পাহাড়ে সোনা ধান জুমচাষিরা খুশি

রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার জুমের ধান পাকা শুরু হয়েছে। পাহাড়জুড়ে সোনালি রঙের ধান কাটা শুরু করেছেন জুমচাষিরা। এবার পাহাড়ে ধানের ফলন ভালো হওয়ায় চাষিরা বেশ খুশি। সম্প্রতি বিভিন্ন পাহাড় ঘুরে দেখা গেছে, দুর্গম পাহাড়ে বড় বড় টিলাজুড়ে সোনালি রঙের পাকা ধান ঝুলছে।


পাকা ধান খেতে টিয়াপাখিসহ বিভিন্ন বন্য প্রাণীর আনাগোনা বেড়ে গেছে। বন্য প্রাণী ও পাখপাখালিকে ভয় দেখাতে জুমচাষিরা খেতে কাকতাড়ুয়া টানাচ্ছেন।
সাজেক ইউনিয়নের দুর্গম থলছড়া গ্রামের মায়াদেবী চাকমা জানান, প্রতিবছর বন্যশূকর ও টিয়াপাখির উৎপাত বেড়ে যায়। সে জন্য জুমের ধান পাকার সঙ্গে সঙ্গে ঘরে তুলতে হয়। রাত জেগে জুমের পাকা ধান পাহারা দিতে হয়। উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার দুর্গম এলাকায় বেশি জুম চাষ হয়। যাঁরা জুম চাষ করেন, তাঁরা গরিব ও ভূমিহীন। এমন আট থেকে দশ হাজার পরিবার আছে উপজেলায়। এ বছর দুই হাজার ৫০০ একরের বেশি জমিতে জুম চাষ হয়েছে। যুগ যুগ ধরে এসব মানুষ জুম চাষের ওপর নির্ভরশীল। তাঁরা লোকালয়ের ৫০ থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরে বাস করেন।
জুমচাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে জুমে জঙ্গল কাটা হয়। কাটা জুম শুকাতে দু-এক মাস লাগে। এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহের দিকে আগুন দেওয়া হয়। আগুন দেওয়ার পর পর জুমের পুড়ে যাওয়া আগাছাগুলো পরিষ্কার করতে হয়। আগাছা পরিষ্কার শেষে এপ্রিলের মাঝামাঝি বিভিন্ন জাতের ধান বপন করা হয়। ধান বপনের পাশাপাশি জুমের বিভিন্ন ধরনের ফল ও শাকসবজি লাগানো হয়।
সাজেক ইউনিয়নে দুর্গম হগড়া হেজিংয়ের কার্বারি চন্দ্র বিকাশ চাকমা বলেন, এ বছর আবহাওয়া অনুকূল থাকায় জুমের ফলন ভালো হয়েছে। ইতিমধ্যে বেশ কিছু এলাকায় জুমের ধান পাকা শুরু করেছে। আদিবাসীদের ঐতিহ্যবাহী জুম চাষ দিন দিন কমে যাচ্ছে। অথচ এই জুম চাষ করলে তিন পার্বত্য জেলার ৫০ শতাংশ খাদ্যঘাটতি মেটানো যেত। মেলাছড়া গ্রামের জুমচাষি কিরণ চন্দ্র চাকমা বলেন, ‘আশা করছি ৫০ থেকে ৫৫ মণ ধান পাব। তবে অনেক সময় বন্য শূকর, হাতি ও টিয়াসহ বিভিন্ন বন্য প্রাণীর উৎপাত বেড়ে গেলে ঠিকমতো ধান পাওয়া যায় না।’
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা শাক্য চাকমা বলেন, জুমের উৎপাদন এ বছর ভালো হবে। বাম্পার ফলনের আশা করা হচ্ছে। এ বছর আড়াই হাজার একরের বেশি জমিতে জুম চাষ হয়েছে। সাজেক ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান অতলাল চাকমা বলেন, ‘আমার ইউনিয়নের অধিকাংশ মানুষ জুমের ওপর নির্ভরশীল। চার হাজারের বেশি পরিবার জুমচাষি। জুম চাষের সময় খাদ্যসংকট দেখা দেওয়ায় অনেক পরিবার জুম চাষ করতে পারেনি।

No comments

Powered by Blogger.