বাংলাদেশে ডেঙ্গু প্রকোপ: কখন রোগকে মহামারী ঘোষণা করা হয়? by রাকিব হাসনাত
স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সী
সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঁচই অগাস্ট সোমবার পাঠানো তথ্য অনুযায়ী
তার আগের ২৪ ঘণ্টায় ২,০৬৫ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে।
এ নিয়ে চলতি বছর এ পর্যন্ত মোট ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা সরকারি হিসেবেই ২৭,৪৩৭ জন এবং এর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১৮ জনের।
কিন্তু বাংলাদেশের স্থানীয় পত্রিকাগুলোর হিসেবে মৃতের সংখ্যা ৮০ ছাড়িয়েছে আর আক্রান্তের সংখ্যা সরকারি হিসেবের কয়েকগুণ বেশি।
সরকার
বা স্বাস্থ্য অধিদফতর ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় সব
ব্যবস্থা নেয়ার কথা বললেও দিন দিন বাড়ছে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা।
এমনকি
হাসপাতালগুলোতে দেখা দিয়েছে ডেঙ্গু টেস্ট কিট সংকট এবং তা মোকাবেলায়
কর্তৃপক্ষ বলছে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া টেস্ট না করার জন্য।
এমন
পরিস্থিতিতে অনেকেই চলমান পরিস্থিতিকে 'ভয়াবহ' দাবি করে ডেঙ্গু মহামারী
ঘোষণার দাবি জানাচ্ছেন। আবার কেউ কেউ বলছে ডেঙ্গু প্রতিরোধে জরুরি অবস্থা
ঘোষণার জন্য।
তাদেরই একজন ঢাকার অধিবাসী ইশরাত জাহান শাহানা। তার দু সন্তানের একজন এর মধ্যেই জ্বরে ভুগে চিকিৎসা নিয়ে এখন সুস্থ।
"বাচ্চা
সুস্থ হয়েছে ঠিক কিন্তু আমি এখনো উদ্বিগ্ন। কারণ ঢাকার পরিস্থিতি
মহামারীর মতোই। যদিও ঠিক কোন পরিস্থিতিতে মহামারী বলে আমি জানিনা কিন্তু
ভয়াবহতার বিষয়ে বিবেচনায় নিলে এটি তেমনি একটি পরিস্থিতি"।
হাসপাতালে বিছানা খালি নেই..তাই ফ্লোরে বারান্দায় ঠাঁই হয়েছে অনেকের |
তিনি বলেন মহামারী হোক না হোক জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে এ সংকট মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেয়া উচিত।
"কারণ বাসায় যতই সতর্ক থাকি সবাইকে প্রয়োজনে বাইরে যেতে হচ্ছে। কে কখন কোথায় মশার কামড় খাবে তার কি নিশ্চয়তা আছে?"
মিজ শাহানা বলেন, তার সন্তান ঢাকার ভিকারুননিসা স্কুলের শিক্ষার্থী কিন্তু তিনি ভয়ে স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন।
তিনি
বলেন, "হাসপাতালগুলো উপচে পড়ছে রোগীতে। স্কুলগুলো মশা মুক্ত করা যায়নি
এখনো। এমন পরিস্থিতিতে স্কুল সব বন্ধ ঘোষণা করা উচিত।"
কিন্তু একটি রোগকে কখন মহামারী ঘোষণা করা হয়?
রোগতত্ত্ব,
রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের সাবেক পরিচালক মাহমুদুর রহমান
বিবিসি বাংলাকে বলেন, ইন্টারন্যাশনাল হেলথ রেগুলেশনে কতগুলো রোগের কথা বলা
আছে এবং কিছু প্রশ্নও আছে যেগুলোর উত্তর মিলে গেলে মহামারী ঘোষণার কথা বলা
হয়।
যেভাবে ইবোলা বা সোয়াইন ফ্লুর মতো রোগগুলোকে বিশ্বের কয়েকটি অঞ্চলে মহামারী ঘোষণা করা হয়েছিলো।
মি.
রহমান জানান, সহজভাবে বললে রোগটি যদি এক দেশ থেকে অন্য দেশে ছড়ানোর আশংকা
থাকে বা এর জন্য যদি ব্যাপকভাবে ব্যবসা বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাহলে
মহামারী ঘোষণার বিবেচনায় আসে।
কিভাবে মহামারী ঘোষণা করা হয়?
মাহমুদুর রহমান বলেন, সাধারণত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এক্ষেত্রে এগিয়ে আসে, তবে মহামারী ঘোষণা করে সংশ্লিষ্ট দেশের সরকার।
"ইন্টারন্যাশনাল
হেলথ রেগুলেশনের তালিকাভুক্ত রোগ বা যে রোগের ক্রাইটেরিয়া মহামারীর
আওতায় আসবে সেক্ষেত্রে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি করতে পারে সংশ্লিষ্ট দেশের
সরকার"।
ডেঙ্গু পরিস্থিতিকে মহামারী ঘোষণার দাবি উঠছে বিভিন্ন মহল থেকে |
মি. রহমান বলেন, বাংলাদেশে এ ধরণের কোনো কমিটিই নেই যারা পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে সরকারকে পরামর্শ দিতে পারে।
তিনি
বলেন, সিদ্ধান্ত গ্রহণের বিষয়টি রাজনৈতিক, তবে সরকার চাইলে পরিস্থিতিকে
বিবেচনায় নিয়ে এ ধরনের কমিটি করতে পারে যারা দেখবে যে রোগ সংক্রমণ কতটা
ছড়িয়েছে এবং সেই রোগে কত মানুষ আক্রান্ত বা মৃত্যু ঘটেছে কতজনের।
ডেঙ্গু কি মহামারী পর্যায়ে এসেছে?
বাংলাদেশে
বিশেষ করে ঢাকায় গড়ে হাজারেরও বেশি মানুষ প্রতিদিন ডেঙ্গু জ্বরে
আক্রান্ত হচ্ছে তারপরেও এটি মহামারী ঘোষণার পর্যায়ে এসেছে কি-না তা নিয়েও
প্রশ্ন আছে।
মাহমুদুর রহমান বলছেন, "ডেঙ্গু সেই লেভেলের রোগ না।
মহামারী ঘোষণা যেসব রোগের ক্ষেত্রে হয়েছে ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে মৃত্যুর হার
তেমন না, এটাও বিবেচনায় রাখতে হবে"।
তবে এটাও সত্যি যে পরিস্থিতিটা অস্বাভাবিক।
এখানে
বলে রাখা ভালো যে বাংলাদেশের সাধারণত সেপ্টেম্বর অক্টোবরে ডেঙ্গুর
প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা যায় কিন্তু এবার জুলাইতে দেশের হাজার হাজার মানুষ
ডেঙ্গুর জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে।
ঢাকায় স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্মকর্তারাও ডেঙ্গু পরিস্থিতিকে মহামারী বলতে রাজী নন।
বরং তারা মনে করছেন ডেঙ্গু মোকাবেলায় সব ধরণের প্রস্তুতি তাদের আছে।
মহামারী ঘোষণা হলে আসলে কি হয়?
মাহমুদুর রহমান বলেন, মহামারী বা দুর্যোগ ঘোষণা হলে বিদেশি সহায়তা আসে।
"মহামারী
ঘোষণা হলে তখন ওই বিষয়ে আর সাধারণ আইন কার্যকর হয়না। কারণ সেটি বিশেষ
পরিস্থিতি। তখন ঔষধ পত্র দ্রুত আনতে সুবিধা হয় বা প্রচলিত প্রকিউরমেন্ট
নীতি মেনে চলতে হয়না"।
তবে বাংলাদেশের ইতিহাসে জনস্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে কখনো দুর্যোগ বা মহামারী ঘোষণা হয়নি বলে জানান মি. রহমান।
সরকারি হিসেবেই এ পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ২৭ হাজারের বেশি |
No comments