লিমনের ওপর হামলা-কেন পদে পদে হেনস্তা?

র‌্যাব কথিত 'বন্দুকযুদ্ধে' পা হারানো কলেজছাত্র লিমনের ওপর ঈদের দিন যেভাবে হামলা হয়েছে, তাতে তার নিরাপত্তাহীনতাই নতুন করে স্পষ্ট হয়ে উঠল। হামলাকারী যদিও ঝালকাঠির বাসিন্দা, কিন্তু ঘটনাটিকে নিছক স্থানীয় বিবাদ হিসেবে দেখার অবকাশ নেই।


খুঁটির অপরিমিত জোরের ভরসা থাকলেই না ছিঁচকে সন্ত্রাসীরাও প্রকাশ্য দিবালোকে একটি পরিবারকে পিটিয়ে আহত করতে পারে। প্রভাবশালী একটি বাহিনীর প্রশ্নবিদ্ধ কর্মকাণ্ড এক কলেজ শিক্ষার্থী ও তার পরিবার নির্বিবাদে মেনে নেয়নি বলেই কি এভাবে পদে পদে হেনস্তার আয়োজন? আমরা গভীর বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ্য করেছি, মাত্র কয়েক দিন আগে লিমনের মায়ের দায়ের করা একটি মামলায় সংশ্লিষ্ট পুলিশ অভিযুক্ত র‌্যাব সদস্যদের নির্দোষ দেখিয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দিয়েছে! এটা ধারণা করা কঠিন নয়_ চাপের মুখেই এমন অবিশ্বাস্য ভূমিকা। সর্বশেষ হামলার ঘটনার মধ্য দিয়ে লিমন ইস্যুতে সরকার ও প্রশাসনের ভাবমূর্তিতে ইতিমধ্যে লিপ্ত কালিমা আরও গাঢ়ই হলো। দেশজুড়ে ঈদ আনন্দ চলাকালে লিমনের পরিবারের ওপর নেমে আসা আতঙ্কের মুষ্ট্যাঘাত নিয়ে দেশের বিশিষ্ট নাগরিকরা যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, তা যথার্থ। দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের বাংলাদেশ চ্যাপ্টার (টিআইবি) এবং মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের উদ্বেগের সঙ্গেও সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মনোভাব প্রতিফলিত হয়েছে। আমরা আশা করি, সরকার বিষয়টি আমলে নেবে এবং অবিলম্বে লিমন ও তার পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বিপুল প্রভাবের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে কেবল ন্যায়দণ্ডের ভরসায় সংগ্রামরত একটি পরিবারের নিরাপত্তার দায় রাষ্ট্র এড়িয়ে যেতে পারে না। নীতিনির্ধারকদের মনে রাখা জরুরি_ একটি অপরাধ চাপা দিতে গিয়ে একের পর এক অপরাধের যে প্রবণতা সংশ্লিষ্টদের মধ্যে দেখা যাচ্ছে, তা সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির জন্যও ক্ষতিকর হতে বাধ্য। গুটিকয়েক সদস্যকে বাঁচানোর জন্য র‌্যাব যেভাবে গোটা বাহিনীকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছে, তাও আমাদের কাছে অবিমৃষ্যতাই মনে হয়। যাদের কাছে নাগরিকরা অন্যায়ের প্রতিকার চাইতে যায়, তাদেরই অন্যায় অবস্থান দেশবাসীর মনে সঞ্চারিত ক্ষোভ বাড়িয়েই তুলবে। প্রশাসনের উচিত হবে অবিলম্বে লিমনের ওপর হামলাকারীদের আইনের আওতায় আনা। নিজের গ্রামে তার পরিবার যাতে মুক্তভাবে ও নিশ্চিন্তে বসবাস করতে পারে, সে নিশ্চয়তাও দিতে হবে সরকারকে। লিমন গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনা তদন্তে এবং তাদের নিরাপত্তা বিধানে পুলিশের লজ্জাজনক ব্যর্থতার পর টিআইবি ও আসকের পক্ষ থেকে বিচার বিভাগীয় তদন্তের যে দাবি তোলা হয়েছে; তার যৌক্তিকতা এখন আর অস্বীকার করা যায় না। উচ্চ আদালতও কি লিমনের ঘটনায় স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এগিয়ে আসতে পারেন না? দেশের বিভিন্ন আপদকালে প্রধানমন্ত্রীকে উদ্যোগী হতে দেখেছি আমরা। নির্দোষ লিমন যেভাবে হেনস্তা হয়ে চলেছে, তা আইনের শাসনের জন্য আপদই বটে। প্রধানমন্ত্রী যদি ব্যক্তিগতভাবে একটি অসহায় পরিবারের ন্যায়বিচার প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে উদ্যোগী হন, তা দেশে-বিদেশে নিঃসন্দেহে প্রশংসিত হবে। আমরাও চাই, আইন তার নিজস্ব গতিতে চলুক। তদন্ত ও বিচার কাজ স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন হোক। কিন্তু যখন চারপাশে অস্বাভাবিকতাই প্রকট হয়ে ওঠে, তখন স্থানীয় একটি অপরাধের প্রতিকার বিধানে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের হস্তক্ষেপ জরুরি হয়ে পড়ে বৈকি।
 

No comments

Powered by Blogger.