সিঙ্গাপুরের ঐতিহাসিক র্যাফেলস হোটেলের দরজা খুললো আবারও by ওয়াসিদ রাজা
সিঙ্গাপুরের ঐতিহাসিক র্যাফেলস হোটেল |
সিঙ্গাপুরের ঐতিহাসিক র্যাফেলস হোটেলে এখন ছড়িয়ে আছে নতুন রঙের
ঘ্রাণ। বড়সড় সংস্কারের পর গত ১ আগস্ট অতিথিদের জন্য পুনরায় খুলে দেওয়া
হয়েছে এটি। রাজকীয় ছাপের সঙ্গে আধুনিকতার মিশ্রণ ঘটানোর সুবাদে নতুন রূপে
সেজেছে পাঁচতারকা এই স্থাপনা।
এবারের
সংস্কার কাজের সুবিধার্থে প্রায় দুই বছর বন্ধ ছিল র্যাফেলস। এর আগে ১৯৯১
সালে শেষবার সংস্কার করা হয়েছিল এটি। এর আগেই ঐতিহাসিক এই হোটেল ১৯৮৭ সালে
সিঙ্গাপুরের জাতীয় স্মৃতিস্তম্ভের স্বীকৃতি পায়।
১৮৮৭
সালে ১০ রুমের একটি বাংলো দিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল বিলাসবহুল ‘র্যাফেলস
হোটেল সিঙ্গাপুর’। এর দাম্ভিকতা বোঝাতে নামটাই যথেষ্ট। ২০০ বছর আগে
সিঙ্গাপুরে ব্রিটিশ উপনিবেশের দায়িত্বে থাকা স্যার স্ট্যামফোর্ড
র্যাফেলসের নামে এর নামকরণ হয়।
সময় গড়ানোর সঙ্গে বিশ্বের অন্যতম সেরা হোটেলের রূপ পেয়েছে র্যাফেলস। এবারের সংস্করণে সৌন্দর্য বেড়েছে আরও।
ইতিহাসের
রথী-মহারথীদের স্পর্শ মিশে আছে র্যাফেলসে। বিখ্যাত অনেক ব্যক্তির আনাগোনা
ছিল এখানে। তাদের মধ্যে পপসম্রাট মাইকেল জ্যাকসন, ব্রিটিশ চলচ্চিত্র
নির্মাতা আলফ্রেড হিচকক, চার্লি চ্যাপলিন, শিশুতোষ বই ‘দ্য জঙ্গল বুক’-এর
ব্রিটিশ কথাশিল্পী রুডইয়ার্ড কিপলিং, মার্কিন ঔপন্যাসিক আর্নেস্ট হেমিংওয়ে
আতিথ্য নিয়েছেন এখানে। শুধু তারা নন, ব্রিটিশ অভিনেতা-পরিচালক নোয়েল
কাওয়ার্ড, বিখ্যাত সাহিত্যিক জোসেফ কনরাড, সমারসেট মম ও পাবলো নেরুদা
থেকেছেন এই হোটেলে।
গ্ল্যামার
জগতের মানুষের আনাগোনাও কম ছিল না র্যাফেলসে। কিংবদন্তি অভিনেত্রী
এলিজাবেথ টেলর, আভা গার্ডনার থেকে শুরু করে হালের হার্টথ্রব অভিনেতা জনি
ডেপ এবং ডিউক ও ডাচেস অব ক্যামব্রিজ আলোকিত করেছেন হোটেলটিকে। ১৯৮৯ সালে
হোটেলটি পরিদর্শন করেন ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ।
দুই
বছর কঠোর পরিশ্রমের সুবাদে আবারও বিশ্বের সামনে নতুনভাবে র্যাফেলসকে তুলে
ধরতে পারার আনন্দ এর জেনারেল ম্যানেজার ক্রিশ্চিয়ান ওয়েস্টবেল্ডের
চোখেমুখে। নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে তিনি বলেছেন, ‘আমরা ভাবিনি এই
সময়ের মধ্যে সব কাজ সম্পন্ন করা যাবে। সংস্কারের বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে
নিয়ে কঠোর পরিশ্রম করেছি। ফলে র্যাফেলসের দরজা আবারও খোলা গেছে। তবে
ঔপনিবেশিক ঐতিহ্যের মুগ্ধকর স্থাপত্যকে ধরে রাখা ছিল আমাদের মূল লক্ষ্য।’
নতুনভাবে
গড়লেও ঐতিহ্য, রূপ কিংবা রাজকীয় সাজে হাত পড়েনি। বরং আগের সবকিছু ঠিক রেখে
আধুনিকতার ছোঁয়া যোগ করে ইতিহাস-ঐতিহ্যের সাক্ষী র্যাফেলসের ঐশ্বর্যকে
আরও বড় পরিসর দেওয়া হয়েছে। সংস্কার কাজে নেতৃত্ব দিয়েছেন ডিজাইন প্রতিষ্ঠান
শ্যাম্পালিমোদের প্রতিষ্ঠাতা আলেক্সান্দ্রা শ্যাম্পালিমোদ।
১৩০
বছরেরও বেশি পুরনো হোটেলটিতে রয়েছে ৯ ক্যাটাগরির স্যুটস। এগুলো হলো– স্টেট
রুম স্যুটস, কোর্টইয়ার্ড স্যুটস, পাম কোর্ট স্যুটস, পার্সোনালিটি স্যুটস,
রেসিডেন্স স্যুটস, প্রোমেনাড স্যুটস, গ্র্যান্ড হোটেল স্যুটস ও
প্রেসিডেন্সিয়াল স্যুটস। এর মধ্যে সংস্কারের মাধ্যমে রেসিডেন্স, প্রোমেনাড ও
স্টুডিও স্যুটস যুক্ত করা হয়েছে। সব রুমই নিরিবিলি, কোনও হৈচৈ কানে আসার
সুযোগ নেই!
অতিথিরা
রুমের ট্যাবলেট দিয়ে ডিজিভ্যালেট অ্যাপের মাধ্যমে ওয়েটার ডাকতে পারেন।
একজন ওয়েটার একটি রুমের জন্য বরাদ্দ। ফলে যখন ইচ্ছে তাকে ডাকলে পাওয়া যাবে।
অতিথিদের গাইড হিসেবে কাজ করেন লেসলি ড্যাঙ্কার। ৪৫ বছর ধরে এই হোটেলে
আছেন তিনি।
১৮৯২
সাল থেকে র্যাফেলসে উত্তর ভারতীয় খাবার পরিবেশন করা হয়। সংস্কারের
মাধ্যমে এতে গতে তোলা হয়েছে নতুন রেস্তোরাঁ ‘ল্যু দাম দে পিক’।
গ্র্যান্ড
লবিতে আফটারনুন টি মিস করা ঠিক হবে না! এতে থাকে দারুণ চা, শ্যাম্পেন,
ক্ল্যাসিক স্যান্ডউইচ, ঘরে বানানো বিস্কুট ও কেক। হোটেলটির বুটিক আর টিফিন
রুমও বেশ দর্শনীয়।
>>>সূত্র: সিএনএন
No comments