হরতাল অবরোধ করেই সরকারের পতন হয় -বিবিসি’র মূল্যায়ন
বাংলাদেশের
রাজনৈতিক পরিস্থিতি আবার জটিল হওয়া শুরু করেছে এতে কোন সন্দেহ নেই।
বিবিসি’র এক বিশ্লেষণে এ কথা বলা হয়েছে। বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক
ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে বিবিসি’র বাংলা বিভাগের সম্পাদক সাবির মুসতাফা এমন মন্তব্য
করেন। এখানে প্রশ্নোত্তর আকারে তা তুলে ধরা হলো:
প্রশ্ন: খালেদা জিয়া যে অবরোধের ঘোষণা দিয়েছেন এবং বিএনপি নেতারাও বলছেন যে, সরকার পতন না হওয়া পর্যন্ত তারা ঘরে ফিরবেন না। পরিস্থিতি এখন কোন দিকে যাচ্ছে বলে আপনার মনে হয়?
উত্তর: গত বছর বেশ শান্ত ছিল বাংলাদেশ এবং সেখান থেকে পরিস্থিতি যে আবার জটিল হওয়া শুরু করেছে, তা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। গত বছর নির্বাচনের পর অনেকেরই ধারণা ছিল যে, আলোচনার মাধ্যমে একটি সমঝোতা হবে এবং সব দলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে শিগগিরই একটা নতুন নির্বাচন হবে। অনেকে ধারণা করেছিলেন, হয়তো এক-দেড় বছরের মধ্যে নতুন একটা নির্বাচন হতে পারে। কিন্তু নতুন সরকার এক বছর পার করে দিয়েছে এবং নির্ধারিত সময়ের আগে অর্থাৎ ২০১৯ সালের আগে নির্বাচন দেয়ার কোন প্রয়োজন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বোধ করছেন না। তার বক্তব্য হচ্ছে, সংবিধানে ৫ বছর মেয়াদ সরকারের। অন্যদিকে বিএনপি আশঙ্কা করছে যে, এক বছর পুরোপুরি নির্লিপ্ত থাকার পর তারা যদি আবার নড়েচড়ে না বসে তাহলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে তারা অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যেতে পারে। এখন বিএনপির এ নতুন আন্দোলন অনেককেই আবার ২০১৩ সালের ডিসেম্বরের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে। তবে পরিস্থিতি তখনকার মতো ভয়াবহ রূপ ধারণ করবে বলে আপাতত মনে হচ্ছে না। এটার কারণ, খালেদা জিয়া অবরোধের ডাক দিয়েছেন ঠিকই। কিন্তু সে ঘোষণা এসেছে সাংবাদিকদের প্রশ্নের পরিপ্রেক্ষিতে এবং সেখানে কোন পরিকল্পনা এমন কি আত্মবিশ্বাসের ছাপও খুব একটা দেখা যায় নি।
প্রশ্ন: এখানে খালেদা জিয়া অনেকটা অপ্রত্যাশিতভাবে টানা অবরোধের ঘোষণা দিয়েছেন বলে অনেকে বলছেন। আপনার কি মনে হয় বিএনপির সামনে এ ছাড়া কি অন্য কোন বিকল্প ছিল?
উত্তর: সিদ্ধান্ত তো একটু হুট করে নিয়েছেন বলেই মনে হচ্ছে। হয়তো আজকে যেভাবে পরিস্থিতি ডেভেলপ করে তার কার্যালয়ের সামনে, সে কারণে একটু রাগবশত বা সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে সেরকম একটা ঘোষণা এসেছে। তবে বিকল্প সকল রাজনৈতিক দলের সামনে সবসময়ই থাকে। এটা আমি বিশ্বাস করি না যে, কোন রাজনৈতিক দলের সামনে কোন বিকল্প থাকে না। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, বিএনপির কর্মসূচির লক্ষ্য কি হবে। তারা যদি সত্যিই মনে করে আন্দোলন করে সরকারের পতন ঘটানো সম্ভব, তাহলে অবরোধ হরতাল ছাড়া পথ নেই। কারণ বাংলাদেশে ঐতিহাসিকভাবে হরতাল অবরোধ করেই সরকারের পতন ঘটানো হয়েছে। কিন্তু তাদের লক্ষ্য যদি হয় ২০১৪ সালে যে ক্ষতি তাদের হয়েছে, সে ক্ষতি কাটিয়ে উঠে দলকে সুসংগঠিত করে আবার নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নেবে, তাহলে হরতাল অবরোধের চেয়ে সাংগঠনিক কার্যক্রমেই তারা বেশি ফল পাবে। এটা আমার মনে হয় সকল রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করবেন। এটার কারণ হচ্ছে অনেকেরই এটা ধারণা এবং এ ধারণা একেবারে বেঠিক না- সেটা হলো, বিএনপির নির্বাচনে জেতার ক্ষমতা এখনও আছে। আমরা দেখেছি সাম্প্রতিক সময়ে ২০১৪ সালে সংসদ নির্বাচনের পরে উপজেলা নির্বাচনে তাদের সাফল্য এবং বিভিন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তাদের সাফল্য। সেটা দেখে পরিষ্কার যে বিএনপির নির্বাচনে জেতার ক্ষমতার এখনও আছে। কিন্তু সরকার পতন ঘটানোর ক্ষমতা তাদের আগের থেকে বিশেষ করে ৮০ দশক থেকে এখন অনেক অনেক কম।
প্রশ্ন: আরেকটি বিষয় অনেকে বলছেন যে, অনেকে মনে করেন বিএনপির আন্দোলন যদি ব্যর্থ হয় তাহলে মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবি নিয়ে তারা সামনে আসতে পারবে না। দলের ঐক্য ধরে রাখা মুশকিল হবে। নেতাকর্মীরা হতাশ হয়ে পড়বেন। আপনার কি মনে হয় পরিস্থিতি সে রকম দাঁড়িয়েছে?
উত্তর: আমার কাছে সেটা মনে হয় না। কারণ বিএনপি হচ্ছে নানান মতামত এবং ধ্যানধারণার একটি প্লাটফর্ম। সেখানে বিভিন্ন ধ্যানধারণার বা মতামতের লোকজন জড়ো হন বিভিন্ন কারণে। অনেকে আসেন শুধু আওয়ামী লীগ বিরোধিতার অবস্থান থেকে। কাজেই বিএনপির যে প্লাটফর্ম একটা যে রাজনৈতিক প্লাটফর্ম তা এসব নেতাকর্মীদের প্রয়োজন। কাজেই বিএনপি এই আন্দোলনে আজকে যে আন্দোলনের সূচনা বলে যদি আমরা ধরে নিই সেই আন্দোলনে যদি ব্যর্থ হয়, তাহলে যে ওই নেতাকর্মীরা হতাশ হয়ে দল ছেড়ে চলে যাবে বা ভবিষ্যতে কোন আন্দোলনে ফিরতে পারবে না- সেটা ভাবার মনে হয় না কোন কারণ আছে। কিন্তু বিএনপিকে যেটা ভাবতে হবে সেটা হচ্ছে, আন্দোলন সরকার পতনই কি তাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত নাকি অন্য কিছু তাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত।
প্রশ্ন: খালেদা জিয়াকে আজ তার অফিস থেকে বের হতে না দেয়া, তাদের সমাবেশ পণ্ড করে দিয়ে সরকার আসলে তাহলে কি অর্জন করলো?
উত্তর: সে প্রশ্নটা মনে হয় অনেকের মনেই জাগছে। কারণ খালেদা জিয়াকে ঢাকার বাইরেও বিভিন্ন জেলায় সমাবেশ করতে দেয়া হয়েছে, সেখানে ব্যাপক লোক সমাগম হয়েছে। পুলিশ সেখানে কোন বাধা দেয় নি, স্থানীয় আওয়ামী লীগ কোন বাধা দেয় নি। তাহলে ঢাকায় কেন? এখানে একটা ধারণা হচ্ছে সরকারের মনে করে যে, বিএনপি হয়তো চেষ্টা করবে বা চায় ঢাকায় কোন সমাবেশকে অবস্থান ধমর্ঘটে রূপান্তরিত করে সেখান থেকে সরকার পতনের একটি আন্দোলনের সূচনা করতে এবং সরকার সেটাই আটকে দিতে চায়।
প্রশ্ন: খালেদা জিয়া যে অবরোধের ঘোষণা দিয়েছেন এবং বিএনপি নেতারাও বলছেন যে, সরকার পতন না হওয়া পর্যন্ত তারা ঘরে ফিরবেন না। পরিস্থিতি এখন কোন দিকে যাচ্ছে বলে আপনার মনে হয়?
উত্তর: গত বছর বেশ শান্ত ছিল বাংলাদেশ এবং সেখান থেকে পরিস্থিতি যে আবার জটিল হওয়া শুরু করেছে, তা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। গত বছর নির্বাচনের পর অনেকেরই ধারণা ছিল যে, আলোচনার মাধ্যমে একটি সমঝোতা হবে এবং সব দলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে শিগগিরই একটা নতুন নির্বাচন হবে। অনেকে ধারণা করেছিলেন, হয়তো এক-দেড় বছরের মধ্যে নতুন একটা নির্বাচন হতে পারে। কিন্তু নতুন সরকার এক বছর পার করে দিয়েছে এবং নির্ধারিত সময়ের আগে অর্থাৎ ২০১৯ সালের আগে নির্বাচন দেয়ার কোন প্রয়োজন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বোধ করছেন না। তার বক্তব্য হচ্ছে, সংবিধানে ৫ বছর মেয়াদ সরকারের। অন্যদিকে বিএনপি আশঙ্কা করছে যে, এক বছর পুরোপুরি নির্লিপ্ত থাকার পর তারা যদি আবার নড়েচড়ে না বসে তাহলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে তারা অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যেতে পারে। এখন বিএনপির এ নতুন আন্দোলন অনেককেই আবার ২০১৩ সালের ডিসেম্বরের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে। তবে পরিস্থিতি তখনকার মতো ভয়াবহ রূপ ধারণ করবে বলে আপাতত মনে হচ্ছে না। এটার কারণ, খালেদা জিয়া অবরোধের ডাক দিয়েছেন ঠিকই। কিন্তু সে ঘোষণা এসেছে সাংবাদিকদের প্রশ্নের পরিপ্রেক্ষিতে এবং সেখানে কোন পরিকল্পনা এমন কি আত্মবিশ্বাসের ছাপও খুব একটা দেখা যায় নি।
প্রশ্ন: এখানে খালেদা জিয়া অনেকটা অপ্রত্যাশিতভাবে টানা অবরোধের ঘোষণা দিয়েছেন বলে অনেকে বলছেন। আপনার কি মনে হয় বিএনপির সামনে এ ছাড়া কি অন্য কোন বিকল্প ছিল?
উত্তর: সিদ্ধান্ত তো একটু হুট করে নিয়েছেন বলেই মনে হচ্ছে। হয়তো আজকে যেভাবে পরিস্থিতি ডেভেলপ করে তার কার্যালয়ের সামনে, সে কারণে একটু রাগবশত বা সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে সেরকম একটা ঘোষণা এসেছে। তবে বিকল্প সকল রাজনৈতিক দলের সামনে সবসময়ই থাকে। এটা আমি বিশ্বাস করি না যে, কোন রাজনৈতিক দলের সামনে কোন বিকল্প থাকে না। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, বিএনপির কর্মসূচির লক্ষ্য কি হবে। তারা যদি সত্যিই মনে করে আন্দোলন করে সরকারের পতন ঘটানো সম্ভব, তাহলে অবরোধ হরতাল ছাড়া পথ নেই। কারণ বাংলাদেশে ঐতিহাসিকভাবে হরতাল অবরোধ করেই সরকারের পতন ঘটানো হয়েছে। কিন্তু তাদের লক্ষ্য যদি হয় ২০১৪ সালে যে ক্ষতি তাদের হয়েছে, সে ক্ষতি কাটিয়ে উঠে দলকে সুসংগঠিত করে আবার নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নেবে, তাহলে হরতাল অবরোধের চেয়ে সাংগঠনিক কার্যক্রমেই তারা বেশি ফল পাবে। এটা আমার মনে হয় সকল রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করবেন। এটার কারণ হচ্ছে অনেকেরই এটা ধারণা এবং এ ধারণা একেবারে বেঠিক না- সেটা হলো, বিএনপির নির্বাচনে জেতার ক্ষমতা এখনও আছে। আমরা দেখেছি সাম্প্রতিক সময়ে ২০১৪ সালে সংসদ নির্বাচনের পরে উপজেলা নির্বাচনে তাদের সাফল্য এবং বিভিন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তাদের সাফল্য। সেটা দেখে পরিষ্কার যে বিএনপির নির্বাচনে জেতার ক্ষমতার এখনও আছে। কিন্তু সরকার পতন ঘটানোর ক্ষমতা তাদের আগের থেকে বিশেষ করে ৮০ দশক থেকে এখন অনেক অনেক কম।
প্রশ্ন: আরেকটি বিষয় অনেকে বলছেন যে, অনেকে মনে করেন বিএনপির আন্দোলন যদি ব্যর্থ হয় তাহলে মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবি নিয়ে তারা সামনে আসতে পারবে না। দলের ঐক্য ধরে রাখা মুশকিল হবে। নেতাকর্মীরা হতাশ হয়ে পড়বেন। আপনার কি মনে হয় পরিস্থিতি সে রকম দাঁড়িয়েছে?
উত্তর: আমার কাছে সেটা মনে হয় না। কারণ বিএনপি হচ্ছে নানান মতামত এবং ধ্যানধারণার একটি প্লাটফর্ম। সেখানে বিভিন্ন ধ্যানধারণার বা মতামতের লোকজন জড়ো হন বিভিন্ন কারণে। অনেকে আসেন শুধু আওয়ামী লীগ বিরোধিতার অবস্থান থেকে। কাজেই বিএনপির যে প্লাটফর্ম একটা যে রাজনৈতিক প্লাটফর্ম তা এসব নেতাকর্মীদের প্রয়োজন। কাজেই বিএনপি এই আন্দোলনে আজকে যে আন্দোলনের সূচনা বলে যদি আমরা ধরে নিই সেই আন্দোলনে যদি ব্যর্থ হয়, তাহলে যে ওই নেতাকর্মীরা হতাশ হয়ে দল ছেড়ে চলে যাবে বা ভবিষ্যতে কোন আন্দোলনে ফিরতে পারবে না- সেটা ভাবার মনে হয় না কোন কারণ আছে। কিন্তু বিএনপিকে যেটা ভাবতে হবে সেটা হচ্ছে, আন্দোলন সরকার পতনই কি তাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত নাকি অন্য কিছু তাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত।
প্রশ্ন: খালেদা জিয়াকে আজ তার অফিস থেকে বের হতে না দেয়া, তাদের সমাবেশ পণ্ড করে দিয়ে সরকার আসলে তাহলে কি অর্জন করলো?
উত্তর: সে প্রশ্নটা মনে হয় অনেকের মনেই জাগছে। কারণ খালেদা জিয়াকে ঢাকার বাইরেও বিভিন্ন জেলায় সমাবেশ করতে দেয়া হয়েছে, সেখানে ব্যাপক লোক সমাগম হয়েছে। পুলিশ সেখানে কোন বাধা দেয় নি, স্থানীয় আওয়ামী লীগ কোন বাধা দেয় নি। তাহলে ঢাকায় কেন? এখানে একটা ধারণা হচ্ছে সরকারের মনে করে যে, বিএনপি হয়তো চেষ্টা করবে বা চায় ঢাকায় কোন সমাবেশকে অবস্থান ধমর্ঘটে রূপান্তরিত করে সেখান থেকে সরকার পতনের একটি আন্দোলনের সূচনা করতে এবং সরকার সেটাই আটকে দিতে চায়।
No comments