নতুন সংযোগের প্রক্রিয়া এত সময়সাপেক্ষ করা হয়েছে যে গ্রাহক দীর্ঘদিন ঘুরেও সংযোগ পাবে না -সারা দেশে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ! by অরুণ কর্মকার

সারা দেশে নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ কার্যত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) এলাকায় বিতরণব্যবস্থায় সমস্যার (সিস্টেম ওভারলোড) কারণে সংযোগ বন্ধ রাখা হয়েছে। অন্য বিতরণ কোম্পানিগুলোও গত ১৭ জুন থেকে নতুন সংযোগ দেওয়ার স্বাভাবিক প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়।


সরকারি সূত্রগুলো জানায়, ক্রমবর্ধমান চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ কঠিন হয়ে পড়ায় এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বিতরণব্যবস্থার সমস্যাও আছে, বিশেষ করে আরইবির এলাকায় বিতরণ সমস্যা প্রকট।
তবে সরকারের পক্ষ থেকে সরাসরি নতুন সংযোগ বন্ধ রাখার কোনো ঘোষণা দেওয়া হয়নি। কারণ, এর আগে অনেক দিন বন্ধ রেখে শর্ত সাপেক্ষে নতুন সংযোগ চালু করার পর আবারও তা বন্ধ ঘোষণা করা হলে জনমনে তীব্র বিরূপ প্রতিক্রিয়া হতে পারে। তাই সংযোগ বন্ধ রাখার ক্ষেত্রে কিছুটা কৌশল অবলম্বন করা হয়েছে।
পিডিবির বিতরণ এলাকায় আগে নতুন সংযোগের আবেদনে চূড়ান্ত অনুমোদন দিতেন একজন আবাসিক প্রকৌশলী। প্রতিটি বিতরণ এলাকাতেই একজন করে আবাসিক প্রকৌশলী থাকায় আবেদনকারীকে বেশি ঘুরতে হতো না। কিন্তু এখন নতুন সংযোগের আবেদনে চূড়ান্ত অনুমোদনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীকে। তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আছেন প্রতি জেলায় এক বা দুজন। ফলে আবেদনকারীকে দীর্ঘদিন অপেক্ষা করতে হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, এ উপায়ে নতুন সংযোগের প্রক্রিয়া এত সময়সাপেক্ষ করা হয়েছে যে গ্রাহক দীর্ঘদিন ঘুরেও সংযোগ পাবেন না।
আরইবির এলাকায় আগে নতুন সংযোগের আবেদনে চূড়ান্ত অনুমোদন দিতেন প্রতিটি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির (পিবিএস) মহাব্যবস্থাপক। এখন এই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীকে। সারা দেশে আরইবির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর কার্যালয় আছে মাত্র নয়টি। ফলে গ্রাহক তাঁদের কাছে যেতে পারেন না, অনিশ্চয়তায় বসে থাকতে হয়।
ঢাকায় ডিপিডিসি ও ডেসকো এবং ঢাকার বাইরে ওজোপাডিকোর এলাকায় আগে নতুন সংযোগের আবেদনে চূড়ান্ত অনুমোদন দিতেন প্রতিটি এলাকার ব্যবস্থাপক। এখন নতুন সংযোগের আবেদন সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তা—ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে পাঠানো হচ্ছে।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বর্তমান সরকারের আমলে ইতিমধ্যে সারা দেশে প্রায় ২৫ লাখ নতুন সংযোগ দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন বিতরণ সংস্থার কাছে নতুন সংযোগের আবেদন জমা আছে আরও প্রায় ১০ লাখ। এখনো প্রতিদিন নতুন আবেদনপত্র জমা হচ্ছে। এত নতুন সংযোগ দিলে বিদ্যুতের চাহিদা কোনোভাবেই মেটানো সম্ভব হবে না।
২০১০ সালের এপ্রিল মাস থেকে সরকার তিন মাসের জন্য নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয়। এরপর তা আরও তিন মাস বাড়িয়ে ওই বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর করা হয়। পরে তা আরও এক মাস বাড়িয়ে ৩০ অক্টোবর করা হয়। এরপর নতুন সংযোগের নীতিমালা তৈরির জন্য আরও এক সপ্তাহ সময় নেওয়া হয়। শেষ পর্যন্ত ওই বছরের ৭ নভেম্বর থেকে শর্ত সাপেক্ষে কিছুসংখ্যক (যাঁদের নামে চাহিদাপত্র বরাদ্দ করা ছিল তার অর্ধেক) গ্রাহকের জন্য নতুন সংযোগ চালু করা হয়।
সীমিতসংখ্যক গ্রাহককে নতুন সংযোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে তখন প্রথম চালু করা হয় সৌরবিদ্যুতের প্যানেল বসিয়ে (দুই কিলোওয়াটের বেশি চাহিদার ক্ষেত্রে) চাহিদার একাংশ পূরণের শর্ত। পাশাপাশি তখন নতুন চাহিদাপত্র বরাদ্দ করা বন্ধ রাখা হয়। বলা হয়, চাহিদাপত্র পাওয়া গ্রাহকদের অর্ধেককে সংযোগ দেওয়ার পর অন্যদের একই শর্তে পর্যায়ক্রমে সংযোগ দেওয়া হবে।
এ প্রক্রিয়া শেষ করে ২০১১ সালের ১৫ মে থেকে আবার একশ্রেণীর গ্রাহককে নতুন সংযোগ দেওয়া শুরু করা হয়। এই পর্যায়ে সৌরবিদ্যুতের প্যানেল বসানোর শর্ত বহাল রেখে ৫০০ কিলোওয়াট পর্যন্ত চাহিদার সব শ্রেণীর গ্রাহককে (যাদের অনুকূলে ওই বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত চাহিদাপত্র বরাদ্দ করা ছিল) নতুন সংযোগ দেওয়া হয়।
ঢাকার কয়েকটি এলাকায় সংশ্লিষ্ট গ্রাহকদের কাছে খবর নিয়ে জানা গেছে, অনেক টাকা ব্যয় করে সৌরবিদ্যুতের প্যানেল বসানোর শর্ত পূরণ করলেও এগুলো তাঁদের তেমন কোনো কাজে আসছে না। এ নিয়ে তাঁদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভও আছে।

No comments

Powered by Blogger.