ক্ষতিপূরণ ঠেকাতে দুই মন্ত্রীর সঙ্গে নেতাদের বৈঠক
সড়ক
দুর্ঘটনায় নিহত চলচ্চিত্র নির্মাতা তারেক মাসুদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে
হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন পরিবহন মালিক-শ্রমিক
নেতারা। মঙ্গলবার রাতে নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের সংসদ ভবনের অফিসে
অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। নৌমন্ত্রী বাংলাদেশ শ্রমিক
ফেডারেশনের কার্যকরী সভাপতিও। ওই বৈঠকে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও
সমবায় প্রতিমন্ত্রী মো. মসিউর রহমান রাঙ্গাও মালিক-শ্রমিকদের পক্ষ নিয়ে
বক্তব্য রাখেন। বৈঠকে আপিল ছাড়াও সরকারের আইন, শ্রম এবং সড়ক ও সেতু
মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতা পেতে ধারাবাহিক মিটিংয়ের সিদ্ধান্ত হয়।
এছাড়া হাইকোর্টের এ রায় নিয়ে মালিক ও শ্রমিক সংগঠনগুলো কেন্দ্রীয় কমিটির
উদ্যোগে আলাদা আলোচনা সভা আয়োজনেরও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ওই বৈঠকে মন্ত্রী
ও প্রতিমন্ত্রী ছাড়াও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক
খন্দকার এনায়েত উল্যাহ, শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী,
বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ফারুক তালুকদার সোহেলসহ
মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের কমবেশি ৩০ জন নেতা অংশ নেন। বৈঠক শেষে পরিবহন
নেতারা পার্লামেন্ট ক্লাবে রাতের খাবার সারেন। বৈঠকে অংশ নেয়া পাঁচজন নেতার
সঙ্গে আলাপ করে এসব তথ্য জানা গেছে। বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে নৌমন্ত্রী
শাজাহান খান যুগান্তরকে বলেন, হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার বিষয়ে
আলোচনা করেছি। আমরা আইনিভাবে বিষয়টি লড়াই করব। এর প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা
করেছি, এর বেশি কিছু নয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক পরিবহন নেতা বলেন, এর
আগে এক চালককে সাজা দেয়ার ঘটনায় সারা দেশে পরিবহন ব্যবস্থা অচল করে
দিয়েছিল মালিক ও শ্রমিকরা। ওই ঘটনার আগে নৌমন্ত্রীর বাসায় বৈঠক করেছিলেন
পরিবহন মালিক ও শ্রমিকনেতারা। এবার তারেক মাসুদের পরিবারকে ৪ কোটি ৬১ লাখ
৭৫ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার রায়ের পর শাজাহান খানের সংসদ ভবনের অফিসে
বৈঠক করেন পরিবহন নেতারা। সেখানে আইনি ও কৌশলগত- উভয়ভাবে লড়াই করার
সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে খন্দকার এনায়েত উল্যাহ তা
নিশ্চিত করে যুগান্তরকে বলেন, আমরা অনানুষ্ঠানিকভাবে বৈঠক করেছি।
উচ্চ
আদালত যে রায় দিয়েছেন, তা পর্যালোচনা করে এর বিরুদ্ধে আপিল করার সিদ্ধান্ত
নিয়েছি। এবার কোনো আন্দোলনে যাচ্ছি না। হাইকোর্টের বিচারপতি জিনাত আরা ও
বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এক রায়ে
সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত তারেক মাসুদের পরিবারকে এ ক্ষতিপূরণ দেয়ার নির্দেশ দেন।
বৈঠকে অংশ নেয়া শ্রমিকনেতা ওসমান আলী বলেন, আমরা চারটি বিষয়ে সিদ্ধান্ত
নিয়েছি। সেগুলো হচ্ছে- রায়ের কপি পাওয়ার পর তা পর্যালোচনা করে আনুষ্ঠানিক
প্রতিক্রিয়া জানানো হবে। রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে। রায়ের বিষয়টি নিয়ে
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করব। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়, আইন
মন্ত্রণালয়, শ্রম মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।
চতুর্থত, রায়ের বিষয়টি নিয়ে মালিক ও শ্রমিক সংগঠনগুলোর কেন্দ্রীয় কমিটির
উদ্যোগে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। ওই আলোচনা সভায় নিজ নিজ সংগঠনের নেতাদের
মতামত ও প্রতিক্রিয়া নেয়া হবে। বৈঠকে অংশ নেয়া এক পরিবহন নেতা বলেন, উচ্চ
আদালতের রায়ে ক্ষতিপূরণের অঙ্ক নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়েছে। মালিক ও
শ্রমিকনেতারা শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ওই দুর্ঘটনায় ক্ষতিপূরণ চেয়ে দুটি
মামলা হয়েছে। একটিতেই ৪ কোটি ৬১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার রায়
এসেছে। অপর মামলায় ক্ষতিপূরণ দেয়ার রায় এলে ওই টাকার জোগান কীভাবে করা হবে,
তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। পরিবহন নেতারা বলেন, যে কোনো দুর্ঘটনায় এ রায়কে
রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করে সামনের দিনগুলোয় আরও অনেক মামলা দায়ের হতে
পারে। এতে পরিবহন ব্যবসা সংকটের মুখে পড়বে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে সরকারের
সহযোগিতা চাওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এ বিষয়ে যোগাযোগ করেও স্থানীয় সরকার,
পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মো. মসিউর রহমান রাঙ্গার বক্তব্য পাওয়া
যায়নি।
No comments