একটি অস্ত্রও উদ্ধার হয়নি
তিন
মাসের মধ্যে চট্টগ্রামে আলোচিত দুটি হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অবৈধ অস্ত্র
উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। এ ছাড়া সাড়ে চার বছর আগে নগরের সিআরবি (রেলওয়ে
পূর্বাঞ্চলের সদর দপ্তর) এলাকায় রেলওয়ের কোটি টাকার দরপত্র জমা দেওয়া নিয়ে
সংঘর্ষে দুজন নিহত হওয়ার ঘটনায় ব্যবহৃত অস্ত্রের হদিস এখনো পায়নি পুলিশ।
প্রথম দুটি খুনের কারণ কী তাও বের করা যায়নি। খুনের ঘটনায় ব্যবহার করা অবৈধ
অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যর্থতা বলে
মন্তব্য করেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক
আখতার কবির চৌধুরী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, হত্যা মামলায় অপরাধ প্রমাণের
জন্য আলামত উদ্ধার গুরুত্বপূর্ণ। যে অস্ত্র দিয়ে হত্যা করা বা আতঙ্ক ছড়ানো
হয় তা উদ্ধার করতে না পারলে প্রকৃত আসামিরা পার পেয়ে যেতে পারে। আবার
তদন্তে ঘটনার নেপথ্যের ব্যক্তিরা শনাক্ত না হলে অপরাধ বেড়ে যায়। সিআরবির
জোড়া খুনের চার বছর পরও অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা বড় ব্যর্থতা। ২০১৩
সালের ২৪ জুন যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির তৎকালীন সদস্য হেলাল আকবর চৌধুরী
ওরফে বাবর এবং ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির তৎকালীন সহসম্পাদক সাইফুল আলম
ওরফে লিমনের অনুসারী নেতা-কর্মীদের মধ্যে নগরের সিআরবি এলাকায় সংঘর্ষ হয়।
এতে নিহত হন যুবলীগের কর্মী সাজু পালিত এবং শিশু মো. আরমান। বর্তমানে
মামলাটি তদন্ত করছেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) চট্টগ্রামের
পরিদর্শক জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বলেন, সংঘর্ষের সময় ব্যবহৃত অস্ত্রগুলোর খোঁজ
এখন পর্যন্ত পাননি তাঁরা। এই মামলার তদন্ত চার বছরেও শেষ হয়নি। আসামিদের
প্রায় সবাই যুবলীগ ও ছাত্রলীগের প্রভাবশালী নেতা-কর্মী হওয়ায় নিহত দুজনের
স্বজনেরাও বিচারের আশা ছেড়ে দিয়েছেন। এই মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া ৬২ আসামির
সবাই জামিনে বেরিয়ে গেছেন। নিহত সাজু পালিতের মা মিনতি পালিত বিচারের আশা
ছেড়ে দিয়েছেন। গত ৬ অক্টোবর নগরের নালাপাড়ায় চট্টগ্রাম নগর ছাত্রলীগের
সহসম্পাদক সুদীপ্ত বিশ্বাসকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। চলে যাওয়ার সময়
হত্যাকারীরা ফাঁকা গুলি ছুড়ে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে দেয়। পুলিশ বলছে,
হত্যাকাণ্ডে ৩০ জন অংশ নেন। তাঁরা মোটরসাইকেল ও অটোরিকশা করে নগরের লালখান
বাজার এলাকা থেকে নালাপাড়ায় যান। তাঁদের কয়েকজনের কোমরে গোঁজা ছিল অস্ত্র।
এই ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া চারজনের মধ্যে দুজন আদালতে জবানবন্দিতে তাঁদের
কয়েকজনের সঙ্গে সেদিন অস্ত্র থাকার কথা স্বীকার করেন। এই মামলার তদন্ত
কর্মকর্তা সদরঘাট থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রুহুল আমিন বলেন, যাঁদের সঙ্গে
অস্ত্র ছিল তাঁদের শনাক্ত করতে পেরেছেন তাঁরা।
অস্ত্র উদ্ধারেরও চেষ্টা
চলছে। নিহত সুদীপ্তের বাবা মেঘনাথ বিশ্বাস বলেন, এতগুলো লোক তাঁর ছেলেকে
হত্যার পর গুলি ছুড়ে পালিয়ে গেল। আর পুলিশ কিছুই করতে পারছে না। সবশেষ গত
রোববার কদমতলী এলাকায় পরিবহন ব্যবসায়ী হারুন অর রশিদকে তাঁর ব্যবসায়িক
কার্যালয়ে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। এ ঘটনায় ব্যবহৃত অস্ত্রের সন্ধানও পায়নি
পুলিশ। হারুন যুবদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তাঁর চাচা চট্টগ্রাম নগর
বিএনপির প্রয়াত সাধারণ সম্পাদক দস্তগীর চৌধুরী। মামলার বাদী নিহত ব্যক্তির
বড় ভাই হুমায়ুন কবির চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশ ঘটনায় জড়িত কাউকে
ধরতে পারেনি। উদ্ধার করতে পারেনি অস্ত্রও। সদরঘাট থানার ওসি মর্জিনা আক্তার
বলেন, অস্ত্র উদ্ধার ও আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। আসামিদের শনাক্ত
করা গেছে কিনা প্রশ্নের জবাবে বলেন, এখনো বলার সময় হয়নি। এ ছাড়া গত ১২
জুলাই চট্টগ্রাম কলেজে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ছাত্রলীগের দুপক্ষের সংঘর্ষে
প্রকাশে৵ অস্ত্র উঁচিয়ে গুলি করেন এক যুবক। বিভিন্ন গণমাধ্যমে সেই ছবি ছাপা
হয়। কিন্তু পাঁচ মাস পার হলেও সেই যুবককে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
উদ্ধার হয়নি অস্ত্রটি। অস্ত্র উদ্ধারের পুলিশের ব্যর্থতায় ক্ষোভ প্রকাশ করে
চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি কফিল উদ্দিন চৌধুরী প্রথম
আলোকে বলেন, অপরাধীরা ক্ষমতাসীনদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে থাকার কারণে পুলিশ অনেক
সময় নীরব থাকে। যে কারণে হত্যায় ব্যবহৃত অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করা যায় না।
এভাবে চলতে থাকলে অপরাধ বাড়বে। মানুষের মধ্যেও নিরাপত্তাহীনতা কাজ করবে।
No comments