টার্গেট চাপে অস্বস্তিতে ব্যাংকাররা by রোকনুজ্জামান পিয়াস
আমানত
সংগ্রহের টার্গেট পূরণে হিমশিম খাচ্ছেন বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তারা।
বিভিন্ন অফার এবং সুদের হার বাড়িয়েও মিলছে না আমানত। পাশাপাশি টার্গেট
পূরণে ব্যাংকের পক্ষ থেকে কর্মকর্তাদের বাড়তি সুবিধা দেয়ার ঘোষণা দেয়া
হয়েছে। এতো কিছুর পরও মিলছে না আমানত। তারল্য সংকট কাটাতে প্রত্যেক
কর্মকর্তাকেই এই টার্গেট দেয়া হচ্ছে নিজ নিজ ব্যাংক থেকে। এদিকে টার্গেট
পূরণে ব্যর্থ হয়ে অনেকেই চাকরি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন। পদোন্নতি থেকে শুরু
করে নানা সুবিধা থেকে বঞ্চিত হতে পারেন তারা। এমন শঙ্কায় অস্বস্তিতে রয়েছেন
কর্মকর্তারা। এদিকে টার্গেট পূরণে ব্যর্থ হওয়ায় একটি ব্যাংক তার ৭০০
কর্মকর্তাকে সতর্ক করে চিঠি দিয়েছে। এতে করে ওইসব কর্মকর্তা আতঙ্কের মধ্যে
দিন কাটাচ্ছেন। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, চাকরিতে প্রবেশের সময় এমন
শর্ত দেয়া না থাকলেও ব্যাংক তাদের ওপর চাপ অব্যাহত রেখেছে। খোঁজ নিয়ে জানা
গেছে, ব্যাংকগুলোর প্রধান শাখায় কর্মরত একজন মধ্যম সারির কর্মকর্তাকে গড়ে
প্রতি মাসে ৫০ লাখ টাকার আমানত সংগ্রহের টার্গেট দেয়া হচ্ছে। ব্রাঞ্চগুলোতে
টার্গেটের পরিমাণ আরো বেশি।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, গত বছরের শেষের দিকে ব্যাংকিং খাতে এক লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা অলস তারল্য ছিল। গত কয়েক মাসে ঋণ বিতরণের ফলে তা ৮৬ হাজার কোটি টাকায় নেমে এসেছে। এর মধ্যে বেশিরভাগ ঋণই গেছে সরকারি ব্যাংক থেকে। গত বছর ব্যাংকগুলো ৮৫ হাজার ৯১১ কোটি টাকা আমানত সংগ্রহ করে। কিন্তু ঋণ বিতরণ করেছে এক লাখ ৩১ হাজার ৩২৩ কোটি টাকা। এতে আমানতের তুলনায় ৪৫ হাজার ৪১২ কোটি টাকা বেশি ঋণ বিতরণ হওয়ায় অলস অর্থ চলে গেছে। এদিকে তারল্য সংকট মোকাবিলায় এরই মধ্যে আকর্ষণীয় মুনাফায় আমানত সংগ্রহের ঘোষণা দিয়ে অধিকাংশ বেসরকারি ব্যাংক মাঠে নেমেছে। ব্যাংকগুলো আগের চেয়ে ২ থেকে ৩ শতাংশ পর্যন্ত আমানতের সুদহার বাড়িয়েছে।
ব্যাংকগুলোতে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, বেসরকারি একটি ব্যাংকের মধ্যম সারির একজন কর্মকর্তার গড়ে প্রতি মাসে ৫০ লাখ টাকা আমানত সংগ্রহের টার্গেট দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ দিনে প্রায় দুই লাখ টাকা করে আমানত সংগ্রহ করতে হবে এ সারির একজন ব্যাংকারকে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আরো বেশি। ফলে ব্যাপক মানসিক চাপে রয়েছেন ব্যাংকাররা। ব্যাংকের তারল্য সংকট এখন এমনই দাঁড়িয়েছে যে, দৈনন্দিন প্রয়োজন মেটানোর মতো অর্থও অনেক ব্যাংকে নেই। ফলে অন্য ব্যাংকের কাছ থেকে ধার নিয়ে প্রয়োজনীয় কাজ সারতে হচ্ছে। এজন্য আন্তঃব্যাংক কলমানি সুদহার প্রায় সাড়ে চার শতাংশ হয়ে গেছে, যা ২০১৫ সালের নভেম্বরের পর সর্বোচ্চ। আমানতের সুদহার ব্যাপকহারে বেড়ে যাওয়ার কারণে এমন পরিস্থিতি হয়েছে। এদিকে আমদানি-রপ্তানিসহ প্রায় সব ধরনের ব্যবসা-বাণিজ্য ব্যাংকের টাকায় পরিচালিত হয়। এসব কার্যক্রমের জন্য চুক্তি মোতাবেক অর্থ চেয়ে পাচ্ছেন না উদ্যোক্তারা। ফলে বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এতে অর্থনীতিতে ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাবের আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। বিভিন্ন ব্যাংকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রায় সব ব্যাংকই আমানতের সুদহার বাড়িয়েছে। বিশেষ করে যেসব ব্যাংকের আমানত তুলনামূলক কম তারা বেশি বাড়িয়েছে। বেসরকারি খাতের নতুন প্রজন্মের ব্যাংকগুলো এক্ষেত্রে বেশি এগিয়ে রয়েছে। ক্ষেত্রবিশেষে সুদ ১৩ শতাংশের পর্যন্তও দেয়া হচ্ছে। যা গত এক মাস আগেও ৯ শতাংশের মধ্যে ছিল। অন্যদিকে নতুন ব্যাংকের পাশাপাশি পুরনো ব্যাংকগুলোও আমানতে এখন ১০ থেকে ১১ শতাংশ পর্যন্ত সুদ দিচ্ছে। এদিকে ব্যাংক আরোপিত এ টার্গেট পূরণ করতে না পারায় সিটি ব্যাংকের ৭০০ কর্মকর্তাকে সতর্কবার্তা দেয়া হয়েছে। চিঠিতে আমানতের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণেরও হুমকি দেয়া হয়। আর এ নিয়ে চরম অস্বস্তিতে রয়েছে ব্যাংকটির কর্মকর্তারা। ই-মেইল বার্তায় পাঠানো ওই চিঠিতে টার্গেট পূরণের জন্য নির্দেশনা দেয়ার পাশাপাশি পূরণ না করতে পারলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণেরও হুমকি দেয়া হয়। এমন একটি চিঠি পাওয়া সিটি ব্যাংকের এক কর্মকর্তা জানান, চরম আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, শাখায় যারা কাজ করেন, তাদের জন্য টার্গেট বেশি। আর প্রধান কার্যালয়ের জন্য টার্গেট অনেক শিথিল। অপর এক কর্মকর্তা বলেন, ব্যাংকিংয়ে তারল্য সংকট নতুন নয়। বেসরকারি অনেক ব্যাংকেই সংকট চলছে। ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদ সে বিষয়ে পদক্ষেপ নিচ্ছে। কিন্তু এখানে ওষুধ ও বিমা কোম্পানির মতো ব্যাংকারদের এফডিআর সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেয়া হচ্ছে, যা উদ্বেগজনক। লক্ষ্য নিয়ে আমরাও কাজ করছি; কিন্তু এখানে তড়িঘড়িটা বেশি। এতে বাড়তি চাপ তৈরি হচ্ছে। কয়েক যুগ ধরে কাজ করছি, কিন্তু এর আগে এমন বাজে অবস্থায় পড়তে হয়নি। এদিকে চিঠি না দিলেও অন্যান্য বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে কর্মকর্তাদের ওপর মৌখিকভাবে চাপ অব্যহত রয়েছে। টার্গেট পূরণ না করলে পদোন্নতিসহ নানা সুবিধা বঞ্চিত হতে পারেন তারা।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, গত বছরের শেষের দিকে ব্যাংকিং খাতে এক লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা অলস তারল্য ছিল। গত কয়েক মাসে ঋণ বিতরণের ফলে তা ৮৬ হাজার কোটি টাকায় নেমে এসেছে। এর মধ্যে বেশিরভাগ ঋণই গেছে সরকারি ব্যাংক থেকে। গত বছর ব্যাংকগুলো ৮৫ হাজার ৯১১ কোটি টাকা আমানত সংগ্রহ করে। কিন্তু ঋণ বিতরণ করেছে এক লাখ ৩১ হাজার ৩২৩ কোটি টাকা। এতে আমানতের তুলনায় ৪৫ হাজার ৪১২ কোটি টাকা বেশি ঋণ বিতরণ হওয়ায় অলস অর্থ চলে গেছে। এদিকে তারল্য সংকট মোকাবিলায় এরই মধ্যে আকর্ষণীয় মুনাফায় আমানত সংগ্রহের ঘোষণা দিয়ে অধিকাংশ বেসরকারি ব্যাংক মাঠে নেমেছে। ব্যাংকগুলো আগের চেয়ে ২ থেকে ৩ শতাংশ পর্যন্ত আমানতের সুদহার বাড়িয়েছে।
ব্যাংকগুলোতে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, বেসরকারি একটি ব্যাংকের মধ্যম সারির একজন কর্মকর্তার গড়ে প্রতি মাসে ৫০ লাখ টাকা আমানত সংগ্রহের টার্গেট দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ দিনে প্রায় দুই লাখ টাকা করে আমানত সংগ্রহ করতে হবে এ সারির একজন ব্যাংকারকে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আরো বেশি। ফলে ব্যাপক মানসিক চাপে রয়েছেন ব্যাংকাররা। ব্যাংকের তারল্য সংকট এখন এমনই দাঁড়িয়েছে যে, দৈনন্দিন প্রয়োজন মেটানোর মতো অর্থও অনেক ব্যাংকে নেই। ফলে অন্য ব্যাংকের কাছ থেকে ধার নিয়ে প্রয়োজনীয় কাজ সারতে হচ্ছে। এজন্য আন্তঃব্যাংক কলমানি সুদহার প্রায় সাড়ে চার শতাংশ হয়ে গেছে, যা ২০১৫ সালের নভেম্বরের পর সর্বোচ্চ। আমানতের সুদহার ব্যাপকহারে বেড়ে যাওয়ার কারণে এমন পরিস্থিতি হয়েছে। এদিকে আমদানি-রপ্তানিসহ প্রায় সব ধরনের ব্যবসা-বাণিজ্য ব্যাংকের টাকায় পরিচালিত হয়। এসব কার্যক্রমের জন্য চুক্তি মোতাবেক অর্থ চেয়ে পাচ্ছেন না উদ্যোক্তারা। ফলে বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এতে অর্থনীতিতে ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাবের আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। বিভিন্ন ব্যাংকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রায় সব ব্যাংকই আমানতের সুদহার বাড়িয়েছে। বিশেষ করে যেসব ব্যাংকের আমানত তুলনামূলক কম তারা বেশি বাড়িয়েছে। বেসরকারি খাতের নতুন প্রজন্মের ব্যাংকগুলো এক্ষেত্রে বেশি এগিয়ে রয়েছে। ক্ষেত্রবিশেষে সুদ ১৩ শতাংশের পর্যন্তও দেয়া হচ্ছে। যা গত এক মাস আগেও ৯ শতাংশের মধ্যে ছিল। অন্যদিকে নতুন ব্যাংকের পাশাপাশি পুরনো ব্যাংকগুলোও আমানতে এখন ১০ থেকে ১১ শতাংশ পর্যন্ত সুদ দিচ্ছে। এদিকে ব্যাংক আরোপিত এ টার্গেট পূরণ করতে না পারায় সিটি ব্যাংকের ৭০০ কর্মকর্তাকে সতর্কবার্তা দেয়া হয়েছে। চিঠিতে আমানতের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণেরও হুমকি দেয়া হয়। আর এ নিয়ে চরম অস্বস্তিতে রয়েছে ব্যাংকটির কর্মকর্তারা। ই-মেইল বার্তায় পাঠানো ওই চিঠিতে টার্গেট পূরণের জন্য নির্দেশনা দেয়ার পাশাপাশি পূরণ না করতে পারলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণেরও হুমকি দেয়া হয়। এমন একটি চিঠি পাওয়া সিটি ব্যাংকের এক কর্মকর্তা জানান, চরম আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, শাখায় যারা কাজ করেন, তাদের জন্য টার্গেট বেশি। আর প্রধান কার্যালয়ের জন্য টার্গেট অনেক শিথিল। অপর এক কর্মকর্তা বলেন, ব্যাংকিংয়ে তারল্য সংকট নতুন নয়। বেসরকারি অনেক ব্যাংকেই সংকট চলছে। ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদ সে বিষয়ে পদক্ষেপ নিচ্ছে। কিন্তু এখানে ওষুধ ও বিমা কোম্পানির মতো ব্যাংকারদের এফডিআর সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেয়া হচ্ছে, যা উদ্বেগজনক। লক্ষ্য নিয়ে আমরাও কাজ করছি; কিন্তু এখানে তড়িঘড়িটা বেশি। এতে বাড়তি চাপ তৈরি হচ্ছে। কয়েক যুগ ধরে কাজ করছি, কিন্তু এর আগে এমন বাজে অবস্থায় পড়তে হয়নি। এদিকে চিঠি না দিলেও অন্যান্য বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে কর্মকর্তাদের ওপর মৌখিকভাবে চাপ অব্যহত রয়েছে। টার্গেট পূরণ না করলে পদোন্নতিসহ নানা সুবিধা বঞ্চিত হতে পারেন তারা।
No comments