জেরুজালেম নিয়ে এত বিরোধ কেন? by মাহমুদ ফেরদৌস
ঠিক
১০০ বছর আগের কথা। ১৯১৭ সালের ডিসেম্বর মাস। অটোম্যান তুর্কিদের কাছ থেকে
এই দিনেই বৃটিশ জেনারেল এডমান্ড অ্যালেনবি জেরুজালেমের দখল নিয়ে নেন। সেদিন
জেনারেল অ্যালেনবি শহরের পবিত্রতার প্রতি সম্মান দেখিয়ে ভেতরে প্রবেশ করেন
খালি পায়ে। এরপর গত ১০০ বছর ধরে, জেরুজালেম নিয়ে নানা রকম লড়াই হয়েছে।
শুধু ইহুদী, খ্রিস্টান ও মুসলমানই নয়, বহিঃশক্তিও এসেছে সমীকরণে।
আধুনিক যুগে ইসরাইলি-ফিলিস্তিনি লড়াই তার অন্যতম।
নবী ইব্রাহিম (আ.) থেকে উদ্ভূত বড় তিন ধর্মের (ইসলাম, খ্রিস্ট, ইহুদি ধর্ম) কাছেই জেরুজালেম ভীষণ পবিত্র জায়গা। ইহুদীরা মনে করেন, এখানেই তাদের আদি নিবাস। এখানেই তাদের প্রথম ও দ্বিতীয় টেম্পল বা উপাসনালয় স্থাপিত হয়েছিল। অপরদিকে ইসলাম ধর্ম মতে, জেরুজালেমে অবস্থিত মসজিদ-উল-আকসা থেকে নবী মোহাম্মদ (সা.) মেরাজে গিয়ে আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাত করেছিলেন। খ্রিস্টান ধর্মমতে, ‘এখানেই যিশুখ্রিস্টের মৃত্যু হয়েছিল। তার সমাধিস্থলও এখানে।’
জেরুজালেম নিয়ে সংঘাত মূলত হাজার বছরের। রোমান সাম্রাজ্য ও ক্রুসেডস - সব কিছুর সাথে জড়িয়ে আছে এই শহরের নাম। কিন্তু এই শহর নিয়ে এখন যে সমস্যা চলছে, সেটি একেবারে নতুন ও স্বতন্ত্র। এখনকার সংঘাতের সঙ্গে ধর্ম যতটা গুরুত্বপূর্ণ, তার চেয়ে উপনিবেশবাদ, জাতীয়তাবাদের সংশ্লিষ্টতাও কম নয়।
ইসরাইলের হিব্রু বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহাসিক ভূগোলবিদ্যার অধ্যাপক ইয়েশুয়া বেন-আরিয়েহ মনে করেন, বৃটিশদের কারণেই জেরুজালেম এত গুরুত্বপূর্ণ হয়েছে। তারাই জেরুজালেমকে রাজধানী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। ইহুদীদের প্রথম বা দ্বিতীয় মন্দির নির্মাণের সময় থেকে জেরুজালেম কখনই কারো রাজধানী ছিল না।
জেনারেল অ্যালেনবি জেরুজালেম দখলে নেওয়ার পর তিন দশক বৃটিশরা এখানে শাসন করে। তখনই যায়নবাদী আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে বহু ইহুদী সেটেলার শহরটিতে পাড়ি জমাতে থাকে তৎকালীন বৃটিশ প্যালেস্টাইনে। স্থানীয় আরব জনগোষ্ঠীর কাছে তখন অটোম্যান সাম্রাজ্যের পতনের কারণে সৃষ্ট নতুন বাস্তবতা মেনে নেওয়া বৈ কোনো উপায় ছিল না। অটোম্যানরা ১৫১৭ সাল থেকে ১৯১৭ পর্যন্ত জেরুজালেম শাসন করেছে।
জেরুজালেম ইন্সটিটিউট ফর পলিসি রিসার্চ নামে একটি থিংক ট্যাংকের জ্যেষ্ঠ গবেষক অ্যামনন র্যামন বলেন, ‘মজার বিষয় হলো, প্রাথমিকভাবে যায়নবাদী চিন্তকরা কিন্তু জেরুজালেম, বিশেষ করে পবিত্র ওল্ড সিটি থেকে মুখ ফিরিয়ে রেখেছিলেন। প্রথম কারণ হলো জেরুজালেমকে মনে করা হতো ইসরাইলের বাইরে বসবাসরত ইহুদীদের প্রতীক। দ্বিতীয়ত, খ্রিস্টান ও ইসলাম ধর্মের পবিত্র স্থাপনা থাকায় এই শহরকে রাজধানী করে ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করায় জটিলতা ছিল।’
প্রথম দিককার বহু যায়নবাদী চিন্তক ছিলেন সেকুলার ও সমাজতন্ত্রী। ধর্মের চেয়ে বরং ইহুদী জাতীয়তাবাদ, আত্ম-নিয়ন্ত্রনাধিকার প্রতিষ্ঠা এবং নির্যাতন থেকে রেহাই পাওয়াই ছিল তাদের ইসরাইল রাষ্ট্র গঠনের প্রেরণা। ইংল্যান্ডের এক্সেটার বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত মধ্যপ্রাচ্যের ইতিহাস বিদ্যার অধ্যাপক মাইকেল ডাম্পার বলেন, ‘জেরুজালেম ছিল তখন নিশ্চলতার প্রতীক। এটিকে দেখা হতো ধর্মীয় রক্ষণশীলতার দিকে পশ্চাদপসরণের প্রতীক হিসেবে। তেল আবিব বরং তখন ছিল নতুন শহর। আধুনিকতার পুণ্যভূমি।’
তিনি আরও বলেন, আরবদের কাছে অটোম্যান সাম্রাজ্যের অধীনস্থ না থাকাটাই একটা বিরাট ব্যাপার ছিল। তারা নতুন করে সমাজকে বাঁধছিলেন নতুন বাস্তবতায়। স্থানীয় ফিলিস্তিনি অভিজাতরা ও জেরুজালেমের ফিলিস্তিনি বনেদী পরিবারগুলো থেকেই পরবর্তীতে ফিলিস্তিনি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের নেতারা উঠে আসেন। তখন হুট করেই ইহুদী অভিবাসনের হুমকি টের পেতে থাকে ফিলিস্তিন।
এই অভিবাসন রোখার চেষ্টা করতে গিয়ে ফিলিস্তিনি ও ইহুদীদের মধ্যে দাঙ্গাও বেধেছিল। ইহুদীরা প্রায়ই বৃটিশদের খেপিয়ে তুলতো। ১৯৩৯ সালের দিকে ফিলিস্তিনে ইহুদী অভিবাসন সীমিত করা হয়। কিন্তু ওই সময় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলছিল। ফলে অনেক ইহুদীই হিটলারের ইহুদী-নিধন বা হলোকাস্ট থেকে পালিয়ে আসতে চাচ্ছিল ফিলিস্তিনে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে জাতিসংঘ ফিলিস্তিন দু’ভাগে ভাগ করার সিদ্ধান্ত নেয়। একটি হবে ইহুদীদের রাষ্ট্র, অপরটি আরব ফিলিস্তিনিদের। ওই সিদ্ধান্ত মতে, জেরুজালেম শাসিত হওয়ার কথা একটি আন্তর্জাতিক বিশেষ কাঠামো অনুযায়ী। আরবরা ওই পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করে।
ইসরাইল ১৯৪৮ সালে তাদের স্বাধীনতা ঘোষণা করে। তার একদিন পরই আরব প্রতিবেশী দেশগুলো আক্রমণ করে ইসরাইলকে। কিন্তু আরবরা পরাজিত হয়। উভয় পক্ষের মিলিশিয়ারা সে সময় সহিংসতায় লিপ্ত ছিল। তখন বিপুল সংখ্যক আরব বাস্তুচ্যুত হয়।
যুদ্ধের পর জেরুজালেম দ্বিখণ্ডিত হয়। পশ্চিম অংশ দখলে নেয় ইসরাইল। ১৯৫০ সালে এক নতুন আইন অনুযায়ী এই পশ্চিম জেরুজালেম হয়ে উঠে ইসরাইলের রাজধানী। অপরদিকে পূর্ব জেরুজালেম, যেখানে পবিত্র ওল্ড সিটি ছিল, তা ছিল জর্দানের দখলে।
অধ্যাপক ডাম্পার বলেন, এই শহর নিয়ে তখন দুই দেশের চিন্তা ছিল না। ইসরাইল তখন তার উপকূলীয় অঞ্চল, অর্থাৎ হাইফা, তেল আবিব ও আশকেলনকে বাণিজ্যিক অঞ্চলে রূপান্তর করছিল। আর জর্দানের বাদশাহ প্রথম আবদুল্লাহ ছিলেন তার রাজধানী আম্মানের উন্নয়নে নিবিষ্ট।
ইলিনয় স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসবিদ ইসাম নাসারের মতে, জাতিসংঘ ও ইউরোপিয়ান শক্তিধর রাষ্ট্রগুলোর কারণে প্রথম দিককার ইসরাইল রাষ্ট্র জেরুজালেম নিয়ে বেশি মাথা ঘামাতে ইচ্ছুক ছিল না। জেরুজালেমকে আন্তর্জাতিকভাবে নিয়ন্ত্রণের ধারণা মেনে নিয়ে প্রথম দিককার ইসরাইলি নেতৃত্ব অন্যত্র দেশের রাজধানী স্থাপনের পরিকল্পনা করেন। এক্ষেত্রে হার্জলিয়া বা অন্য শহর তাদের পছন্দ ছিল। ড. র্যামন বলেন, ইসরাইলি নেতৃত্ব বুঝতে পেরেছিল জেরুজালেমের পবিত্র স্থাপনা তাদের হাতে না থাকলে লাভই বেশি।
তবে পশ্চিম জেরুজালেম দখলের পরের দুই দশকে ইসরাইল ধীরে ধীরে অনেক সরকারী স্থাপনাই শহরটিতে গড়ে তোলে। কিন্তু বিদেশী সরকারগুলো জেরুজালেমকে এড়িয়েই গেছে। জাতিসংঘের প্রস্তাবনার সমর্থনে তারা দূতাবাস স্থাপন করে তেল আবিবে।
এরপর এলো ১৯৬৭ সালের যুদ্ধ। এই যুদ্ধ এত প্রলয়ঙ্করী ছিল যে, জেরুজালেমকে নিয়ে আধুনিক বিরোধকে এর চেয়ে কোনো ঘটনাই বেশি প্রভাবিত করেনি। মাত্র ৬ দিনের মধ্যে ইসরাইল শুধুমাত্র আরব দেশগুলোকে পরাজিতই করেনি, তারা মিশরের কাছ থেকে গাজা তীর ও সিনাই উপত্যকা দখলে নিয়ে নেয়। জর্দানের কাছ থেকে নিয়ে নেয় পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেম। সিরিয়ার কাছ থেকে নেয় গোলান উপত্যকা।
ইসরাইলের বার-ইলান বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক অধ্যাপক মেনাচেম ক্লেইনের মতে, ১৯৬৭ সালের ওই যুদ্ধ ইতিহাসের বাক পরিবর্তন করে দেয় দুই ভাবে। প্রথম, এই যুদ্ধের বিশাল বিজয়! যুদ্ধের আগে সবসময় আতঙ্কে থাকতো ইসরাইল। কিন্তু যুদ্ধের পর দেশটি ভীষণ আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠে। পাশাপাশি, পবিত্র ওল্ড সিটি দখলে নেওয়ার মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব তো ছিলই।
ওল্ড সিটি দখলে নেওয়ার পর ইহুদীদের পবিত্র ওয়েস্টার্ন ওয়ালে (আল আকসা মসজিদের বাইরের একটি দেওয়াল) ইসরাইলি সেনাদের প্রার্থনার ছবি দেশটির জাতীয় মননে ভীষণ প্রভাব ফেলে। জর্দানের শাসনাধীন থাকার সময় এখানে আসতে পারতো না ইহুদীরা।
কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক আরব বিদ্যার অধ্যাপক রশিদ খালিদি বলেন, ‘জেরুজালেম হয়ে যায় কাল্টের মতো আরাধনার স্থান। এই স্থানের প্রতি এমন অনুরাগ আগে কখনই ছিল না। আর বর্তমানে এই অনুরাগ এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, ইসরাইলি রাজনীতিতে এখন চরম উগ্রপন্থী ধর্মীয় জাতীয়তাবাদীদের আধিপত্য। রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুই এখন ওয়েস্টার্ন ওয়াল।’
১৯৭৭ সালে ডানপন্থী লিকুদ পার্টি ইসরাইলের ক্ষমতায় আসে মেনাচিম বেগিনের নেতৃত্বে। এরপরই ইসরাইলি জাতি-পরিচয়ের সঙ্গে জেরুজালেমের সম্পর্ককে অবিচ্ছেদ্য হিসেবে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা হালে পানি পেতে থাকে। ইসরাইলের রাজনীতিতে ধর্মীয় সেটেলাররা আধিপত্য বিস্তার করতে থাকে। সেই থেকে এই প্রভাব আর কখনও কমেনি। পুরনো ধাঁচের সমাজতন্ত্রী যাদের শেকড় রাশিয়া ও পূর্ব ইউরোপে তারা হাল ছেড়ে দেয়। ইসরাইলের ক্ষমতা কুক্ষিগত হয় রক্ষণশীল ইহুদীদের হাতে যারা মধ্যপ্রাচ্য, উত্তর আফ্রিকা ও অন্যান্য অঞ্চল থেকে আগত।
এই পরিবর্তনের কারণে জেরুজালেমের প্রতীকী গুরুত্ব ইসরাইলে বেড়ে যায়। ইহুদী ইতিহাসে জেরুজালেমের ভূমিকা সামরিক কুচকাওয়াজ, পাঠ্যক্রমে গুরুত্বের সঙ্গে যুক্ত করা হয়। ইসরাইলের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে স্কুলছাত্রদের জেরুজালেম সফরে নিয়ে যাওয়া শুরু হয়।
এই জেরুজালেমকরণ তুঙ্গে উঠে ১৯৮০ সালে, যখন ইসরাইলি আইনপ্রণেতারা একটি বিল পাশ করেন, যাতে বলা হয়, ‘পূর্ণাঙ্গ ও ঐক্যবদ্ধ জেরুজালেমই ইসরাইলের রাজধানী।’ দখলে থাকলেও, ইসরাইল আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়ার আশঙ্কায় পূর্ব জেরুজালেম আত্মসাৎ (অ্যানেক্স) করা বা নিজ ভূখণ্ড হিসেবে দাবি করা থেকে বিরত থাকে।
১৯৯৩ সালে ফিলিস্তিনি ও ইসরাইলিদের মধ্যে অসলো চুক্তি আরেক গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। এর মাধ্যমেই প্রতিষ্ঠিত হয় ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ (প্যালেস্টিনিয়ান অথরিটি)। যাদের হাতে পশ্চিম তীর ও গাজা তীর শাসনের কর্তৃত্ব দেওয়া হয়। তবে তখন সীমান্ত, ফিলিস্তিনি শরণার্থী ও জেরুজালেমের মর্যাদার প্রশ্নে কোনো সমঝোতায় আসা যায়নি। কিন্তু তার পরের প্রায় ২৫ বছর দীর্ঘস্থায়ী চুক্তির সম্ভাবনা ধীরে ধীরে কমেছে।
২০০০ সালে ডানপন্থী রাজনীতিবিদ অ্যারিয়েল শ্যারন সফর করেন পবিত্র তীর্থস্থান (নোবল স্যাঙ্কচুয়ারি) বা আল হারাম আল কুদসি আল শরিফে। এখানেই মুসলমানদের পবিত্র আল আকসা মসজিদ ও ডোম অব দ্য রক অবস্থিত। ইহুদীদের কাছে এটি সেকেন্ড টেম্পল বা দ্বিতীয় মন্দিরস্থল হিসেবে পরিগণিত। অ্যারিয়েল শ্যারনের ওই সফরের কারণে জেরুজালেমে তীব্র সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। সৃষ্ট হয় দ্বিতীয় ফিলিস্তিনি ইন্তিফাদা। ৫ বছর ধরে চলমান এই সংঘাতে নিহত হয় প্রায় ৩ হাজার ফিলিস্তিনি ও ১ হাজার ইসরাইলি।
ফিলিস্তিনিরা বলছেন, ইহুদী সেটেলাররা পূর্ব জেরুজালেম ধীরে ধীরে দখলে নিচ্ছে। আর ইসরাইল পরিস্থিতি আরও জটিল করেছে জেরুজালেমে বসবাসরত ফিলিস্তিনিদের আবাসিক সনদ স্থগিত করার মাধ্যমে।
অধ্যাপক খালিদি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এ নিয়ে একমত যে, ১৯৬৭ সালের পর পূর্ব জেরুজালেমের ওপর ইসরাইলের দখলদারিত্ব অবৈধ। এ কারণেই তারা জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেয় না।’ তিনি আরও বলেন, ট্রাম্পের নেতৃত্বে আমেরিকা যদি এখন বিশ্বের প্রথম রাষ্ট্র হিসেবে জেরুজালেমকে স্বীকৃতি দেয়, তাহলে ফিলিস্তিনি-ইসরাইলি চুক্তি বা দীর্ঘস্থায়ী আরব-ইসরাইল সম্পর্ক কখনও স্বাভাবিক হবে, তা বলা মুশকিল।
অধ্যাপক বেন-আরিয়েহ মনে করেন, এই শহরকে কেন্দ্র করে সংঘাত আরও অনেকদিন থাকবে। তিনি বলেন, ‘আরব-ইহুদী সংঘাত এখন জাতীয়তাবাদী সংঘাতে রূপ নিয়েছে, যার কেন্দ্রবিন্দু হলো জেরুজালেম।’
এই অধ্যাপকের ভাষ্য, ‘জেরুজালেম শহর ছিল তিন ধর্মের কাছে পবিত্র। কিন্তু যখনই সেখানে দুই জাতি তথা আরব ও ইহুদী জাতির উপস্থিতি নিশ্চিত হলো, তখন উভয়েই জেরুজালেমকে নিজের করে পেতে চাইলো। জেরুজালেমের যতটা তাদের প্রয়োজন, তার চেয়েও তাদের বেশি জেরুজালেমকে প্রয়োজন।’
(নিউ ইয়র্ক টাইমস অবলম্বনে)
আধুনিক যুগে ইসরাইলি-ফিলিস্তিনি লড়াই তার অন্যতম।
নবী ইব্রাহিম (আ.) থেকে উদ্ভূত বড় তিন ধর্মের (ইসলাম, খ্রিস্ট, ইহুদি ধর্ম) কাছেই জেরুজালেম ভীষণ পবিত্র জায়গা। ইহুদীরা মনে করেন, এখানেই তাদের আদি নিবাস। এখানেই তাদের প্রথম ও দ্বিতীয় টেম্পল বা উপাসনালয় স্থাপিত হয়েছিল। অপরদিকে ইসলাম ধর্ম মতে, জেরুজালেমে অবস্থিত মসজিদ-উল-আকসা থেকে নবী মোহাম্মদ (সা.) মেরাজে গিয়ে আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাত করেছিলেন। খ্রিস্টান ধর্মমতে, ‘এখানেই যিশুখ্রিস্টের মৃত্যু হয়েছিল। তার সমাধিস্থলও এখানে।’
জেরুজালেম নিয়ে সংঘাত মূলত হাজার বছরের। রোমান সাম্রাজ্য ও ক্রুসেডস - সব কিছুর সাথে জড়িয়ে আছে এই শহরের নাম। কিন্তু এই শহর নিয়ে এখন যে সমস্যা চলছে, সেটি একেবারে নতুন ও স্বতন্ত্র। এখনকার সংঘাতের সঙ্গে ধর্ম যতটা গুরুত্বপূর্ণ, তার চেয়ে উপনিবেশবাদ, জাতীয়তাবাদের সংশ্লিষ্টতাও কম নয়।
ইসরাইলের হিব্রু বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহাসিক ভূগোলবিদ্যার অধ্যাপক ইয়েশুয়া বেন-আরিয়েহ মনে করেন, বৃটিশদের কারণেই জেরুজালেম এত গুরুত্বপূর্ণ হয়েছে। তারাই জেরুজালেমকে রাজধানী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। ইহুদীদের প্রথম বা দ্বিতীয় মন্দির নির্মাণের সময় থেকে জেরুজালেম কখনই কারো রাজধানী ছিল না।
জেনারেল অ্যালেনবি জেরুজালেম দখলে নেওয়ার পর তিন দশক বৃটিশরা এখানে শাসন করে। তখনই যায়নবাদী আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে বহু ইহুদী সেটেলার শহরটিতে পাড়ি জমাতে থাকে তৎকালীন বৃটিশ প্যালেস্টাইনে। স্থানীয় আরব জনগোষ্ঠীর কাছে তখন অটোম্যান সাম্রাজ্যের পতনের কারণে সৃষ্ট নতুন বাস্তবতা মেনে নেওয়া বৈ কোনো উপায় ছিল না। অটোম্যানরা ১৫১৭ সাল থেকে ১৯১৭ পর্যন্ত জেরুজালেম শাসন করেছে।
জেরুজালেম ইন্সটিটিউট ফর পলিসি রিসার্চ নামে একটি থিংক ট্যাংকের জ্যেষ্ঠ গবেষক অ্যামনন র্যামন বলেন, ‘মজার বিষয় হলো, প্রাথমিকভাবে যায়নবাদী চিন্তকরা কিন্তু জেরুজালেম, বিশেষ করে পবিত্র ওল্ড সিটি থেকে মুখ ফিরিয়ে রেখেছিলেন। প্রথম কারণ হলো জেরুজালেমকে মনে করা হতো ইসরাইলের বাইরে বসবাসরত ইহুদীদের প্রতীক। দ্বিতীয়ত, খ্রিস্টান ও ইসলাম ধর্মের পবিত্র স্থাপনা থাকায় এই শহরকে রাজধানী করে ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করায় জটিলতা ছিল।’
প্রথম দিককার বহু যায়নবাদী চিন্তক ছিলেন সেকুলার ও সমাজতন্ত্রী। ধর্মের চেয়ে বরং ইহুদী জাতীয়তাবাদ, আত্ম-নিয়ন্ত্রনাধিকার প্রতিষ্ঠা এবং নির্যাতন থেকে রেহাই পাওয়াই ছিল তাদের ইসরাইল রাষ্ট্র গঠনের প্রেরণা। ইংল্যান্ডের এক্সেটার বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত মধ্যপ্রাচ্যের ইতিহাস বিদ্যার অধ্যাপক মাইকেল ডাম্পার বলেন, ‘জেরুজালেম ছিল তখন নিশ্চলতার প্রতীক। এটিকে দেখা হতো ধর্মীয় রক্ষণশীলতার দিকে পশ্চাদপসরণের প্রতীক হিসেবে। তেল আবিব বরং তখন ছিল নতুন শহর। আধুনিকতার পুণ্যভূমি।’
তিনি আরও বলেন, আরবদের কাছে অটোম্যান সাম্রাজ্যের অধীনস্থ না থাকাটাই একটা বিরাট ব্যাপার ছিল। তারা নতুন করে সমাজকে বাঁধছিলেন নতুন বাস্তবতায়। স্থানীয় ফিলিস্তিনি অভিজাতরা ও জেরুজালেমের ফিলিস্তিনি বনেদী পরিবারগুলো থেকেই পরবর্তীতে ফিলিস্তিনি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের নেতারা উঠে আসেন। তখন হুট করেই ইহুদী অভিবাসনের হুমকি টের পেতে থাকে ফিলিস্তিন।
এই অভিবাসন রোখার চেষ্টা করতে গিয়ে ফিলিস্তিনি ও ইহুদীদের মধ্যে দাঙ্গাও বেধেছিল। ইহুদীরা প্রায়ই বৃটিশদের খেপিয়ে তুলতো। ১৯৩৯ সালের দিকে ফিলিস্তিনে ইহুদী অভিবাসন সীমিত করা হয়। কিন্তু ওই সময় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলছিল। ফলে অনেক ইহুদীই হিটলারের ইহুদী-নিধন বা হলোকাস্ট থেকে পালিয়ে আসতে চাচ্ছিল ফিলিস্তিনে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে জাতিসংঘ ফিলিস্তিন দু’ভাগে ভাগ করার সিদ্ধান্ত নেয়। একটি হবে ইহুদীদের রাষ্ট্র, অপরটি আরব ফিলিস্তিনিদের। ওই সিদ্ধান্ত মতে, জেরুজালেম শাসিত হওয়ার কথা একটি আন্তর্জাতিক বিশেষ কাঠামো অনুযায়ী। আরবরা ওই পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করে।
ইসরাইল ১৯৪৮ সালে তাদের স্বাধীনতা ঘোষণা করে। তার একদিন পরই আরব প্রতিবেশী দেশগুলো আক্রমণ করে ইসরাইলকে। কিন্তু আরবরা পরাজিত হয়। উভয় পক্ষের মিলিশিয়ারা সে সময় সহিংসতায় লিপ্ত ছিল। তখন বিপুল সংখ্যক আরব বাস্তুচ্যুত হয়।
যুদ্ধের পর জেরুজালেম দ্বিখণ্ডিত হয়। পশ্চিম অংশ দখলে নেয় ইসরাইল। ১৯৫০ সালে এক নতুন আইন অনুযায়ী এই পশ্চিম জেরুজালেম হয়ে উঠে ইসরাইলের রাজধানী। অপরদিকে পূর্ব জেরুজালেম, যেখানে পবিত্র ওল্ড সিটি ছিল, তা ছিল জর্দানের দখলে।
অধ্যাপক ডাম্পার বলেন, এই শহর নিয়ে তখন দুই দেশের চিন্তা ছিল না। ইসরাইল তখন তার উপকূলীয় অঞ্চল, অর্থাৎ হাইফা, তেল আবিব ও আশকেলনকে বাণিজ্যিক অঞ্চলে রূপান্তর করছিল। আর জর্দানের বাদশাহ প্রথম আবদুল্লাহ ছিলেন তার রাজধানী আম্মানের উন্নয়নে নিবিষ্ট।
ইলিনয় স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসবিদ ইসাম নাসারের মতে, জাতিসংঘ ও ইউরোপিয়ান শক্তিধর রাষ্ট্রগুলোর কারণে প্রথম দিককার ইসরাইল রাষ্ট্র জেরুজালেম নিয়ে বেশি মাথা ঘামাতে ইচ্ছুক ছিল না। জেরুজালেমকে আন্তর্জাতিকভাবে নিয়ন্ত্রণের ধারণা মেনে নিয়ে প্রথম দিককার ইসরাইলি নেতৃত্ব অন্যত্র দেশের রাজধানী স্থাপনের পরিকল্পনা করেন। এক্ষেত্রে হার্জলিয়া বা অন্য শহর তাদের পছন্দ ছিল। ড. র্যামন বলেন, ইসরাইলি নেতৃত্ব বুঝতে পেরেছিল জেরুজালেমের পবিত্র স্থাপনা তাদের হাতে না থাকলে লাভই বেশি।
তবে পশ্চিম জেরুজালেম দখলের পরের দুই দশকে ইসরাইল ধীরে ধীরে অনেক সরকারী স্থাপনাই শহরটিতে গড়ে তোলে। কিন্তু বিদেশী সরকারগুলো জেরুজালেমকে এড়িয়েই গেছে। জাতিসংঘের প্রস্তাবনার সমর্থনে তারা দূতাবাস স্থাপন করে তেল আবিবে।
এরপর এলো ১৯৬৭ সালের যুদ্ধ। এই যুদ্ধ এত প্রলয়ঙ্করী ছিল যে, জেরুজালেমকে নিয়ে আধুনিক বিরোধকে এর চেয়ে কোনো ঘটনাই বেশি প্রভাবিত করেনি। মাত্র ৬ দিনের মধ্যে ইসরাইল শুধুমাত্র আরব দেশগুলোকে পরাজিতই করেনি, তারা মিশরের কাছ থেকে গাজা তীর ও সিনাই উপত্যকা দখলে নিয়ে নেয়। জর্দানের কাছ থেকে নিয়ে নেয় পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেম। সিরিয়ার কাছ থেকে নেয় গোলান উপত্যকা।
ইসরাইলের বার-ইলান বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক অধ্যাপক মেনাচেম ক্লেইনের মতে, ১৯৬৭ সালের ওই যুদ্ধ ইতিহাসের বাক পরিবর্তন করে দেয় দুই ভাবে। প্রথম, এই যুদ্ধের বিশাল বিজয়! যুদ্ধের আগে সবসময় আতঙ্কে থাকতো ইসরাইল। কিন্তু যুদ্ধের পর দেশটি ভীষণ আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠে। পাশাপাশি, পবিত্র ওল্ড সিটি দখলে নেওয়ার মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব তো ছিলই।
ওল্ড সিটি দখলে নেওয়ার পর ইহুদীদের পবিত্র ওয়েস্টার্ন ওয়ালে (আল আকসা মসজিদের বাইরের একটি দেওয়াল) ইসরাইলি সেনাদের প্রার্থনার ছবি দেশটির জাতীয় মননে ভীষণ প্রভাব ফেলে। জর্দানের শাসনাধীন থাকার সময় এখানে আসতে পারতো না ইহুদীরা।
কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক আরব বিদ্যার অধ্যাপক রশিদ খালিদি বলেন, ‘জেরুজালেম হয়ে যায় কাল্টের মতো আরাধনার স্থান। এই স্থানের প্রতি এমন অনুরাগ আগে কখনই ছিল না। আর বর্তমানে এই অনুরাগ এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, ইসরাইলি রাজনীতিতে এখন চরম উগ্রপন্থী ধর্মীয় জাতীয়তাবাদীদের আধিপত্য। রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুই এখন ওয়েস্টার্ন ওয়াল।’
১৯৭৭ সালে ডানপন্থী লিকুদ পার্টি ইসরাইলের ক্ষমতায় আসে মেনাচিম বেগিনের নেতৃত্বে। এরপরই ইসরাইলি জাতি-পরিচয়ের সঙ্গে জেরুজালেমের সম্পর্ককে অবিচ্ছেদ্য হিসেবে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা হালে পানি পেতে থাকে। ইসরাইলের রাজনীতিতে ধর্মীয় সেটেলাররা আধিপত্য বিস্তার করতে থাকে। সেই থেকে এই প্রভাব আর কখনও কমেনি। পুরনো ধাঁচের সমাজতন্ত্রী যাদের শেকড় রাশিয়া ও পূর্ব ইউরোপে তারা হাল ছেড়ে দেয়। ইসরাইলের ক্ষমতা কুক্ষিগত হয় রক্ষণশীল ইহুদীদের হাতে যারা মধ্যপ্রাচ্য, উত্তর আফ্রিকা ও অন্যান্য অঞ্চল থেকে আগত।
এই পরিবর্তনের কারণে জেরুজালেমের প্রতীকী গুরুত্ব ইসরাইলে বেড়ে যায়। ইহুদী ইতিহাসে জেরুজালেমের ভূমিকা সামরিক কুচকাওয়াজ, পাঠ্যক্রমে গুরুত্বের সঙ্গে যুক্ত করা হয়। ইসরাইলের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে স্কুলছাত্রদের জেরুজালেম সফরে নিয়ে যাওয়া শুরু হয়।
এই জেরুজালেমকরণ তুঙ্গে উঠে ১৯৮০ সালে, যখন ইসরাইলি আইনপ্রণেতারা একটি বিল পাশ করেন, যাতে বলা হয়, ‘পূর্ণাঙ্গ ও ঐক্যবদ্ধ জেরুজালেমই ইসরাইলের রাজধানী।’ দখলে থাকলেও, ইসরাইল আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়ার আশঙ্কায় পূর্ব জেরুজালেম আত্মসাৎ (অ্যানেক্স) করা বা নিজ ভূখণ্ড হিসেবে দাবি করা থেকে বিরত থাকে।
১৯৯৩ সালে ফিলিস্তিনি ও ইসরাইলিদের মধ্যে অসলো চুক্তি আরেক গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। এর মাধ্যমেই প্রতিষ্ঠিত হয় ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ (প্যালেস্টিনিয়ান অথরিটি)। যাদের হাতে পশ্চিম তীর ও গাজা তীর শাসনের কর্তৃত্ব দেওয়া হয়। তবে তখন সীমান্ত, ফিলিস্তিনি শরণার্থী ও জেরুজালেমের মর্যাদার প্রশ্নে কোনো সমঝোতায় আসা যায়নি। কিন্তু তার পরের প্রায় ২৫ বছর দীর্ঘস্থায়ী চুক্তির সম্ভাবনা ধীরে ধীরে কমেছে।
২০০০ সালে ডানপন্থী রাজনীতিবিদ অ্যারিয়েল শ্যারন সফর করেন পবিত্র তীর্থস্থান (নোবল স্যাঙ্কচুয়ারি) বা আল হারাম আল কুদসি আল শরিফে। এখানেই মুসলমানদের পবিত্র আল আকসা মসজিদ ও ডোম অব দ্য রক অবস্থিত। ইহুদীদের কাছে এটি সেকেন্ড টেম্পল বা দ্বিতীয় মন্দিরস্থল হিসেবে পরিগণিত। অ্যারিয়েল শ্যারনের ওই সফরের কারণে জেরুজালেমে তীব্র সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। সৃষ্ট হয় দ্বিতীয় ফিলিস্তিনি ইন্তিফাদা। ৫ বছর ধরে চলমান এই সংঘাতে নিহত হয় প্রায় ৩ হাজার ফিলিস্তিনি ও ১ হাজার ইসরাইলি।
ফিলিস্তিনিরা বলছেন, ইহুদী সেটেলাররা পূর্ব জেরুজালেম ধীরে ধীরে দখলে নিচ্ছে। আর ইসরাইল পরিস্থিতি আরও জটিল করেছে জেরুজালেমে বসবাসরত ফিলিস্তিনিদের আবাসিক সনদ স্থগিত করার মাধ্যমে।
অধ্যাপক খালিদি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এ নিয়ে একমত যে, ১৯৬৭ সালের পর পূর্ব জেরুজালেমের ওপর ইসরাইলের দখলদারিত্ব অবৈধ। এ কারণেই তারা জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেয় না।’ তিনি আরও বলেন, ট্রাম্পের নেতৃত্বে আমেরিকা যদি এখন বিশ্বের প্রথম রাষ্ট্র হিসেবে জেরুজালেমকে স্বীকৃতি দেয়, তাহলে ফিলিস্তিনি-ইসরাইলি চুক্তি বা দীর্ঘস্থায়ী আরব-ইসরাইল সম্পর্ক কখনও স্বাভাবিক হবে, তা বলা মুশকিল।
অধ্যাপক বেন-আরিয়েহ মনে করেন, এই শহরকে কেন্দ্র করে সংঘাত আরও অনেকদিন থাকবে। তিনি বলেন, ‘আরব-ইহুদী সংঘাত এখন জাতীয়তাবাদী সংঘাতে রূপ নিয়েছে, যার কেন্দ্রবিন্দু হলো জেরুজালেম।’
এই অধ্যাপকের ভাষ্য, ‘জেরুজালেম শহর ছিল তিন ধর্মের কাছে পবিত্র। কিন্তু যখনই সেখানে দুই জাতি তথা আরব ও ইহুদী জাতির উপস্থিতি নিশ্চিত হলো, তখন উভয়েই জেরুজালেমকে নিজের করে পেতে চাইলো। জেরুজালেমের যতটা তাদের প্রয়োজন, তার চেয়েও তাদের বেশি জেরুজালেমকে প্রয়োজন।’
(নিউ ইয়র্ক টাইমস অবলম্বনে)
No comments