পুলিশি অ্যাকশন
যৌন নিপীড়কদের বিচার দাবিতে ডিএমপি কার্যালয় ঘেরাওকালে ছাত্রদের ওপর পুলিশের বেধড়ক লাঠিচার্জ |
পহেলা
বৈশাখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যৌন হয়রানির ঘটনায় জড়িতদের
গ্রেপ্তার করতে না পারার প্রতিবাদ কর্মসূচিতে লাঠিচার্জ করেছে পুলিশ।
এতে পুলিশসহ অন্তত ৩৫ জন আহত হয়েছেন। আহতদের ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে
ভর্তি করা হয়েছে। পুলিশ দাবি করেছে আন্দোলনকারীরা আগে হামলা করায় তারা
আত্মরক্ষার্থে লাঠিচার্জ করা হয়েছে। হামলার ঘটনায় আজ বিক্ষোভ কর্মসূচি এবং
আগামীকাল সারা দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র ধর্মঘট ডেকেছে ছাত্র ইউনিয়ন।
সূত্র জানায়, গতকাল দুপুর ১২টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রগতিশীল ছাত্রজোট ও সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী ছাত্রজোট নামে দুটি ব্যানারে প্রায় দুই শতাধিক নেতাকমী পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ডিএমপি কার্যালয় ঘোরাও করতে যান। মিছিলটি মৎস্য ভবনের সামনে গেলে পুলিশ বাধা দেয়ার চেষ্টা করে। প্রতিবাদকারীরা বাধা উপেক্ষা করে এগিয়ে যেতে থাকেন। মিছিলের সামনে ছিল বিপুল সংখ্যক পুলিশ। পেছনেও ছিল পুলিশের ভ্যান। নেতাকর্মীরা মিছিলসহকারে ডিএমপি কার্যালয়ের দিকে যেতে থাকেন। শাহবাগ থানা পুলিশের কাছে খবর পেয়ে ডিএমপি কার্যালয়ের সামনে তিন প্লাটুন দাঙ্গা পুলিশ মোতায়েন করা হয়। সামনে বসানো হয় কাঁটাতারের ব্যারিকেড। আশপাশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোর ছিল আগে থেকেই। প্রস্তুত ছিল পুলিশের রায়টকার ও জলকামান। মিছিলটি দুপুর পৌনে ১টার দিকে ডিএমপি কার্যালয়ের কাছে অফিসার্স কোয়ার্টারের সামনে গেলে বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা ওই ব্যারিকেডটি সরানোর চেষ্টা করেন। এতে পুলিশ বাধা দেয়। পরে ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি হাসান তারেক বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীদের সংযত করেন এবং তিনি সব নেতাকর্মীকে রাস্তায় বসে পড়তে বলেন। তারা বসে গিয়ে যৌন নিপীড়কদের শাস্তি দাবি জানিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। এ সময় সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সভাপতি হাসান তারেক বলেন, বাঙালি জাতির প্রাণের উৎসবে শুধু যৌন নিপীড়ন করা হয়নি, সারা দেশের নারী সমাজকে অপমান করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ওই ঘটনায় কাউকে চিহ্নিত করতে এবং গ্রেপ্তার করতে না পারা সম্পূর্ণ পুলিশের ব্যর্থতা। বরং পুলিশের কর্তা ব্যক্তিরা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বক্তব্য দিয়ে ঘটনাকে ভিন্নখাতে নেয়ার চেষ্টা করছেন। তিনি দাবি করেন, এতবড় ঘটনা ঘটে গেলে পুলিশ এখন পর্যন্ত অপরাধীকে গ্রেপ্তারতো দূরের কথা চিহ্নিতও করতে পারেনি। এটি অত্যন্ত লজ্জার কথা। পুলিশের কাজ কি? তাদের কাজ হচ্ছে মানুষকে নিরাপত্তা দেয়া। কিন্তু, তারা এটি করতে ব্যর্থ হয়েছে। এখন প্রতিবাদী ছাত্র জনতাকে রাস্তায় নেমে তীব্র প্রতিবাদ করা ছাড়া উপাই নেই। তার বক্তব্য শেষ হতে না হতেই সেখানে দায়িত্বরত পুলিশের সদস্যরা ছাত্রদের রাস্তা থেকে উঠে যেতে বলেন। তারা রাস্তা থেকে উঠে যেতে রাজি হননি। ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি হাসান তারেক কর্তব্যরত পুলিশকে বলেন যে, যৌন নিপীড়কদের কখন গ্রেপ্তার করা হবে তার সুনির্দিষ্ট সময় পুলিশ জানালে তবেই তারা রাস্তা থেকে উঠবেন। এই কথা বললে পুলিশের কয়েকজন সদস্য তাদের গালিগালাজ শুরু করেন। একপর্যায়ে দাঙ্গা পুলিশের এক সদস্য ছাত্র ইউনিয়নের এক সদস্যকে পিঠে লাথি মারেন। বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা এর প্রতিবাদ করলে তাদের সঙ্গে পুলিশের হাতাহাতি ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। এ সময় পুলিশের লাঠিচার্জে অনেক নেতাকর্মী মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তাদের রাস্তায় ফেলেই পেটায় পুলিশ। এ সময় আন্দোলকারীরা ইটপাটকেল ও রাস্তার পাশে রাখা ফুলের টব ভেঙে পুলিশের দিকে নিক্ষেপ করে। তাদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ টিয়ার শেল ও জল কামান থেকে পানি ছোড়ে। এতে নেতাকর্মীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। পুলিশের লাঠিচার্জের কারণে তারা ডিএমপির কার্যালয়ের সামনে অফিসার্স ক্লাবের দিকে চলে যায়। পুলিশের লাঠিচার্জে রেহাই পাননি নারী কর্মীরাও। পুলিশের গাড়ি লক্ষ্য করে ঢিল নিক্ষেপকারী এক নারী কর্মীকে একপর্যায়ে একজন পুলিশ সদস্য ধাওয়া দিয়ে ধরে ফেলেন। একপর্যায়ে তার চুলের মুঠি ধরে টেনে নিতে দেখা যায়। ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে ওই কর্মী মাটিতে পড়ে যান। পরে দুই পুলিশ সদস্য তার দুই হাত ধরে টেনে নিয়ে যান।
পুলিশের ধাওয়ায় বাম ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা কাকরাইল মসজিদের সামনের দিকে চলে যান। পুলিশের সঙ্গে বিক্ষিপ্ত ছাত্রদের সঙ্গে সংঘর্ষের কারণে ওই এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পথচারীরা এদিকে সেদিক ছোটাছুটি শুরু করেন। আশপাশের কয়েকটি স্কুলের প্রধান গেট বন্ধ করে দেয়া হয়। সংঘর্ষের কারণে মিন্টু রোড, বেইলি রোড, হেয়ার রোড, মগবাজার ও কাকরাইলের রাস্তায় যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে ওই এলাকায় প্রচণ্ড যানজট দেখা দেয়। ভোগান্তিতে পড়েন আশপাশের পথচারীরা। পরিস্থিতি শান্ত হলে ওই এলাকার রাস্তা আবার উন্মুক্ত করে দেয় পুলিশ। ঘটনার সময় ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া কার্যালয়ে ছিলেন। তিনি বাইরের পরিস্থিতি কর্তব্যরত পুলিশের মাধ্যমে খোঁজ খবর রাখছিলেন।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিতে যাওয়া আহতরা হলেন- ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সভাপতি হাসান তারেক, সহসভাপতি মারুফ বিল্লাহ তন্ময়, আবু তাসেক সোহেল, সাংগঠনিক সম্পাদক জিএম জিলানী শুভ, সংগঠনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি লিটন নন্দী, সদস্য হাসিব আশিক, রাগিব নাইম, ঢাকা মহনগর শাখার সভাপতি সুমন সেনগুপ্ত, ঢাকা জেলার সভাপতি তারিকুল রাসেল, সংগঠনের জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি তন্ময় ধর, সদস্য সাদ আশরাফ, মিরপুর শাখা ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি রাকিবুজ্জামান সুজন, কবি নজরুল কলেজ শাখার সভাপতি দীপক শীল ঢাকা জেলার এজিএস রাকীব আল রুদ্র, কেন্দ্রীয় নেতা অমিত শাহরিয়ার, ইসমত জাহানসহ আরও অনেকে।
গুরুতর আহত রাজীব আল রুদ্র, রাজীব দাস, তন্ময় ধর, দীপক শীল, ইসমত জাহান, রাকিবুজ্জমানকে গ্রিনরোডের হেলথ অ্যান্ড হোপস বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনার পর ঢামেকে চিকিৎসা নিতে আসা নেতাকর্মীদের দাবি পুলিশের এই হামলায় তাদের অন্তত ৩০ থেকে ৩৫ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। এদের অনেকের অবস্থা গুরুতর। ৬ জনকে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। কয়েকজন প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। এ ছাড়া ৬ জনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির শিক্ষা ও গবেষণা সম্পাদক সিয়াম সারওয়ার জামিল বলেন, পুলিশের অতর্কিত হামলা ও লাঠিচার্জে আমাদের ৩৫ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। এর মধ্যে ১০ জনের অবস্থা গুরুতর। ৬ জনের সিটিস্ক্যানসহ বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে হয়েছে। ৬ জনকে ধানমন্ডির গ্রিনরোডের হেলথ অ্যান্ড হোপস বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ৬ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তারের পাশাপাশি পুলিশের লাঠিপেটা ও লাঞ্ছনা থেকে আমাদের নারী নেতাকর্মীরাও রেহায় পায়নি।
দুপুরে ঢামেকের জরুরি বিভাগের সামনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন, ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সভাপতি হাসান তারেক। তিনি বলেন, পুলিশের হামলায় আমাদের ২৫ থেকে ৩০ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। এর মধ্যে অনেকের অবস্থা গুরুতর। পুলিশ অমানবিকভাবে আমাদের ওপর হামলা করেছে। কিন্তু আমরা আমাদের দাবি থেকে সরে আসব না। আমরা রাজপথে আছি। নারী লাঞ্ছনাকারীদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নেয়া পর্যন্ত রাজপথেই লড়াই সংগ্রাম চালিয়ে যাব। ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি লিটন নন্দী বলেন, পুলিশ যত অত্যাচারই করুক আমৃত্যু আমাদের এ লড়াই চলতে থাকবে। নারী লাঞ্ছনকারীদের বিচার ও শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত আমরা থামব না।
এদিকে বিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে এক সংবাদ সম্মেলনে ইউনিয়ন পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- আজ সারা দেশে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ এবং আগামীকাল দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র ধর্মঘট।
সূত্র জানায়, গতকাল দুপুর ১২টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রগতিশীল ছাত্রজোট ও সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী ছাত্রজোট নামে দুটি ব্যানারে প্রায় দুই শতাধিক নেতাকমী পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ডিএমপি কার্যালয় ঘোরাও করতে যান। মিছিলটি মৎস্য ভবনের সামনে গেলে পুলিশ বাধা দেয়ার চেষ্টা করে। প্রতিবাদকারীরা বাধা উপেক্ষা করে এগিয়ে যেতে থাকেন। মিছিলের সামনে ছিল বিপুল সংখ্যক পুলিশ। পেছনেও ছিল পুলিশের ভ্যান। নেতাকর্মীরা মিছিলসহকারে ডিএমপি কার্যালয়ের দিকে যেতে থাকেন। শাহবাগ থানা পুলিশের কাছে খবর পেয়ে ডিএমপি কার্যালয়ের সামনে তিন প্লাটুন দাঙ্গা পুলিশ মোতায়েন করা হয়। সামনে বসানো হয় কাঁটাতারের ব্যারিকেড। আশপাশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোর ছিল আগে থেকেই। প্রস্তুত ছিল পুলিশের রায়টকার ও জলকামান। মিছিলটি দুপুর পৌনে ১টার দিকে ডিএমপি কার্যালয়ের কাছে অফিসার্স কোয়ার্টারের সামনে গেলে বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা ওই ব্যারিকেডটি সরানোর চেষ্টা করেন। এতে পুলিশ বাধা দেয়। পরে ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি হাসান তারেক বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীদের সংযত করেন এবং তিনি সব নেতাকর্মীকে রাস্তায় বসে পড়তে বলেন। তারা বসে গিয়ে যৌন নিপীড়কদের শাস্তি দাবি জানিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। এ সময় সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সভাপতি হাসান তারেক বলেন, বাঙালি জাতির প্রাণের উৎসবে শুধু যৌন নিপীড়ন করা হয়নি, সারা দেশের নারী সমাজকে অপমান করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ওই ঘটনায় কাউকে চিহ্নিত করতে এবং গ্রেপ্তার করতে না পারা সম্পূর্ণ পুলিশের ব্যর্থতা। বরং পুলিশের কর্তা ব্যক্তিরা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বক্তব্য দিয়ে ঘটনাকে ভিন্নখাতে নেয়ার চেষ্টা করছেন। তিনি দাবি করেন, এতবড় ঘটনা ঘটে গেলে পুলিশ এখন পর্যন্ত অপরাধীকে গ্রেপ্তারতো দূরের কথা চিহ্নিতও করতে পারেনি। এটি অত্যন্ত লজ্জার কথা। পুলিশের কাজ কি? তাদের কাজ হচ্ছে মানুষকে নিরাপত্তা দেয়া। কিন্তু, তারা এটি করতে ব্যর্থ হয়েছে। এখন প্রতিবাদী ছাত্র জনতাকে রাস্তায় নেমে তীব্র প্রতিবাদ করা ছাড়া উপাই নেই। তার বক্তব্য শেষ হতে না হতেই সেখানে দায়িত্বরত পুলিশের সদস্যরা ছাত্রদের রাস্তা থেকে উঠে যেতে বলেন। তারা রাস্তা থেকে উঠে যেতে রাজি হননি। ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি হাসান তারেক কর্তব্যরত পুলিশকে বলেন যে, যৌন নিপীড়কদের কখন গ্রেপ্তার করা হবে তার সুনির্দিষ্ট সময় পুলিশ জানালে তবেই তারা রাস্তা থেকে উঠবেন। এই কথা বললে পুলিশের কয়েকজন সদস্য তাদের গালিগালাজ শুরু করেন। একপর্যায়ে দাঙ্গা পুলিশের এক সদস্য ছাত্র ইউনিয়নের এক সদস্যকে পিঠে লাথি মারেন। বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা এর প্রতিবাদ করলে তাদের সঙ্গে পুলিশের হাতাহাতি ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। এ সময় পুলিশের লাঠিচার্জে অনেক নেতাকর্মী মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তাদের রাস্তায় ফেলেই পেটায় পুলিশ। এ সময় আন্দোলকারীরা ইটপাটকেল ও রাস্তার পাশে রাখা ফুলের টব ভেঙে পুলিশের দিকে নিক্ষেপ করে। তাদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ টিয়ার শেল ও জল কামান থেকে পানি ছোড়ে। এতে নেতাকর্মীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। পুলিশের লাঠিচার্জের কারণে তারা ডিএমপির কার্যালয়ের সামনে অফিসার্স ক্লাবের দিকে চলে যায়। পুলিশের লাঠিচার্জে রেহাই পাননি নারী কর্মীরাও। পুলিশের গাড়ি লক্ষ্য করে ঢিল নিক্ষেপকারী এক নারী কর্মীকে একপর্যায়ে একজন পুলিশ সদস্য ধাওয়া দিয়ে ধরে ফেলেন। একপর্যায়ে তার চুলের মুঠি ধরে টেনে নিতে দেখা যায়। ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে ওই কর্মী মাটিতে পড়ে যান। পরে দুই পুলিশ সদস্য তার দুই হাত ধরে টেনে নিয়ে যান।
পুলিশের ধাওয়ায় বাম ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা কাকরাইল মসজিদের সামনের দিকে চলে যান। পুলিশের সঙ্গে বিক্ষিপ্ত ছাত্রদের সঙ্গে সংঘর্ষের কারণে ওই এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পথচারীরা এদিকে সেদিক ছোটাছুটি শুরু করেন। আশপাশের কয়েকটি স্কুলের প্রধান গেট বন্ধ করে দেয়া হয়। সংঘর্ষের কারণে মিন্টু রোড, বেইলি রোড, হেয়ার রোড, মগবাজার ও কাকরাইলের রাস্তায় যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে ওই এলাকায় প্রচণ্ড যানজট দেখা দেয়। ভোগান্তিতে পড়েন আশপাশের পথচারীরা। পরিস্থিতি শান্ত হলে ওই এলাকার রাস্তা আবার উন্মুক্ত করে দেয় পুলিশ। ঘটনার সময় ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া কার্যালয়ে ছিলেন। তিনি বাইরের পরিস্থিতি কর্তব্যরত পুলিশের মাধ্যমে খোঁজ খবর রাখছিলেন।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিতে যাওয়া আহতরা হলেন- ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সভাপতি হাসান তারেক, সহসভাপতি মারুফ বিল্লাহ তন্ময়, আবু তাসেক সোহেল, সাংগঠনিক সম্পাদক জিএম জিলানী শুভ, সংগঠনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি লিটন নন্দী, সদস্য হাসিব আশিক, রাগিব নাইম, ঢাকা মহনগর শাখার সভাপতি সুমন সেনগুপ্ত, ঢাকা জেলার সভাপতি তারিকুল রাসেল, সংগঠনের জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি তন্ময় ধর, সদস্য সাদ আশরাফ, মিরপুর শাখা ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি রাকিবুজ্জামান সুজন, কবি নজরুল কলেজ শাখার সভাপতি দীপক শীল ঢাকা জেলার এজিএস রাকীব আল রুদ্র, কেন্দ্রীয় নেতা অমিত শাহরিয়ার, ইসমত জাহানসহ আরও অনেকে।
গুরুতর আহত রাজীব আল রুদ্র, রাজীব দাস, তন্ময় ধর, দীপক শীল, ইসমত জাহান, রাকিবুজ্জমানকে গ্রিনরোডের হেলথ অ্যান্ড হোপস বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনার পর ঢামেকে চিকিৎসা নিতে আসা নেতাকর্মীদের দাবি পুলিশের এই হামলায় তাদের অন্তত ৩০ থেকে ৩৫ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। এদের অনেকের অবস্থা গুরুতর। ৬ জনকে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। কয়েকজন প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। এ ছাড়া ৬ জনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির শিক্ষা ও গবেষণা সম্পাদক সিয়াম সারওয়ার জামিল বলেন, পুলিশের অতর্কিত হামলা ও লাঠিচার্জে আমাদের ৩৫ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। এর মধ্যে ১০ জনের অবস্থা গুরুতর। ৬ জনের সিটিস্ক্যানসহ বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে হয়েছে। ৬ জনকে ধানমন্ডির গ্রিনরোডের হেলথ অ্যান্ড হোপস বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ৬ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তারের পাশাপাশি পুলিশের লাঠিপেটা ও লাঞ্ছনা থেকে আমাদের নারী নেতাকর্মীরাও রেহায় পায়নি।
দুপুরে ঢামেকের জরুরি বিভাগের সামনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন, ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সভাপতি হাসান তারেক। তিনি বলেন, পুলিশের হামলায় আমাদের ২৫ থেকে ৩০ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। এর মধ্যে অনেকের অবস্থা গুরুতর। পুলিশ অমানবিকভাবে আমাদের ওপর হামলা করেছে। কিন্তু আমরা আমাদের দাবি থেকে সরে আসব না। আমরা রাজপথে আছি। নারী লাঞ্ছনাকারীদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নেয়া পর্যন্ত রাজপথেই লড়াই সংগ্রাম চালিয়ে যাব। ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি লিটন নন্দী বলেন, পুলিশ যত অত্যাচারই করুক আমৃত্যু আমাদের এ লড়াই চলতে থাকবে। নারী লাঞ্ছনকারীদের বিচার ও শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত আমরা থামব না।
এদিকে বিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে এক সংবাদ সম্মেলনে ইউনিয়ন পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- আজ সারা দেশে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ এবং আগামীকাল দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র ধর্মঘট।
No comments