‘সরকারি অবরোধে’ ভোগান্তি, আজ থেকে বিরোধী জোটের লাগাতার অবরোধ- সংঘাতে অশান্ত দেশ, নিহত ৪
(বিএনপির এক কর্মীকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ, পেটাচ্ছেন আওয়ামী লীগের কর্মীরা। কাল রাজধানীর শাহজাহানপুরে l ছবি: প্রথম আলো) রাজধানী
ঢাকাকে আবারও সারা দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করল সরকার। গত রোববার থেকে টানা দুই
দিন সড়কপথ, রেলপথ ও নৌপথে ঢাকামুখী যাত্রা ঠেকিয়ে রাখার কারণে একধরনের
‘সরকারি অবরোধ’ অবস্থা তৈরি হয়েছে। এর ফলে সারা দেশের যোগাযোগব্যবস্থা
প্রায় অচল হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় আজ থেকে সারা দেশে অনির্দিষ্টকালের
সড়কপথ, রেলপথ ও নৌপথে অবরোধ কর্মসূচি ডেকেছে বিরোধী জোট। বিএনপির
নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের নেতা-কর্মীরা সমাবেশ করতে চাইলে এবং পুলিশ ও
সরকার-সমর্থকেরা তা প্রতিহত করায় ঢাকাসহ সারা দেশে সংঘাতের ঘটনা ঘটে।
সংঘর্ষে নাটোর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহীতে চারজন নিহত হয়েছেন। সারা দেশে
আহত হয়েছেন ১৬১ জন। নিহত ব্যক্তিরা সবাই বিএনপির নেতা-কর্মী।
রাতে বিএনপির পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গতকালের সংঘর্ষে তাদের তিনজন নিহত ও ৩৫০ জন আহত হয়েছেন। গ্রেপ্তার হয়েছেন প্রায় ৪০০। তবে স্থানীয় বিএনপি চারজন নিহত হওয়ার কথা জানিয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) জানিয়েছে, গত রবি ও সোমবার রাজধানী থেকে ১৯১ জনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। এঁদের মধ্যে পাঁচজনকে ভ্রাম্যমাণ আদালত এক বছর করে কারাদণ্ড দেন।
বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দল গতকাল ঢাকায় ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ পালনের কর্মসূচি দিয়েছিল। সরকারি দল পাল্টা কর্মসূচি ঘোষণা করে ‘গণতন্ত্রের বিজয় দিবস’ নামে। ৫ জানুয়ারির ‘একতরফা’ নির্বাচনের প্রথম বার্ষিকী উপলক্ষে সরকার ও বিরোধী পক্ষ এ মারমুখী অবস্থান নিয়েছে।
শুক্র ও শনিবারের সাপ্তাহিক ছুটির সঙ্গে রোববার ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)-এর ছুটি। ‘সরকারি অবরোধ’ আর বিরোধীদের তা ভাঙার চেষ্টার মাঝখানে পড়ে টানা তিন দিনের ছুটিতে যাওয়া মানুষের জীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। আজ থেকে আবার ২০ দলের অনির্দিষ্টকালের অবরোধ কর্মসূচি শুরু হচ্ছে। এ কর্মসূচি মোকাবিলায় সরকার পুলিশি ব্যবস্থা জোরদার করার পাশাপাশি রাজধানীতে বিজিবি মোতায়েন করেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গতকাল রাতে সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, বিরোধী দলের অবরোধে সরকারি দল মাঠে থেকে সব ধরনের সহিংসতা, নাশকতা প্রতিহত করবে।
ডিএমপি রোববার বিকেল পাঁচটা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য রাজধানীতে সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করে। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া শনিবার রাত থেকে তাঁর গুলশানের কার্যালয়ে কার্যত অবরুদ্ধ। গতকাল সোমবার কার্যালয়ের ফটকে তালা লাগিয়ে, এলোপাতাড়ি বালুর ট্রাক ফেলে এবং পুলিশের তৈরি ‘মানব দেয়াল’ খালেদা জিয়ার চলাচলের পথ রুদ্ধ করে ফেলে।
ডিএমপির পক্ষ থেকে সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধের পরও সরকারি দল আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা পুলিশের সহায়তায় ঢাকায় সভা-সমাবেশ করেন এবং বিরোধীদের সমবেত হওয়া প্রতিহত করেন। তাঁদের রাজধানীর রাজপথে লাঠি হাতে মিছিল করতে দেখা যায়। ট্রাক, গাড়ি ও মোটরসাইকেলে চড়েও মহড়া দেন তাঁরা।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের বলেন, এটা পুলিশের ব্যাপার। তারাই বলতে পারবে।
গত দুই বছরে তৃতীয়বারের মতো ‘সরকারি অবরোধে’ রাজধানী ঢাকাকে সারা দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করা হলো। এর আগে ২০১৩ সালের ২৯ ডিসেম্বর বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটের ডাকা ‘গণতন্ত্রের অভিযাত্রা’ কর্মসূচি উপলক্ষে ঢাকামুখী আগমন ঠেকান সরকার-সমর্থকেরা। এভাবে অবরোধের ঘটনা ঘটে ২০১২ সালের ১২ মার্চে ২০-দলীয় জোটের ‘চল চল ঢাকা চল’ কর্মসূচি উপলক্ষেও।
সংঘর্ষ: রাজধানীর প্রেসক্লাবসহ অন্তত পাঁচটি স্থানে বিএনপির সঙ্গে পুলিশ ও সরকার-সমর্থকদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে কাল। আরও বেশ কিছু স্থানে ককটেল বিস্ফোরণ ও যানবাহনে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে বেশ কয়েকজন আহত হন।
নাটোর শহরে বিএনপির মিছিলে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের হামলায় গুলিবিদ্ধ হয়ে দুজন মারা যান। নিহত রাকিব মুন্সি ও রায়হান আলীকে নিজেদের নেতা-কর্মী বলে দাবি করেছে বিএনপি। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন ১০ থেকে ১২ জন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাটে ১৪৪ ধারা ভেঙে মিছিল করতে গেলে ২০ দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ বাধে। এতে একজন নিহত ও আহত হন ১৫ জন। নিহত জমশেদ আলীকে নিজেদের কর্মী বলে দাবি করেছে বিএনপি।
রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বরে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে বিএনপির নেতা মজির উদ্দিন গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারান। এ ঘটনায় সাংবাদিকসহ আহত হন ৩০ জন।
প্রতিবাদে রাজশাহী, নাটোর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে আজ সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে স্থানীয় বিএনপি।
ঢাকা অবরুদ্ধ: সরেজমিন, ভুক্তভোগী ও পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিএনপির কর্মসূচি উপলক্ষে রোববার সকাল থেকেই ঢাকামুখী দূরপাল্লার পরিবহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। কিছু যানবাহন গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা দেওয়ার পর ফিরে আসতে বাধ্য করা হয়।
ঢাকার বাইরের বিভিন্ন জেলার টার্মিনালগুলোতে পুলিশ ও সরকারি দলের নেতা-কর্মীরা পাহারা বসিয়ে পরিবহন চলাচল বন্ধ করেন। এ ছাড়া ঢাকার প্রবেশমুখগুলোতে বসানো হয় কয়েক স্তরের তল্লাশিচৌকি।
রোববার বিকেলে ও সোমবার সকালে মানিকগঞ্জ, ধামরাই, নবীনগর, সাভার ও আমিনবাজারে পুলিশ ও সরকারদলীয় লোকজনের কড়া পাহারা দেখা গেছে। সাভার থেকে গাবতলী পর্যন্ত কয়েক শ মিটার পরপর ‘পুলিশ চেকপোস্ট’ লেখা স্ট্যান্ড বসিয়ে তল্লাশি করতে দেখা গেছে। অসংখ্য পুলিশ, রিকশা-ভ্যান ও ট্রাক পর্যন্ত দাঁড় করিয়ে যাত্রীদের নামিয়ে দেয়। সাভারের হেমায়েতপুর, আমিনবাজার, গাবতলী ও মাজার রোডে পুলিশ ও সরকারি দলের নেতা-কর্মীদের একসঙ্গে যানবাহন তল্লাশি করতে দেখা গেছে।
রেলওয়ে সূত্র জানিয়েছে, ট্রেন চলাচল বন্ধ করা হয়নি। তবে ঢাকামুখী ট্রেনে টিকিট বিক্রি প্রায় বন্ধ করে দেওয়া হয়। স্টেশনগুলোতে যাত্রীরা গেলেই বলে দেওয়া হয়েছে ‘টিকিট নেই’। কমলাপুর স্টেশনে টিকিটবিহীন যাত্রীদের ধরার জন্য কড়া পাহারা বসানো হয়।
দক্ষিণাঞ্চল থেকে প্রতিদিন গড়ে ৬০-৬৫টি লঞ্চ সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে আসে। গতকাল সোমবার এসেছে মাত্র ১০-১২টি লঞ্চ। সেগুলোও মাঝ নদীতে ভিড়িয়ে যাত্রীদের নামিয়ে দেয়। দক্ষিণের জেলাগুলোর লঞ্চ টার্মিনালেও ছিল পাহারা।
একজন পরিবহন মালিক বলেন, সরকারি অবরোধে বাস চালানো নিষেধ। বিরোধী দলের অবরোধের ঘোষণার পর চালানোর জন্য চাপাচাপি শুরু হবে। আসলে পরিবহন মালিক-শ্রমিকেরা ফাটা বাঁশের চিপায় পড়ে গেছেন। যাত্রীরাও গালাগাল করছে পরিবহনশ্রমিকদের।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির মহাসচিব খোন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেন, সরকারের বাধা নয়, নিরাপত্তার কথা ভেবে অনেকে বাস চালাননি। বিরোধীদের অবরোধে কী হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অবরোধ তো স্পষ্ট করা হয়নি। মালিকেরা বাস চালাবেন।’
ছুটি মাটি হয়ে গেছে: তিন দিনের ছুটি পেয়ে স্ত্রীসহ রাজশাহী বেড়াতে গিয়েছিলেন বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা তৌহিদুল ইসলাম। দেশ ট্রাভেলসের একটি বাসে চেপে রোববার সকাল আটটায় ঢাকার উদ্দেশে রাজশাহী থেকে রওনা হন। কিন্তু শহরতলির কাটাখালীতে আসার পরই চালকের ফোনে কল আসে, বাস ফিরিয়ে নিতে হবে টার্মিনালে।
তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ফোন পেয়েই চালক বাস ঘুরিয়ে চলতে শুরু করেন। রাজশাহী টার্মিনালে পৌঁছে দেখেন, তাঁদের আগে ছেড়ে যাওয়া বিভিন্ন কোম্পানির আরও ১০-১২টি বাসও ফিরে এসেছে। এরপর ট্রেনের টিকিটের চেষ্টা করেও পাননি। তিনি বলেন, ‘সোমবার অফিস করার কথা ছিল। বসকে বলার পর হতাশা প্রকাশ করেছেন। আর কিছুই বলেননি।’
ব্যাংক কর্মকর্তা শামীমা সুলতানাও রাজশাহী গিয়েছিলেন অসুস্থ আত্মীয়কে দেখতে। রোববার আড়াইটায় ফিরবেন বলে অগ্রিম বাসের টিকিটও কেটে রেখেছিলেন। কিন্তু দুপুর ১২টায় জানতে পারেন বাস চলবে না। সোমবার দুপুরে অন্য একটি বাসের টিকিট কেটে সেটাও ফেরত দেন।
গতকাল বেলা ১১টার দিকে গাবতলীতে রিকশা ভাড়া করতে গিয়ে উত্তেজিত হয়ে ঝগড়ায় লিপ্ত হন মোখলেছুর রহমান। মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বর পর্যন্ত চালক ভাড়া হেঁকেছেন ১২০ টাকা। এ জন্যই তাঁর উত্তেজনা। তিনি একটি আবাসন কোম্পানির প্রকল্প ব্যবস্থাপক।
রাতে বিএনপির পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গতকালের সংঘর্ষে তাদের তিনজন নিহত ও ৩৫০ জন আহত হয়েছেন। গ্রেপ্তার হয়েছেন প্রায় ৪০০। তবে স্থানীয় বিএনপি চারজন নিহত হওয়ার কথা জানিয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) জানিয়েছে, গত রবি ও সোমবার রাজধানী থেকে ১৯১ জনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। এঁদের মধ্যে পাঁচজনকে ভ্রাম্যমাণ আদালত এক বছর করে কারাদণ্ড দেন।
বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দল গতকাল ঢাকায় ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ পালনের কর্মসূচি দিয়েছিল। সরকারি দল পাল্টা কর্মসূচি ঘোষণা করে ‘গণতন্ত্রের বিজয় দিবস’ নামে। ৫ জানুয়ারির ‘একতরফা’ নির্বাচনের প্রথম বার্ষিকী উপলক্ষে সরকার ও বিরোধী পক্ষ এ মারমুখী অবস্থান নিয়েছে।
শুক্র ও শনিবারের সাপ্তাহিক ছুটির সঙ্গে রোববার ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)-এর ছুটি। ‘সরকারি অবরোধ’ আর বিরোধীদের তা ভাঙার চেষ্টার মাঝখানে পড়ে টানা তিন দিনের ছুটিতে যাওয়া মানুষের জীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। আজ থেকে আবার ২০ দলের অনির্দিষ্টকালের অবরোধ কর্মসূচি শুরু হচ্ছে। এ কর্মসূচি মোকাবিলায় সরকার পুলিশি ব্যবস্থা জোরদার করার পাশাপাশি রাজধানীতে বিজিবি মোতায়েন করেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গতকাল রাতে সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, বিরোধী দলের অবরোধে সরকারি দল মাঠে থেকে সব ধরনের সহিংসতা, নাশকতা প্রতিহত করবে।
ডিএমপি রোববার বিকেল পাঁচটা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য রাজধানীতে সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করে। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া শনিবার রাত থেকে তাঁর গুলশানের কার্যালয়ে কার্যত অবরুদ্ধ। গতকাল সোমবার কার্যালয়ের ফটকে তালা লাগিয়ে, এলোপাতাড়ি বালুর ট্রাক ফেলে এবং পুলিশের তৈরি ‘মানব দেয়াল’ খালেদা জিয়ার চলাচলের পথ রুদ্ধ করে ফেলে।
ডিএমপির পক্ষ থেকে সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধের পরও সরকারি দল আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা পুলিশের সহায়তায় ঢাকায় সভা-সমাবেশ করেন এবং বিরোধীদের সমবেত হওয়া প্রতিহত করেন। তাঁদের রাজধানীর রাজপথে লাঠি হাতে মিছিল করতে দেখা যায়। ট্রাক, গাড়ি ও মোটরসাইকেলে চড়েও মহড়া দেন তাঁরা।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের বলেন, এটা পুলিশের ব্যাপার। তারাই বলতে পারবে।
গত দুই বছরে তৃতীয়বারের মতো ‘সরকারি অবরোধে’ রাজধানী ঢাকাকে সারা দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করা হলো। এর আগে ২০১৩ সালের ২৯ ডিসেম্বর বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটের ডাকা ‘গণতন্ত্রের অভিযাত্রা’ কর্মসূচি উপলক্ষে ঢাকামুখী আগমন ঠেকান সরকার-সমর্থকেরা। এভাবে অবরোধের ঘটনা ঘটে ২০১২ সালের ১২ মার্চে ২০-দলীয় জোটের ‘চল চল ঢাকা চল’ কর্মসূচি উপলক্ষেও।
সংঘর্ষ: রাজধানীর প্রেসক্লাবসহ অন্তত পাঁচটি স্থানে বিএনপির সঙ্গে পুলিশ ও সরকার-সমর্থকদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে কাল। আরও বেশ কিছু স্থানে ককটেল বিস্ফোরণ ও যানবাহনে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে বেশ কয়েকজন আহত হন।
নাটোর শহরে বিএনপির মিছিলে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের হামলায় গুলিবিদ্ধ হয়ে দুজন মারা যান। নিহত রাকিব মুন্সি ও রায়হান আলীকে নিজেদের নেতা-কর্মী বলে দাবি করেছে বিএনপি। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন ১০ থেকে ১২ জন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাটে ১৪৪ ধারা ভেঙে মিছিল করতে গেলে ২০ দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ বাধে। এতে একজন নিহত ও আহত হন ১৫ জন। নিহত জমশেদ আলীকে নিজেদের কর্মী বলে দাবি করেছে বিএনপি।
রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বরে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে বিএনপির নেতা মজির উদ্দিন গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারান। এ ঘটনায় সাংবাদিকসহ আহত হন ৩০ জন।
প্রতিবাদে রাজশাহী, নাটোর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে আজ সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে স্থানীয় বিএনপি।
ঢাকা অবরুদ্ধ: সরেজমিন, ভুক্তভোগী ও পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিএনপির কর্মসূচি উপলক্ষে রোববার সকাল থেকেই ঢাকামুখী দূরপাল্লার পরিবহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। কিছু যানবাহন গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা দেওয়ার পর ফিরে আসতে বাধ্য করা হয়।
ঢাকার বাইরের বিভিন্ন জেলার টার্মিনালগুলোতে পুলিশ ও সরকারি দলের নেতা-কর্মীরা পাহারা বসিয়ে পরিবহন চলাচল বন্ধ করেন। এ ছাড়া ঢাকার প্রবেশমুখগুলোতে বসানো হয় কয়েক স্তরের তল্লাশিচৌকি।
রোববার বিকেলে ও সোমবার সকালে মানিকগঞ্জ, ধামরাই, নবীনগর, সাভার ও আমিনবাজারে পুলিশ ও সরকারদলীয় লোকজনের কড়া পাহারা দেখা গেছে। সাভার থেকে গাবতলী পর্যন্ত কয়েক শ মিটার পরপর ‘পুলিশ চেকপোস্ট’ লেখা স্ট্যান্ড বসিয়ে তল্লাশি করতে দেখা গেছে। অসংখ্য পুলিশ, রিকশা-ভ্যান ও ট্রাক পর্যন্ত দাঁড় করিয়ে যাত্রীদের নামিয়ে দেয়। সাভারের হেমায়েতপুর, আমিনবাজার, গাবতলী ও মাজার রোডে পুলিশ ও সরকারি দলের নেতা-কর্মীদের একসঙ্গে যানবাহন তল্লাশি করতে দেখা গেছে।
রেলওয়ে সূত্র জানিয়েছে, ট্রেন চলাচল বন্ধ করা হয়নি। তবে ঢাকামুখী ট্রেনে টিকিট বিক্রি প্রায় বন্ধ করে দেওয়া হয়। স্টেশনগুলোতে যাত্রীরা গেলেই বলে দেওয়া হয়েছে ‘টিকিট নেই’। কমলাপুর স্টেশনে টিকিটবিহীন যাত্রীদের ধরার জন্য কড়া পাহারা বসানো হয়।
দক্ষিণাঞ্চল থেকে প্রতিদিন গড়ে ৬০-৬৫টি লঞ্চ সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে আসে। গতকাল সোমবার এসেছে মাত্র ১০-১২টি লঞ্চ। সেগুলোও মাঝ নদীতে ভিড়িয়ে যাত্রীদের নামিয়ে দেয়। দক্ষিণের জেলাগুলোর লঞ্চ টার্মিনালেও ছিল পাহারা।
একজন পরিবহন মালিক বলেন, সরকারি অবরোধে বাস চালানো নিষেধ। বিরোধী দলের অবরোধের ঘোষণার পর চালানোর জন্য চাপাচাপি শুরু হবে। আসলে পরিবহন মালিক-শ্রমিকেরা ফাটা বাঁশের চিপায় পড়ে গেছেন। যাত্রীরাও গালাগাল করছে পরিবহনশ্রমিকদের।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির মহাসচিব খোন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেন, সরকারের বাধা নয়, নিরাপত্তার কথা ভেবে অনেকে বাস চালাননি। বিরোধীদের অবরোধে কী হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অবরোধ তো স্পষ্ট করা হয়নি। মালিকেরা বাস চালাবেন।’
ছুটি মাটি হয়ে গেছে: তিন দিনের ছুটি পেয়ে স্ত্রীসহ রাজশাহী বেড়াতে গিয়েছিলেন বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা তৌহিদুল ইসলাম। দেশ ট্রাভেলসের একটি বাসে চেপে রোববার সকাল আটটায় ঢাকার উদ্দেশে রাজশাহী থেকে রওনা হন। কিন্তু শহরতলির কাটাখালীতে আসার পরই চালকের ফোনে কল আসে, বাস ফিরিয়ে নিতে হবে টার্মিনালে।
তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ফোন পেয়েই চালক বাস ঘুরিয়ে চলতে শুরু করেন। রাজশাহী টার্মিনালে পৌঁছে দেখেন, তাঁদের আগে ছেড়ে যাওয়া বিভিন্ন কোম্পানির আরও ১০-১২টি বাসও ফিরে এসেছে। এরপর ট্রেনের টিকিটের চেষ্টা করেও পাননি। তিনি বলেন, ‘সোমবার অফিস করার কথা ছিল। বসকে বলার পর হতাশা প্রকাশ করেছেন। আর কিছুই বলেননি।’
ব্যাংক কর্মকর্তা শামীমা সুলতানাও রাজশাহী গিয়েছিলেন অসুস্থ আত্মীয়কে দেখতে। রোববার আড়াইটায় ফিরবেন বলে অগ্রিম বাসের টিকিটও কেটে রেখেছিলেন। কিন্তু দুপুর ১২টায় জানতে পারেন বাস চলবে না। সোমবার দুপুরে অন্য একটি বাসের টিকিট কেটে সেটাও ফেরত দেন।
গতকাল বেলা ১১টার দিকে গাবতলীতে রিকশা ভাড়া করতে গিয়ে উত্তেজিত হয়ে ঝগড়ায় লিপ্ত হন মোখলেছুর রহমান। মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বর পর্যন্ত চালক ভাড়া হেঁকেছেন ১২০ টাকা। এ জন্যই তাঁর উত্তেজনা। তিনি একটি আবাসন কোম্পানির প্রকল্প ব্যবস্থাপক।
No comments