বাসায় যাওয়া ৩ যুবক ছিল মুখোশধারী
নিখোঁজের
দু’দিনেও সন্ধান মেলেনি সাবেক রাষ্ট্রদূত ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক
অতিরিক্ত সচিব এম মারুফ জামানের। রহস্যজনক কারণে মুখ খুলছে না পরিবার। তবে
বুধবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মারুফ জামান ফিরে না আসায় উদ্বেগ প্রকাশ
করেছেন পরিবারের সদস্যরা। তার নিখোঁজের পর বাসার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ
করেছে পুলিশ। ওই ফুটেজে দেখা যায়, মাথায় ক্যাপ ও মুখোশ পরে বাসায় প্রবেশ
করেছে তিন যুবক। ওই ফুটেজ দেখে তাদের শনাক্ত করা যায়নি বলে দাবি করেছে
পুলিশ। তবে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। নিখোঁজের আগে ৭টা ১৬
মিনিটের দিকে তার সর্বশেষ অবস্থান দেখা গেছে বিমানবন্দরের কাওলা এলাকায়।
তাকে উদ্ধারে কাজ শুরু করেছে থানা পুলিশের পাশাপাশি কাউন্টার টেরোরিজম
ইউনিট, ডিবিসহ অন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও। নিখোঁজের নেপথ্যে তার
অতীত কর্মকাণ্ড বিশেষ করে জঙ্গিবাদ, সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত
কিনা, কারও সঙ্গে আর্থিক লেনদেন কিংবা পারিবারিক দ্বন্দ্ব ছিল কিনা- এ
বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অন্যদিকে, মারুফ জামান নিখোঁজের পর থেকে
মুক্তিপণের দাবিতেও কোনো ফোন আসেনি পরিবারের সদস্যদের কাছে। এর আগে ৪
ডিসেম্বর বেলজিয়াম ফেরত ছোট মেয়ে সামিহা জামানকে বিমানবন্দর থেকে আনতে গিয়ে
নিখোঁজ হন সাবেক রাষ্ট্রদূত মারুফ জামান। বিমানবন্দর থেকে মেয়েকে
ধানমণ্ডির বাসায় আনার কথা ছিল তার। মেয়েকে আনতে তিনি সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে
৬টার দিকে বাসা থেকে বের হন। এরপর থেকে তাকে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
পরিবারের পক্ষ থেকে সাবেক রাষ্ট্রদূত মারফ জামানের সন্ধান চেয়ে রাজধানীর
ধানমণ্ডি থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে। পরে খিলক্ষেত থানা পুলিশ
পরিত্যক্ত অবস্থায় তিনশ’ ফিট এলাকার রাস্তা থেকে তার প্রাইভেট কারটি উদ্ধার
করে। ধানমণ্ডি জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার আবদুল্লাহ কাফী যুগান্তরকে
বলেন, জামানকে উদ্ধারে চেষ্টা চলছে। এখন পর্যন্ত তার সন্ধান মেলেনি।
ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার ও কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল
ক্রাইম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, নিখোঁজের বিষয়ে থানায় সাধারণ
ডায়েরি হয়েছে। থানা পুলিশের পাশাপাশি কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট ও ডিবি তদন্ত
করেছে। পরিবারের পক্ষ থেকে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, তার ছোট মেয়ে সামিহা
জামানকে হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে নিয়ে আসার জন্য
সন্ধ্যা ৬টার দিকে ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে বের হন। তারপর রাত পৌনে ৮টার দিকে
বাসার ল্যান্ডফোনে অজ্ঞাত নম্বর থেকে গৃহপরিচারিকাকে জানান যে তার বাসার
কম্পিউটার নিতে কেউ আসবে। তার কিছুক্ষণ পর রাত ৮টা ৫ মিনিটের দিকে তিনজন
সুঠামদেহী ভদ্রলোক বাসায় এসে তার ল্যাপটপ, কম্পিউটারের সিপিইউ, ক্যামেরা ও
একটি স্মার্টফোন নিয়ে যায় এবং তার ঘরে তল্লাশি চালায়। তারপর থেকে মারুফ
জামানের সঙ্গে আর যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তার ব্যবহৃত ফোন নম্বরটি বন্ধ
রয়েছে। এমতাবস্থায় পরিবারের সদস্যরা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। ধানমণ্ডিতে
পৈতৃক জমিতে ছয় তলা ভবনের তৃতীয় তলায় মারুফ জামান থাকেন। ওই বাড়ির পঞ্চম
তলায় থাকেন তার ছোট ভাই রিফাত জামান। মারুফ জামান ১৯৭৭ সালে সেনাবাহিনীতে
সিগন্যাল কোরের ‘ষষ্ঠ শর্ট কোর্সে’ ক্যাপ্টেন হিসেবে যোগ দেন।
পরে শারীরিক
অসুস্থতার কারণে তিনি ওই চাকরি থেকে চলে আসেন। ১৯৮২ সালে আর্মি থেকেই ফরেন
সার্ভিসে যোগ দেন। প্রথম দিকে লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনের ফার্স্ট
সেক্রেটারি ছিলেন। পরে ২০০৭ সালের পর থেকে কাতারে এবং তারপর ভিয়েতনামে
বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ছিলেন। মারুফ জামান সর্বশেষ বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব
ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্রাটেজিক স্টাডিজে (বিআইএসএস) অতিরিক্ত
মহাপরিচালক ছিলেন। ২০১৩ সালে অতিরিক্ত সচিব হিসেবে অবসরে যান তিনি।
সিসিটিভি ফুটেজের তিন সুঠামদেহীকে খুঁজছে পুলিশ : সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ
করে দেখা গেছে, রাত ৮টার পরপরই বাসায় ঢোকে তিন ব্যক্তি। মারুফ জামান ঘর
থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর কারা এসে তার ল্যাপটপ নিয়ে গিয়েছিল তাদের খুঁজছে
পুলিশ। থানার ওসি মো. আবদুল লতিফ বুধবার যুগান্তরকে বলেন, ওই যুবকদের মুখ
ঢাকা ছিল বলে তাদের এখনও শনাক্ত করা যায়নি। সর্বশেষ অবস্থান বিমানবন্দরের
কাওলায় : মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তারা যুগান্তরকে জানান, নিখোঁজের আগে
মারুফ জামানের সর্বশেষ অবস্থান ছিল বিমানবন্দরের কাওলা এলাকায়। সেখান থেকেই
বাসার বাসার ল্যান্ডফোনে কাজের মেয়ে লাকীর সঙ্গে দু’দফা কথা বলেন তিনি।
এরপর থেকেই তার ব্যবহৃত ফোন নম্বরটি বন্ধ পাওয়া গেছে। ৭ নভেম্বর রাজধানীর
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোবাশ্বর হাসান নিখোঁজ হন। এর আগে
নিখোঁজ হন সাংবাদিক উৎপল দাস। এক মাস হতে না হতে আবার নিখোঁজ হলেন সাবেক
রাষ্ট্রদূত মারুফ জামান।
No comments