সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য খালেদার মুক্তি ও সংলাপ প্রয়োজন -কূটনীতিকদের বিএনপি
বিএনপি
আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে কিনা- দলটির নেতাদের কাছে জানতে চেয়েছেন
কূটনীতিকরা। দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল কূটনীতিকদের ব্রিফ করে
বিএনপি। এ সময় কূটনীতিকদের তরফে এমন প্রশ্ন আসে। জবাবে সুষ্ঠু নির্বাচনের
জন্য খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সংলাপের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেছে বিএনপি।
এর আগে বিকেল সোয়া ৪টায় গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এ
বৈঠক শুরু হয়ে ঘণ্টাব্যাপী চলে। বৈঠকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম
আলমগীর কূটনীতিকদের লিখিত ব্রিফ করেন। বৈঠকে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়-
বিএনপি একটি উদারপন্থি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। তারা গণতান্ত্রিক ধারায়
বিশ্বাস করেন এবং অনুধাবন করেন একমাত্র গণতান্ত্রিক পথেই শান্তিপূর্ণ উপায়ে
ক্ষমতার রদবদল হতে পারে। বিএনপি বিশ্বাস করে-দেশের বর্তমান রাজনৈতিক
পরিস্থিতিতে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও সকলের
অংশগ্রহণের পরিবেশ দরকার। আর এর সমাধানের জন্য একমাত্র পথ হচ্ছে সংলাপ, যা
ক্ষমতাসীন দলের উদ্যোগে সম্ভব। এর আগে তারা দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার
মুক্তির দাবি করেন। তারা বলেছেন, সুষ্ঠু নির্বাচন আর গণতান্ত্রিক ধারা
অব্যাহত রাখতে খালেদা জিয়াকে অবশ্যই মুক্তি দিতে হবে। খালেদা জিয়ার মামলা ও
তার জামিন নিয়ে আইনি জটিলতা, বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ওপর সরকার ও
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্যাতন এবং আগামী জাতীয় নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে
বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশি কূটনীতিকদের ব্রিফ করেছেন বিএনপির সিনিয়র নেতারা। এ
সময় তারা দলের নেতাকর্মীদের ওপর সরকারের নির্যাতনের বিভিন্ন স্থির চিত্র
ডকুমেন্টও সরবরাহ করেন। স্থির চিত্রের মধ্যে সম্প্রতি রিমান্ডের পর
কারাগারে নিহত ছাত্রনেতা জাকির হোসেন মিলনসহ বিএনপি নেতা সৈয়দ মোয়াজ্জেম
হোসেন আলাল, শফিউল বারী বাবু, মিজানুর রহমান রাজ, নারায়ণগঞ্জের নেতা
অধ্যাপক মামুন আহমেদসহ আরো অনেক নেতাকে আটক করার ৪০টি স্থিরচিত্র রয়েছে।
বিএনপি চেয়ারপারসনসহ দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অব্যাহত মামলা দায়ের,
বিচার প্রক্রিয়া এবং সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরে মির্জা আলমগীর বলেন, আগামী
সংসদ নির্বাচনে অযোগ্য ও অংশগ্রহণ থেকে দূরে রাখতেই রাজনৈতিক
উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মিথ্যা ও সৃজনকৃত কাগজপত্রের মাধ্যমে জিয়া অরফানেজ
ট্রাস্ট মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে সাজা দেয়া হয়েছে। কারাগারে
প্রথম শ্রেণির বন্দি হিসেবে প্রাপ্ত সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে।
তাকে শতাব্দী পুরনো পরিত্যক্ত কারাগারে রাখা রয়েছে। সরকার তাকে শারীরিক ও
মানসিকভাবে নির্যাতন করছে। মানবাধিকার ও মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন করা হচ্ছে।
কূটনীতিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা নিশ্চয় দেখছেন জামিনযোগ্য মামলায়
খালেদা জিয়ার জামিন প্রক্রিয়া কিভাবে প্রলম্বিত করা হচ্ছে। নিম্নআদালত থেকে
যথাসময়ে রায়ের কপি দেয়া হয়নি। কপি পেতে ১১ দিন লেগেছে। এ বিলম্ব প্রমাণ
করে তখনও রায় লেখা হচ্ছিল বা পরিবর্তন করা হচ্ছিল। আওয়ামী লীগ সরকার
বিচারব্যবস্থা প্রভাবিত করছে। বিএনপি মহাসচিব বলেছেন, হাইকোর্টেও জামিন
প্রক্রিয়ায় পদে পদে বিলম্ব করা হয়েছে। এধরনের স্বল্প রায়ের ক্ষেত্রে নিম্ন
আদালতে নথির জন্য জামিনের অপেক্ষা করে না হাইকোর্ট। এখানে সেটা হয়েছে।
খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা, বয়স, কম সাজা ৪টি গ্রাউন্ডে হাইকোর্ট তাকে
চার মাসের অন্তবর্তীকালীন জামিন দিয়েছেন। সেই সঙ্গে চূড়ান্ত আপিল শুনানির
জন্য পেপারবুক তৈরির নির্দেশও দিয়েছেন। অন্যদিকে জামিন দেয়ার পরপরই উচ্চ
আদালতের বিপক্ষে সরকার ও দুদক আপিল বিভাগে যায়। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ
মাহমুদ হোসেন শুনানি করতে দেননি। তিনি কেবল প্রধান সরকারি কৌঁসুলি ও দুদকের
আইনজীবীর শুনানি শুনেছেন। আগামী ৮ই মে পর্যন্ত তার জামিন স্থগিত করেছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেছেন- বর্তমান সরকার সংসদ, নির্বাচন কমিশন, দুদক, সরকারি
কর্ম-কমিশনসহ সব সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দিয়েছে। বিচারবিভাগ,
পুলিশ ও অন্যান্য আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাসহ প্রশাসনকে পুরোপুরিভাবে দলীয়করণ
করেছে। যার কারণে সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহাকে পদত্যাগ ও দেশত্যাগে
বাধ্য করা হয়েছে। সরকার সবকিছুই নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে ফেলেছে। এ অবস্থায়
বিচারবিভাগসহ সব প্রতিষ্ঠানে স্বাধীন ও ভীতিহীনভাবে কাজ করা অসম্ভব হয়ে
পড়েছে। পুরো সমাজ আজ ভয়ের মধ্যে কাটাচ্ছে। মির্জা আলমগীর বলেন, আমাদের
নেত্রী খালেদা জিয়া দেড় মাস ধরে কারাগারে আছেন। জামিন পাবেন কিনা সেটার
জন্য আরো দেড় মাস অপেক্ষা করতে হবে। তার বিরুদ্ধে ৩৬টি মিথ্যা ও রাজনৈতিক
মামলা রয়েছে। এসব মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হচ্ছে। বিএনপি মহাসচিব
বলেন, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে এসব মামলা ও বিচারের মাধ্যমে তার নেতৃত্বাধীন
রাজনৈতিক দল বিএনপির কর্মী-সমর্থকদের ক্ষেপিয়ে তুলে সহিংসতার পথে ঠেলে দিতে
চায় সরকার। যাতে করে সরকার তাদের ওপর দমন অভিযান চালাতে পারে। বিএনপি
শান্তিপূর্ণভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলা করছে। আমরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন
করে আসছি। তিনি বলেন, বিএনপি আইনের শাসন ও দিপক্ষীয় বোঝাপড়ায় ও গঠনমূলক
আলোচনায় বিশ্বাসী। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের গণতান্ত্রিক চর্চার সকল
সুযোগ ও মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। আমাদের সভা-সমাবেশ করতে দেয়া
হচ্ছে না। নাগরিক নিরাপত্তার নামে আমাদের শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন, কালোপতাকা
প্রদর্শনের মতো কর্মসূচিও পালন করতে বাধা দিচ্ছে। কর্মসূচি পালন করতে
গেলেই পুলিশ, র্যাবসহ আইনপ্রয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায়
বিএনপি নেতাকর্মীদের সন্ত্রাসী কায়দায় আক্রমণ করছে। অথচ প্রধানমন্ত্রী
রাষ্ট্রীয় খরচে সকল সুযোগ-সুবিধা নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণায় নেমে পড়েছেন।
তিনি মানুষের কাছে ভোট চাইছেন। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে- বিএনপি মাঠে নামলেই
যেন সরকারের ভোট কমে যাবে। বক্তব্যের শেষে দেশের গুরুত্বপূর্ণ কিছু সমস্যার
কথা উল্লেখ করেন তিনি। মহাসচিবের লিখিত বক্তব্যের পর নরওয়ের কূটনীতিক
প্রশ্ন করেন- আগামী একাদশ নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে কিনা? -এর জবাবে
শুরুতে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, প্রশ্নটা
এভাবে করলে ভালো হতো- আগামী নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণের পরিবেশ ও সুযোগ
আছে কি না? এরপর মহাসচিব মির্জা আলমগীর জাতীয় নির্বাচনের বিভিন্ন বাধা
উল্লেখ করে প্রশ্নের উত্তর দেন। তার উত্তরে দেশের বর্তমান রাজনৈতিক
পরিস্থিতি, মানবাধিকার, আইন ও বিচার বিভাগের ওপর সরকারি হস্তক্ষেপের নানা
দিক তুলে ধরেন। বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের মামলা-হামলা, রিমান্ড ও কারাগার
নিয়ে দীর্ঘ বক্তব্য রাখেন। কূটনৈতিকদের সঙ্গে বৈঠক শেষে এক চা চক্রে মিলিত
হন নেতারা।
গণতন্ত্রহীন দেশে উন্নয়নশীল তকমা অর্থহীন: মওদুদ
কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক শেষে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, যেখানে গণতন্ত্র নেই, সেখানে উন্নয়নশীল দেশ অর্থহীন। দেশে একলাখ নতুন বেকার হয়েছে। গত নয় বছরে দুর্নীতি হয়েছে সীমাহীন। সরকারের কোনো জবাবদিহিতা নেই। আজকে কিছু মানুষের হাতে অনেক টাকা, আর কিছু মানুষ আরো দরিদ্র হচ্ছে। আগামী নির্বাচন সম্পর্কে ব্যারিস্টার মওদুদ বলেন, বিএনপি আগামীতে এমন একটা নির্বাচন চায়, যে নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করতে পারবে। সবাই সমান সুযোগ-সুবিধার অধিকারী হবে। আর বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে গণতন্ত্র ফিরে আসবে। সারা দেশে প্রধানমন্ত্রীর সফর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রীয় খরচে সকল সুযোগ-সুবিধা নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণায় নেমে পড়েছেন। তিনি মানুষের কাছে ভোট চাইছেন। একই সঙ্গে উন্নয়নমূলক অনেক প্রকল্প উদ্বোধন করছেন। এসব অনৈতিক ও নির্বাচনীবিধি বহির্ভূত। কারণ নির্বাচনীবিধিতে আছে নির্বাচনের সময় কোনো উন্নয়নমূলক কাজ বা প্রতিশ্রুতি কেউ ভোটারদের দিতে পারবেন না। প্রধানমন্ত্রী অবশ্যই ভোট চাইতে পারেন। যদি তিনি আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হিসেবে জনসভা করতেন। নিজস্ব খরচে যদি জনসভা করতেন। সেখানে সরকারের সব সুযোগ সুবিধাগুলো না নিতেন। কিন্তু এখানে সেটা হয়নি। ব্যারিস্টার মওদুদ বলেন, একদিকে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন, অন্যদিকে তার বড় প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে কারাগারে আটকে রেখেছেন। সারা দেশের মানুষ জানে খালেদা জিয়া সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী। খালেদা জিয়া যতবার নির্বাচন করেছেন ততবার জয়লাভ করেছেন। এক্ষেত্রে জনপ্রিয়তার দিক থেকে প্রধানমন্ত্রীর তুলনায় খালেদা জিয়ার রেকর্ড অনেক ভালো। সরকারকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসনকে জেলে রাখবেন। একটা দলকে একেবারে কোনো সুযোগ-সুবিধা দেয়া হবে না। নেতাকর্মীদের বিভিন্নভাবে হয়রানি করা হবে। একটি ছোট্ট ঘরোয়া বৈঠকও করতে দেয়া হবে না- এটা তো হতে পারে না। তিনি বলেন, আজকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সব দল জনসভা করছে। এমনকি ছোট ছোট রাজনৈতিক দলগুলোও ওখানে সভা করার অনুমতি পাচ্ছে। তাতে তাদের কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু বিএনপিকে কেন করতে দেয়া হচ্ছে না। নির্বাচনী প্রচারণা বন্ধে সরকারকে চিঠি না দেয়ায় নির্বাচন কমিশনের সমালোচনা করেন প্রবীণ এ রাজনীতিক। তিনি বলেন, আজকে যদি নির্বাচন কমিশন সত্যিকারের অর্থে নিরপেক্ষ হতো তাহলে সরকারকে চিঠি দিতো। সংবিধানে তো এটা লেখা নেই যে সরকারকে তারা চিঠি দিতে পারবে না। তারা চিঠি লিখে সরকারের দৃৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারে। এ সময় বিএনপিকেও নির্বাচনী প্রচারণার সুযোগ দেয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, খালেদা জিয়া যাতে মানুষের কাছে যেতে পারে সেটা আশা করি। এ সুযোগ থেকে বিএনপি বঞ্চিত হলে তা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের পরিপন্থী হবে। এটা দেশের জন্য মঙ্গলজনক নয়। কূটনীতিকদের ব্রিফে সৌদি আরব, সুইজারল্যান্ড, সুইডেন, স্পেনের রাষ্ট্রদূত, অস্ট্রেলিয়া, তুরস্ক, জাপান, নেদারল্যান্ডসের ডেপুটি রাষ্ট্রদূত, নরওয়ে, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, ইউএস এইডের কান্ট্রি ডিরেক্টরসহ আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরা এতে অংশ নেন। অন্যদিকে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, মির্জা আব্বাস, ড. আবদুল মঈন খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা রিয়াজ রহমান, সাবিহউদ্দিন আহমেদ, বিশেষ সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন, আন্তর্জাতিক সম্পাদক ব্যারিস্টার নওশাদ জমির, সহ-আন্তর্জাতিক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা, ফাহিমা নাসরিন মুন্নী, নির্বাহী সদস্য তাবিথ আউয়াল কূটনীতিকদের ব্রিফে অংশ নেন। এর আগে একইদিন বেলা সোয়া ১১টার দিকে ভারতের একটি মিডিয়া টিমের সঙ্গে এক ঘণ্টার বৈঠক করেছেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও ইসমাইল জবিউল্লাহ।
গণতন্ত্রহীন দেশে উন্নয়নশীল তকমা অর্থহীন: মওদুদ
কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক শেষে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, যেখানে গণতন্ত্র নেই, সেখানে উন্নয়নশীল দেশ অর্থহীন। দেশে একলাখ নতুন বেকার হয়েছে। গত নয় বছরে দুর্নীতি হয়েছে সীমাহীন। সরকারের কোনো জবাবদিহিতা নেই। আজকে কিছু মানুষের হাতে অনেক টাকা, আর কিছু মানুষ আরো দরিদ্র হচ্ছে। আগামী নির্বাচন সম্পর্কে ব্যারিস্টার মওদুদ বলেন, বিএনপি আগামীতে এমন একটা নির্বাচন চায়, যে নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করতে পারবে। সবাই সমান সুযোগ-সুবিধার অধিকারী হবে। আর বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে গণতন্ত্র ফিরে আসবে। সারা দেশে প্রধানমন্ত্রীর সফর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রীয় খরচে সকল সুযোগ-সুবিধা নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণায় নেমে পড়েছেন। তিনি মানুষের কাছে ভোট চাইছেন। একই সঙ্গে উন্নয়নমূলক অনেক প্রকল্প উদ্বোধন করছেন। এসব অনৈতিক ও নির্বাচনীবিধি বহির্ভূত। কারণ নির্বাচনীবিধিতে আছে নির্বাচনের সময় কোনো উন্নয়নমূলক কাজ বা প্রতিশ্রুতি কেউ ভোটারদের দিতে পারবেন না। প্রধানমন্ত্রী অবশ্যই ভোট চাইতে পারেন। যদি তিনি আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হিসেবে জনসভা করতেন। নিজস্ব খরচে যদি জনসভা করতেন। সেখানে সরকারের সব সুযোগ সুবিধাগুলো না নিতেন। কিন্তু এখানে সেটা হয়নি। ব্যারিস্টার মওদুদ বলেন, একদিকে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন, অন্যদিকে তার বড় প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে কারাগারে আটকে রেখেছেন। সারা দেশের মানুষ জানে খালেদা জিয়া সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী। খালেদা জিয়া যতবার নির্বাচন করেছেন ততবার জয়লাভ করেছেন। এক্ষেত্রে জনপ্রিয়তার দিক থেকে প্রধানমন্ত্রীর তুলনায় খালেদা জিয়ার রেকর্ড অনেক ভালো। সরকারকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসনকে জেলে রাখবেন। একটা দলকে একেবারে কোনো সুযোগ-সুবিধা দেয়া হবে না। নেতাকর্মীদের বিভিন্নভাবে হয়রানি করা হবে। একটি ছোট্ট ঘরোয়া বৈঠকও করতে দেয়া হবে না- এটা তো হতে পারে না। তিনি বলেন, আজকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সব দল জনসভা করছে। এমনকি ছোট ছোট রাজনৈতিক দলগুলোও ওখানে সভা করার অনুমতি পাচ্ছে। তাতে তাদের কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু বিএনপিকে কেন করতে দেয়া হচ্ছে না। নির্বাচনী প্রচারণা বন্ধে সরকারকে চিঠি না দেয়ায় নির্বাচন কমিশনের সমালোচনা করেন প্রবীণ এ রাজনীতিক। তিনি বলেন, আজকে যদি নির্বাচন কমিশন সত্যিকারের অর্থে নিরপেক্ষ হতো তাহলে সরকারকে চিঠি দিতো। সংবিধানে তো এটা লেখা নেই যে সরকারকে তারা চিঠি দিতে পারবে না। তারা চিঠি লিখে সরকারের দৃৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারে। এ সময় বিএনপিকেও নির্বাচনী প্রচারণার সুযোগ দেয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, খালেদা জিয়া যাতে মানুষের কাছে যেতে পারে সেটা আশা করি। এ সুযোগ থেকে বিএনপি বঞ্চিত হলে তা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের পরিপন্থী হবে। এটা দেশের জন্য মঙ্গলজনক নয়। কূটনীতিকদের ব্রিফে সৌদি আরব, সুইজারল্যান্ড, সুইডেন, স্পেনের রাষ্ট্রদূত, অস্ট্রেলিয়া, তুরস্ক, জাপান, নেদারল্যান্ডসের ডেপুটি রাষ্ট্রদূত, নরওয়ে, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, ইউএস এইডের কান্ট্রি ডিরেক্টরসহ আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরা এতে অংশ নেন। অন্যদিকে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, মির্জা আব্বাস, ড. আবদুল মঈন খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা রিয়াজ রহমান, সাবিহউদ্দিন আহমেদ, বিশেষ সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন, আন্তর্জাতিক সম্পাদক ব্যারিস্টার নওশাদ জমির, সহ-আন্তর্জাতিক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা, ফাহিমা নাসরিন মুন্নী, নির্বাহী সদস্য তাবিথ আউয়াল কূটনীতিকদের ব্রিফে অংশ নেন। এর আগে একইদিন বেলা সোয়া ১১টার দিকে ভারতের একটি মিডিয়া টিমের সঙ্গে এক ঘণ্টার বৈঠক করেছেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও ইসমাইল জবিউল্লাহ।
No comments