বাসভবনে চিকিৎসক খুন-চিকিৎসকদের কর্মবিরতি কর্মসূচি
রাজধানীর বক্ষব্যাধি হাসপাতালের সরকারি কোয়ার্টারে নারায়ণ চন্দ্র দত্ত ওরফে নিতাই (৪৮) নামের একজন চিকিৎসক খুন হয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার ভোররাতে দুর্বৃত্তরা জানালার গ্রিল কেটে বাসার ভেতরে ঢুকে তাঁকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে। নারায়ণ চন্দ্র দত্ত জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ছিলেন।
এ ছাড়া তিনি বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষদের সদস্য, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক ক্রীড়া সম্পাদক ও ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ছিলেন। পরিবারের দাবি, বক্ষব্যাধি হাসপাতালে সর্বশেষ তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী নিয়োগ নিয়ে হাসপাতালের কিছু চিকিৎসকের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চাপা ক্ষোভ থেকে এ হত্যাকাণ্ড ঘটতে পারে বলে তাদের ধারণা। পুলিশের ধারণা, দুর্বৃত্তরা ডাকাতির উদ্দেশ্যে বাসায় ঢুকে বাধা পেয়ে চিকিৎসক নিতাইকে হত্যা করে।
গতকাল সকালে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি ডা. আ ফ ম রুহুল হক ও স্বাস্থ্য উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী মরদেহ দেখতে বক্ষব্যাধি হাসপাতালে যান। এ সময় তাঁরা শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে গতকাল সকালে বক্ষব্যাধি হাসপাতালের সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হয়। স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) ও ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) ঘটনার নিন্দা ও হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবি জনিয়ে পৃথক বিবৃতি দেয়। এ ছাড়া বিকেলে বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) ও স্বাচিপের উদ্যোগে জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে আগামী শনিবার ও রবিবার সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত সারা দেশে চিকিৎসকদের কর্মবিরতি পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়। এ ছাড়া রবিবার বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় এক সমাবেশে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এ ঘটনায় গতকাল সকালে পুলিশ, র্যাব ও ডিবির গোয়েন্দা কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তাঁরা ঘটনাস্থল থেকে আলামত জব্দ করেছেন। পারিবারিক সূত্র জানায়, নারায়ণ চন্দ্র দত্তের গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের বাঁশখালী থার ইজ্জতপুরে। তাঁর বাবার নাম তড়িৎকান্তি দত্ত। চার ভাইবোনের মধ্যে তিনি ছিলেন বড়।
খবর পেয়ে দুপুর ১টার দিকে চট্টগ্রাম থেকে নিহত ডা. নিতাইয়ের বাবা তড়িৎ দত্ত, স্ত্রী লাকি দত্তসহ স্বজনরা ঢাকায় ছুটে আসেন। লাকি দত্তসহ পরিবারের লোকজনের দাবি, নারায়ণ চন্দ্র দত্তকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। বক্ষব্যাধি হাসপাতালে চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী নিয়োগ নিয়ে হাসপাতালের দুটি গ্রুপের মধ্যে বিরোধ চলছিল। একটি গ্রুপের নেতৃত্বে ছিলেন নারায়ণ চন্দ্র। এ নিয়ে প্রায়ই মোবাইল ফোনে তাঁকে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিরা ক্ষতি করার হুমকি দিত। এ অবস্থার মধ্যেই গত মাসে ৫৫ জনের নিয়োগ দেওয়া হয়। এর মধ্যে নারায়ণ চন্দ্রের এক নিকটাত্মীয় ও তাঁর স্ত্রীও নিয়োগ পান।
প্রাথমিক তদন্তের পর বনানী থানার ওসি ভূঁইয়া মাহবুব হাসান কালের কণ্ঠকে বলেন, নারায়ণ চন্দ্র সপরিবারে হাসপাতালের সরকারি কোয়ার্টারে থাকতেন। গতকাল ভোররাতে দুর্বৃত্তরা দ্বিতীয় তলার জানালার গ্রিল কেটে তাঁর বাসায় ঢোকে। এ সময় তিনি জেগে উঠলে দুর্বৃত্তরা তাঁর বুকে ও ঘাড়ে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। আহত অবস্থায় ভোর সোয়া ৪টার দিকে তাঁকে বক্ষব্যাধি হাসপতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় ইউসুফ নামে হাসপাতালের একজন কোয়ার্টার মাস্টারসহ চারজনকে সন্দেহজনকভাবে আটক করা হয়েছে। এ ছাড়া বাসার ভেতর থেকে একটি চাকু, একটি চাপাতি ও দুটি গ্রিল কাটার যন্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। বাসার মালামাল লুট করতে এসে দুর্বৃত্তরা বাধা পেয়ে তাঁকে হত্যা করতে পারে বলে ওসি ধারণা প্রকাশ করেন।
যেভাবে হত্যা করা হয় : পুলিশ ও পারিবারিক সূত্র মতে, নারায়ণ চন্দ্র দত্ত স্ত্রী লাকি চৌধুরী দত্ত (চিকিৎসক), মা মঞ্জু রানী দত্ত ও এক গৃহপরিচারিকাকে নিয়ে দুটি ফ্ল্যাট নিয়ে থাকতেন। ঈদের আগে স্ত্রী লাকি দত্ত গৃহপরিচারিকাকে সঙ্গে নিয়ে চট্টগ্রামের গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে যান। নারায়ণ চন্দ্র ও তাঁর মা বাসায় ছিলেন। বুধবার রাতে নারায়ণ চন্দ্র দ্বিতীয় তলায় নিজ কক্ষে ও তাঁর মা নিচতলার একটি কক্ষে ঘুমিয়ে ছিলেন। রাত ৩টার দিকে ভবনের পেছনের সানসেট দিয়ে দ্বিতীয় তলার ফ্ল্যাটের ওপরে ওঠে দুর্বৃত্তরা। এরপর জানালার লোহার রড কেটে প্রথমে ড্রয়িং রুমে ঢোকার পর তারা চিকিৎসককে ছুরি মেরে বাসার মালামাল লুট করে।
নিহত চিকিৎসকের মা মঞ্জু রানী দত্ত বলেন, রাত ৩টার দিকে হঠাৎ ঘুম ভেঙে তিনি ছেলের গোঙানোর শব্দ শুনতে পান। এরপর সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠে দরজায় টোকা দিয়ে চিৎকার করে ছেলেকে ডাকতে থাকেন। প্রায় আধা ঘণ্টা পর ছেলে দরজা খুললে তাঁর বুকে রক্ত দেখতে পান তিনি। ছেলেকে জড়িয়ে ধরে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে এসে আশপাশের লোকজনকে ডাকতে থাকেন। নৈশ প্রহরীসহ অন্যরা এগিয়ে এসে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। তিনি দাবি করেন, তাঁর ছেলের কক্ষের আলমারিতে ৪০ ভরি স্বর্ণালংকার ও নগদ পাঁচ লাখ টাকা ছিল। সেগুলো লুট করা হয়েছে।
দারোয়ান আব্দুর রউফ বলেন, 'রাতে আমি বাসার সামনে ডিউটি করছিলাম। স্যারকে কে বা কারা হত্যা করেছে, বুঝতে পারছি না।' রউফ জানান, ভোরের দিকে তিনি চিকিৎসকের মায়ের চিৎকার শুনতে পান। এরপর গেট থেকে বাসার ভেতরে গিয়ে তাঁকে রক্তাক্ত অবস্থায় পেয়ে হাসপাতালে নিয়ে যান। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পেছন দিয়ে কেউ ওই বাসায় ঢুকেছিল কি না তা তাঁর জানা নেই।
ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে ডা. নারায়ণ চন্দ্র দত্তের কোয়ার্টার (ডাব্লিউ-২)। এই কোয়ার্টারের দক্ষিণ পাশে ডা. নারায়ণ চন্দ্র দত্ত ও উত্তর পাশে ডা. আনোয়ার থাকতেন। ডুপ্লেক্স ওই বাসার পেছনে একটি বড় প্রাচীর। এর ঠিক পেছনেই ঢাকা মেডিক্যালের একটি কোয়ার্টার, যা এখনো বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, যে কক্ষে নারায়ণ চন্দ্র ঘুমিয়ে ছিলেন, তার মেঝেতে ছোপ ছোপ রক্ত। মশারি ও খাটের চাদরেও রক্তের দাগ। পাশের কক্ষে জানালার তিনটি রড বাঁকা করা। জানালার অদূরেই দেখা যায় একটি প্রাচীর। এ ছাড়া বাসায় ওয়ার্ডরোব দেখা যায় খোলা। সামনে কাপড় ও আসবাবপত্র ছড়ানো-ছিটানো। একটি আলমারিরও তালা ভাঙা।
গতকাল সকাল সাড়ে ১১টার দিকে হাসপাতালের জাতীয় অ্যাজমা সেন্টারের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করা হয়। এতে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. মাহমুদ হাসান, মহাসচিব অধ্যাপক ডা. শরফুদ্দিন আহমেদ, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির মহাসচিব অধ্যাপক ডা. ইকবাল আর্সলানসহ অনেকে। বিক্ষোভ কর্মসূচিতে আগামী তিন দিনের শোক ঘোষণা এবং জরুরি চিকিৎসাসেবা ছাড়া সব চিকিৎসাসেবা বন্ধ রাখার কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
গতকাল সকালে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি ডা. আ ফ ম রুহুল হক ও স্বাস্থ্য উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী মরদেহ দেখতে বক্ষব্যাধি হাসপাতালে যান। এ সময় তাঁরা শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে গতকাল সকালে বক্ষব্যাধি হাসপাতালের সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হয়। স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) ও ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) ঘটনার নিন্দা ও হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবি জনিয়ে পৃথক বিবৃতি দেয়। এ ছাড়া বিকেলে বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) ও স্বাচিপের উদ্যোগে জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে আগামী শনিবার ও রবিবার সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত সারা দেশে চিকিৎসকদের কর্মবিরতি পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়। এ ছাড়া রবিবার বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় এক সমাবেশে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এ ঘটনায় গতকাল সকালে পুলিশ, র্যাব ও ডিবির গোয়েন্দা কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তাঁরা ঘটনাস্থল থেকে আলামত জব্দ করেছেন। পারিবারিক সূত্র জানায়, নারায়ণ চন্দ্র দত্তের গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের বাঁশখালী থার ইজ্জতপুরে। তাঁর বাবার নাম তড়িৎকান্তি দত্ত। চার ভাইবোনের মধ্যে তিনি ছিলেন বড়।
খবর পেয়ে দুপুর ১টার দিকে চট্টগ্রাম থেকে নিহত ডা. নিতাইয়ের বাবা তড়িৎ দত্ত, স্ত্রী লাকি দত্তসহ স্বজনরা ঢাকায় ছুটে আসেন। লাকি দত্তসহ পরিবারের লোকজনের দাবি, নারায়ণ চন্দ্র দত্তকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। বক্ষব্যাধি হাসপাতালে চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী নিয়োগ নিয়ে হাসপাতালের দুটি গ্রুপের মধ্যে বিরোধ চলছিল। একটি গ্রুপের নেতৃত্বে ছিলেন নারায়ণ চন্দ্র। এ নিয়ে প্রায়ই মোবাইল ফোনে তাঁকে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিরা ক্ষতি করার হুমকি দিত। এ অবস্থার মধ্যেই গত মাসে ৫৫ জনের নিয়োগ দেওয়া হয়। এর মধ্যে নারায়ণ চন্দ্রের এক নিকটাত্মীয় ও তাঁর স্ত্রীও নিয়োগ পান।
প্রাথমিক তদন্তের পর বনানী থানার ওসি ভূঁইয়া মাহবুব হাসান কালের কণ্ঠকে বলেন, নারায়ণ চন্দ্র সপরিবারে হাসপাতালের সরকারি কোয়ার্টারে থাকতেন। গতকাল ভোররাতে দুর্বৃত্তরা দ্বিতীয় তলার জানালার গ্রিল কেটে তাঁর বাসায় ঢোকে। এ সময় তিনি জেগে উঠলে দুর্বৃত্তরা তাঁর বুকে ও ঘাড়ে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। আহত অবস্থায় ভোর সোয়া ৪টার দিকে তাঁকে বক্ষব্যাধি হাসপতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় ইউসুফ নামে হাসপাতালের একজন কোয়ার্টার মাস্টারসহ চারজনকে সন্দেহজনকভাবে আটক করা হয়েছে। এ ছাড়া বাসার ভেতর থেকে একটি চাকু, একটি চাপাতি ও দুটি গ্রিল কাটার যন্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। বাসার মালামাল লুট করতে এসে দুর্বৃত্তরা বাধা পেয়ে তাঁকে হত্যা করতে পারে বলে ওসি ধারণা প্রকাশ করেন।
যেভাবে হত্যা করা হয় : পুলিশ ও পারিবারিক সূত্র মতে, নারায়ণ চন্দ্র দত্ত স্ত্রী লাকি চৌধুরী দত্ত (চিকিৎসক), মা মঞ্জু রানী দত্ত ও এক গৃহপরিচারিকাকে নিয়ে দুটি ফ্ল্যাট নিয়ে থাকতেন। ঈদের আগে স্ত্রী লাকি দত্ত গৃহপরিচারিকাকে সঙ্গে নিয়ে চট্টগ্রামের গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে যান। নারায়ণ চন্দ্র ও তাঁর মা বাসায় ছিলেন। বুধবার রাতে নারায়ণ চন্দ্র দ্বিতীয় তলায় নিজ কক্ষে ও তাঁর মা নিচতলার একটি কক্ষে ঘুমিয়ে ছিলেন। রাত ৩টার দিকে ভবনের পেছনের সানসেট দিয়ে দ্বিতীয় তলার ফ্ল্যাটের ওপরে ওঠে দুর্বৃত্তরা। এরপর জানালার লোহার রড কেটে প্রথমে ড্রয়িং রুমে ঢোকার পর তারা চিকিৎসককে ছুরি মেরে বাসার মালামাল লুট করে।
নিহত চিকিৎসকের মা মঞ্জু রানী দত্ত বলেন, রাত ৩টার দিকে হঠাৎ ঘুম ভেঙে তিনি ছেলের গোঙানোর শব্দ শুনতে পান। এরপর সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠে দরজায় টোকা দিয়ে চিৎকার করে ছেলেকে ডাকতে থাকেন। প্রায় আধা ঘণ্টা পর ছেলে দরজা খুললে তাঁর বুকে রক্ত দেখতে পান তিনি। ছেলেকে জড়িয়ে ধরে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে এসে আশপাশের লোকজনকে ডাকতে থাকেন। নৈশ প্রহরীসহ অন্যরা এগিয়ে এসে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। তিনি দাবি করেন, তাঁর ছেলের কক্ষের আলমারিতে ৪০ ভরি স্বর্ণালংকার ও নগদ পাঁচ লাখ টাকা ছিল। সেগুলো লুট করা হয়েছে।
দারোয়ান আব্দুর রউফ বলেন, 'রাতে আমি বাসার সামনে ডিউটি করছিলাম। স্যারকে কে বা কারা হত্যা করেছে, বুঝতে পারছি না।' রউফ জানান, ভোরের দিকে তিনি চিকিৎসকের মায়ের চিৎকার শুনতে পান। এরপর গেট থেকে বাসার ভেতরে গিয়ে তাঁকে রক্তাক্ত অবস্থায় পেয়ে হাসপাতালে নিয়ে যান। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পেছন দিয়ে কেউ ওই বাসায় ঢুকেছিল কি না তা তাঁর জানা নেই।
ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে ডা. নারায়ণ চন্দ্র দত্তের কোয়ার্টার (ডাব্লিউ-২)। এই কোয়ার্টারের দক্ষিণ পাশে ডা. নারায়ণ চন্দ্র দত্ত ও উত্তর পাশে ডা. আনোয়ার থাকতেন। ডুপ্লেক্স ওই বাসার পেছনে একটি বড় প্রাচীর। এর ঠিক পেছনেই ঢাকা মেডিক্যালের একটি কোয়ার্টার, যা এখনো বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, যে কক্ষে নারায়ণ চন্দ্র ঘুমিয়ে ছিলেন, তার মেঝেতে ছোপ ছোপ রক্ত। মশারি ও খাটের চাদরেও রক্তের দাগ। পাশের কক্ষে জানালার তিনটি রড বাঁকা করা। জানালার অদূরেই দেখা যায় একটি প্রাচীর। এ ছাড়া বাসায় ওয়ার্ডরোব দেখা যায় খোলা। সামনে কাপড় ও আসবাবপত্র ছড়ানো-ছিটানো। একটি আলমারিরও তালা ভাঙা।
গতকাল সকাল সাড়ে ১১টার দিকে হাসপাতালের জাতীয় অ্যাজমা সেন্টারের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করা হয়। এতে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. মাহমুদ হাসান, মহাসচিব অধ্যাপক ডা. শরফুদ্দিন আহমেদ, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির মহাসচিব অধ্যাপক ডা. ইকবাল আর্সলানসহ অনেকে। বিক্ষোভ কর্মসূচিতে আগামী তিন দিনের শোক ঘোষণা এবং জরুরি চিকিৎসাসেবা ছাড়া সব চিকিৎসাসেবা বন্ধ রাখার কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
No comments