তিন মাসে রাজধানীতে ১৩ জন ‘নিখোঁজ’ : গ্রেফতার ও ফেরার তালিকায় ৭
রাজধানীতে
গত তিন মাসে নিখোঁজ হয়েছেন ১৩ জন। এভাবেই একের পর এক নিখোঁজ হচ্ছেন
বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ। এদের মধ্যে সাতজন ফিরে এলেও এক সাংবাদিকসহ
এখনো ছয়জন নিখোঁজ রয়েছেন। এই সাতজনের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা
কয়েকজনকে গ্রেফতার দেখিয়েছে। এই নিখোঁজের তালিকায় সর্বশেষ যুক্ত হয়েছেন
ভিয়েতনামের সাবেক রাষ্ট্রদূত মারুফ জামান (৭০)। এসব নিখোঁজের ঘটনায় থানায়
সাধারণ ডায়েরি বা মামলা দায়েরের পরও তাদের কোনো হদিস মিলছে না। সর্বশেষ গত
সোমবার রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকা থেকে নিখোঁজ হয়েছেন সাবেক রাষ্ট্রদূত
মারুফ জামান। এ ঘটনায় তার মেয়ে সামিহা জামান বাদি হয়ে গত মঙ্গলবার সকালে
ধানমন্ডি থানায় একটি জিডি (জিডি নম্বর-২১৩) করেছেন। ওই দিন বিকেেেল
খিলক্ষেত এলাকার ৩০০ ফুট সড়ক থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় মারুফ জামানের
প্রাইভেট কারটি উদ্ধার করেছে পুলিশ। পুলিশ ও পারিবারিক সূত্র জানায়, গত
সোমবার বিকেল ৫টায় ধানমন্ডির ৯/এ রোডের ৮৯ নম্বর বাড়ির ২/এ নম্বর ফ্যাট
থেকে মারুফ জামান বিমানবন্দরের উদ্দেশে বের হয়ে যান। তার মেয়ে সামিহা জামান
বিদেশ থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় বিমানবন্দরে পৌঁছানোর কথা। কিন্তু
বিমানবন্দরে সামিহা জামান পৌঁছলেও তার বাবা তাকে রিসিভ করার জন্য সেখানে
যাননি। অনেক খোঁজাখুঁজি করে মারুফ জামানের কোনো অবস্থান নিশ্চিত করতে না
পেরে মঙ্গলবার সকালে থানায় জিডি করেন তিনি।
পারিবারিক সূত্র জানায়, গত
সোমবার মধ্য রাতে মারুফ জামান তার বাসায় ফোন দিয়ে তার রুমে থাকা ল্যাপটপ ও
কম্পিউটারের হার্ডডিস্ক অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তির কাছে দিয়ে দেয়ার নির্দেশ
দেন। ওই দিন রাত ২টার দিকে অজ্ঞাত এক ব্যক্তি তার বাসায় গিয়ে ল্যাপটপ ও
কম্পিউটারের হার্ডডিস্ক নিয়ে যায়। গত তিন মাসে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে
নিখোঁজ হন আরো ১২ জন। যাদের মধ্যে সাতজন ফিরেছেন। বাকি পাঁচজনের কোনো
সন্ধান নেই। এরা হলেন নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির সহকারী অধ্যাপক ড. মুবাশ্বার
হাসান সিজার, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও এবিএন গ্রুপের ব্যবস্থাপনা
পরিচালক (এমডি) সৈয়দ সাদাত আহমেদ, কল্যাণ পার্টির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব
আমিনুর রহমান, কানাডার ম্যাকগিল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী ইশরাক ও সাংবাদিক
উৎপল দাস। ফিরে এসেছেন বাংলাদেশ জনতা পার্টির (বিজেপি) সভাপতি মিঠুন
চৌধুরী ও দলের কেন্দ্রীয় নেতা আসিত ঘোষ অসিত, বেলারুশের অনারারি কনস্যুলার
অনিরুদ্ধ কুমার রায়, দক্ষিণ বনশ্রীর নকিয়া-সিমেন্সের সাবেক প্রকৌশলী
আসাদুজ্জামান আসাদ, এভেনটিস-স্যানোফির ফার্মাসিস্ট জামাল রহমান, শাজাহানপুর
থেকে ফল ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন ও গুলশানের প্রকাশক তানভীর ইয়াসিন করিম।
বাংলাদেশ জনতা পার্টির (বিজেপি) সভাপতি মিঠুন চৌধুরী ও দলের কেন্দ্রীয় নেতা
আসিত ঘোষ অসিতকে গ্রেফতার দেখিয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এর
মধ্যে মিঠুনের বিরুদ্ধে সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকার অভিযোগ আনা
হয়েছে। আর তার সাথে ষড়যন্ত্রে জড়িত সন্দেহে গ্রেফতার করা হয় অসিতকে। পল্টন
এলাকা থেকে মিঠুন চৌধুরী ও সেগুনবাগিচা থেকে অসিত চৌধুরীকে গ্রেফতার দেখানো
হয়েছে। পুলিশের বক্তব্য হচ্ছে, গত ৭ নভেম্বর কদমতলী থানায় একটি জিডি হয়।
সেই জিডির তদন্তে নেমে ডিবি অসিতের অপরাধের ব্যাপারে তথ্য পায়। তবে মিঠুন
চৌধুরীর স্ত্রী সুমনা চৌধুরীর দাবি, সংখ্যালঘুদের অধিকার রায় কাজ করেন তার
স্বামী। হিন্দুদের দেবোত্তর সম্পত্তি উদ্ধারের বিষয়ে তিনি লেখালেখি করতেন।
কিন্তু তিনি কোনো ষড়যন্ত্রের সাথে যুক্ত ছিলেন না। ফেসবুকে সরকারের
সমালোচনা করে পোস্ট দেয়ার কারণে তাকে হয়রানি করা হচ্ছে বলেও ধারণা সুমনার।
গত ৮ নভেম্বর গুলশান-২ নম্বরের ৫১ নম্বর সড়কের ৭ নম্বর হোল্ডিংয়ে কনকর্ড
প্যানোরমা অ্যাপার্টমেন্টের ১০১ নম্বর ফ্যাট থেকে কে বা কারা তুলে নিয়ে যায়
করিম ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি পুস্তক আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের
স্বত্বাধিকার তানভীর ইয়াসিন করিমকে।
এ ঘটনায় তার আত্মীয় হুমায়ন কবীর বাদি
হয়ে গুলশান থানায় একটি জিডি করেন। পরে পুলিশ তাকে গ্রেফতার দেখায়। তার
বিরুদ্ধে গত ১৫ আগস্ট পান্থপথের হোটেল ওলিও ইন্টারন্যাশনালে এক উগ্রবাদীর
আত্মঘাতী হওয়ার ঘটনায় অর্থ জোগানদাতার অভিযোগ আনা হয়েছে। তানভীর জাতির জনক
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শোক দিবস কর্মসূচিতে হামলা চেষ্টার
পরিকল্পনায় জড়িত ছিলেন বলে পুলিশ জানিয়েছে। গত ২৬ আগস্ট বিকেলে রাজধানীর
কাকরাইল মোড় থেকে আবদুল্লাহ আল মামুন নামে এক ব্যক্তি নিখোঁজ হন। এ ঘটনায়
নিখোঁজের ভগ্নিপতি ডা: সাইফুল ইসলাম রমনা থানায় একটি জিডি করেন। জিডিতে
উল্লেখ করা হয়েছে, ঘটনার সময় অজ্ঞাত ১০-১২ জন ব্যক্তি আবদুল্লাহকে একটি
গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে গেছে। সাংবাদিক উৎপল দাস নিখোঁজের পর থেকেই সাংবাদিকদের
বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে।
গত ১০ অক্টোবর অনলাইন নিউজ পোর্টাল পূর্বপশ্চিমবিডিনিউজের জ্যেষ্ঠ
প্রতিবেদক উৎপল দাস অফিস থেকে বের হওয়ার পর থেকে নিখোঁজ হন। গতকাল পর্যন্ত
তার কোনো সন্ধান মেলেনি।
No comments