গণতন্ত্রকে মুছে ফেলার চেষ্টা চলছেঃ খালেদা জিয়া by মনোয়ারুল ইসলাম

বিরোধীদলীয় নেতা ও বিএনপি চেয়ারপর্সন বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, একদলীয় মনোভাব নিয়ে গণতন্ত্রকে মুছে দেবার চেষ্টা চলছে। ভিন্নমত ও বিরোধীদলকে ফ্যাসিস্ট কায়দায় দমনের অপচেষ্টা চলছে।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে  বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বিজিএমইএ আয়োজিত ২৩ ‘বাংলাদেশ অ্যাপারেল অ্যান্ড টেক্সটাইল এক্সপজিশন (বাটেক্সপো) মেলার দ্বিতীয় দিনের সমাপনি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

খালেদা জিয়া বলেন, বিচার ব্যবস্থায় চলছে সীমাহীন নৈরাজ্য। সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে তছনছ করে দেয়া হয়েছে। রাষ্ট্রীয় সব প্রতিষ্ঠান দলীয় স্বার্থ ও ভিন্নমত দলনের কাজে ব্যবহার কর‍া হচ্ছে।

অর্থনীতি বিষয়ে তিনি বলেন, ব্যাংক-বীমাসহ সব অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানে অযোগ্য, অদক্ষ, দলীয় ক্যাডারদের বসিয়ে দেয়া হয়েছে। সরকার জনগণের টাকা লুট করে  নিচ্ছে। ফলে ব্যাংকগুলো উদ্যোক্তাদের লোন দিতে পারছেনা। এমনকি আমানতকারীরা বড় অংকের টাকা তুলতে গেলে ব্যাংকের পক্ষে দেয়া সম্ভব হচ্ছেনা। সুদের হার বাড়ছে। জাতীয় অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়ছে।

ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন,  দেশের এই অবস্থায় আপনারা নিশ্চুপ থাকলে চলবেনা। পরিস্থিতি পরিবর্তন না হলে শিল্প-বাণিজ্য-অর্থনীতি সব ধ্বংস হয়ে যাবে। কাজেই জাতির বৃহত্তর স্বার্থ ও কল্যাণে এই পরিস্থিতি পরিবর্তনের জন্য আজ জাতীয় আন্দোলন গড়ে তোলা সময়ের দাবি ও তা অপরিহার্যও বটে ।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সাবেক শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এমকে আনোয়ার বলেন, তাদের সরকারের আমলে শিল্প সেক্টরে উন্নতি ও প্রবৃদ্ধির শুরু হয়েছে। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আমলে এদেশে পোশাক শিল্পের উন্নয়ণ শুরু হয়।

তিনি বলেন, দেশে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও দুর্ঘটনা দেশের ইমেজ নষ্ট করছে। সরকার শিল্প-কারখানার উন্নয়ণে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। ১৯৭১ সালের পর পাট শিল্প ধ্বংস করার ষড়যন্ত্রের পর পোশাকশিল্পকে ধ্বংস করতে চক্রান্ত চলছে।
তিনি বলেন, দেশের অর্থনীতির মূল সমস্যা আইনের শাসনের অভাব ও লাগামহীন দুর্নীতি ।
সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য  ড. এম ওসমান ফারুক বলেন, অবরুদ্ধ গণতন্ত্রের শিকার হয়েছে বিএনপি । সরকারের ব্যর্থতায় দেশ ও বিদেশে ইমেজের সংকট তৈরি হয়েছে।

তাজরিনের ঘটনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, শ্রমিকদের অধিকারের ব্যাপারে শৈথিল্য দেখানোর সুযোগ নেই। জার্মানী ও ফ্রান্সের অনেক ক্রেতা আসেনি। তাই ইমেজ রক্ষা করতে হবে।

তিনি বলেন, বিশ্ব বাণিজ্য প্রতিদিনই এগিয়ে যাচ্ছে। তাই আমাদেরকেও এগিয়ে যেতে হবে।

অতিরিক্ত ব্যাংক সুদ, বিদু্যৎ, গ্যাস সংকট, বন্দর ব্যবস্থাপনায় দলীয়করণে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। ব্যবসায়ীদের সমস্যা সমাধানে সরকারকে অবশ্যই এগিয়ে আসতে হবে।

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, দেশের বেসরকারি খাতকে দেশের অর্থনীতির মুল চালিকাশক্তি করেছেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান । ফলে বাংলাদেশের অনেক তরুণ উদ্যোক্তা হিসেবে তৈরি হয়েছে। ব্যবসায়ীদের জন্য ন‍ানা সুবিধা তিনি চালু করেছেন। তিনি সাহসিকতার সাথে যেসব উদ্যোগ নিয়েছেন তার উপর আজ দেশের ব্যবসা- বাণিজ্য দাঁড়িয়ে আছে।


সাবেক এই বাণিজ্যমন্ত্রী হরতালের ব্যপারে বলেন, আমরা সবাই হরতালমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখি। বিএনপি ব্যবসাবান্ধব দল। হরতালের কারণে ব্যবসার ক্ষতিতে আমরা দু:খ পাই। কিন্ত দেশে গণতন্ত্র থাকতে হবে।

বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশের মানুষের অধিকার প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। গণতন্ত্র না থাকলে দেশের অর্থনীতি ঠিক থাকেনা। এজন্য ব্যবসায়ীদের গণতন্ত্র রক্ষায় এগিয়ে আসতে হবে।

বিজিএমইএ প্রেসিডেন্ট শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।

স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিজিএমইএর দ্বিতীয় ভাইস প্রেসিডেন্ট সিদ্দিকুর রহমান এ সময়ে বিজিএমইএ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

এছাড়া আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ, সহ সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন, বিজিএমইএর সাবেক প্রেসিডেন্ট সালাম মোর্শেদী প্রমুখ।

গ্রেপ্তারের কারণে অনুষ্ঠানের অন্যতম বিশেষ অতিথি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর উপস্থিত খাকতে পারেননি।

দেশের পোশাক খাতের সবচেয়ে বড় এ প্রদর্শনী আগামীকাল শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত চলবে। বুধবার মেলার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রদর্শনীতে ওভেন পোশাক, নিট পোশাক, গার্মেন্ট এক্সেসরিজ ও গার্মেন্ট টেকনোলজির ১৩৮টি স্টল রয়েছে। মেলায় পোশাক প্রদর্শনীর পাশাপাশি আলোচনা সভা, সেমিনার, ফ্যাশন শো, দ্বিপক্ষীয় বৈঠকসহ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান রয়েছে। 

No comments

Powered by Blogger.