ঋণ পরিশোধের গুরুত্ব by মোঃ রফিউজ্জামান আকন্দ

দুনিয়াতে মানুষ স্বাভাবিক জীবন যাপনের প্রয়োজনে অনেক সময় অপরের কাছ থেকে ঋণ নেয়। এ ঋণ যথাসময়ে পরিশোধ করা বাধ্যতামূলক হওয়া সত্ত্বেও অসচ্ছলতা বা সময়-সুযোগের অভাবে অনেকেই তা পরিশোধ করতে পারেন না। ঋণ পরিশোধের চেষ্টা-তদবিরে থাকা অবস্থায় অনেকে মৃত্যুবরণও করেন।


ফলে এ ঋণ আর পরিশোধ করা সম্ভব হয় না; যদিও তার কাছে সম্পদ থেকে যায়। তাই কেউ মারা গেলে মৃতের জন্য সর্বাগ্রে করণীয় কাজগুলোর ব্যাপারে ইসলামের বিধান হলো, যতদ্রুত সম্ভব মৃতের জানাজা ও দাফনের ব্যবস্থা করা। আর এই ব্যবস্থা করবে মৃত ব্যক্তির পরিত্যক্ত সম্পত্তি থেকে। তারপর তার ঋণ পরিশোধ করতে হবে।
মৃত ব্যক্তির ঋণ যথাসম্ভব দ্রুত পরিশোধ করা মুস্তাহাব। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণিত এক হাদিসে আছে, মুমিনের আত্মা তার ঋণের কারণে ঝুলন্ত অবস্থায় থাকে, যতক্ষণ না সেই ঋণ শোধ করা হয়।_তিরমিজি
মুমূর্ষু ব্যক্তির জন্য করণীয় হলো, তার কাছে ঋণজনিত কোনো হক অনাদায়ী থাকলে তা তার ত্যাজ্য সম্পত্তি থেকে পরিশোধের জন্য ওসিয়ত করা। ইসলাম মৃতের পরিত্যক্ত সম্পত্তির ওপর উত্তরাধিকারদের যে অধিকার নির্ধারণ করে দিয়েছে, সেটা অবশ্যই মৃত ব্যক্তির যদি কোনো অনাদায়ী দেনা-পাওনা থাকে, তা পরিশোধ করার পর প্রাপ্য হবেন। এ ব্যাপারে সূরা নিসার ১১ নং আয়াতে বলা হয়েছে, 'এসবই মৃত ব্যক্তি যে ওসিয়ত করে গেছেন, তা দেওয়ার ও ঋণ পরিশোধ করার পর।' ওসিয়তের বিষয়টি ঋণের আগে উল্লেখ করার কারণ হচ্ছে এই যে, প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য ঋণ রেখে মারা যাওয়া কোনো জরুরি বিষয় নয়। কিন্তু মৃত্যুর পূর্বে ওসিয়ত করা তার জন্য একান্ত জরুরি। তবে বিধানের গুরুত্বের দিক দিয়ে সমগ্র মুসলিম উম্মাহ এ ব্যাপারে একমত যে, ঋণের স্থান ওসিয়তের চাইতে অগ্রবর্তী। অর্থাৎ কোনো ব্যক্তি যদি ঋণ রেখে মারা যায়, তাহলে সর্বপ্রথম তার পরিত্যক্ত সম্পত্তি থেকে তা আদায় করা হবে। তারপর ওসিয়ত পূর্ণ করা হবে এবং সবশেষে সম্পদ বণ্টন করা হবে।
ঋণ যেহেতু অন্যের হক, তাই পরকালীন মুক্তির জন্য এটা পরিশোধ করা অত্যাবশ্যক এবং এ ঋণ পরিশোধ করা এতই গুরুত্বপূর্ণ যে, তা ওসিয়তের পূর্বে পরিশোধের কথা বলা হয়েছে। হাদিসে এসেছে, 'হজরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত নবী করিম (সা.) ওসিয়তের পূর্বে ঋণ পরিশোধ করার নির্দেশ দিয়েছেন, অথচ তোমরা আয়াতে ঋণের পূর্বে ওসিয়তের কথা পড়ে থাক।'_তিরমিজি
যদি ঋণ সম্পত্তির সমপরিমাণ কিংবা তার বেশি হয়, তবে কেউ ওয়ারিশি স্বত্ব পাবে না এবং কোনো ওসিয়ত কার্যকর হবে না। কেবল ঋণ পরিশোধের পর এক-তৃতীয়াংশ সম্পত্তিতে ওসিয়ত কার্যকর করে অবশিষ্ট সম্পত্তি শরিয়তসম্মত ওয়ারিশদের মধ্যে বণ্টন করতে হবে।
সাময়িক প্রয়োজন মেটাতে কিংবা বিপদে পড়ে যে ঋণ গ্রহণ করা হয়, তা জীবদ্দশাতেই পরিশোধের উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। এমনকি অর্থ-সম্পদ আল্লাহর রাস্তায় দান করার চেয়েও ঋণ পরিশোধের ব্যাপারে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। হাদিসে আছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হজরত রাসূল (সা.) বলেছেন, 'আমার কাছে যদি উহুদ পাহাড় পরিমাণ সোনা হয়ে যায়, তাহলে আমার জন্য এটা খুবই আনন্দের বিষয় হবে যে, তিন রাত অতিক্রান্ত হওয়ার পূর্বেই আমি এটা আল্লাহর রাহে খরচ করে ফেলব, আর এর কিছুই আমার কাছে অবশিষ্ট থাকবে না। হ্যাঁ, এ পরিমাণ রেখে দিতে পারি, যার দ্বারা ঋণ পরিশোধ করা যায়।'_বুখারি
raficptu@gmail.com
 

No comments

Powered by Blogger.