দেশে পরিযায়ী পাখি বাড়ছে by ফারজানা হালিম
ভূতিহাঁস। টাঙ্গুয়ার হাওর থেকে গত জানুয়ারি মাসে তোলা ছবি l সীমান্ত দীপু |
দেশে
পরিযায়ী পাখির সংখ্যা বাড়ছে। তবে একসময়ে পরিযায়ী পাখির অন্যতম
আবাসস্থল বাইক্কার বিলে কমে গেছে। ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন অব কনজারভেশন ফর
নেচার (আইইউসিএন) ও বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের শুমারির প্রাথমিক তেথ্য এ চিত্র
পাওয়া গেছে।
আইইউসিএন ও বাংলাদেশ বার্ড ক্লাব চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত দেশের পাঁচটি স্থানে এই শুমারি করে। শুমারিতে ওই পাঁচ স্থানে ১ লাখ ১২ হাজার পরিযায়ী পাখি পাওয়া গেছে। শুমারিটি করা হয়েছে টাঙ্গুয়ার হাওর, দোমার চর, হাকালুকি হাওর, বাইক্কা বিল ও সোনাদিয়া দ্বীপে।
বিদেশ থেকে আসা পাখিকে বলা হয় পরিযায়ী পাখি। সুদূর সাইবেরিয়া ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে উষ্ণতার খোঁজে বেরিয়ে পড়া এই পাখিরা হাজার কিলোমিটার পেরিয়ে বাংলাদেশেও আসে।
পরিযায়ী পাখি শুমারির তত্ত্বাবধায়ক ইনাম আল হক গতকাল শুক্রবার মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, আজ শনিবার বিশ্বজুড়ে পরিযায়ী পাখি দিবস পালিত হবে। দিবসের মূল বক্তব্য হলো: পাখিবান্ধব জ্বালানি। বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সঞ্চালনে ব্যবহৃত তার, টারবাইন, সোলার প্যানেল, বায়ুচালিত বিদ্যুৎ উৎপাদন যন্ত্রে লেগে অনেক পাখি মারা যায়। তাই এমনভাবে এসব বসাতে হবে যাতে পাখির কোনো ক্ষতি না হয়। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে বিষ প্রয়োগ করে পাখি হত্যাও পরিযায়ী পাখির জন্য বড় হুমকি। এসব বিষয়ে খেয়াল রাখলে দেশে পরিযায়ী পাখির সংখ্যা বাড়বে।
আইইউসিএন ও বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের শুমারি অনুযায়ী, ২০১৩ সালে প্রায় ৮০ হাজার ও ২০১৪ সালে পরিযায়ী পাখির সংখ্যা ছিল প্রায় ৮৫ হাজার। তিন বছর ধরে পরিযায়ী পাখির সংখ্যা বাড়ছে। বিশেষ করে টাঙ্গুয়ার ও হাকালুকি হাওর এলাকায় পাখি আসা বেড়েছে। তবে ২০১০ সাল পর্যন্ত দেশে পরিযায়ী পাখির অন্যতম আবাসস্থল ছিল মৌলভীবাজারের বাইক্কার বিল। ২০১১ সালে ওই বিলে মাছ ধরার নামে জীববৈচিত্র্য ও পাখির আবাসস্থল ধ্বংস করা হয়। এ বছর বাইক্কার বিলে মাত্র ৪১৯টি পাখি দেখা গেছে।
মূলত হাওড় অঞ্চলে পরিযায়ী পাখির সমাগম হয় বেশি। এ ছাড়া উপকূলেও পরিযায়ী পাখির ভিড় হয়। শীতকালে আনাগোনা সবচেয়ে বেশি হলেও বছরের অন্য সময়েও এসে থাকে।
শুমারি অনুযায়ী, টাঙ্গুয়ার হাওরে বরাবরের মতো এ বছরেও পাখির সমাগম সবচেয়ে বেশি, মোট ৫২ হাজার ২৯৯টি। তবে প্রজাতির ভিন্নতা বেশি দেখা গেছে হাকালুকি হাওরে। ৬৮ প্রজাতির ২১ হাজার ৮০১টি পরিযায়ী পাখি আসে হাকালুকিতে। টাঙ্গুয়ার হাওরে দেখা গেছে ৪৩ প্রজাতির। এ ছাড়া দোমার চরে ২১ প্রজাতির ১২ হাজার ২৬৭টি এবং সোনাদিয়া দ্বীপে ৩৭ প্রজাতির ২ হাজার ৩২৩টি পাখি গণনা করা হয়েছে। বাইক্কার বিলে মাত্র ৪১৯টি পাখি এলেও প্রজাতি দেখা গেছে ৩০টি।
টাঙ্গুয়ার হাওর পরিযায়ী পাখির জন্য সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য স্থান। এই জলাশয়টিকে জাতিসংঘের রামসার কর্তৃপক্ষ বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ জীববৈচিত্র্যপূর্ণ জলাভূমি হিসেবে ২০০০ সালে স্বীকৃতি দিয়েছে। এর পর থেকে পরিযায়ী পাখির সংখ্যা বেড়েছে। ২০০২-২০০৫ সাল পর্যন্ত পরিযায়ী পাখির সংখ্যা ছিল ১ লাখ। টাঙ্গুয়ার হাওরে এ বছর সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে পাতি কুট পাখির। ওই হাওরে ১৭ হাজার ৬৮৭টি-ই ছিল পাতি কুট পাখি। পরিমাণের দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে লালঝুঁটি ভূতিহাঁস।
দোমার চরে পাখির সংখ্যার প্রায় অর্ধেকই ছোট ধুলজিরিয়া, সেখানে এই পাখি ৫ হাজার দেখা গেছে। বড় ধুলজিরিয়া, কালা লেজ জৌরালি প্রভৃতি পরিযায়ী পাখির সরব উপস্থিতি আছে সেখানে।
হাকালুকি হাওরে বেশি দেখা গেছে এশীয় শামুকখোল পাখি। এ ছাড়া আছে পিয়াং হাঁস, মরচে রং ভূতিহাঁস। তবে এগুলো বাংলাদেশে সুলভ পরিযায়ী পাখি। বাইক্কার বিলে দুর্লভ বন বাটান পরিযায়ী পাখির দেখা মেলে। এ ছাড়া নিয়মিত আসে পাতি সরালি, মরচে রং ভূতিহাঁস।
সোনাদিয়া দ্বীপের ৯২০টি ছোট ধুলজিরিয়া ও ২৫০টি বড় ধুলজিরিয়া পাখির দেখা মিলেছে। এ ছাড়া এখানে বিশ্বব্যাপী সংকটাপন্ন নয়টি চামচ ঠুঁটো বাটানেরও দেখা মিলেছে। দেখা পাওয়া গেছে বিশ্বজুড়ে বিপন্ন ছয়টি নর্ডম্যান সবুজ পা।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মোস্তফা ফিরোজের মতে, দেশে কয়েক বছর ধরেই পরিযায়ী পাখির ব্যাপারে জনসচেতনতা বেড়েছে। আগে এসব পাখি শিকার করে বিক্রি করা হতো। এখন তা কমেছে। এদের আবাসস্থলগুলো রক্ষা করা গেলে অনেক পাখিই এখানে থেকে যেত।
আইইউসিএন ও বাংলাদেশ বার্ড ক্লাব চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত দেশের পাঁচটি স্থানে এই শুমারি করে। শুমারিতে ওই পাঁচ স্থানে ১ লাখ ১২ হাজার পরিযায়ী পাখি পাওয়া গেছে। শুমারিটি করা হয়েছে টাঙ্গুয়ার হাওর, দোমার চর, হাকালুকি হাওর, বাইক্কা বিল ও সোনাদিয়া দ্বীপে।
বিদেশ থেকে আসা পাখিকে বলা হয় পরিযায়ী পাখি। সুদূর সাইবেরিয়া ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে উষ্ণতার খোঁজে বেরিয়ে পড়া এই পাখিরা হাজার কিলোমিটার পেরিয়ে বাংলাদেশেও আসে।
পরিযায়ী পাখি শুমারির তত্ত্বাবধায়ক ইনাম আল হক গতকাল শুক্রবার মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, আজ শনিবার বিশ্বজুড়ে পরিযায়ী পাখি দিবস পালিত হবে। দিবসের মূল বক্তব্য হলো: পাখিবান্ধব জ্বালানি। বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সঞ্চালনে ব্যবহৃত তার, টারবাইন, সোলার প্যানেল, বায়ুচালিত বিদ্যুৎ উৎপাদন যন্ত্রে লেগে অনেক পাখি মারা যায়। তাই এমনভাবে এসব বসাতে হবে যাতে পাখির কোনো ক্ষতি না হয়। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে বিষ প্রয়োগ করে পাখি হত্যাও পরিযায়ী পাখির জন্য বড় হুমকি। এসব বিষয়ে খেয়াল রাখলে দেশে পরিযায়ী পাখির সংখ্যা বাড়বে।
আইইউসিএন ও বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের শুমারি অনুযায়ী, ২০১৩ সালে প্রায় ৮০ হাজার ও ২০১৪ সালে পরিযায়ী পাখির সংখ্যা ছিল প্রায় ৮৫ হাজার। তিন বছর ধরে পরিযায়ী পাখির সংখ্যা বাড়ছে। বিশেষ করে টাঙ্গুয়ার ও হাকালুকি হাওর এলাকায় পাখি আসা বেড়েছে। তবে ২০১০ সাল পর্যন্ত দেশে পরিযায়ী পাখির অন্যতম আবাসস্থল ছিল মৌলভীবাজারের বাইক্কার বিল। ২০১১ সালে ওই বিলে মাছ ধরার নামে জীববৈচিত্র্য ও পাখির আবাসস্থল ধ্বংস করা হয়। এ বছর বাইক্কার বিলে মাত্র ৪১৯টি পাখি দেখা গেছে।
মূলত হাওড় অঞ্চলে পরিযায়ী পাখির সমাগম হয় বেশি। এ ছাড়া উপকূলেও পরিযায়ী পাখির ভিড় হয়। শীতকালে আনাগোনা সবচেয়ে বেশি হলেও বছরের অন্য সময়েও এসে থাকে।
শুমারি অনুযায়ী, টাঙ্গুয়ার হাওরে বরাবরের মতো এ বছরেও পাখির সমাগম সবচেয়ে বেশি, মোট ৫২ হাজার ২৯৯টি। তবে প্রজাতির ভিন্নতা বেশি দেখা গেছে হাকালুকি হাওরে। ৬৮ প্রজাতির ২১ হাজার ৮০১টি পরিযায়ী পাখি আসে হাকালুকিতে। টাঙ্গুয়ার হাওরে দেখা গেছে ৪৩ প্রজাতির। এ ছাড়া দোমার চরে ২১ প্রজাতির ১২ হাজার ২৬৭টি এবং সোনাদিয়া দ্বীপে ৩৭ প্রজাতির ২ হাজার ৩২৩টি পাখি গণনা করা হয়েছে। বাইক্কার বিলে মাত্র ৪১৯টি পাখি এলেও প্রজাতি দেখা গেছে ৩০টি।
টাঙ্গুয়ার হাওর পরিযায়ী পাখির জন্য সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য স্থান। এই জলাশয়টিকে জাতিসংঘের রামসার কর্তৃপক্ষ বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ জীববৈচিত্র্যপূর্ণ জলাভূমি হিসেবে ২০০০ সালে স্বীকৃতি দিয়েছে। এর পর থেকে পরিযায়ী পাখির সংখ্যা বেড়েছে। ২০০২-২০০৫ সাল পর্যন্ত পরিযায়ী পাখির সংখ্যা ছিল ১ লাখ। টাঙ্গুয়ার হাওরে এ বছর সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে পাতি কুট পাখির। ওই হাওরে ১৭ হাজার ৬৮৭টি-ই ছিল পাতি কুট পাখি। পরিমাণের দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে লালঝুঁটি ভূতিহাঁস।
দোমার চরে পাখির সংখ্যার প্রায় অর্ধেকই ছোট ধুলজিরিয়া, সেখানে এই পাখি ৫ হাজার দেখা গেছে। বড় ধুলজিরিয়া, কালা লেজ জৌরালি প্রভৃতি পরিযায়ী পাখির সরব উপস্থিতি আছে সেখানে।
হাকালুকি হাওরে বেশি দেখা গেছে এশীয় শামুকখোল পাখি। এ ছাড়া আছে পিয়াং হাঁস, মরচে রং ভূতিহাঁস। তবে এগুলো বাংলাদেশে সুলভ পরিযায়ী পাখি। বাইক্কার বিলে দুর্লভ বন বাটান পরিযায়ী পাখির দেখা মেলে। এ ছাড়া নিয়মিত আসে পাতি সরালি, মরচে রং ভূতিহাঁস।
সোনাদিয়া দ্বীপের ৯২০টি ছোট ধুলজিরিয়া ও ২৫০টি বড় ধুলজিরিয়া পাখির দেখা মিলেছে। এ ছাড়া এখানে বিশ্বব্যাপী সংকটাপন্ন নয়টি চামচ ঠুঁটো বাটানেরও দেখা মিলেছে। দেখা পাওয়া গেছে বিশ্বজুড়ে বিপন্ন ছয়টি নর্ডম্যান সবুজ পা।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মোস্তফা ফিরোজের মতে, দেশে কয়েক বছর ধরেই পরিযায়ী পাখির ব্যাপারে জনসচেতনতা বেড়েছে। আগে এসব পাখি শিকার করে বিক্রি করা হতো। এখন তা কমেছে। এদের আবাসস্থলগুলো রক্ষা করা গেলে অনেক পাখিই এখানে থেকে যেত।
No comments