ট্রেনের ভাড়া বৃদ্ধি-একই সঙ্গে সেবার মান বাড়াতে হবে
দেশের সড়ক যোগাযোগ এখনো অনেকটাই বিপর্যস্ত। যাত্রীর তুলনায় গাড়ির সংখ্যা কম, তার পরও দীর্ঘ যানজট। অতিরিক্ত ভাড়া আদায় তো আছেই। ফলে ঈদে ঘরমুখো মানুষ ছুটে গিয়েছিল রেলস্টেশনে। কিন্তু সেখানেও তাদের হতাশ হতে হয়েছে। সারা রাত অপেক্ষা করেও টিকিট না পেয়ে অনেককে খালি হাতে ফিরতে হয়েছে।
কড়া নিষেধ থাকা সত্ত্বেও যাত্রীদের ট্রেনের ছাদে চড়ে বাড়ি ফিরতে হয়েছে। শিডিউল বিপর্যয়, ধীরগতিতে গাড়ি চলাসহ নানা কারণে সাত-আট ঘণ্টা বিলম্বেও অনেককে গন্তব্যে পেঁৗছাতে হয়েছে। এ ব্যাপারে রেল ও যোগাযোগমন্ত্রী, রেলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা হতাশা প্রকাশ করে বলেছেন, তাঁদের করার কিছু নেই। ট্রেনের ইঞ্জিনগুলো পুরনো, লাইনগুলোর উপযুক্ত সংস্কার নেই, বগির সংখ্যা কম, লোকবল কম। ফলে তাঁরা চাইলেও এর চেয়ে বেশি ট্রেন দেওয়া কিংবা সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এ অবস্থায় ২০ বছর পর ট্রেনের ভাড়া ৫০ শতাংশ বৃদ্ধির যে সিদ্ধান্ত হয়েছে, তাকে অযৌক্তিক বলা যাবে না। কারণ জ্বালানি, সরঞ্জাম, বেতন-ভাতা ইত্যাদি কয়েক শ ভাগ বেড়ে গেছে। তবে ট্রেনযাত্রীদের প্রধান দাবি, রেলের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো হোক।
বাংলাদেশ রেলওয়ের বেহাল বা বিপর্যস্ত অবস্থা অনেক আগে থেকেই চলে আসছে। সংস্কারহীন রেললাইনগুলোতে দ্রুতগতিতে ট্রেন চালানো যায় না, লাইনচ্যুত হওয়ার ঘটনা অনেক, ইঞ্জিনগুলোর বেশির ভাগই মেয়াদোত্তীর্ণ ও ত্রুটিপূর্ণ। বেশির ভাগ সময় ওয়ার্কশপেই রাখতে হয় এবং বগির সংখ্যাও খুবই কম। ফলে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ চাইলেই যে ঈদ উপলক্ষে বিভিন্ন রুটে ট্রেনের সংখ্যা খুব বাড়িয়ে দেবে তা সম্ভব নয়। এদিকে দেশের নৌপথও ক্রমেই কমে যাচ্ছে। যেটুকু আছে, সেটুকুও ক্রমেই নাব্যতা হারাচ্ছে। ফলে যাত্রীদের অতিরিক্ত চাপ এসে পড়ছে সড়ক ও রেলের ওপর। কিন্তু সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার বেহাল কাটিয়ে ওঠা ক্রমেই কঠিন হয়ে পড়ছে। বর্ষায় বেশির ভাগ সড়ক পানিতে ডুবে যায়। ফলে দ্রুত সড়কগুলো নষ্ট হয়ে যায়। এ অবস্থায় রেলওয়ে ছিল আমাদের প্রধান ভরসা। কিন্তু কয়েক দশকের বৈরী পরিকল্পনা রেলওয়েকে প্রায় ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে। রেললাইনের পরিমাণ বাড়ার বদলে কমেছে। রাজনৈতিক নিয়োগে কর্মকর্তার সংখ্যা বাড়লেও প্রায় অর্ধেক হয়ে গেছে কর্মচারীর সংখ্যা। লাইনগুলো নিয়মিত সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ হয় না। রেলওয়ের জমিগুলো ক্রমেই বেহাত হচ্ছে। কেবল পশ্চিমাঞ্চলেই ১৫ হাজার একরের বেশি রেলওয়ের জমি অবৈধ দখলে রয়েছে। যে সৈয়দপুর রেলওয়ে ওয়ার্কশপে স্বাধীনতার আগেও বছরে দুই শতাধিক বগি তৈরি হতো, স্বাধীনতার পর সেখানে বগি তৈরি বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমান সরকার রেলওয়ের উন্নয়নে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে, কিন্তু সেগুলোর সুফল এখনো দৃষ্টিগোচর হচ্ছে না। এ জন্য প্রয়োজন ব্যাপকভিত্তিক পদক্ষেপ। আমরা আশা করি, বর্তমান সরকার এসব ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে বাংলাদেশ রেলওয়েকে তার ঐতিহ্যে ফিরিয়ে নিতে সচেষ্ট হবে। আর তা হলে ৫০ শতাংশ ভাড়াবৃদ্ধিকে যাত্রীরা সুনজরেই দেখবে, মেনে নেবে যৌক্তিক বলে।
No comments