মৌলভীবাজার বিএনপিতে ঐক্যের সুর by ইমাদ উদ দীন
ঐক্যপ্রক্রিয়ায়
এগোচ্ছে মৌলভীবাজার জেলা বিএনপি। বিভক্ত হওয়া নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার
জোর প্রচেষ্টা চলছে। ঐক্য প্রক্রিয়ার এ খবরটি এখন নেতাকর্মীদের মুখে মুখে।
জানা গেল দলের জেলা কমিটির কয়েকজন দায়িত্বশীল নেতা ঐক্য প্রক্রিয়ার এ
গুরুদায়িত্ব পালন করছেন। তাদের অব্যাহত এই প্রচেষ্টা বেশ সফলও হচ্ছে।
মঙ্গলবার রাতে জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ফয়জুল করিম ময়ূনের বাসায় জেলা
বিএনপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দের বৈঠকের একটি ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হচ্ছে। ঐক্যের
জন্য সকলের এমন সম্মিলিত বৈঠকের ছবি দেখে উজ্জীবিত হয়েছেন নেতাকর্মীরা।
ফেসবুকে ওই ছবি দিয়ে নেতাকর্মীরা শুভ কামনা জানিয়ে স্ট্যাটাসও দিচ্ছেন। এই
ঐক্যের প্রক্রিয়াকে তারা সাধুবাদও জানাচ্ছেন। দীর্ঘদিন থেকে জেলা বিএনপির
নেতাকর্মীদের ভেদাভেদ ছিল দৃশ্যমান। পৃথক ভাবে কেন্দ্রীয় কর্মসূচি পালন
ছাড়াও স্থানীয় কর্মসূচিও পালিত হতো আলাদাভাবে। এনিয়ে দলের কর্মী-সমর্থকদের
ক্ষোভের অন্ত ছিল না। গ্রুপিং-দ্বন্দ্ব চলমান থাকায় পৃথকভাবে দলীয় কর্মসূচি
পালনের কারণে রাজপথের আন্দোলন তেমন দৃশ্যমান হতো না। পৃথক পৃথক এমন
কর্মসূচি পালনে বরং নেতিবাচক প্রভাব পড়তো নেতাকর্মীদের মনে। জেলা কমিটির
এমন গ্রুপিং-দ্বন্দ্ব ছড়াচ্ছিল উপজেলাতেও। আর তার প্রভাবও পড়ছিল দলের অঙ্গ ও
সহযোগী সংগঠনেও। দিন দিন এই গ্রুপিং-দ্বন্দ্ব হচ্ছিল প্রকট। জাতীয়
নির্বাচন ও আন্দোলনকে সামনে রেখে তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকদের অনুরোধে
দ্বন্দ্ব নিরসনে উদ্যোগী হন জেলা কমিটির সিনিয়র কয়েকজন নেতা। তাদের
উদ্যোগের পর থেকে বরফ গলতে শুরু করে মান-অভিমানে থাকা অধিকাংশ নেতাকর্মীর।
কাঙ্ক্ষিত এই ঐক্য প্রচেষ্টা চলমান থাকায় কর্মী-সমর্থকরা উজ্জীবিত হচ্ছেন।
এজন্যই আগের চেয়ে এখন আন্দোলনে নেতাকর্মীদের দেখা মিলছে রাজপথে। এমনটিই
জানালেন জেলা বিএনপির দায়িত্বশীল কয়েকজন নেতা। সমপ্রতি দলের চেয়ারপারসন
কারারুদ্ধ হওয়ার পর থেকে জেলা শহরের রাজপথে পৃথক পৃথক ভাবে হলেও চোখে পড়ছে
বিএনপির আন্দোলন। জানা গেল দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া সিলেট সফরের
সময় থেকেই এই পরিবর্তনের সূচনা। এরপর থেকেই ধীরে ধীরে মাঠে আন্দোলনে পরিচিত
দৃশ্যপটে পরিবর্তন আসতে শুরু করে। জেলা ও উপজেলায় নেতাকর্মীদের পক্ষ থেকে
দাবি উঠে দলের দুর্দিনে ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের। দাবি উঠে
ঐক্যবদ্ধ হওয়ার। তৃণমূলের কর্মীরা বলছেন একাধিক গ্রুপে বিভক্ত হয়ে আন্দোলন
করায় কেন্দ্রীয় কর্মসূচি পালিত হচ্ছে ঠিকই কিন্তু সাধারণ মানুষকে আন্দোলনে
সম্পৃক্ত করা যাচ্ছে কম। তাছাড়া মিছিল-মিটিং ও সমাবেশে কলেবরও বড় হচ্ছে না।
এর ফলে আন্দোলনের সফলতাও হচ্ছে না দৃশ্যমান। তাই রাজপথের এই আন্দোলনগুলো
হয়ে উঠছে অনেকটা দায়সারা গোছের। তাদের এমন যৌক্তিক দাবির প্রয়োজনীয়তা
উপলব্ধিতে নিয়ে ও তাদের প্রতি একাত্মতা জানিয়ে আরো জোরালো হয় ঐক্য
প্রচেষ্টা। এরই ধারাবাহিকতায় জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি সাবেক পৌর মেয়র ফয়জুল
করিম ময়ূন, জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ইউপি
চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন মাতুক ও তাদের নেতৃত্বে থাকা একটি গ্রুপের
সঙ্গে মান-অভিমান নিরসনে সম্প্রতি বৈঠক হয়। ফলপ্রসূ এ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন
জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক এমপি এম নাসের রহমান, জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি
মৌলভী ওয়ালী সিদ্দিকী, আলহাজ মো. আব্দুল মুকিত, আশিক মোশারফ, জেলা বিএনপির
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আনোয়ার আক্তার শিউলি, সাংগঠনিক সম্পাদক
বকশী মিসবাউর রহমান, সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. ফখরুল ইসলাম,
জেলা বিএনপির সাবেক সদস্য মো. মোজাহিদ খান, সাবেক জেলা ছাত্রদলের সাধারণ
সম্পাদক নুরুল আলম নোমানসহ অনেকেই। এছাড়া বিভক্ত থাকা জেলা ছাত্রদলের একটি
বড় অংশও এই ঐক্য প্রক্রিয়ায় একীভূত হচ্ছে। যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলও ঐকমত্য
পোষণ করে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। জেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক ও
কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক জাকির হোসেন উজ্জ্বল বলেন দলের
দুর্দিনে সকলের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই। আমাদের অভিভাবক সংগঠন
জেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দের সঙ্গে জেলা ছাত্রদলের নেতাকর্মীরাও ভেদাভেদ ভুলে
সামনের দিনগুলোতে রাজপথের আন্দোলনে এক সঙ্গে থাকবে। জেলা বিএনপির
সাংগঠনিক সম্পাদক বকশী মিসবাউর রহমান বলেন- বড় দল তাই পদ-পদবি নিয়ে
মান-অভিমান থাকাটা খুবই স্বাভাবিক। জেলা সভাপতির নির্দেশে আমরা ঐক্য
প্রক্রিয়া চালাচ্ছি। নেতাকর্মীদের সঙ্গে একাধিক বৈঠকও হচ্ছে। বৈঠক সফলও
হয়েছে। আশা করি কিছু দিনের মধ্যে এ প্রচেষ্টায় পুরোটা সফল হবো। মান-অভিমান
ভুলে দেশ, দল ও জনগণের স্বার্থে সকলেই গণতন্ত্র রক্ষার আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধ
ভাবে মাঠে সক্রিয় থাকবো। জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ও সাবেক পৌর মেয়র ফয়জুল
করিম ময়ূন বলেন, দলের দুর্দিনে ভেদাভেদ ভুলে মাঠে কাজ করতে চাই। আশা করি
আগামী দিনের আন্দোলনে মাঠে আমাদের সকলকে একসঙ্গে দেখতে পাবেন বলে আশা করছি।
ঐক্যের লক্ষ্যে সে প্রক্রিয়ায় নেতাকর্মীদের মান- অভিমান ভাঙাতে কাজ চলছে।
তবে জেলা ও উপজেলার অনেক নেতাকর্মীর দাবি দলের দ্বন্দ্বের কারণে নয়,
রাজনৈতিক একাধিক মিথ্যা মামলায় নেতাকর্মীরা নিষ্ক্রিয় হয়ে বাড়িঘর ছেড়ে
অন্যত্র আছেন। তাই আন্দোলনে নেতাকর্মীরা মাঠে থাকছেন কম। এজন্য দলের
অভ্যন্তরীণ কোন্দলকে কিছুটা দায়ী করলেও বলছেন অভিভাবক সংগঠন বিএনপির
ভেদাভেদ দূর হলে অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোও চাঙ্গা হয়ে উঠবে। তখন আন্দোলনও
সফল হবে। তাদের প্রত্যাশা দলের স্বার্থে শিগগিরই চলমান গ্রুপিং-দ্বন্দ্ব
নিরসন হবে।
No comments