কাশ্মির প্রশ্নে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে ট্রাম্প কেন মধ্যস্ততা করবেন by আদিল নজম
মার্কিন
প্রেসিডেন্টের দাবির পর কাশ্মির নিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ভারতীয়
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কিছু বলেছেন কী বলেননি, তা নিয়ে অস্থিরতার
মধ্যে পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সাথে হোয়াইট হাউসের ২২
জুলাইয়ের সংবাদ সম্মেলনের আসল খবরটি হারিয়ে গেছে। তা হলো প্রথমবারের মতো
কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট প্রকাশ্যে কাশ্মির বিরোধে মধ্যস্ততার প্রস্তাব
দিয়েছেন। এটি এমন এক বিরোধ যা ৭০ বছরের বেশি সময় ধরে দেশ দুটির মধ্যে বিরাজ
করছে।
বিষয়টি বিরাট। কোনো দুনিয়াতেই কল্পনা করা যাবে না যে দুটি উত্তপ্ত ও পরমাণু অস্ত্রে সজ্জিত প্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যকার সবচেয়ে বিপজ্জনক, সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী ও জটিল বিরোধ মীমাংসার চেষ্টাটি খারাপ কিছু। অধিকন্তু, ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্পর্কে যাই ভাবুন না কেন, তিনি কিছু করার চেষ্টা করা লোক।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের হোয়াইট হাউসে প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানানোর সময় তারা ৪০ মিনিটের বেশি সময় ধরে চলা একটি প্রেস ব্রিফিংয়ে কথা বলেন। কাশ্মির নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ইমরান খান বলেন, আমি মনে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন সবচেয়ে শক্তিশালী রাষ্ট্রই কেবল পারে দুই দেশকে একত্রিত করতে।… আমি আশা করছি যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই প্রক্রিয়া এগিয়ে নেবেন।
ট্রাম্প সাথে সাথে এই বক্তব্য লুফে নেন। তবে তিনি ক্লাসিক ট্রাম্প স্টাইলে এর গুরুত্ব বাড়িয়ে এমনভাবে জবাব দেন যা তার পাকিস্তানি অতিথিকে পর্যন্ত বিস্মিত করে এবং ভারতের পররাষ্ট্রনীতির এস্টাবলিমেন্টজুড়ে হিমশীতল প্রবাহ বইয়ে দেয়। ট্রাম্প বলেন, দুই সপ্তাহ আগে প্রধানমন্ত্রী মোদির সাথে ছিলাম আমি। আমরা এই বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছি। আর তিনি সত্যিই বলেছেন, ‘আপনি কি সত্যিই মধ্যস্ততা বা দূতিয়ালি করবেন?’ আমি বললাম, ‘কোথায়?’ তিনি বললেন, ‘কাশ্মির।’
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সাথে সাথে এ ধরনের কোনো কথা হওয়ার কথা অস্বীকার করে। ভারতীয় মিডিয়া উন্মাদ হয়ে ওঠে। তারা ট্রাম্পকে মিথ্যাবাদী হিসেবে চিহ্নিত করে। ফলে ট্রাম্পের শীর্ষ উপদেষ্টাদের অন্তত একজনকে বলতে হয় যে প্রেসিডেন্ট তেমন কথা বলেননি। কিন্তু ট্রাম্পের কাছ থেকে বা মোদির কাছ থেকে সরাসরি বক্তব্যটি অস্বীকার করে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। অথচ তারা টুইটারে খুবই সক্রিয় যোদ্ধা।
ট্রাম্পকে মোদি মধ্যস্ততা করতে বা দূতিয়ালি করতে আনুষ্ঠানিকভাবে বলেছেন, তার সম্ভাবনা খুবই কম। কাশ্মির প্রশ্নে ভারত দীর্ঘ দিন ধরেই কঠোরভাবে যে নীতি অনুসরণ করে আসছে তা হলো এটি অবশ্যই দ্বিপক্ষীয় ইস্যু। খুব সম্ভবত পুলওয়ামা-পরবর্তী ঘটনার প্রেক্ষাপটে ভারত অধিকৃত কাশ্মিরে উত্তেজনা বাড়তে থাকার প্রেক্ষাপটে ট্রাম্প-মোদি আলোচনায় কাশ্মির প্রশ্নটি উত্থাপিত হয়েছিল।
মোদি ভুল বলে থাকুন বা ট্রাম্প ভুল বুঝে থাকেন, যাই হোক বা এর পরে যত ক্ষোভই সৃষ্টি হয়ে থাকুক না কেন, প্রেসিডেন্টের যে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্যটি এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে সেটি হলো, আমি যদি সাহায্য করতে পারি, তবে আমি মধ্যস্ততা হতে পছন্দ করব। … আপনি যদি আমাকে মধ্যস্ততা করতে বলেন, তবে আমি আগ্রহের সাথে তা করতে রাজি।
ইমরান সুযোগটি গ্রহণ করে সাথে সাথেই প্রস্তাবটি মেনে নেন। তিনি বলেন, আমি আপনাকে ঠিক এখনই বলছি যে আপনি যদি মধ্যস্ততা করে এই ইস্যুটির সমাধান করে ফেলেন তবে ১০০ কোটি লোক আপনার জন্য দোয়া করবে।
তিনি হয়তো আরো যোগ করতে পারতেন যে যে লোক এই কাজটি করতে পারবে, সে নোবেল পুরস্কার জিতবে।
এ ব্যাপারে ট্রাম্পের জবাবও গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেছেন, মোদিও একই কথা বলেছেন। আমি মনে করি, কিছু একটা আছে। ফলে আমরা তার সাথে বা আমি তার সাথে কথা বলব।
মোদি অতীতে ট্রাম্পকে কী বলেছেন বা কী বলেননি, সেটা বড় কোনো প্রশ্ন নয়। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, মোদির সাথে কথা বলবেন বলে ট্রাম্প কাশ্মির সমস্যার সমাধানের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তা তিনি রাখবেন কিনা।
আমি আশা করি, ট্রাম্প তা করবেন। আমি আশা করি, তিনি উদ্যোগ গ্রহণ করবেন। কেন করবেন, তার কারণ এখানে তুলে ধরছি।
প্রথমত, পাকিস্তানের প্রতি পক্ষপাতিত্ব প্রদর্শন করা হবে, এমনটা ভেবেই কাশ্মির ইস্যুতে আন্তর্জাতিক সম্পৃক্ততা, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পৃক্ততার বিরোধিতা করছিল ভারত। কারণ স্নায়ুযুদ্ধের সময়ে ভারত ছিল সোভিয়েতের ঘনিষ্ঠ, আর পাকিস্তান ছিল যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র। কিন্তু ওই অবস্থার বিপরীত চিত্র এখন বিরাজ করছে। ভারতের সাথে বাণিজ্য সঙ্ঘাত সত্ত্বেও দক্ষিণ এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র পাকিস্তান নয়, ভারত। মোদিকে ট্রাম্প মনে করেন সত্যিকারের বন্ধু। ফলে তিনি ভারতের কাছে গ্রহণযোগ্য মধ্যস্ততাকারী হতে পারেন।
দ্বিতীয়ত, ভারত কিন্তু সবসময়ই কাশ্মির সমস্যার সমাধানে বাইরের সহায়তার বিরোধিতা করেনি। ভারতই ১৯৪৮ সালের ১ জানুয়ারি কাশ্মির ইস্যুটি জাতিসঙ্ঘে নিয়ে গিয়েছিল। ওই সময় কাশ্মির প্রশ্নে জাতিসঙ্ঘের তদারকিতে গণভোট আয়োজন করতেও রাজি ছিল।
আর সাম্প্রতিক সময়ে ভারত আন্তর্জাতিক মধ্যস্ততাকে প্রত্যাখ্যান করলেও এখন কেন রাজি হবে? রাজি হওয়ার নতুন যুক্তি রয়েছে। ভারত অর্থনৈতিক ও আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে। তারা এখন জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদে স্থায়ী আসন চাচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে তারা নিজেদেরই একটি পুরনো সমস্যার সুরাহা করতে না পারাটা ভালো দেখায় না। আবার কাশ্মিরের একটি গ্রহণযোগ্য সমাধান ভারতের মর্যাদা বাড়িয়ে দেবে।
সবশেষে বলা যায়, ভারত ও কাশ্মির উভয়েই একমত যে কাশ্মির ইস্যুই দক্ষিণ এশিয়ার অস্থিতিশীলতা, বৈরিতা ও এমনকি পরমাণুকরণের মূল কারণ। ইমরান খান ও মোদি উভয়েই প্রকশ্যে স্থায়ী সমাধানের আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করেছেন। পাকিস্তান ও ভারত কয়েক দশক ধরে দ্বিপক্ষীয় সমাধানের চেষ্টা করলেও এখন পর্যন্ত তারা কোনো চুক্তি করতে পারেনি। সবার কাছেই পরিষ্কার যে কিছু সাহায্য প্রয়োজন। মোদি ও ইমরান উভয়ের সাথেই ট্রাম্পের ব্যক্তিগত রসায়ন রয়েছে বলে মনে হচ্ছে। তা হলে কেন ট্রাম্প ও তার বিখ্যাত ‘আর্ট অব দি ডিল’কে পরীক্ষা কেন করা হবে না?
এক সপ্তাহ আগে হোয়াইট হাউসে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কাশ্মির সমস্যাকে একটি ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি হিসেবে অভিহিত করেছিলেন। এ ব্যাপারে তিনি ছিলেন পুরোপুরি সত্য। এটি সত্যিই ভয়ঙ্কর, কাশ্মিরি জনগণের দীর্ঘ দিনের ভোগান্তির জন্য ভয়ঙ্কর। ভারত, পাকিস্তান, এই অঞ্চল ও দুনিয়ার জন্যই ভয়ঙ্কর ব্যাপার। ফলে এই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির সমাধানের ন্যূনতম সম্ভাবনাও অন্তত পরীক্ষা করা উচিত।
>>>লেখক: অধ্যাপক, ইন্টারন্যাশনাল রিলেশন্স, ফাউন্ডিং ডিন, ফ্রেডেরিক এক পারদি স্কুল অব গ্লোবাল স্টাডিজ, বোস্টন ইউনিভার্সিটি
বিষয়টি বিরাট। কোনো দুনিয়াতেই কল্পনা করা যাবে না যে দুটি উত্তপ্ত ও পরমাণু অস্ত্রে সজ্জিত প্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যকার সবচেয়ে বিপজ্জনক, সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী ও জটিল বিরোধ মীমাংসার চেষ্টাটি খারাপ কিছু। অধিকন্তু, ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্পর্কে যাই ভাবুন না কেন, তিনি কিছু করার চেষ্টা করা লোক।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের হোয়াইট হাউসে প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানানোর সময় তারা ৪০ মিনিটের বেশি সময় ধরে চলা একটি প্রেস ব্রিফিংয়ে কথা বলেন। কাশ্মির নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ইমরান খান বলেন, আমি মনে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন সবচেয়ে শক্তিশালী রাষ্ট্রই কেবল পারে দুই দেশকে একত্রিত করতে।… আমি আশা করছি যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই প্রক্রিয়া এগিয়ে নেবেন।
ট্রাম্প সাথে সাথে এই বক্তব্য লুফে নেন। তবে তিনি ক্লাসিক ট্রাম্প স্টাইলে এর গুরুত্ব বাড়িয়ে এমনভাবে জবাব দেন যা তার পাকিস্তানি অতিথিকে পর্যন্ত বিস্মিত করে এবং ভারতের পররাষ্ট্রনীতির এস্টাবলিমেন্টজুড়ে হিমশীতল প্রবাহ বইয়ে দেয়। ট্রাম্প বলেন, দুই সপ্তাহ আগে প্রধানমন্ত্রী মোদির সাথে ছিলাম আমি। আমরা এই বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছি। আর তিনি সত্যিই বলেছেন, ‘আপনি কি সত্যিই মধ্যস্ততা বা দূতিয়ালি করবেন?’ আমি বললাম, ‘কোথায়?’ তিনি বললেন, ‘কাশ্মির।’
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সাথে সাথে এ ধরনের কোনো কথা হওয়ার কথা অস্বীকার করে। ভারতীয় মিডিয়া উন্মাদ হয়ে ওঠে। তারা ট্রাম্পকে মিথ্যাবাদী হিসেবে চিহ্নিত করে। ফলে ট্রাম্পের শীর্ষ উপদেষ্টাদের অন্তত একজনকে বলতে হয় যে প্রেসিডেন্ট তেমন কথা বলেননি। কিন্তু ট্রাম্পের কাছ থেকে বা মোদির কাছ থেকে সরাসরি বক্তব্যটি অস্বীকার করে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। অথচ তারা টুইটারে খুবই সক্রিয় যোদ্ধা।
ট্রাম্পকে মোদি মধ্যস্ততা করতে বা দূতিয়ালি করতে আনুষ্ঠানিকভাবে বলেছেন, তার সম্ভাবনা খুবই কম। কাশ্মির প্রশ্নে ভারত দীর্ঘ দিন ধরেই কঠোরভাবে যে নীতি অনুসরণ করে আসছে তা হলো এটি অবশ্যই দ্বিপক্ষীয় ইস্যু। খুব সম্ভবত পুলওয়ামা-পরবর্তী ঘটনার প্রেক্ষাপটে ভারত অধিকৃত কাশ্মিরে উত্তেজনা বাড়তে থাকার প্রেক্ষাপটে ট্রাম্প-মোদি আলোচনায় কাশ্মির প্রশ্নটি উত্থাপিত হয়েছিল।
মোদি ভুল বলে থাকুন বা ট্রাম্প ভুল বুঝে থাকেন, যাই হোক বা এর পরে যত ক্ষোভই সৃষ্টি হয়ে থাকুক না কেন, প্রেসিডেন্টের যে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্যটি এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে সেটি হলো, আমি যদি সাহায্য করতে পারি, তবে আমি মধ্যস্ততা হতে পছন্দ করব। … আপনি যদি আমাকে মধ্যস্ততা করতে বলেন, তবে আমি আগ্রহের সাথে তা করতে রাজি।
ইমরান সুযোগটি গ্রহণ করে সাথে সাথেই প্রস্তাবটি মেনে নেন। তিনি বলেন, আমি আপনাকে ঠিক এখনই বলছি যে আপনি যদি মধ্যস্ততা করে এই ইস্যুটির সমাধান করে ফেলেন তবে ১০০ কোটি লোক আপনার জন্য দোয়া করবে।
তিনি হয়তো আরো যোগ করতে পারতেন যে যে লোক এই কাজটি করতে পারবে, সে নোবেল পুরস্কার জিতবে।
এ ব্যাপারে ট্রাম্পের জবাবও গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেছেন, মোদিও একই কথা বলেছেন। আমি মনে করি, কিছু একটা আছে। ফলে আমরা তার সাথে বা আমি তার সাথে কথা বলব।
মোদি অতীতে ট্রাম্পকে কী বলেছেন বা কী বলেননি, সেটা বড় কোনো প্রশ্ন নয়। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, মোদির সাথে কথা বলবেন বলে ট্রাম্প কাশ্মির সমস্যার সমাধানের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তা তিনি রাখবেন কিনা।
আমি আশা করি, ট্রাম্প তা করবেন। আমি আশা করি, তিনি উদ্যোগ গ্রহণ করবেন। কেন করবেন, তার কারণ এখানে তুলে ধরছি।
প্রথমত, পাকিস্তানের প্রতি পক্ষপাতিত্ব প্রদর্শন করা হবে, এমনটা ভেবেই কাশ্মির ইস্যুতে আন্তর্জাতিক সম্পৃক্ততা, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পৃক্ততার বিরোধিতা করছিল ভারত। কারণ স্নায়ুযুদ্ধের সময়ে ভারত ছিল সোভিয়েতের ঘনিষ্ঠ, আর পাকিস্তান ছিল যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র। কিন্তু ওই অবস্থার বিপরীত চিত্র এখন বিরাজ করছে। ভারতের সাথে বাণিজ্য সঙ্ঘাত সত্ত্বেও দক্ষিণ এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র পাকিস্তান নয়, ভারত। মোদিকে ট্রাম্প মনে করেন সত্যিকারের বন্ধু। ফলে তিনি ভারতের কাছে গ্রহণযোগ্য মধ্যস্ততাকারী হতে পারেন।
দ্বিতীয়ত, ভারত কিন্তু সবসময়ই কাশ্মির সমস্যার সমাধানে বাইরের সহায়তার বিরোধিতা করেনি। ভারতই ১৯৪৮ সালের ১ জানুয়ারি কাশ্মির ইস্যুটি জাতিসঙ্ঘে নিয়ে গিয়েছিল। ওই সময় কাশ্মির প্রশ্নে জাতিসঙ্ঘের তদারকিতে গণভোট আয়োজন করতেও রাজি ছিল।
আর সাম্প্রতিক সময়ে ভারত আন্তর্জাতিক মধ্যস্ততাকে প্রত্যাখ্যান করলেও এখন কেন রাজি হবে? রাজি হওয়ার নতুন যুক্তি রয়েছে। ভারত অর্থনৈতিক ও আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে। তারা এখন জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদে স্থায়ী আসন চাচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে তারা নিজেদেরই একটি পুরনো সমস্যার সুরাহা করতে না পারাটা ভালো দেখায় না। আবার কাশ্মিরের একটি গ্রহণযোগ্য সমাধান ভারতের মর্যাদা বাড়িয়ে দেবে।
সবশেষে বলা যায়, ভারত ও কাশ্মির উভয়েই একমত যে কাশ্মির ইস্যুই দক্ষিণ এশিয়ার অস্থিতিশীলতা, বৈরিতা ও এমনকি পরমাণুকরণের মূল কারণ। ইমরান খান ও মোদি উভয়েই প্রকশ্যে স্থায়ী সমাধানের আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করেছেন। পাকিস্তান ও ভারত কয়েক দশক ধরে দ্বিপক্ষীয় সমাধানের চেষ্টা করলেও এখন পর্যন্ত তারা কোনো চুক্তি করতে পারেনি। সবার কাছেই পরিষ্কার যে কিছু সাহায্য প্রয়োজন। মোদি ও ইমরান উভয়ের সাথেই ট্রাম্পের ব্যক্তিগত রসায়ন রয়েছে বলে মনে হচ্ছে। তা হলে কেন ট্রাম্প ও তার বিখ্যাত ‘আর্ট অব দি ডিল’কে পরীক্ষা কেন করা হবে না?
এক সপ্তাহ আগে হোয়াইট হাউসে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কাশ্মির সমস্যাকে একটি ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি হিসেবে অভিহিত করেছিলেন। এ ব্যাপারে তিনি ছিলেন পুরোপুরি সত্য। এটি সত্যিই ভয়ঙ্কর, কাশ্মিরি জনগণের দীর্ঘ দিনের ভোগান্তির জন্য ভয়ঙ্কর। ভারত, পাকিস্তান, এই অঞ্চল ও দুনিয়ার জন্যই ভয়ঙ্কর ব্যাপার। ফলে এই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির সমাধানের ন্যূনতম সম্ভাবনাও অন্তত পরীক্ষা করা উচিত।
>>>লেখক: অধ্যাপক, ইন্টারন্যাশনাল রিলেশন্স, ফাউন্ডিং ডিন, ফ্রেডেরিক এক পারদি স্কুল অব গ্লোবাল স্টাডিজ, বোস্টন ইউনিভার্সিটি
No comments