এক বছরে ১০,০০০ কোটি টাকার মোবাইল হ্যান্ডসেট আমদানি by কাজী সোহাগ
গত
বছর প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার মোবাইল হ্যান্ডসেট আমদানি করা হয়েছে। এ
থেকে সরকারের কোষাগারে জমা দেয়া হয়েছে ১৫শ’ কোটি টাকা। আর মোট হ্যান্ডসেট
আনা হয়েছে প্রায় সাড়ে তিন কোটি। বাংলাদেশ মুঠোফোন আমদানিকারক এসোসিয়েশন
(বিএমপিআইএ)-এর ৭০ জন সদস্য এবং সদস্য নন এমন ২০টি প্রতিষ্ঠান এই পণ্য
আমদানি করেছেন। এদিকে গতবছর সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়েছে ৩ হাজার থেকে ৬ হাজার
টাকা দামের ফোন। এ থেকে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩৪ ভাগ। অন্যদিকে স্থবিরতা এসেছে
স্মার্টফোনের প্রবৃদ্ধিতে। ২০১৬ সালে স্মার্টফোনে প্রবৃদ্ধি এসেছিলো ৩৭
ভাগ। ২০১৭ সালে সেখানে মাত্র ১ ভাগ। ইন্টারনেটের ক্রমাগত বিস্তৃতির
প্রেক্ষিতে স্মার্টফোনের এই প্রবৃদ্ধির নেতিবাচক প্রবণতার অন্যতম কারণ।
বিএমপিআইএ’র ২০১৭ সালের ব্যবসায়িক প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
প্রতিষ্ঠানটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাজারমূল্য বিবেচনায় দেখা যায়, মোবাইল
ফোন বাজারের প্রায় ৬৮ ভাগ দখল করে রেখেছে স্মার্টফোন। আর ফিচার ফোনের দখলে
মাত্র ৩২ ভাগ। ২০১৭ সালের বাংলাদেশের বাজারে প্রায় ২০টি স্মার্টফোন
ব্র্যান্ডের অস্তিত্ব দেখা যায়। তবে বাজারে প্রাধান্য বিস্তার করে রেখেছে
সিম্ফোনি, স্যামসাং, হুয়াওয়ে, ওয়ালটন, লাভা, অপ্পো, আইটেল, মাইক্রোম্যাক্স,
উই, শাওমি ও নকিয়া। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের
এক প্রধান নিয়ামক হচ্ছে সারা দেশে ইন্টারনেটের বিস্তার। এ পর্যন্ত দেশের
আনাচে-কানাচে ইন্টারনেটের সহজলভ্য ও অনেক ক্ষেত্রে একমাত্র প্রযুক্তি হচ্ছে
মোবাইল ইন্টারনেট। মোবাইলকে ভিত্তি করেই সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে
ইন্টারনেটের যাবতীয় সুবিধা। আর এ কারণেই স্মার্টফোনের চাহিদা ঊর্ধ্বমুখী।
২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসের পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেশে সক্রিয় ইন্টারনেট
গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ৮ কোটি। যার মধ্যে সাড়ে সাত কোটিই ব্যবহার করেন মোবাইল
ইন্টারনেট। এতে বলা হয়েছে, চলতি বছরের শুরুতেই বাংলাদেশে শুরু হয়েছে
চতুর্থ প্রজন্মের মোবাইল ইন্টারনেট প্রযুক্তি (ফোর-জি)। শীর্ষস্থানীয়
মোবাইল ফোন আমদানিকারকরা এরইমধ্যে দেশের বাজারে নিয়ে এসেছেন বিভিন্ন দাম ও
মানের ফোর-জি সুবিধা সংবলিত হ্যান্ডসেট। এরই আলোকে দেশে সম্প্রতি চালু
হয়েছে নানা ধরনের ই-কমার্স সেবা, দৈনন্দিন বাজার থেকে শুরু করে খাবার
অর্ডার দেয়া, রাইড শেয়ারিং, বিল পরিশোধ, অর্থ আদান-প্রদান সবই এখন হচ্ছে
মোবাইল ফোনের মাধ্যমে। ইন্টারনেটের বিস্তৃতি এসব সেবার পরিধি আরো বিস্তৃত
করবে। মোবাইল আমদানিকারকরা নিত্যনতুন সুবিধা সংবলিত হ্যান্ডসেট অল্প সময়ে
দেশের বাজারে সহজলভ্য করে ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা
রাখছে। বিএমপিআইএ’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের মোবাইল শিল্পের
ইতিহাসে ২০১৭ সাল একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে। কারণ ওই বছরে সরকার দেশে
হ্যান্ডসেট সংযোজন ও তৈরির নির্দেশনা ও অনুমোদন দেয়া শুরু করে। ফলে
শীর্ষস্থানীয় মোবাইল ফোন আমদানিকারকদের অনেকেই স্থানীয়ভাবে মোবাইল ফোন
সংযোজন ও তৈরিতে আগ্রহী হয়। এরইমধ্যে বাংলাদেশে তৈরি হ্যান্ডসেট বাজারে
এসেছে। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে কয়েকটি ব্র্যান্ডের দেশে তৈরি হ্যান্ডসেট
বাজারে আসবে। এতে মোবাইল ফোন আরো সহজলভ্য হয়ে উঠবে। এদিকে নতুন বছরে
বেশকিছু দিকনির্দেশনা দিয়েছে বিএমপিআইএ। প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, ২০১৭ সালের
জুলাই মাস থেকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বাংলাদেশে সকল মোবাইল আমদানিকারকের
জন্য বিএমপিআইএ’র সদস্যপদ বাধ্যতামূলক করেছে। বিএমপিআইএ’র লক্ষ্য হচ্ছে
সমস্ত মোবাইল তৈরি ও আমদানিকারকদের একটি প্ল্যাটফরমে নিয়ে এসে মোবাইল
শিল্পকে একটি সুশৃঙ্খল, মানসম্মত ও দায়বদ্ধ শিল্প হিসেবে গড়ে তোলা।
ব্যবসায়িক উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের পাশাপাশি ভোক্তার অধিকার সংরক্ষণ ও সরকারের
রাজস্ব নিশ্চিত করাও বিএমপিআইএ’র সদস্যদের দায়িত্ব। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,
দেশে হ্যান্ডসেট উৎপাদন শুরু হয়েছে। প্রথমদিকে নানারকম অসুবিধা থাকবে।
বিএমপিআইএ তার সদস্যদের সুবিধা-অসুবিধা নীতিনির্ধারকদের কাছে তুলে ধরে
নীতিমালাকে আরো সহায়ক করে তোলার প্রয়াস নেবে। পাশাপাশি বাংলাদেশে তৈরি
হ্যান্ডসেট বিদেশে রপ্তানির প্রয়োজনীয় নীতিমালা প্রণয়নে বিএমপিআইএ উদ্যোগ
নেবে। এতে আরো বলা হয়েছে, হ্যান্ডসেট সংযোজন কারখানা স্থাপন অনেক
ব্যয়সাপেক্ষ বিষয়। ছোট ব্যবসায়ীদের অনেকেই এই বিশাল ব্যয় নির্বাহ করতে
পারবেন না। সদস্যদের চাহিদার ভিত্তিতে বিএমপিআইএ প্রয়োজনে ‘শেয়ার্ড ল্যাব’
স্থাপনের পরিকল্পনা নিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, দেশের সকল হ্যান্ডসেটের
একটি ডাটাবেজ তৈরির পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে। বিএমপিআইএ এই উদ্যোগের সঙ্গে
ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এটি বাস্তবায়িত হলে একদিকে যেমন চোরাই পথে নিকৃষ্ট
মানের মোবাইল হ্যান্ডসেট আসা বন্ধ হবে। অন্যদিকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে
সংঘটিত অনেক অপরাধ নির্মূল করা সম্ভব হবে।
No comments