জাপান উপকূলে ভেসে আসছে ‘ভুতুড়ে জাহাজ’
জাপানের
উত্তরাঞ্চলের সমুদ্র উপকূলে আরেকটি ‘মৃতদেহ বোঝাই’ নৌকা ভাসমান অবস্থায়
পাওয়া গেছে। এগুলোকে ভুতুড়ে জাহাজ বলা হয়। এ নিয়ে এ মাসে এমন মোট চারটি
নৌকা পাওয়া গেল। চলতি বছর এ ধরনের ৫৯টি ভুতুড়ে জাহাজ জাপান উপকূলে এসেছে।
ধারণা করা হচ্ছে, এগুলো উত্তর কোরিয়া থেকে এসেছে। গত রোববার জাপানের
উত্তরাঞ্চলের আকিতা উপকূলে ভাঙাচোরা এ নৌকাটিকে ভাসতে দেখা যায়। স্থানীয়
পুলিশ পরে সেই নৌকা থেকে আটটি মৃতদেহ উদ্ধার করে। বেশির ভাগ মৃতদেহ পচে গলে
গিয়েছিল, যা থেকে ধারণা করা যায় অনেক দিন ধরেই মৃতদেহ নিয়ে নৌকাটি সমুদ্রে
ভাসছে। পুলিশ জানায়, ২০ মিটার লম্বা নৌকার গঠন ও মাস্তুল দেখে নৌকাটিকে
কোরীয় বলে শনাক্ত করা যায়। এ ছাড়াও নৌকায় উত্তর কোরিয়ায় তৈরি সিগারেটের
প্যাকেটও পাওয়া গেছে। যদিও এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য
করা হয়নি, তবে আগের মতোই এ নৌকাটিও উত্তর কোরিয়া থেকে এসেছে বলে ধারণা করা
হচ্ছে। নভেম্বরের ২৩ তারিখ আকিতা অঞ্চলের এক বাসিন্দা রাতের বেলা উপকূলের
কাছে অপরিচিত মানুষ দেখে পুলিশকে জানান। পরে সেই ব্যক্তিকে জেরা করে তিনি
যে উত্তর কোরিয়ার বাসিন্দা সে বিষয়ে নিশ্চিত হয় পুলিশ। এর আগে গত সপ্তাহে
একই অঞ্চলের সাদো দ্বীপের কাছ থেকে আরেকটি নৌকা উদ্ধার হয়েছিল। সেটিতে দুটি
মৃতদেহ পাওয়া যায়। এ ছাড়া, নভেম্বরের শুরুর দিকে জাপানের সমুদ্রসীমায়
উত্তর কোরিয়ার আরেকটি নৌকা ডুবে যায়। পরে জাপানের কোস্টগার্ড তিনজনকে জীবিত
উদ্ধার করতে সক্ষম হয়, বাকি ১৫ জন নৌকারোহীর খোঁজ পাওয়া যায়নি। আকিতার
আন্তর্জাতিক বিষয়ক সরকারি সংস্থার প্রধান তাকেশি সুমান ডয়চে ভেলেকে বলেন,
‘এখানকার মানুষ নিশ্চিতভাবেই উদ্বিগ্ন। আমরা শুনেছি, এগুলো সবই উত্তর
কোরিয়া থেকে আসছে। তবে এখনও কিছু নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এখানকার বাসিন্দাদের
অপরিচিতদের ব্যাপারে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করেন
তাকেমি সুমা। চিফ ক্যাবিনেট সেক্রেটারি ইওশিহিদে সুগা বলেন, জাপানের সমুদ্র
এলাকা পাহারায় কাজ করছে কোস্টগার্ড ও পুলিশ। সরকার পরিস্থিতির উন্নয়ন
ঘটাতে চায়, যাতে সন্দেহজনক কোনো নৌকা বা মানুষ জাপানে ঢুকতে না পারে।
জাপানের টেমপেল বিশ্ববিদ্যালয়ের এশিয়ান স্টাডিজ বিভাগের পরিচালক জেফ কিংসটন
ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘এ মুহূর্তে উত্তর কোরিয়ার খাদ্য ঘাটতির অবস্থা
হতাশাজনক এবং বিভিন্ন খবরে আমরা জানছি যে, বেশি মাছের আশায় দূর সমুদ্রে
পাড়ি জমাচ্ছেন অনেকে। কারণ, কাছাকাছি সমুদ্র এলাকায় মাছ পাওয়া যাচ্ছে না।
সরকার অনেক অংশ আবার চাইনিজ ফিশিং ফ্লিটকে লিজ দিয়েছে। এ সব কাঠের ডিঙি
নৌকা উত্তাল সমুদ্রের উপযোগী নয়। বেশির ভাগ জেলের দূর সমুদ্রে মাছ ধরার
দক্ষতাও থাকে না। অনেক মানুষের জীবন এভাবে বিপন্ন হয়ে পড়ছে।’ বেশির ভাগ
ক্ষেত্রে মাঝ সমুদ্রে ইঞ্জিন বিকল হয়ে গেলে হাওয়া ও ঢেউয়ের ওপর ভরসা করে
কূলে পৌঁছানো ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না। সেজন্যই দিনের পর দিন ভাসতে
ভাসতে আরোহীরা মারা যায় এবং দীর্ঘদিন পর গলিত মৃতদেহসহ নৌকাগুলো উপকূলে এসে
পৌঁছায়।
No comments