দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সই হবে নয়া পাকিস্তানের ভিত্তি by ইকরাম সেহগাল
আপডেট- ২ আগস্ট ২০১৯: শুরুটা
নড়বড়ে হলেও এখন কিছুটা স্থিতিশীলতা এসেছে পাকিস্তানের তেহরিক-ই-ইনসাফ
(পিটিআই) সরকারের মধ্যে। প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ও তার দল পাকিস্তানকে
সত্যিকারের পরিবর্তনের দিকে নেয়ার জন্য প্রস্তুত হয়েছেন বলে মনে হচ্ছে।
যেখানে পুরো প্রচারণায় তাদের প্রধান বিষয় হলো পুরো সিস্টেমের মধ্যে
দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করা। একেবারে ধসে পড়া অর্থনীতিতে কিছু আশাও দেখা যাচ্ছে।
২.১ মিলিয়ন মানুষ কর রিটার্ন জমা দিয়েছে, ফেডারেল ব্যুরো অব রেভিন্যু’র
(এফবিআর) ইতিহাসে যেটা সর্বোচ্চ। আরো অনেকের বিরুদ্ধে মামলা হতে যাচ্ছে।
২০১৯ সালের জুনে পাকিস্তানের কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ডেফিসিটের (সিএডি) পরিমাণ ছিল ৯৯৭ মিলিয়ন ডলার, যেটা ২০১৮ সালের জুনে ছিল ১.৯ বিলিয়ন ডলার। আমদানির পরিমাণ কমে আসছে এবং বিদেশি রেমিটেন্সের প্রবাহ বাড়ছে। কিন্তু আগের শাসকগুলোর নির্লজ্জ লুটপাটের কারণে অর্থনীতির বিপর্যস্ত অবস্থা এখনো কাটেনি।
ক্ষমতার এক বছরের মধ্যে এরচেয়ে বেশি আশা করাটা ঠিক হবে না। যদিও অগ্রগতি হচ্ছে ধীরগতিতে, কিন্তু সেটা অন্তত দেখা যাচ্ছে। দীর্ঘদিনের ব্যাপক নোংরা দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, প্রতারণা এবং সোজাসাপটা চুরির বিষয়গুলো দূর করার মূল কাজটাই এখনো অন্ধকারে রয়ে গেছে। যদিও সবচেয়ে প্রভাবশালী রাজনৈতিক পরিবারগুলোর প্রধানরা এখন কারাগারে রয়েছেন, তবে এখনো বহু কিছু করার বাকি। রাজনৈতিক যোগাযোগ থাকায় মুক্তিপণের জন্য অপহরণকারী, মানি লন্ডারিং, এবং স্টক মার্কেট প্রতারণার সঙ্গে জড়িত উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিরা এখনো মুক্তভাবে ঘুরে ফিরে বেড়াচ্ছে, আগের সরকারগুলোর সময় যেমনটা তারা করেছে।
শুরুতেই এটা গুরুত্বপূর্ণ যাতে মিথ্যাবাদী এবং প্রতারকদের ছেড়ে দেয়া না হয়। মরিয়ম নওয়াজ যে দলিল জাল করেছেন যেটা আদালতে পেশ করা হয়েছে, তিনি ব্ল্যাকমেইলের উদ্দেশ্যে যে গোয়েন্দাগিরি চালিয়েছেন এবং কথাবার্তা ভিডিও করেছেন, সেটা এর সবচেয়ে জ্বলন্ত উদাহরণ।
ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টেবিলিটি ব্যুরো (এনএবি) কেন তার বিরুদ্ধে ক্যালিবরি ফন্টের ব্যাপারে মামলা করছে না? শপথ নিয়ে মিথ্যা বলার দায়ে বৃটিশ আদালত কি ব্যবস্থা নেয়, সেটা দেখা যাক, যেটা পাকিস্তানে করে তিনি পার পেয়ে গেছেন। তার জন্য শত শত মানুষ কাজ করছে এবং তার বিরুদ্ধে অভিযোগগুলোর মধ্যে রয়েছে পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রীর বাড়িতে সরকারি কর্মকর্তাদের পার্কিংয়ের ব্যাপারে তার আগ্রহ, মিথ্যা তথ্য ছড়ানো, খোলামেলা মিথ্যা বলা, সত্য বিকৃত করা এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় মানুষকে তাচ্ছিল্য করার মতো বিষয়।
পাকিস্তান মুসলিম লীগে (নওয়াজ) যে সব শ্রদ্ধাভাজন প্রবীণ ব্যক্তি রয়েছেন, তারা কীভাবে এই নির্লজ্জ অপরাধকে সহ্য করছেন? এই ধরনের কাজ কেউ একা করে না, অপরাধে সব সময় সঙ্গী থাকে। এসব মানুষ অর্থ দেয় বা অন্য উপায়ে অন্যদের দিয়ে নোংরা কাজটা করিয়ে নেয়। তারিক ফাতেমি, পারভেজ রশিদ, এবং রাও তেহসিন তার পক্ষ হয়ে দায় নিয়েছেন। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে তাদের অপরাধের জন্য তাদের কি কিছু হয়েছে? আমলাতন্ত্র যেভাবে এগুলোর ব্যাপারে চোখ বন্ধ করে রেখেছে, সেটা সহ্য করা যাবে না। অপরাধের সহযোগীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে আর আইনের মাধ্যমে যদি সেটা সম্ভব না হয়, তাহলে অন্তত সেগুলো প্রকাশ করে দিতে হবে।
তাদের ব্যাপারে কি হবে যারা অপরাধের বিষয়ে জানে কিন্তু এরপরও সেটা ঘটতে দিয়েছে? ফাওয়াদ আহমেদ ফাওয়াদ এবং আহাদ সিমা তাদের অবৈধভাবে বহু বিলিয়ন অর্থ গড়লেও জেনেশুনে সেগুলো চেপে গেছে মিডিয়া। তাদের সমর্থনে অনেকে দীর্ঘ নিবন্ধ লিখেছেন। টিভি চ্যানেলসহ কিছু মিডিয়া স্বাধীনতার নামে যেটা করেছে, সেটা প্রকাশ করে দিতে হবে।
মিডিয়ার স্বাধীনতা নিয়ে এখন যে আলোচনা চলছে, সেটা একটা জ্বলন্ত উদাহরণ যে কীভাবে বাকস্বাধীনতার অপব্যবহার করে বহু মিলিয়ন মানুষের কাছে মিথ্যা বলা যায়। মিডিয়াতে কি হলোকাস্টের বিরুদ্ধে এ ধরনের বক্তব্যকে প্রশ্রয় দেয়? মিডিয়া এখন আর স্বাধীন নয়, যারা অর্থ দেয়, এবং দর কষাকষিতে যে যত উপরে থাকে, তাদের ইচ্ছে মতো আচরণ করে মিডিয়া। একটা সৎ ও সমতাপূর্ণ সমাজের জন্য কাজ করাটা ইমরান খান সরকারের ঘোষিত লক্ষ্য। এর প্রমাণও তারা দিচ্ছেন। সে কারণে পিটিআই সরকারকে শুধু দুর্নীতি উন্মুক্ত করে দিলেই চলবে না, বরং দুর্নীতিগ্রস্তদের ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে হবে তাদের, তা তাদের স্ট্যাটাস যত উঁচু আর সরকারের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক যত গভীরই হোক না কেন।
‘নয়া পাকিস্তান’ গঠনের ব্যাপারে প্রত্যেক পাকিস্তানির অবদান প্রয়োজন হবে। এটা না হলে, পাকিস্তানিরা নিজেদেরকে এবং দেশকে বদলাতে পারবে না।
>>>(ইকরাম সেহগাল পাকিস্তানের একজন নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক)
>>সাউথ এশিয়ান মনিটর, মানবজমিন.
২০১৯ সালের জুনে পাকিস্তানের কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ডেফিসিটের (সিএডি) পরিমাণ ছিল ৯৯৭ মিলিয়ন ডলার, যেটা ২০১৮ সালের জুনে ছিল ১.৯ বিলিয়ন ডলার। আমদানির পরিমাণ কমে আসছে এবং বিদেশি রেমিটেন্সের প্রবাহ বাড়ছে। কিন্তু আগের শাসকগুলোর নির্লজ্জ লুটপাটের কারণে অর্থনীতির বিপর্যস্ত অবস্থা এখনো কাটেনি।
ক্ষমতার এক বছরের মধ্যে এরচেয়ে বেশি আশা করাটা ঠিক হবে না। যদিও অগ্রগতি হচ্ছে ধীরগতিতে, কিন্তু সেটা অন্তত দেখা যাচ্ছে। দীর্ঘদিনের ব্যাপক নোংরা দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, প্রতারণা এবং সোজাসাপটা চুরির বিষয়গুলো দূর করার মূল কাজটাই এখনো অন্ধকারে রয়ে গেছে। যদিও সবচেয়ে প্রভাবশালী রাজনৈতিক পরিবারগুলোর প্রধানরা এখন কারাগারে রয়েছেন, তবে এখনো বহু কিছু করার বাকি। রাজনৈতিক যোগাযোগ থাকায় মুক্তিপণের জন্য অপহরণকারী, মানি লন্ডারিং, এবং স্টক মার্কেট প্রতারণার সঙ্গে জড়িত উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিরা এখনো মুক্তভাবে ঘুরে ফিরে বেড়াচ্ছে, আগের সরকারগুলোর সময় যেমনটা তারা করেছে।
শুরুতেই এটা গুরুত্বপূর্ণ যাতে মিথ্যাবাদী এবং প্রতারকদের ছেড়ে দেয়া না হয়। মরিয়ম নওয়াজ যে দলিল জাল করেছেন যেটা আদালতে পেশ করা হয়েছে, তিনি ব্ল্যাকমেইলের উদ্দেশ্যে যে গোয়েন্দাগিরি চালিয়েছেন এবং কথাবার্তা ভিডিও করেছেন, সেটা এর সবচেয়ে জ্বলন্ত উদাহরণ।
ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টেবিলিটি ব্যুরো (এনএবি) কেন তার বিরুদ্ধে ক্যালিবরি ফন্টের ব্যাপারে মামলা করছে না? শপথ নিয়ে মিথ্যা বলার দায়ে বৃটিশ আদালত কি ব্যবস্থা নেয়, সেটা দেখা যাক, যেটা পাকিস্তানে করে তিনি পার পেয়ে গেছেন। তার জন্য শত শত মানুষ কাজ করছে এবং তার বিরুদ্ধে অভিযোগগুলোর মধ্যে রয়েছে পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রীর বাড়িতে সরকারি কর্মকর্তাদের পার্কিংয়ের ব্যাপারে তার আগ্রহ, মিথ্যা তথ্য ছড়ানো, খোলামেলা মিথ্যা বলা, সত্য বিকৃত করা এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় মানুষকে তাচ্ছিল্য করার মতো বিষয়।
পাকিস্তান মুসলিম লীগে (নওয়াজ) যে সব শ্রদ্ধাভাজন প্রবীণ ব্যক্তি রয়েছেন, তারা কীভাবে এই নির্লজ্জ অপরাধকে সহ্য করছেন? এই ধরনের কাজ কেউ একা করে না, অপরাধে সব সময় সঙ্গী থাকে। এসব মানুষ অর্থ দেয় বা অন্য উপায়ে অন্যদের দিয়ে নোংরা কাজটা করিয়ে নেয়। তারিক ফাতেমি, পারভেজ রশিদ, এবং রাও তেহসিন তার পক্ষ হয়ে দায় নিয়েছেন। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে তাদের অপরাধের জন্য তাদের কি কিছু হয়েছে? আমলাতন্ত্র যেভাবে এগুলোর ব্যাপারে চোখ বন্ধ করে রেখেছে, সেটা সহ্য করা যাবে না। অপরাধের সহযোগীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে আর আইনের মাধ্যমে যদি সেটা সম্ভব না হয়, তাহলে অন্তত সেগুলো প্রকাশ করে দিতে হবে।
তাদের ব্যাপারে কি হবে যারা অপরাধের বিষয়ে জানে কিন্তু এরপরও সেটা ঘটতে দিয়েছে? ফাওয়াদ আহমেদ ফাওয়াদ এবং আহাদ সিমা তাদের অবৈধভাবে বহু বিলিয়ন অর্থ গড়লেও জেনেশুনে সেগুলো চেপে গেছে মিডিয়া। তাদের সমর্থনে অনেকে দীর্ঘ নিবন্ধ লিখেছেন। টিভি চ্যানেলসহ কিছু মিডিয়া স্বাধীনতার নামে যেটা করেছে, সেটা প্রকাশ করে দিতে হবে।
মিডিয়ার স্বাধীনতা নিয়ে এখন যে আলোচনা চলছে, সেটা একটা জ্বলন্ত উদাহরণ যে কীভাবে বাকস্বাধীনতার অপব্যবহার করে বহু মিলিয়ন মানুষের কাছে মিথ্যা বলা যায়। মিডিয়াতে কি হলোকাস্টের বিরুদ্ধে এ ধরনের বক্তব্যকে প্রশ্রয় দেয়? মিডিয়া এখন আর স্বাধীন নয়, যারা অর্থ দেয়, এবং দর কষাকষিতে যে যত উপরে থাকে, তাদের ইচ্ছে মতো আচরণ করে মিডিয়া। একটা সৎ ও সমতাপূর্ণ সমাজের জন্য কাজ করাটা ইমরান খান সরকারের ঘোষিত লক্ষ্য। এর প্রমাণও তারা দিচ্ছেন। সে কারণে পিটিআই সরকারকে শুধু দুর্নীতি উন্মুক্ত করে দিলেই চলবে না, বরং দুর্নীতিগ্রস্তদের ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে হবে তাদের, তা তাদের স্ট্যাটাস যত উঁচু আর সরকারের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক যত গভীরই হোক না কেন।
‘নয়া পাকিস্তান’ গঠনের ব্যাপারে প্রত্যেক পাকিস্তানির অবদান প্রয়োজন হবে। এটা না হলে, পাকিস্তানিরা নিজেদেরকে এবং দেশকে বদলাতে পারবে না।
>>>(ইকরাম সেহগাল পাকিস্তানের একজন নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক)
>>সাউথ এশিয়ান মনিটর, মানবজমিন.
No comments