যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান পারস্পরিক নির্ভরতা অটুট রাখছে আফগানিস্তান by এম কে ভদ্রকুমার
মার্কিন
পররাষ্ট্র দফতরের বালুচ লিবারেশন আর্মিকে (বিএলএ) বৈশ্বিক সন্ত্রাসী দল
হিসেবে ঘোষণা করার সিদ্ধান্তটির ব্যাখ্যা অনেকভাবে করা যেতে
পারে। ওই ঘোষণার ফলে সংগঠনটি ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোর ওপর অর্থনৈতিক অবরোধ
জারি করা হবে। পরার্থকল্যাণকর কারণে ওয়াশিংটন এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এমনটা
বিবেচনা করার কোনোই কারণ নেই।
আফগানিস্তানভিত্তিক বিএলএ গত দেড় দশক থেকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সহিংস সশস্ত্র সংগ্রাম করে আসছে। তারা বালুচ জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকারের জন্য পাকিস্তান থেকে বালুচিস্তানের বিচ্ছিন্নতা দাবি করছে। তারা বালুচিস্তানে অ-বালুচ সংখ্যালঘুদের ওপর জাতিগত শুদ্ধি অভিযানও পরিচালনা করছে।
মজার বিষয় হলো, বিএলএর জন্ম (২০০৪ সালে) আর আফগানিস্তানে মার্কিন দখলদারিত্বের সময়ের সাথে অদ্ভূত মিল রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও আফগানিস্তানে মোতায়েন ন্যাটো বাহিনী বিএলএর অন্তর্ঘাতমূলক কার্যক্রম এবং তাদের গুরু কে, সে সম্পর্কে জানত না, এমনটা বিশ্বাস করা কঠিন। পাকিস্তান দীর্ঘ দিন ধরেই উচ্চকণ্ঠে বিএলএর তৎপরতা সম্পর্কে বলে আসছিল। পাকিস্তান জানাচ্ছিল যে তাদের দেশকে অস্থিতিশীল করার কাজই করছে এই সংগঠন।
আবার যখন বিএলএকে নিষিদ্ধ করা হলো, সেই সময়টিও গুরুত্বপূর্ণ। এখনই কেন একে নিষিদ্ধ করা হলো?
এখন বৃহত্তর মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র যা কিছু করছে, সবকিছুই করছে তারা ইরানের ওপর চোখ রেখে। তাহলে কি ইরানের ওপর সর্বোচ্চ চাপ বাড়ানোর জন্য পাকিস্তানি সামরিক ও গোয়েন্দা শক্তি ব্যবহার করার আশা করছে যুক্তরাষ্ট্র? এই সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায় না।
তবে ইরানের বিরুদ্ধে পাকিস্তান বৈরী পদক্ষেপ নেবে, এমন পরামর্শ দেয়া ঠিক নয়। ১৯৭৯ সালে ইসলামি বিপ্লবের পর থেকেই ইরানের সাথে পাকিস্তানের সম্পর্ক সমস্যাগ্রস্ত হলেও পারস্পরিক মিত্রতাও মাঝে মাঝে দেখা গেছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে পাকিস্তানকে নিশ্চিতভাবেই যুক্তরাষ্ট্র-ইরান অচলাবস্থায় জড়িয়ে না পড়ার ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে।
তবে ইরান প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান যে একটি সমঝোতা হয়েছে, তা এড়িয়ে যাওয়া যায় না। আবার আফগান পরিস্থিতির ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। ইরান পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছে, তার ওপর হামলা হলে সে পুরো অঞ্চলে মার্কিন সম্পদরাজির ওপর আক্রমণ করবে। আর সিনিয়র মার্কিন কর্মকর্তারা অন্তত দুটি বিবৃতিতে জানিয়েছে, আফগানিস্তানে মার্কিন সম্পদের বিরুদ্ধে অগ্রসর হচ্ছে ইরান। ইরান অবশ্য জোরালোভাবে এই অভিযোগ অস্বীকার করছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ অযথা নয়।
আফগানিস্তানের শিয়া গ্রুপগুলোর সাথে ইরানের যোগাযোগ অনেক দিন আগের। তেহরান এখন তালেবানের সাথেও কাজ করছে। কাকতালীয়ভাবে হোক বা না হোক, বিএলএকে নিষিদ্ধ করার এই সময়টির কাছাকাছি সময় ২৬ জুন তালেবান এক গুপ্ত হামলা চালিয়ে দুই মার্কিন সৈন্যকে হত্যা করেছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী পম্পেও আফগানিস্তানে যাত্রাবিরতি করার দু’দিন পরই এই হামলা হয়।
বস্তুত, যুক্তরাষ্ট্র বুঝতে পেরেছে যে মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহার ত্বরান্বিত করা হলেও আফগানিস্তানে বিপজ্জনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ফক্স টেলিভিশনের টাকার কার্লসনকে চলতি সপ্তাহে বলেছেন, ১৬ হাজার সৈন্য থেকে ৯ হাজার সৈন্য ইতোমধ্যে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
ওই সাক্ষাতকারে ট্রাম্প বলেছেন, সামরিক কমান্ডারদের ওপর তার আর ভরসা নেই।
এই পর্যায়ে পাকিস্তানি সহায়তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আশরাফ ঘানির সরকারের বৈধতার অভাবে রয়েছে, তবে আগামী সেপ্টেম্বরে নির্বাচন করতে চায়। তবে তা করার জন্য তালেবানের সমর্থন প্রয়োজন। যুক্তরাষ্ট্র আশা করছে, পাকিস্তান তিনটি কাজে সহায়তা করবে: প্রথমত, আর দেরি না করে কাতার আলোচনায় সমঝোতায় পৌঁছাতে তালেবানকে রাজি করাবে, দ্বিতীয়, দ্রুততা ও শৃঙ্খলার সাথে মার্কিন বাহিনী প্রত্যাহারে সহায়তা করবে এবং তৃতীয়ত, কাবুলে শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্র রাজনৈতিক-নিরাপত্তামূলক পরিস্থিতির সৃষ্টি করবে। নিশ্চিতভাবেই এগুলো কঠিন কাজ।
আমেরিকানরা জানে, ইরান চাইলে যেকোনো সময়ে আফগানিস্তানে এগিয়ে যেতে পারে। ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর কুদস ফোর্সের আওতার মধ্যে রয়েছে আফগানিস্তান। এই বাহিনীটির নেতৃত্বে আছেন কিংবদন্তিপ্রতীম জেনারেল কাসেম সোলাইমানি। ইরাক ও সিরিয়ায় তিনি মার্কিন ও ইসরাইল বাহিনীর জন্য সমস্যার সৃষ্টি করেছিলেন। তিনি আফগানিস্তানকে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য আরেকটি ভিয়েতনাম বানিয়ে দিতে পারেন। আর তা করা হলে তা হবে ২০২০ সালের পুনঃনির্বাচিত হতে আগ্রহী ট্রাম্পের জন্য বিপর্যয়কর খবর। এ কারণেই তালেবানের সাথে সমঝোতা না হলেও আফগানিস্তান থেকে সরে পড়তে চান ট্রাম্প।
তবে আফগান যুদ্ধ এখনো শেষ হয়নি। যুক্তরাষ্ট্র এখন চায়, আফগানিস্তানের মাটি যাতে আর সন্ত্রাসীদের ঘাঁটি হিসেবে কাজ না করে। যুক্তরাষ্ট্র আরো চায়, পাকিস্তান যেন আফগানিস্তানের দিকে নজর রাখে, যাতে সেখানে সন্ত্রাসীরা আশ্রয় নিতে না পারে।
অর্থাৎ এটিই যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তানের মধ্যে পারস্পরিক নির্ভরশীলতা সৃষ্টি করছে। আইএমএফের প্রণোদনা, বিএলএকে নিষিদ্ধ করা, ফিন্যান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্স থেকে পাকিস্তানকে প্রায় নিশ্চিতভাবেই ছাড় দেয়া, হোয়াইট হাউসে ইমরান খানকে আমন্ত্রণ জানানো, এসব আসলে পাকিস্তানের সাথে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করার মার্কিন প্রয়াসের সূচনা। যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার জন্য শর্ত নির্ধারণ করার কাজে পাকিস্তান খুবই অভিজ্ঞ।
আফগানিস্তানভিত্তিক বিএলএ গত দেড় দশক থেকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সহিংস সশস্ত্র সংগ্রাম করে আসছে। তারা বালুচ জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকারের জন্য পাকিস্তান থেকে বালুচিস্তানের বিচ্ছিন্নতা দাবি করছে। তারা বালুচিস্তানে অ-বালুচ সংখ্যালঘুদের ওপর জাতিগত শুদ্ধি অভিযানও পরিচালনা করছে।
মজার বিষয় হলো, বিএলএর জন্ম (২০০৪ সালে) আর আফগানিস্তানে মার্কিন দখলদারিত্বের সময়ের সাথে অদ্ভূত মিল রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও আফগানিস্তানে মোতায়েন ন্যাটো বাহিনী বিএলএর অন্তর্ঘাতমূলক কার্যক্রম এবং তাদের গুরু কে, সে সম্পর্কে জানত না, এমনটা বিশ্বাস করা কঠিন। পাকিস্তান দীর্ঘ দিন ধরেই উচ্চকণ্ঠে বিএলএর তৎপরতা সম্পর্কে বলে আসছিল। পাকিস্তান জানাচ্ছিল যে তাদের দেশকে অস্থিতিশীল করার কাজই করছে এই সংগঠন।
আবার যখন বিএলএকে নিষিদ্ধ করা হলো, সেই সময়টিও গুরুত্বপূর্ণ। এখনই কেন একে নিষিদ্ধ করা হলো?
এখন বৃহত্তর মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র যা কিছু করছে, সবকিছুই করছে তারা ইরানের ওপর চোখ রেখে। তাহলে কি ইরানের ওপর সর্বোচ্চ চাপ বাড়ানোর জন্য পাকিস্তানি সামরিক ও গোয়েন্দা শক্তি ব্যবহার করার আশা করছে যুক্তরাষ্ট্র? এই সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায় না।
তবে ইরানের বিরুদ্ধে পাকিস্তান বৈরী পদক্ষেপ নেবে, এমন পরামর্শ দেয়া ঠিক নয়। ১৯৭৯ সালে ইসলামি বিপ্লবের পর থেকেই ইরানের সাথে পাকিস্তানের সম্পর্ক সমস্যাগ্রস্ত হলেও পারস্পরিক মিত্রতাও মাঝে মাঝে দেখা গেছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে পাকিস্তানকে নিশ্চিতভাবেই যুক্তরাষ্ট্র-ইরান অচলাবস্থায় জড়িয়ে না পড়ার ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে।
তবে ইরান প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান যে একটি সমঝোতা হয়েছে, তা এড়িয়ে যাওয়া যায় না। আবার আফগান পরিস্থিতির ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। ইরান পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছে, তার ওপর হামলা হলে সে পুরো অঞ্চলে মার্কিন সম্পদরাজির ওপর আক্রমণ করবে। আর সিনিয়র মার্কিন কর্মকর্তারা অন্তত দুটি বিবৃতিতে জানিয়েছে, আফগানিস্তানে মার্কিন সম্পদের বিরুদ্ধে অগ্রসর হচ্ছে ইরান। ইরান অবশ্য জোরালোভাবে এই অভিযোগ অস্বীকার করছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ অযথা নয়।
আফগানিস্তানের শিয়া গ্রুপগুলোর সাথে ইরানের যোগাযোগ অনেক দিন আগের। তেহরান এখন তালেবানের সাথেও কাজ করছে। কাকতালীয়ভাবে হোক বা না হোক, বিএলএকে নিষিদ্ধ করার এই সময়টির কাছাকাছি সময় ২৬ জুন তালেবান এক গুপ্ত হামলা চালিয়ে দুই মার্কিন সৈন্যকে হত্যা করেছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী পম্পেও আফগানিস্তানে যাত্রাবিরতি করার দু’দিন পরই এই হামলা হয়।
বস্তুত, যুক্তরাষ্ট্র বুঝতে পেরেছে যে মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহার ত্বরান্বিত করা হলেও আফগানিস্তানে বিপজ্জনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ফক্স টেলিভিশনের টাকার কার্লসনকে চলতি সপ্তাহে বলেছেন, ১৬ হাজার সৈন্য থেকে ৯ হাজার সৈন্য ইতোমধ্যে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
ওই সাক্ষাতকারে ট্রাম্প বলেছেন, সামরিক কমান্ডারদের ওপর তার আর ভরসা নেই।
এই পর্যায়ে পাকিস্তানি সহায়তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আশরাফ ঘানির সরকারের বৈধতার অভাবে রয়েছে, তবে আগামী সেপ্টেম্বরে নির্বাচন করতে চায়। তবে তা করার জন্য তালেবানের সমর্থন প্রয়োজন। যুক্তরাষ্ট্র আশা করছে, পাকিস্তান তিনটি কাজে সহায়তা করবে: প্রথমত, আর দেরি না করে কাতার আলোচনায় সমঝোতায় পৌঁছাতে তালেবানকে রাজি করাবে, দ্বিতীয়, দ্রুততা ও শৃঙ্খলার সাথে মার্কিন বাহিনী প্রত্যাহারে সহায়তা করবে এবং তৃতীয়ত, কাবুলে শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্র রাজনৈতিক-নিরাপত্তামূলক পরিস্থিতির সৃষ্টি করবে। নিশ্চিতভাবেই এগুলো কঠিন কাজ।
আমেরিকানরা জানে, ইরান চাইলে যেকোনো সময়ে আফগানিস্তানে এগিয়ে যেতে পারে। ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর কুদস ফোর্সের আওতার মধ্যে রয়েছে আফগানিস্তান। এই বাহিনীটির নেতৃত্বে আছেন কিংবদন্তিপ্রতীম জেনারেল কাসেম সোলাইমানি। ইরাক ও সিরিয়ায় তিনি মার্কিন ও ইসরাইল বাহিনীর জন্য সমস্যার সৃষ্টি করেছিলেন। তিনি আফগানিস্তানকে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য আরেকটি ভিয়েতনাম বানিয়ে দিতে পারেন। আর তা করা হলে তা হবে ২০২০ সালের পুনঃনির্বাচিত হতে আগ্রহী ট্রাম্পের জন্য বিপর্যয়কর খবর। এ কারণেই তালেবানের সাথে সমঝোতা না হলেও আফগানিস্তান থেকে সরে পড়তে চান ট্রাম্প।
তবে আফগান যুদ্ধ এখনো শেষ হয়নি। যুক্তরাষ্ট্র এখন চায়, আফগানিস্তানের মাটি যাতে আর সন্ত্রাসীদের ঘাঁটি হিসেবে কাজ না করে। যুক্তরাষ্ট্র আরো চায়, পাকিস্তান যেন আফগানিস্তানের দিকে নজর রাখে, যাতে সেখানে সন্ত্রাসীরা আশ্রয় নিতে না পারে।
অর্থাৎ এটিই যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তানের মধ্যে পারস্পরিক নির্ভরশীলতা সৃষ্টি করছে। আইএমএফের প্রণোদনা, বিএলএকে নিষিদ্ধ করা, ফিন্যান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্স থেকে পাকিস্তানকে প্রায় নিশ্চিতভাবেই ছাড় দেয়া, হোয়াইট হাউসে ইমরান খানকে আমন্ত্রণ জানানো, এসব আসলে পাকিস্তানের সাথে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করার মার্কিন প্রয়াসের সূচনা। যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার জন্য শর্ত নির্ধারণ করার কাজে পাকিস্তান খুবই অভিজ্ঞ।
No comments