি। প্রথম প্রথম আমি নিজেকেই তো নিজে টলারেট করতে পারতাম না, ইন্ডাস্ট্রি কী ভাবে পারবে...
প্রশ্ন : সে তো প্রথম প্রথম... কিন্তু দশ বছর পর মানে এখন?
কোয়েল : (হাসি) না না, এখন পারি। কিন্তু ওই যে বললাম- ইন্ডাস্ট্রির প্রতি আমার কোনও অ্যাটাচমেন্ট নেই। তাই রাগ-টাগও আসে না। ইন্ডাস্ট্রি আমাকে যা দিয়েছে, আমি তাতেই খুশি। অন্যের প্লেটে তিনটে মিষ্টি আছে বলে আমি হামলে পড়তে পারব না।
এমন সময় মেক-আপ ভ্যানের দরজায় ঠক ঠক। দরজা খুলতেই একজন বলল ‘দিদি,শট রেডি’। অগত্যা কোয়েলের সঙ্গে কথাও আপাতত এখানেই ফুরোল।
No comments