নির্বাচনী কার্যক্রমকে ডিজিটাল করতে ইসির পরিকল্পনা by সিরাজুস সালেকিন
একাদশ
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কার্যক্রম স্বচ্ছ ও গতিশীল করতে অত্যাধুনিক
প্রযুক্তি ব্যবহার করতে চায় নির্বাচন কমিশন। এ লক্ষ্যে নির্বাচন
ব্যবস্থাপনা ও অফিস ব্যবস্থাপনাকে প্রযুক্তির আওতায় আনবে ইসি। গত বুধবার
ইসির ‘জাতীয় পরিচয়পত্র, ভোটার তালিকা এবং নির্বাচন ব্যবস্থাপনায়
তথ্য-প্রযুক্তির প্রয়োগ’ সংক্রান্ত বিশেষ কমিটির সভায় এ বিষয়ে একগুচ্ছ
সুপারিশ এসেছে। নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত
হোসেন চৌধুরী সভায় সভাপতিত্ব করেন। ইসি সূত্র জানায়, সুপারিশগুলো নিয়ে
কমিশনাররা আলোচনা করবেন। সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের পর কমিশন সভায় সুপারিশগুলো
উপস্থাপন করা হবে। কমিশন সভায় পাশ হলেই তা বাস্তবায়ন করা হবে। ইসি সূত্র
জানায়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে স্বচ্ছ ও গতিশীল করতে নির্বাচন
ব্যবস্থাপনাসহ প্রতিনিয়ত অফিস ব্যবস্থাপনায় যেসব ক্ষেত্রে প্রযুক্তির
ব্যবহার সম্ভব তা শনাক্ত করেছে এ সংক্রান্ত কমিটি। এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে
মাঠ পর্যায়ে নির্বাচন পরিচালনায় ট্যাব সরবরাহ করা হবে। ভোটকেন্দ্রগুলোতে এই
ট্যাব ব্যবহৃত হবে। ভোটের পরও নানা কাজে এই ট্যাব ব্যবহার করবে মাঠ
পর্যায়ের কর্মকর্তারা। ইসি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, একাদশ
সংসদ নির্বাচনে প্রায় ৪০ হাজারের বেশি ভোটকেন্দ্র স্থাপন হতে পারে। প্রতিটি
ভোটকেন্দ্রে একটি করে ট্যাব সরবরাহ হলে ৪০ হাজার ট্যাবের প্রয়োজন হবে।
ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের নিয়োগ যাতে প্রশ্নবিদ্ধ না হয় সেজন্য প্রযুক্তি
ব্যবহার করতে চায় ইসি। ইসির বিশেষ কমিটি মনে করে, একটি সফটওয়্যারের মাধ্যমে
এই কাজটি করা হলে নিয়োগ পদ্ধতি যেমন সহজতর হবে, তেমনি বাজেট ব্যবস্থাপনায়
স্বচ্ছতা নিশ্চিত হবে। একটি পোর্টালের মাধ্যমে সব প্রতিষ্ঠান থেকে সম্ভাব্য
ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের তথ্য সংগ্রহ করবে ইসি। পরবর্তীতে এই ডাটাবেজ হতে
যাচাই-বাছাই করে কেন্দ্র অনুযায়ী কর্মকর্তা নিয়োগ করে ওই পোর্টালের মাধ্যমে
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে জানিয়ে দেয়া হবে। ডিজিটালাইজেশনের অংশ হিসেবে আগামী
নির্বাচনে অনলাইনে প্রার্থীদের মনোনয়ন জমার সুযোগ দিতে চায় ইসি। এ পদ্ধতিতে
প্রার্থীরা একটি নির্দিষ্ট পোর্টালে তাদের মনোনয়নপত্র জমা দিবে। গত বছরের
জুলাইয়ে ইসির সঙ্গে রাজনৈতিক দলসমূহ, সুশীল সমাজ, গণমাধ্যম, পর্যবেক্ষক
সংস্থাসমূহ, নারীনেত্রী এবং নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের সংলাপে অনলাইনে মনোনয়ন
জমার ব্যাপারে আলোচনা হয় এবং সকলেই এর পক্ষে মত দেয়। এছাড়া নির্বাচন
পর্যবেক্ষকদের আবেদন গ্রহণ, তথ্য সংগ্রহ, নির্দেশনা প্রদান, তথ্য সরবরাহ,
আইডি প্রদান ও রিপোর্ট সংগ্রহ একটি পোর্টালের মাধ্যমে করা হবে। পোল মনিটরিং
এন্ড রিস্ক এনালাইসিস টিম গঠন করবে ইসি। প্রিসাইডিং অফিসাররা ইসি
সচিবালয়ের জন্য নির্ধারিত শর্টকোডে এসএমএস-এর মাধ্যমে কেন্দ্রের অবস্থা
জানাবেন। ইসির সার্ভারে এই মেসেজগুলো সংরক্ষিত থাকবে। প্রোগ্রামের মাধ্যমে
কোডগুলো ডিকোড করে প্রদর্শন করা হবে। নির্বাচনকে স্বচ্ছ করতে
কেন্দ্রভিত্তিক ফলাফল দ্রুত সংগ্রহের জন্য বিদ্যমান সফটওয়্যার আপডেট করতে
চায় কমিশন। একই সঙ্গে কমিশন তাৎক্ষণিকভাবে ওয়েবসাইটে ফলাফল প্রকাশ করতে
চায়। ইতিমধ্যে নির্বাচন কমিশন ওয়েব বেজড জিআইএস অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করে
সীমানা পুনর্গঠনের কাজ করছে। এই প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে ভোটকেন্দ্রের ফলাফল,
ভোট চলাকালীন পরিবেশ ম্যাপের প্রদর্শন করতে চায় কমিশন। এজন্য ডাটাবেজে
ভোটকেন্দ্রের ভৌগোলিক অবস্থান সংযোজন প্রয়োজন বলে মনে করছে ইসির কমিটি।
নির্বাচনী মামলা, মানবসম্পদ উন্নয়ন, ইসি সচিবালয় ও মাঠ পর্যায়ের দপ্তর
সমূহের স্থায়ী ও অস্থায়ী সম্পদসমূহের সুষ্ঠু ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে
ইনভেন্টরি অ্যান্ড অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম প্রণয়ন জরুরি বলে সুপারিশ
করেছে কমিটি। এতে কেন্দ্রীয়ভাবে স্থায়ী ও অস্থায়ী সম্পদসমূহের অবস্থান,
মজুদ, চাহিদা প্রেরণ, বিতরণ, অকেজো ঘোষণাকরণ, বাজেট বরাদ্দকরণ প্রভৃতি বিষয়
সুনিপুণভাবে করা সম্ভব বলে সুপারিশে বলা হয়েছে। ইসি সূত্র জানায়, ২০০৮ সাল
থেকে ইসি সচিবালয় ও মাঠ পর্যায়ের অফিসসমূহের মধ্যে সার্বক্ষণিক যোগাযোগের
জন্য মোবাইল ডাটা নেটওয়ার্কের মাধ্যমে একটি ভিপিএন চালু আছে। মাঠ পর্যায়ের
কর্মকর্তাদের সঙ্গে সচিবালয়ের প্রয়োজনীয় নোটিশ, চিঠিপত্র ও ফাইল
আদান-প্রদানের জন্য ২০০৯ সালে একটি ইন্ট্রানেট পোর্টাল চালু করা হয়। এই
সিস্টেমটিও আপগ্রেড করতে চায় ইসির বিশেষ কমিটি। ইসি কর্মকর্তারা জানান,
নির্বাচন ব্যবস্থাপনা ও অফিস ব্যবস্থাপনায় এসব সফটওয়্যারসমূহ বাস্তবায়ন
করতে হলে সফটওয়্যারের সঙ্গে হার্ডওয়্যার ক্রয়ের প্রয়োজন। ইসির ওই কমিটি এসব
সফটওয়্যার প্রণয়নের সম্ভাব্য টাইমলাইন এবং হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার ক্রয়ের
বাজেট উপস্থাপন করেছে।
No comments