ঈশ্বরগঞ্জে অতিথি পাখিতে মুখরিত নদী অববাহিকা
প্রতিবছর
শীত এলেই নদী-নালা, জলাশয়, বিল, হাওড়-বাওড়, ডোবা কিংবা বড় পুকুরে সকাল
সন্ধ্যায় ছুটোছুটি আর ডানা ঝাপটায় নানা রংবেরঙের নাম না জানা অসংখ্য পাখি।
সেগুলো আমাদের কাছে অতিথি পাখি হিসেবে পরিচিত। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে এই
পাখিরা ঝাঁকে ঝাঁকে আমাদের দেশে হাজির হয় নিজেদের জীবন বাঁচাতে।
প্রতিবছরের ন্যায় এবারও ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন নদ-নদী ও বিল
গুলোতে আগমন ঘটেছে অতিথি পাখির। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা মিলে
অতিথি পাখির। এর মধ্যে উপজেলা সদর দিয়ে বয়ে যাওয়া কাঁচামাটিয়া নদীর বিভিন্ন
পয়েন্টে, উচাখিলা ও রাজিবপুর ইউনিয়নের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ব্রহ্মপুত্র
নদের অববাহিকায়, তারুন্দিয়া ইউনিয়নের কেইলা বিল, মাইজবাগ ইউনিয়নের কাতলা
বিলে অতিথি পাখির আগমন ঘটে বেশি। জানা যায়, পৃথিবীতে প্রায় ৫ লাখ প্রজাতির
পাখি আছে। এসব পাখিদের মধ্যে অনেক প্রজাতিই বছরের একটি নির্দিষ্ট সময় অন্য
দেশে চলে যায়। শুধু ইউরোপ আর এশিয়ায় আছে প্রায় ৬০০ প্রজাতির পাখি। কিছু
কিছু পাখি তাই প্রতিবছর ২২ হাজার মাইল পথ অনায়াসে পাড়ি দিয়ে চলে যায়
দূরদেশে। উত্তর মেরু অঞ্চলের এক জাতীয় সামুদ্রিক শঙ্খচিল প্রতিবছর এই
দূরত্ব অতিক্রম করে দক্ষিণ দিকে চলে আসে। আমাদের দেশে অতিথি পাখিরা অতটা পথ
পাড়ি না দিলেও তারাও অনেক দূর থেকেই আসে। বরফ শুভ্র হিমালয় এবং হিমালয়ের
ওপাশ থেকেই বেশির ভাগ অতিথি পাখির আগমন ঘটে। এসব পাখিরা হিমালয়ের পাদদেশে
অবস্থিত তিব্বতের লাদাখ থেকে সেন্ট্রাল এশিয়ান ইন্ডিয়ান ফ্লাইওয়ে দিয়ে
প্রবেশ করে। এ ছাড়া ইউরোপ, সূদুর সাইবেরিয়া থেকেও এসব পাখি আসে। এরা কিছু
সময় পর আবার ফিরে যায় নিজ দেশে। এসব পাখিদের মধ্যে এ অঞ্চলে বেশ পরিচিত
অতিথি পাখি বালি হাঁস। এছাড়া ও ধূসর ও গোলাপি রাজহাঁস, বুনো হাঁস,
পাতিহাঁস, বুটিহাঁস, কালোহাঁস, খয়রা চকাচকি, ছোট সারস পাখি, বড় সারস পাখি,
হেরন, নিশাচর হেরন, কার্লিউ, ডুবুরি পাখি, গায়ক রেন পাখি, কাদাখোঁচা,
রাজসরালি, নর্দান পিনটেইল, পাতিকুট, বিলুপ্ত প্রায় প্যালাস ফিস ঈগল ,
গ্যাডওয়াল, পিনটেইল, নরদাম সুবেলার, কমন পোচার্ড ,লেঞ্জা, চিতি, সরালি,
বৈকাল, নীলশীর পিয়াং, পান্তামুখি, রাঙামুড়ি, পেড়িভুতি, গিরিয়া, খঞ্জনা,
পাতারি, পাতিবাটান, পানি মুরগি, নর্থ গিরিয়া, কমনচিল, কটনচিল, ও জলপিপি
উল্লেখযোগ্য। শীতপ্রধান এলাকায় এ সময়টাতে তাপমাত্রা অধিকাংশ সময় শূন্যেরও
বেশ নিচে থাকে । ফলে শীত এলে এরা সহ্য করতে না পেরে যে সব দেশে শীত
অপেক্ষাকৃত কম সেখানে চলে যায়। এছাড়া শীতপ্রধান এলাকায় এ সময়টাতে খাবারের
মারাত্মক সংকট দেখা দেয়। এরপরও মরার উপর খরার ঘা হয়ে দেখা দেয় তুষারপাত।
ফলে শীত এলেই হিমালয়ের আশপাশের কিছু অঞ্চলসহ এশিয়ার কিছু অঞ্চল, ইউরোপ,
সাইবেরিয়া ও উত্তর মেরুর অঞ্চলের পাখিরা ঝাঁকে ঝাঁকে চলে আসে অপেক্ষাকৃত কম
শীত প্রধান অঞ্চল গুলোতে। মার্চ-এপ্রিলের দিকে শীতপ্রধান অঞ্চলের বরফ গলতে
শুরুহলে অতিথি পাখিরা নিজ দেশে ফিরে যায়।
No comments